Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও’র ভাইরাল আদালত: ভালোবাসাই যেখানে মুখ্য

বর্তমান পৃথিবীতে অপরাধ দমন নিয়ে নানাবিধ আলোচনা হয়ে থাকে। কখনো আমাদের মনে হয়, একমাত্র কঠিন শাস্তিই পারে মানুষকে অপরাধ সংগঠিত করা থেকে দূরে রাখতে। আবার যখন দেখা যায়, কিশোর ছেলেটি সামান্য অপরাধের কারণে ভয়াবহ শাস্তির মুখোমুখি হয়ে জীবনটাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিতে পারছে না, তখন মনে হয়- অপরাধ কমিয়ে আনতে জীবন সাজানোর সুযোগও থাকা চাই! আজ তেমনই এক আদালতের গল্প বলব, যেখানে আইনের শাসনের বাস্তবায়ন হয় ঠিকই, তবে মানুষকে মুক্ত থেকে শেখার সুযোগও দেয়। 

“আমার পোশাকের ভেতর বিচারপতির ব্যাজ পরি না, আমি আমার পোশাকের ভিতর হৃদয় পরি।”

উপরের বাক্যটি শুনে নিশ্চয়ই আঁচ করা যাচ্ছে, আজকের এ লেখা একজন বিচারপতিকে নিয়ে? এ গল্পের নায়কের নাম ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও, যার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডে। তার আরও একটি বড় পরিচয় হলো, তিনি একসময় ‘রোড আইল্যান্ড বোর্ড অভ গভর্নস’-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রভিডেন্স শহরে বিচারক হিসেবে আছেন।

ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও; Image source: tvovermind.com 

তিনি বর্তমানে ট্রাফিক আইনের আওতাধীন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন। ‘কট ইন প্রভিডেন্স’ নামের একটি প্রোগ্রামে জনসচেতনতার জন্য তা নিয়মিত প্রচার করা হয়। সেখান থেকেই তার একটি বিচারকার্যের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং অল্প সময়ের ভেতর তা ১৫মিলিয়ন ভিউ পেয়ে যায়। বর্তমানে এ প্রোগ্রামের ভিউ প্রায় ৩০০ মিলিয়নের কাছাকাছি, যার দরুন এটি  সারা পৃথিবীতে ‘ভাইরাল আদালত’ হিসেবে ট্যাগ পায়। 

৯৬ বছরের বৃদ্ধের বিচার!  

কোর্টরুমে বসে আছেন ৯৬ বছরের মানুষটি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, স্কুল জোনে গাড়ির স্পিড লিমিট তিনি মানেননি। আর বিচারক ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও পুরো অভিযোগ শুনেই রায় দিয়ে দেননি। জরিমানার কাগজও ধরিয়ে দেননি। তিনি অভিযুক্তের কাছে জানতে চেয়েছেন, কী হয়েছিল সেদিন? গল্পগুলোর শুরু এভাবেই হয়, কারণ আমাদের এই অন্যরকম বিচারক মনে করেন, আদালত শুধু বিচারের জায়গা নয়, মানুষের গল্প প্রকাশেরও জায়গা। সেই ধারাবাহিকতায় এ ঘটনায় জানা যায় যে, বৃদ্ধ লোকটির এক ছেলে আছেন, যার বয়স ৬৩ এবং তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। দু’ সপ্তাহ পরপর তার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে হয়, আর এজন্যই মাঝে মাঝে এই বৃদ্ধ গাড়ি চালান। ঘটনার দিনও তা-ই ঘটেছিল এবং খুব সামান্য গতির হেরফেরের জন্য তিনি মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

সব শুনে বিচারক অবাক হয়ে যান একজন বাবার দায়িত্ববোধ দেখে। আর এমন চমৎকার একজন বাবার বিপক্ষে আইনের সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ না করে তিনি বরং একটি সতর্কতা জারি করে মামলাটি বাতিল করে দেন। বাবার দায়িত্ব তিনি কমাতে পারবেন না, কিন্তু পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারবেন, এগিয়ে চলার জন্য কিছুটা উৎসাহ দিতে পারবেন। তিনি সেটাই করলেন, ভালোবাসা, মমতায় আর বিচারের সুবাসে বৃদ্ধ পিতাকে জড়িয়ে ধরলেন। 

বিচারকের সামনে উপস্থিত বৃদ্ধ বাবা; Image Source: upworthy.com 

একজন সিরিয়ান মায়ের গল্প   

যুদ্ধের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচতে একটি সিরিয়ান পরিবার আমেরিকায় আশ্রয় পায়, ঘটনাক্রমে সেই পরিবারের গৃহিণী, আমাদের গল্পের সিরিয়ান মা হাজির হন ক্যাপরিও’র আদালতে। মামলা হয়েছিল গতির কারণে। মা তেমন ইংরজি পারেন না বলে তার ছোট মেয়ে মাশা অনুবাদকের ভূমিকায় হাজির হয়, যা বিচারকের মন জয় করে। তারপর বরাবরের মতোই ক্যাপরিও প্রথমে মামলায় অভিযুক্তের কাছেই জানতে চান, তার কিছু বলার আছে কি না।

সিরিয়ান মা জানান, তিনি সব রাস্তার স্পিড লিমিট এখনও বুঝে উঠতে পারেননি আর মাশা অসুস্থ বলে লিমিটের দিকে খুব মনোযোগ দিতেও পারেননি!

সব কথা শুনে ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও মাশাকে ডেকে নেন এবং তার কাছে জানতে চান, তার পড়ালেখা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। মেয়েটি জানায়, সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়, নতুন দেশ-নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে চায় এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

মা বাবা আর মাশার কথা শেষ হলে বিচারক ক্যাপরিও বরাবরের মতোই বলেন, “কেস ডিসমিস!” সেইসাথে তাদের সবার উদ্দেশে বলেন, “ওয়েলকাম টু আমেরিকা!”

এখানে ক্যাপরিও শুধু বিচারকের ভূমিকায় নিজেকে রাখেননি। তিনি একটি পরিবারের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে সাহস দিয়েছেন; জানিয়েছেন,

“তোমরা একা নও, আমরা পাশে আছি। সিরিয়ায় ফিরে না গেলেও জেনো, এটা তোমাদেরও দেশ!”

সিরিয়ান পরিবার; Image Source: Youtube

এমন আরও অনেক ঘটনা আছে, আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাব, শাস্তি নয় আমাদের এই বিচারকের উদ্দেশ্যই হলো- অপরাধ তৈরির কারখানাটা যেন বন্ধ হয়ে যায় আর সেটি বোধ করি কেবল ভালোবাসা দিয়েই সম্ভব, অন্তত ক্যাপরিও তা-ই মনে করেন।

ক্ষমা করতে গিয়ে কি আইন উপেক্ষিত হচ্ছে?

এমন একটি প্রশ্ন অবশ্য অনেকবারই উচ্চারিত হয়েছে। কেননা ধরে ধরে সবাইকে ক্ষমা করার মানে তো ন্যায় প্রতিষ্ঠা নয়। সেজন্যই বিচারের বিস্তারিত প্রকাশ করা হচ্ছিল, যাতে উত্তর পাওয়ার পথটি সবার জন্য সহজ হয় এবং তারপর অচিরেই সবাই উত্তর পেয়েও যায়। প্রায় অধিকাংশ বিচারেই দেখা যায়, যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের সবাইকে কম অথবা বেশি টাকার জরিমানা গুণতে হয়েছে। এখন হয়তো আমাদের মনের ভেতর একটা প্রশ্ন উঁকি দেবে, জরিমানা যদি দিতেই হয়, তবে ভালোবাসার কথা আসছে কেন? বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে- এটাই তো মোটামুটি আদালতের চিরচেনা চিত্র!

আসলে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। বিচারপতি ফ্রাঙ্ক ক্যাপরিও’র আদালতে প্রায় প্রতিদিনই বিচারকার্য পরিচালিত হয় এবং জরিমানা- শাস্তি, এসবও হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দোষী ব্যক্তি আসলে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল আর এসব ক্ষেত্রে ক্যাপরিও নিজে আসামীপক্ষের হয়ে জরিমানা আদায় করে দেন। তবে এত এত মামলার টাকা তো তার একার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়, তাই তার আছে ফিলোমেনা নামক একটি আন্তর্জাতিক ফান্ড, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে নানান মানুষ টাকা পাঠান।

বিচারপতি ক্যাপরিও এভাবেই মমতায় জড়িয়ে রাখেন মানুষকে। এতে হয়তো সমাজে খুব বেশি পরিবর্তন আসে না, তবে উনার সাধ্যমতে তিনি করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্বাস করেন,

“খুব ছোট একটা ব্যাপারও একজন মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে।”

Related Articles