এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিভাষাটির সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। এর বাংলা করলে দাঁড়ায় সহ-শিক্ষা পাঠক্রমিক কার্য, কিংবা নিয়মিত পাঠক্রম বহির্ভূত কার্য। সহজ ভাষায় বললে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মূল সিলেবাস কিংবা পুঁথিগত বিষয়ের বাইরেও নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতার জায়গাগুলোয় উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলো।
প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই, হোক তা স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন ধরনের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি রয়েছে। বই পড়া, খেলাধুলা, ছবি আঁকা, নাচ-গান-আবৃত্তি থেকে শুরু করে লেখালেখি, বিজ্ঞানচর্চা, বিতর্ক, দেয়ালিকা বের করা ইত্যাদি সবই এক্সট্রা কারিকুলারের মধ্যে পড়ে। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাঁস-মুরগি পালন, শাক-সবজি চাষ, হস্তশিল্প, সেলাই, কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিও রয়েছে এক্সট্রা কারিকুলার হিসেবে।
আরো আছে সাক্ষরতা অভিযান, স্বাস্থ্য সপ্তাহ পালন, রক্তদান কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। স্কুল পর্যায়েই রয়েছে স্কাউট, গার্লস গাইড কিংবা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যারা নিয়মিত স্বেচ্ছাসেবা ছাড়াও আকস্মিক ও জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস পরবর্তী সময়ের ত্রাণ ও সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। দেশব্যাপী নিয়মিত আয়োজিত হচ্ছে গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ভাষা প্রতিযোগসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা।
তবে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির প্রধান ‘নেতিবাচক’ দিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় যেটি, তা হলো: এ ধরনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক জীবনে খুব একটা লাভবান হয় না। অর্থাৎ, এসব কার্যক্রম তাদের পরীক্ষার ফলাফলে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। তারা সারাবছর সিলেবাসে থাকা বিষয়াবলী অনুযায়ী পরীক্ষার খাতায় যতটা লিখতে পারল, সেটুকুই নির্ধারণ করে দেয় শ্রেণিতে তাদের অবস্থান। সে ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয় তাদের রোল নম্বর।
মূলত এ কারণেই, আমাদের দেশে এক্সট্রা কারিকুলার এখনো খুব বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় না। কেউ যদি মূল সিলেবাসভুক্ত বিষয়াবলিতে দক্ষতার পাশাপাশি অন্য দুই-একটা কাজেও দক্ষ হয়, তাদের হয়তো গুণগান করা হয়। কিন্তু এমন কেউ যদি থাকে যার মূল সিলেবাসের বাইরে এক্সট্রা কারিকুলারেই বেশি পারদর্শিতা, তাতে সাধারণত অখুশি ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। নাক সিঁটকে অনেকে বলে, “এগুলোতে ভালো করে কী হবে, মূল পরীক্ষায় তো ভালো ফল করোনি!”
দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও যে আজকাল এক্সট্রা কারিকুলারের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদেরকে এগুলোর ব্যাপারে খুব একটা উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করছে না, তার পেছনেও মূল কারণ অভিভাবকদের অসচেতনতাই। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জুরানা আজিজ যেমনটি বলেন:
“আমাদের বাবা-মায়েরা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির গুরুত্ব অনুধাবন করেন না, আর তাই এগুলোর জন্য সন্তানদেরকে উদ্বুদ্ধও করেন না। তাদের মূল ফোকাস থাকে ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার প্রতিযোগিতায়। একই কাজ করে স্কুলগুলোও, যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা নিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেয়া হয়, এবং স্কুলে এক্সট্রা কারিকুলার অনুশীলন করার সুযোগটুকুও দেয়া হয় না। এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল গঠন করা হয় না, অথচ স্কুলে এগুলো অব্যাহত রাখার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট খুব জরুরি।”
সুতরাং বলা যায়, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির ব্যাপারে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যথেষ্ট নজর না দেয়ার কারণটা একটি চক্রের মতো। অভিভাবকরা এগুলো নিয়ে মাথা ঘামান না, তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও এগুলোকে গুরুত্ব দেয় না, ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এগুলোর মাধ্যমে খুব বড় কোনো সাফল্য পায় না যা তাদের সামগ্রিক ক্যারিয়ারে অবদান রাখবে। আবার ঘুরেফিরে এক্সট্রা কারিকুলারের মাধ্যমে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর উল্লেখযোগ্য সাফল্য না আসার দরুণই, পরিবার থেকে অর্থাৎ অভিভাবকদের তরফ থেকে, এই বিষয়গুলোকে তেমন একটা প্রণোদিত হয় না।
দিনের পর দিন এই চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, যে কারণে এক্সট্রা কারিকুলারের গুরুত্ব ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকছে। অথচ বাস্তবে কিন্তু এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কী সেগুলো, তা যদি অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থী নির্বিশেষে সকলে জানতে ও বুঝতে পারে, তাহলেই সম্ভব দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক্সট্রা কারিকুলারের সুদিন ফিরিয়ে আনা, এবং এগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা। তাই চলুন জেনে নিই, একজন শিক্ষার্থীর জীবনে এক্সট্রা কারিকুলার কেন জরুরি।
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি: এটি এক্সট্রা কারিকুলারের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। যখন শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের বাইরেও অন্যান্য নানা কাজে নিজেদের যুক্ত করে, তখন ওইসব কাজে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর কে না জানে যে, আজকের দিনে দক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। যে যত বেশি দক্ষ, তার জীবনে ‘কিছু করে খাওয়ার’ সম্ভাবনা তত বেশি! তাই শিক্ষাজীবন শেষে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উঠেপড়ে লাগার চেয়ে, শৈশব থেকেই দক্ষতা বৃদ্ধির চর্চা চালানো ঢের বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীরা সিলেবাস অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তকের যেসব বিষয়বস্তু শেখে, সেগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু তারপরও, দিনশেষে সেগুলো কিন্তু বিবেচিত হয় ‘পুঁথিগত বিদ্যা’ হিসেবেই। সেই বিদ্যা নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণাটুকু দিতে পারে শুধু। সেই ধারণাকে বাস্তবে কাজে লাগানোর জন্য তাদের প্রয়োজন নিজস্ব সৃজনশীলতা। সেই সৃজনশীলতার চর্চাই তারা করতে পারে এক্সট্রা কারিকুলারের মাধ্যমে। আর একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতার ধরন থেকেও আঁচ করা যায়, জীবনে কোনো খাতে কাজ করলে সে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করতে পারবে।
মানসিক বিকাশ: শুধু পড়াশোনা করলেই শিশুর মানসিক বিকাশ হয় না। ছোটবেলা থেকেই যদি তাকে শুধু পড়াশোনা করতেই চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা তার মনের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যেহেতু সবসময় পড়াশোনা করা কোনো আনন্দময় অভিজ্ঞতা নয়, বরং খুবই বিরক্তিকর, তাই ক্রমাগত এই বিরক্তির উদ্রেক ঘটতে ঘটতে একসময় শিশু জীবনের উপরই বীতশ্রুদ্ধ হয়ে উঠতে পারে। যে বয়সটায় তার মন হওয়ার কথা রঙিন ও স্বপ্নময়, সেই বয়সেই যদি জীবনের প্রতি তার বিবমিষা সৃষ্টি হয়, তবে সেজন্য তাকে সারাজীবন ভুগতে হবে।
অভিজ্ঞতা লাভ: যেকোনো কাজ করা মানেই হলো অভিজ্ঞতা লাভ। অভিজ্ঞতা জীবনের একটি অতি-গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ধরুন, একটি শিশু টেলিভিশনে ক্রিকেট খেলা দেখল এবং তার উর্বর মস্তিষ্ক খুব সহজেই ক্রিকেট খেলার যাবতীয় কলা-কৌশল আয়ত্ত করে ফেলল। কিন্তু তাহলেই কি বলা যাবে যে সে ক্রিকেট খেলায় দক্ষ? মোটেই না। কোনো কাজ কীভাবে করতে হয় তা জানা এক জিনিস, আর নিজে সেটি করে দেখানো অন্য জিনিস। শিশুটি তখনই ক্রিকেট খেলা প্রকৃত অর্থে শিখতে পেরেছে বলে দাবি করা যাবে, যখন সে নিজে মাঠে গিয়ে ব্যাট ধরবে, বল হাতে দৌড়াবে, ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্যের চার-ছয় আটকাতে। কারণ তখন তার নিজের অভিজ্ঞতা হবে খেলাটির ব্যাপারে।
সামাজিকীকরণ: একটি শিশুর কেবল পাঠ্যপুস্তকের জগতে ডুবে থাকলেই চলে না। তাকে সামাজিকও হতে হয়। আর সেই সামাজিকীকরণ ত্বরান্বিত হয় শিশুর এক্সট্রা কারিকুলারের মাধ্যমে। কেননা তখন সে আর শ্রেণিকক্ষের গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বাইরের দুনিয়ার সাথেও সে পরিচিত হয়, নানাজনের সাথে আলাপ-পরিচয় হয়, একই ধরনের শখ বা ভালোলাগা থাকায় পারস্পরিক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, সমাজের দশজনের সাথে ওঠা-বসার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
দলবদ্ধ কাজের শিক্ষা: সামাজিকীকরণের পথ ধরেই আসে দলীয় কাজের শিক্ষা। পড়াশোনা করাটা মূলত ব্যক্তিগত কাজ, যেহেতু অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এখনো দলগত শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে শুধু পড়াশোনা করেই শিক্ষার্থীদের দলীয় কাজের অভিজ্ঞতা হয় না। অথচ বাস্তব জীবনে চলার পথে তো তাদেরকে অনেকে মিলে দলবদ্ধ হয়েই কাজ করতে হয়। সেখানে কেউ নেতৃত্ব দেয়, কেউ বা আবার নেতার অধীনে শৃঙ্খলিত ও নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কাজ করে। এই যে নেতৃত্বের গুণাবলি কিংবা নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার শিক্ষা, তা অর্জন করা যায় এক্সট্রা কারিকুলারের মাধ্যমেই।
সময়ের সদ্ব্যবহার: অনেক অভিভাবকই মনে করেন, পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু করা বোধহয় সময় নষ্ট। তা কিন্তু খুবই ভুল। বরং একটি শিশু যদি সারাদিন পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে, তবে আদতে সে খুব বেশি কাজ করছে না। সারাদিনে ২৪ ঘণ্টা সময় হলেও, সেই সময়ের সবটা খাওয়া-ঘুমসহ অন্যান্য আবশ্যক কাজের বাইরে ব্যয় হচ্ছে কেবল পড়াশোনাতেই। অথচ এক্সট্রা কারিকুলারে শিশুকে উৎসাহিত করা হলে, তার জীবনের সোনালী সময়গুলোর যথাযথ সদ্ব্যবহার করা যাবে। তাছাড়া তার মধ্যে সময় ব্যবস্থাপনার গুণাবলিও বিকশিত হবে। অর্থাৎ সে বুঝতে পারবে, কোন কাজের পেছনে কতটা সময় খরচ করা দরকার।
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীরা যা লিখে, তার বেশিরভাগই কিন্তু ধার করা বিদ্যা। অর্থাৎ সেখানে তার শুধু বোঝা বা মুখস্ত করার কৃতিত্বটুকু আছে, কিন্তু নিজে কিছু করার তৃপ্তি নেই। আর এই তৃপ্তিহীনতার ফলে তার মনে আত্মবিশ্বাসহীনতাও জন্মাতে পারে যে তার পক্ষে হয়তো নিজে নিজে কিছু করা সম্ভব না। এর ফলে বাস্তব জীবনের যেকোনো কাজকে সে ভয়ও পেতে পারে, দোনোমনা করতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে একদম দূরে সরেও থাকতে পারে। এভাবে তার মনে বিভিন্ন ধরনের এপ্রিহেনশন বা ভীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, যা বাকি জীবনভর তাকে তাড়া করে বেড়াবে। অথচ এক্সট্রা কারিকুলার খুব সহজেই তার মন থেকে এ ধরনের ভয়-ভীতিকে সমূলে উৎপাটিত করে, তাকে করে তুলতে পারে আত্মবিশ্বাসী।
সিভি ভারী করা: এখন কিন্তু আর সে দিন নেই যে শুধু একাডেমিক ফলাফলই কারো খুব ভালো কোনো চাকরিলাভ নিশ্চিত করে দেবে। চাকরিদাতারা এখন চাকরিপ্রার্থীর সিভিও খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন যে তার পড়াশোনার বাইরেও অন্য কী কী গুণ রয়েছে। হয়তো সেসব গুণ তার কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, কিন্তু তাতে কী! এসব গুণ থাকা কিন্তু চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে উপরিউক্ত গুণাবলির উপস্থিতিও নিশ্চিত করে। অর্থাৎ চাকরিদাতারা বুঝতে পারেন, এই শিক্ষার্থী কেবল শিক্ষাগত দিক দিয়েই দক্ষ নয়, বরং সে মানসিকভাবে শক্তিশালী, দলবদ্ধ কাজে পারদর্শী, সৃজনশীলতার অধিকারী, সামাজিক, সময়নিষ্ঠ ইত্যাদি। এখন ভেবে দেখুন, একটি ছেলের একাডেমিক ফলাফল হয়তো তুলনামূলকভাবে কম ভালো, কিন্তু তার মধ্যে এই অতিরিক্ত গুণাবলি রয়েছে। অপরদিকে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা ছেলেটির মধ্যে অন্য কোনো গুণাবলিই নেই। তাহলে চাকরিলাভের সম্ভাবনা কার বেশি?
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি: বাংলাদেশের শিক্ষার মানের সাথে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শিক্ষার মানের আকাশ-পাতাল তফাৎ। তাহলে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতাই কি বিদেশের ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ ও বৃত্তি প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট? মোটেই না। বরং চাকরির মতো এক্ষেত্রেও অন্যান্য দক্ষতা অতি জরুরি। তাছাড়া চিন্তা করে দেখুন, বিদেশে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী কিন্তু খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারবে তখন, যদি না শ্রেণিকক্ষের বাইরেও অন্য নানা ক্ষেত্রে সে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পায়, সামাজিকীকরণ করতে পারে, এবং নিজের দক্ষতা অন্যদের সামনে মেলে ধরে তার ব্যাপারে সবাইকে আকৃষ্ট করতে পারে।
সুতরাং এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন সিলেবাসের পড়ার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলারের প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম? যেসব অভিভাবক ভাবতেন এক্সট্রা কারিকুলার আপনার সন্তানদের ক্যারিয়ার গঠনে খুব একটা সহায়ক হবে না, তারা নিশ্চয়ই আগে বিষয়টিকে এভাবে তলিয়ে দেখেননি। তাছাড়া অনেক শিক্ষার্থীও হয়তো ইতঃপূর্বে এক্সট্রা কারিকুলারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এগুলোর ব্যাপারে নিজে থেকে উদ্যোগী হয়নি। আর বলাই বাহুল্য, অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের ঔদাসীন্যের ফলেই বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ এক্সট্রা কারিকুলারের আয়োজন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
তাই যেমনটি আগেই বলছিলাম, সচেতনতা জরুরি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষেরই। কেবল তাহলেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এক্সট্রা কারিকুলারের গুরুত্ববৃদ্ধির মাধ্যমে একটি গঠনমূলক পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর হ্যাঁ, এক্ষেত্রে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা প্রণয়নকারীদের তথা সরাসরি সরকারের পক্ষ থেকেও, এক্সট্রা কারিকুলারের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া, ক্ষেত্রবিশেষে কিছু এক্সট্রা কারিকুলারকে বাধ্যতামূলক করে দেয়াটা খুব প্রয়োজন। কেবল তাহলেই একুশ শতকের চ্যালেঞ্জের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। অর্জিত হবে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুযায়ী দেশে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন।