যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এলিজাবেথ স্নাইডার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে আবার তিনি সুস্থও হয়ে ওঠেন। নিজের সেই গল্পই গত ৮ মার্চ তিনি শেয়ার করেছিলেন ফেসবুকে। সেটাই ভাষান্তর করে সবার সাথে শেয়ার করা হয়েছে এই লেখায়। কেন? যাতে অন্তত প্যানিক না ছড়ায় আপনার-আমার দ্বারা, যাতে অন্তত নিজেদের জায়গা থেকে সবাই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয়টাই দিতে পারি।
…
আমার মনে হয়, ছোটখাট একটা হাউজ পার্টি থেকেই আমি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাই। সেখানে কেউই হাঁচি-কাশি দিচ্ছিল না, অসুস্থতার সামান্যতম নমুনাও দেখা যায়নি কারও মাঝে। তবে সেই পার্টিতে যারা এসেছিল, তাদের মাঝে চল্লিশ ভাগই শেষপর্যন্ত আক্রান্ত হয়। মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যাতে ঠিকমতো হাত ধোয়া হয় এবং (করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার) উপসর্গ দেখা দিয়েছে এমন যে কারো সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা হয়। আমি সেটা করেছিলামও। (কিন্তু আমার মতে) মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা ছাড়া এই রোগ থেকে বাঁচার কোনো উপায়ই নেই। সেদিন যারা পার্টিতে এসেছিল, তাদের শতকরা চল্লিশ ভাগই তিন দিনের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের সবাই জ্বরে ভুগছিল। সবার উপসর্গও ছিল প্রায় কাছাকাছি ধরনের।
শারীরিক অবস্থা এবং/কিংবা বয়সভেদে এই উপসর্গগুলোও ভিন্ন হয়ে থাকে। আমার পরিচিতদের মাঝে যারা এতে আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের সবার বয়সই ছিল চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের ভেতর। আমার বয়সও ত্রিশের মাঝামাঝি। আমাদের বেলায় উপসর্গের মাঝে ছিল মাথাব্যথা, জ্বর (প্রথম তিন দিন টানা থাকবে, এর পরের তিন দিন আসা-যাওয়ার ভেতর থাকবে), শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা এবং বেশ ক্লান্তি অনুভব করা। আমার জ্বর প্রথম দিনই ১০৩ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকে। এরপর ধীরে ধীরে সেটা ১০০ ডিগ্রি এবং আরও কমে পরবর্তীতে ৯৯.৫ ডিগ্রিতে আসে। কয়েকজনের ডায়রিয়া হয়েছিল। একদিন আমার বমি বমি ভাবও হয়েছিল। জ্বর চলে যাবার পর কারও আবার নাক বন্ধ, গলা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের মাঝে কয়েকজনের কফ হয়েছিল। খুব অল্প কয়েকজনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও দেখা দেয়।
এই অসুস্থতা ছিল ১০-১৬ দিনের মতো। মূল কথা হলো, কফ কিংবা শ্বাসকষ্ট ছাড়া আসলে তেমন একটা পরীক্ষা করাও হচ্ছিল না। সিয়াটল ফ্লু স্টাডিতে গিয়ে আমি চেকআপ করিয়ে আসি। … কভিড-১৯ ইনফেকশন নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে থেকে তারা টেস্ট শুরু করে। আমার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তারা আমার স্যাম্পলগুলো কিং কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছিল। আমাকে জানানো হলো যে, আমার সকল টেস্টের ফলাফলই পজিটিভ এসেছে।
মার্চের ৯ তারিখে আমার এসব উপসর্গ দেখা দেয়ার ১৩ দিন হয়ে গেল। ৩ দিন হলো জ্বরও কমে এসেছে। কিং কাউন্টি পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হচ্ছে- উপসর্গ দেখা দেয়ার পর থেকে পরবর্তী ৭ দিন পুরোপুরি আইসোলেশনে থাকতে, কিংবা জ্বর কমে যাবার পর থেকে ৭২ ঘণ্টা আইসোলেশনে থাকতে। দুটো ডেডলাইনই আমি পেরিয়ে এসেছি। ফলে মানুষজনের কাছ থেকে নিজেকে আর আমি দূরে সরিয়ে রাখছি না। তবে পরিশ্রমসাধ্য কাজ এখন আমি আপাতত করছি না, যাচ্ছি না মানুষের ভিড়েও। আর অবশ্যই আপনার সাথে দেখা হলে আমি আপনার কাছেও আসব না!
আমি হাসপাতালে ভর্তি হইনি। কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলেই যে সব দেশে মানুষজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে তা না। যেমন- আমার বেলায় (এবং আরও অনেকের ক্ষেত্রেই) আমি ডাক্তারের কাছেও যাইনি, কারণ আমি নিজে নিজেই সেরে উঠছিলাম। মনে হচ্ছিল, এবার ফ্লু ভ্যাক্সিন দিয়ে যেসব ফ্লু স্ট্রেইনের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছি, এটা কেবল তার থেকে আলাদা আরেকটা ফ্লু স্ট্রেইন ছাড়া আর কিছুই না।
আমার মনে হয়, পরীক্ষানিরীক্ষা কম হওয়ায় মানুষজন ভাবছে যে তাদের শুধু ঠাণ্ডা লেগেছে বা এমন কিছুই হয়েছে। সেজন্য তারা ইচ্ছামতো বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, আর এটাও ছড়িয়ে পড়ছে। যাদের কোনো উপসর্গই দেখা যাচ্ছে না তারাও বিভিন্ন পার্টি বা সামাজিক উৎসবে যোগদানের মাধ্যমে এটাকে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
আমি জানি, কিছু কিছু মানুষ ভাবছে (করোনা ভাইরাস) তাদের কিছুই করবে না বা করতে পারবে না। আমিও আশা করি সেটাই হোক। কিন্তু আমার মনে হয় একেবারে শুরুর দিকেই এবং ব্যাপক পরিসরে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু না হওয়াই সিয়াটলে রোগটা ছড়িয়ে পড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে। সিয়াটল বেশ ভালোভাবেই আক্রান্ত হয়েছে- আমি কেবল এটুকুই বলতে পারি। আমি এখন অনেকটাই সুস্থ, কিন্তু তারপরও চাইব না যে কারো এই অসুখটা হোক।
আমার শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না হবার মূল কারণ সম্ভবত এটাই যে, আমি নিয়মিত Sudafed নিয়েছি, Afrin নাজাল স্প্রে ব্যবহার করেছি (প্রতি নাসারন্ধ্রে তিনবার করে স্প্রে, একটানা তিন দিন, এরপর তিন দিন বন্ধ) এবং বিশুদ্ধ পানি দিয়ে নেটি পট ব্যবহার করেছি। এটা কোনো ডাক্তারের পরামর্শ না। আমি যা করেছি কেবল সেটাই আমি বললাম। আর এজন্যই এটাকে শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো সমস্যা না হবার কারণ হিসেবে বলছি। হয়তো এই দুটো বিষয়ের মাঝে আসলে কোনো সম্পর্কই নেই। হয়তো যে ভাইরাল স্ট্রেইন এবং ভাইরাল লোড আমার হয়েছিল, তার উপরই এটা নির্ভরশীল।
আশা করি এই তথ্যগুলো মানুষজনকে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে কিংবা দ্রুতই পরীক্ষা করতে তাগাদা দেবে। তাহলে অবস্থা খারাপ হবার আগেই আপনি নিজেকে আইসোলেট করে ফেলতে পারবেন কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেবার আগেই হাসপাতালে চলে যেতে পারবেন। কেবলমাত্র হাত ধুলেই যে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচা যাবে এমন কোনো কথাই নেই। বিশেষ করে, এমন কোনো মানুষের কাছাকাছি যদি আপনি দাঁড়িয়ে থাকেন যার কোনো উপসর্গই দেখা দেয়নি কিন্তু ঠিকই তিনি ইতোমধ্যে (করোনা ভাইরাসে) আক্রান্ত হয়ে আছেন।
(করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে) আপনার মারা যাবার সম্ভাবনা বেশ কম। কিন্তু আপনি কি ষাটোর্ধ্ব বয়সী আপনার কাছের মানুষদের কিংবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের ঝুঁকিতে ফেলতে চান?
ভাল থাকবেন!