একদিবসী ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ নিয়ে প্রতি চার বছর পর আসে বিশ্বকাপ। ২২ গজে লড়াইয়ের এই বর্ণিল, বৈচিত্র্যময় মহাযজ্ঞ ক্রিকেটসুধা পানের উপলক্ষ এনে দেয় ক্রিকেটমোদীদের। বিশ্বকাপের আবেদন, উন্মাদনায় আন্দোলিত হয় ক্রিকেট বিশ্ব।
ক্রিকেটের শেকড় পোঁতা ইংল্যান্ডে। বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরটাও বসতে যাচ্ছে খেলাটার জন্মভূমিতে। ক্রিকেটদুনিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট অর্জনের লড়াইয়ে ষষ্ঠবার অংশ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০ বছর আগে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপটাও বাংলাদেশ খেলেছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে।
এখন অব্দি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা অর্জন কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সেটি ২০১৫ সালের সর্বশেষ আসরে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৩২ ম্যাচ খেলে ১১ জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে টাইগারদের। অতীতকে ভুলিয়ে দেয়ার প্রয়াস নিয়ে এবার বিশ্বকাপে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ১৫ স্বপ্নসারথীও প্রস্তুত বড় অর্জনের মিশনে ঝাঁপিয়ে পড়তে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নে রঙিন আলোর রোশনাই দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিয়েছে আয়ারল্যান্ডে সম্প্রতি ত্রিদেশীয় সিরিজের দুর্দান্ত সাফল্য। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার বহুজাতিক সিরিজে ট্রফি জয়ের ইতিহাস গড়েছে মাশরাফির দল। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টাইগাররা। অনন্য এই অর্জনের পর দেশবাসীর আশার পালেও হাওয়া লেগেছে।
ত্রিদেশীয় সিরিজের পর সংক্ষিপ্ত ছুটিতে দেশে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। বিশ্বকাপ মিশনে আবার দেশত্যাগের আগে আয়ারল্যান্ডে ঐতিহাসিক ট্রফি জয়, বিশ্বকাপে দলের সম্ভাবনা, দলের অভ্যন্তরে চর্চিত সংস্কৃতিসহ অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন মাশরাফি। যার পুরোটাই তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।
ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথমবার ট্রফি জিতলেন। আপনার কাছে এই ট্রফি জয়ের মানে কী? কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
একটা বড় টুর্নামেন্টের আগে জিতেছি, ভালো হয়েছে আত্মবিশ্বাসটা। আলাদা মূল্যায়ন… আসলে এসব আর থাকে না। একটা জিনিস পাওয়ার পর আর অত বেশি কিছু খেয়াল থাকে না।
বহুজাতিক সিরিজে প্রথম ট্রফি জিতল বাংলাদেশ আপনার নেতৃত্বে। দলটাতে রয়েছে অভিজ্ঞতা, তারুণ্যের দারুণ মিশেল। ঐতিহাসিক এই ট্রফি জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারাটা নিজের জন্য কতটা গর্বের?
আমি নিশ্চিত সবাই ভালো বোধ করছে, প্লেয়াররা সবাই। বাংলাদেশের ক্রিকেটসমর্থক যারা আছে, তারা সবাই। আমার জন্য আলাদা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি তো আগেও বলেছি, আমি আসলে এত বেশি চাওয়া-পাওয়ার ভেতরে থাকি না। যেটা পাই, যেটা আছে নসিবে, সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট।
একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক প্লেয়ার নিয়ে চলছে বাংলাদেশ অনেকদিন ধরে। এখন তারাও অবস্থান, দায়িত্ব সম্পর্কে জানেন। প্লেয়ারদের প্রতি এই সমর্থনটা কি দলটাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগায়?
এর থেকে ভালো অপশনস আমাদের নাই, যেটা সত্যি কথা। যারা আছে, তারাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের সেরা অপশনস। বাইরে যে ২-৫ জন যারা আছে, এদের থেকে আমার মনে হয় এরাই সেরা অপশনস।
ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বড় টার্গেটের পর ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনাটা কী ছিল? সৌম্য, মোসাদ্দেকের দু’টি ইনিংস সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?
পজিটিভ খেলা ছাড়া কোনো অপশনস ছিল না। কারণ, প্রায় ৯ করে রানরেট ছিল। তখন শুরুতে ৫ ওভার ব্যবহার বিষয় ছিল। সৌম্য অসাধারণ শুরু করেছে, তামিমও ভালো সঙ্গ দিচ্ছিল। ৫০ রানের জুটি হয়ে গিয়েছিল, অতি দ্রুত রান হয়েছে। ওইটা আসলে টোনটা সেট করে দিয়েছে। মাঝখানে খেলা সমান-সমান চলছিল। কিছু উইকেট পড়াতে হয়তে একবার ওদের দিকে, আরেকবার আমাদের দিকে আসছিল। কিন্তু মোসাদ্দেক শেষটা করেছে অনন্য। হয়তোবা একটা ওভারে খেলা আমাদের দিকে নিয়ে আসছে, তবে শুরু থেকেই বেশি দাপুটে ব্যাটিং করেছে।
যদিও আপনি ফাইনাল শেষ করেই চলে এসেছেন দেশে। তারপরও এই ট্রফি জেতার পর দলের অবস্থান কেমন, কতটা উজ্জীবিত? বিশ্বকাপে কতটা আত্মবিশ্বাস যোগাবে?
দলের সবাই ভালো আছে। ছোটখাটো ব্যথা আছে। এই ছাড়া দলের সবাই ভালো আছে। আশা করি, সবাই ফিট থাকলেই ভালো বিশ্বকাপের জন্য। এমনি সবাই চাঙ্গা আছে, সবাই ভালো আছে।
আপনি আগেও বলছিলেন, বিশ্বকাপের আগে একটা ট্রফি জেতা দরকার। ফাইনালের মানসিক বাধাটা পার হওয়ার বিষয়ে। ত্রিদেশীয় সিরিজে যেটা পেল বাংলাদেশ…
সেটা ফাইনালের ক্ষেত্রে। আমরা ছয়টা ফাইনাল খেলেছি, হেরেছি। ওই যে জায়গাটা, ওখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছিলাম না। এবারও একটু কঠিন সময়ে জেতা’তে হয়েছে কি, একটু সুবিধা হয়েছে যে, এমন অবস্থা পরবর্তী সময়ে ফাইনালে আসলে ছেলেরা এতটা পাজলড থাকবে না।
এই ট্রফি জয়ের পর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কতটা সুযোগ দেখেন?
বিশ্বকাপে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ, পুরোপুরি ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। কারণ বিশ্বকাপে অনেক হাই স্কোরিং ম্যাচ হবে, প্রত্যেকটা ম্যাচ। তারপর ভিন্ন ইনটেনসিটিতে খেলা হবে। সব টিম চাইবে তাদের সেরাটা বের করে আনার। আর টুর্নামেন্টের হাইপ আরও বেশি, ওখানে আরও বেশি চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
আপনার কি মনে হয়, এখন সেটেলড মিডল অর্ডার পেয়ে গেছেন?
হ্যাঁ, আমি তো মনে করি পুরোপুরি ঠিক আছে। আর যদি না-ও থাকতো, তা আমার বলার সুযোগ ছিল না। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের ১০-১২ দিন আগে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, মিডল অর্ডারে এর চেয়ে ভালো অপশনস আর নাই। যারা বাইরে আছে, ১-২ জন হয়তো আছে। তবে এর চেয়ে ভালো অপশনস নাই।
সাকিব না থাকার পরও দেখলাম ফাইনালে মিডল অর্ডারে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। এটাই কি প্ল্যান যে এদেরকে সমর্থন করা, একটা জায়গা ঠিক করে দেয়া?
শতভাগ। মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও এটা শতভাগ ফিল করবে। প্রত্যেকটা প্লেয়ার তার অবস্থান চিন্তা করে যে, আমার অবস্থানটা শক্ত আছে কি না। যখন অবস্থানটা শক্ত থাকে, তখন হয় কি, পারফর্ম করতে সুবিধা হয়, ডেলিভার করতে সুবিধা হয়। আমি নিশ্চিত, সাকিব না খেলাতে একটার জায়গায় অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায় দলে। এক্ষেত্রে এবার হয়নি, যদিও বোলিংটা একটু দুর্বল ছিল। তারপরও আমরা মিডল অর্ডারে নড়াচড়া করিনি। এই জায়গাগুলোতে শক্ত থাকায় আমি নিশ্চিত যে, ওরা আরও ভালো বোধ করবে।
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে যে চিন্তাভাবনা, এই ট্রফি জয়ের পর কি কিছু বদলাবে? আমরা কি কোনো বার্তা দিতে পারলাম যে, আমরা ট্রফি জিততে পারি?
এটা নির্ভর করে। আমরা কী পারি, সেটা সবার আগে চিন্তা করা উচিত। অন্যরা কী চিন্তা করলো, ওটা নিয়ে আপনার মাঠে নামার কোনো সুযোগ নাই। ওটা নিয়ে নামা ঠিকও না। আমরা কী পারি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি বলেছেন, আপনি ট্রফির জন্য খেলেন না। ট্রফি দিয়ে আপনাকে মূল্যায়ন না করতে। তারপরও একটা ট্রফি জেতার পর কেমন লাগছিল?
সত্যি কথা, আমার কোনো ফিল হয়নি। শুধু শুধু মিথ্যা কথা বলে লাভ নাই। আমার ভেতর যে ফিলিংস, সেটাই বললাম।
ট্রফি নিয়ে আপনার হাসি…
এখন ম্যাচ হারের পর তো আপনি খিলখিলিয়ে হাসতে পারবেন না। ম্যাচ জিতলেই আপনি হাসবেন।
এই ট্রফি জেতার পর নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে সবার প্রত্যাশা আরও উঁচুতে উঠে গেল। দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছ বলার আছে বিশ্বকাপের আগে?
আমি প্রত্যাশা যত বাড়াই বা কমাই, এতে কিছুই আসবে-যাবে না প্রথমত। আমরা যদি এই টুর্নামেন্ট বাজেভাবেও হারতাম, মানুষ একই প্রত্যাশা নিয়ে বসে থাকতো। এটা আমার গত ১৮-২০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। মানুষ বাংলাদেশ দলের প্রত্যেকটা ম্যাচ দেখতে বসে একই ইচ্ছাশক্তি নিয়ে। একটা সময় দেখতো একটু ভালো খেলে কি না, বা কেউ ভালো খেলে কি না। এখন যেটা শেষ ৫-৭ বছরে হয়েছে যে, বাংলাদেশ জিতবে এই আশা নিয়ে বসে। তাই প্রত্যাশা কখনোই পরিবর্তন হবে না।
আর আপনি যেটা বলছেন, আমি হাইপটা একটু কমাবো। এটুকু বলতে পারি, বিশ্বকাপে ডিফারেন্ট বল গেম হবে। আপনি যদি ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে খেলা দেখেন, প্রচুর রান হচ্ছে। খেলা ভিন্ন হবে। ধরন অন্যরকম হবে, যেটা বললাম। আমাদের জন্য অনেক কঠিন হবে। বিশেষ করে প্রথম তিন ম্যাচে যাদের সাথে পেয়েছি, এটা আমাদের পক্ষে আসার কথা না। ওই কন্ডিশনের সঙ্গে যারা সবসময় খেলে অভ্যস্ত তাদের সঙ্গে খেলা। আমার কাছে মনে হয়, যদি একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলা হতো তাহলে আমাদের সুবিধা থাকতো একটু। এনিওয়ে, এটা থেকে লড়াই করে বের হয়ে আসাটা অন্যরকম আনন্দ। এখান থেকে যদি বের হয়ে আসতে পারি, এটা ধরেন অন্যরকম একটা ফিল হবে। তাই ওইটার জন্য আমরা সবাই এক্সাইটেড। আর মানুষের ফিলিংস কমানো-বাড়ানো… আসলে যতই কথা বলি, কোনো লাভ নাই।
আগে কেউ পারফর্ম করলেই পরে কয়েক ম্যাচ সুযোগ পেত। এবার রাহী-লিটন আগের ম্যাচের সেরা পারফরমার হয়েও পরের ম্যাচে ড্রপ। এটা কি একটা বার্তা যে, আমাদের বেঞ্চ পাওয়ারটাও এখন শক্তিশালী?
শতভাগ। আমরা যে মাইন্ড সেটআপ নিয়ে ওখানে গেছি, ওখানে শেষ পর্যন্ত ওই অবস্থানে ছিলাম। এটা হয়তো বা একটা প্লেয়ারের জন্য ভালো লাগার ব্যাপার। আবার যে রান করেও খেলতে পারেনি, তার জন্যও কিন্তু ভালো ফিল। তার মনে থাকবে, পরবর্তী যে মানুষটা সুযোগ পাবে, সেটা আমি। এই ধরেন লিটন, সৌম্য রান করেছে প্রথম দুই ম্যাচে, আমরা আবার সৌম্যর কাছেই ফিরে গেছি। সৌম্য ইনজুরিতে না পড়লে হয়তো তিন নম্বর ম্যাচটাও খেলতো। কিন্তু আমাদের আবার দেখার ব্যাপারও ছিল, লিটনকে সুযোগ দেয়ার ব্যাপার ছিল। আল্লাহ না করুক, বিশ্বকাপে গিয়ে অন্য কারো ২-৩ ম্যাচ সমস্যা হতে পারে, লিটনকে খেলানো দরকার ছিল। লিটন খেলে রান করে যেটা হয়েছে যে, লিটন জানে যে, নেক্সট ম্যান ইজ মি। রাহীও জানে যে, নেক্সট ম্যান ইজ মি।
একইভাবে আমরা সবাই সুস্থ থাকার পরও আমরা আমাদের মূল প্রসেসে ফিরে গেছি। রুবেলকে শেষ ম্যাচে ১৩ জনে রাখছি। আমরা সাইফউদ্দিনে ফিরে গেছি। এটা হচ্ছে আমার কাছে মনে হয় রেগুলার প্রসেস। এটাই হওয়া উচিত। অন্যান্য দলগুলো এটাই করে। আমাদের এটার ঘাটতি ছিল, আমরা এই টুর্নামেন্টে এটা করতে পারছি। এটা করতে পারার পেছনে আসলে… ওরা পারফর্ম করেছে, আরও সুবিধা হয়েছে, এটাও সত্যি কথা। তবে এই মেসেজটাও গুরুত্বপূর্ণ।
আর এরা কেউ যদি পারফর্ম না করতো, তাহলেও তো এটাতে ঠিক থাকা উচিত…
অবশ্যই এখানে ঠিক থাকা উচিত। কারণ, আপনাকে বিশ্বকাপে একটা প্ল্যান সেট করতে হতো যে, কে আপনার ইলেভেন, এটা ঠিক করতে হবে। আপনি ফাইনালে গেছেন, ফাইনালে আপনার তাদেরকেই খেলানো উচিত, যারা আপনার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইলেভেনে থাকতে পারে। যদি না কেউ ধারাবাহিকভাবে কিছু ক্যারি করে, তাছাড়া তাকেই সুযোগটা দেয়া উচিত।
মাশরাফির মনের আয়নায় বিশ্বকাপের ছবিটা, কল্পনাটা কেমন? জানতে চাই…
আমার, নাকি দলগত?
আপনার।
আমার নিজস্ব কোনো কল্পনা নাই।
আর দলগত?
দলের সেমিফাইনাল আশা করি, ইনশাল্লাহ।
সেমিফাইনালের পর পথটুকু কেমন হতে পারে?
সেমিফাইনালের পর আপনার নির্দিষ্ট দিনের উপর নির্ভর করবে। ওই দিনে আপনি কেমন খেলছেন। তো সেমিফাইনালের আগ পর্যন্ত তো আপনার এসব ভাবার সুযোগ নাই। কিন্তু সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার আগে আপনাকে ম্যাচ বাই ম্যাচ যেতে হবে।
সর্বত্রই আলোচনা, বিশ্বকাপে বোলারদের চ্যালেঞ্জটাই বেশি থাকবে। বোলারদের জন্য আপনার মেসেজটা কি?
আমি নিজেও তো বোলার। আমি নিজেও বুঝতেছি, এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে প্রত্যেকটা বোলারের ক্ষেত্রে। যেমন, আয়ারল্যান্ডে আমরা একটা সেট করেছিলাম যে, প্রত্যেকটা বোলার ৫০ রানের মধ্যে শেষ করা। আমার কাছে মনে হয় ইংল্যান্ডে এটা আরও বাড়বে। ধরেন ৬০ বা এই রকম। প্রত্যেকটা বোলার যদি ৬ ইকোনমি রেটে বোলিং শেষ করতে পারে, তার মানে ৩০০ হবে। আর ৩০০ এখানে অহরহ চেজ হবে, এবং আমাদের দ্বারাও এটা সম্ভব। এমন মাইন্ড সেটআপ কিছু একটা করতে হবে।
রুবেলকে নিয়েও অনেক কথা হচ্ছে। রুবেলকে বসিয়ে রাখা, তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর বিষয়টা…
আমরা তো চারটা পেস বোলার খেলাতে পারছি না। সাইফউদ্দিন অসাধারণ ডেথ বোলিং করছে। ওই জায়গায় কনসিডার করে সাইফউদ্দিনকে রাখা হচ্ছে, সাথে ও ব্যাটিং পারে। সবচেয়ে বড় কনসিডারেশন হচ্ছে, সাইফউদ্দিন অসাধারণ ডেথ বোলিং করছে। এখন মুস্তাফিজের চেয়েও অনেক ভালো ডেথ বোলিং করছে। বিশেষ করে সব কন্ডিশনেই এখন, এই একটা কারণ।
আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে রুবেলের সঙ্গে তুলনার সুযোগ নেই। রুবেল পারফরমার, রুবেল ইনজুরড আছে। রুবেল একটা ইনজুরি নিয়ে চলছে, যেটা ঢাকা লিগ থেকেই ক্যারি করছে। যারা হয়তো ঢাকা লিগ ফলো করে না, হুট করে জাতীয় দলের খেলা দেখতে বসে বলে ওঠে, রুবেল নেই। তারা তো মূল ঘটনা জানে না। দেখা গেল, শেষ ১৫-২০ দিন রুবেল কী বয়ে বেড়াচ্ছে, এটা তারা জানে না। অনেকে না জেনে একটা কথা বলে ফেলে। সেটা তো হবে না। আসলে আপনারাও জানেন, রুবেল সাইড স্ট্রেইন ক্যারি করছে লাস্ট দেড় মাস। আর ওখানে ঠান্ডা, ঠান্ডার জায়গায় সাইড স্ট্রেইনের রিস্ক আরও বেশি থাকে। ওকে তো মানিয়ে নেয়ার সময় দিতে হবে। এবং রুবেলের সঙ্গে কথা বলে, ও কেমন ফিল করছে, ফিজিও সেভাবে কাজ করছে রুবেলের সাথে। আপনি একটা ছেলে নিয়ে ইনজুরড রেখে পুরো বিশ্বকাপ বসায়ে রেখে তো লাভ নাই।
আমাদের অনেক ব্যাটসম্যান বলেছে, আমরা ৩০০ রান কম করি, চেজ করাও কঠিন। এখন ত্রিদেশীয় সিরিজে এভাবে ফাইনাল জয়ের পর কি বলা যাবে যে, আমরা ৩৩০-৩৪০ এর পরিকল্পনায় আসতে পারবো?
যেমন দেশ, তেমন বেশ। হিসেবটা এখন ওইরকম করতে হবে। আমরা করি না বলে যদি করতে পারবো না চিন্তা করি, তাহলে আমরা টুর্নামেন্টে কোথাও যেতে পারবো না। করতে পারিনি, করিনি, এটা এক জিনিস। আর এখন করতে হবে, এটা আরেক জিনিস। ওই মাইন্ড সেটআপ নিয়েই থাকতে হবে যে, ৩০০ করুক বা ৩৩০ করুক, ৩৫০ হয়তো বা একটু দূরে হয়ে যায়, সেটা হবে আউটস্ট্যান্ডিং পারফরম্যান্স। কিন্তু ৩০০, ৩২০-৩৩০ আমাদেরকে মাইন্ড সেটআপে রাখতেই হবে। করতে হবে আগে ব্যাটিং করতে গেলে, আবার চেজ করতে গেলেও ওই রান করতে হবে।
বহু কাঙ্খিত ট্রফি জিতেও দেশে ফিরে বিমানবন্দরে আপনি কথা বলেন নাই। অন্য কেউ হলে হয়তো বলতো। এটা কি প্রথম ট্রফি বলে দলের সবার সম্মান, অর্জনকে উপরে রাখতে চেয়েছেন?
আমার কাছে বিষয়টা খুব সাধারণ। আমি নামার পরে তো প্রথমে আপনারা আসবেন, আমি তো জানি না। সত্যি কথা। আমরা ৩-৪ জন আসতেছি, তাও টিমের খালি আমি একাই আছি। আমি একেবারেই অপ্রস্তুত ছিলাম। যখন দেখছি, তখন আমার মাথায় আসছে, এটা ঠিক হবে না। কারণ ওখানে যারা কষ্ট করছে, ওখানে বসে আছে। তারা ডিজার্ভ করে এখানে এসে ফুল নেয়া। যদিও আমাকে ফুল দেয়া হয়েছে, বাট ওরাও ডিজার্ভ করে, ফুল হয়তো তারাও পেতে পারতো। তাদের প্রাপ্য। পুরো টিমটা আসলে হয়তো বা একরকম হতো। ওখানে বসে থেকে অনেকের কাছেই মনে হতে পারে যে, আজকে বিসিবি টিকিটটা করে দিলে আমিও হয়তো যেতাম। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে টিকিট করে আসছি। বিসিবি টিকিট দিলে হয়তো সবাই বাসায় এসে চারদিন থেকে যেত। আমার কাছে ওইটাই মনে হয়েছে যে, যেহেতু আমি একা আসছি, আমার একার সংবর্ধনা হয়ে গেল, এটা তো কিছুটা সংবর্ধনার মতোই হয়ে যেত। জিনিসটা আসলে খারাপ হতো। কিন্তু একইভাবে সাংবাদিক যারা আসছিলেন, তাদের জন্যও খারাপ লাগতেছিল, তারা আসছে সবাই, রোজার দিন। বলছি যে, ধন্যবাদ আপনারা আসছেন। আসলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না, এখানে কথা বলা উচিত। কারণ যারা মাঠে আরও কষ্ট করছে, আরও বেশি যাদের ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স, তারা ওখানে রয়েছে। আমার কাছে মনে হয় যে, ওরা থাকলে এটা আরও ভালো হতো।
ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে আয়ারল্যান্ডে যাওয়ার আগে আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণেও। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে আপনিই বাংলাদেশের সেরা বোলার। এসব নেতিবাচক আলোচনা কি আপনাকে উৎসাহিত করে যে, আমাকে তাদেরকে ভুল প্রমাণ করতে হবে?
(হাসি) আমি আসলে কাউরে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ খুঁজি না। আমরা তো নেতিবাচকই সবসময়। ধরেন এই টুর্নামেন্ট জিতছেন, বলবে জিতছে তো ‘বি’ টিমের সাথে, ‘সি’ টিমের সাথে। নিজেদের ছোট করে রাখতেই আমরা পছন্দ করি। ইটস ওকে, ইটস ফাইন। এ নিয়ে সত্যি বলতে আমার ব্যক্তিগতভাবে কারো সাথে কোনো যুদ্ধ নাই, কোনো কিছু নাই। আমি তো মনের আনন্দেই খেলতাম, খেলি। আমার কাজ যেটা, আমি সেটাই করি। এতদিন ১৮ বছর ধরে তো আমার কাজ কেউ করে দেয়নি, এখনও করে দিবে না। আর ২-৪টা, ৫-১০ হাজার কথার জন্য যে আমার সবকিছু মানসিকভাবে পরিবর্তন করে ফেলতে হবে, সেটাও না। আমার ক্রিকেটের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এর চেয়ে অনেক কঠিন। ওই সব যুদ্ধ করে আসার পরে এগুলো আসলে কিছু না।