“Everything is a copy of a copy of a copy.” ফাইট ক্লাব মুভির এই লাইনটি মানবজাতির সৃজনশীলতা ও নতুন নতুন ধারণা আবিষ্কারের সাথে অনেকাংশে সম্পর্কিত। আর রিমিক্স হলো এই কপির ক্ষেত্রে একটি বড় হাতিয়ার। বিভিন্ন বিদ্যমান বস্তু বা নিদর্শনসমূহকে অনুকরণ ও সংমিশ্রণের দ্বারা তার রূপ কিছুটা পরিবর্তন করে নতুন কোনো বস্তু বা নিদর্শন তৈরি করাকে রিমিক্স বলে। একবিংশ শতাব্দীর সৃজনশীলতা এই রিমিক্সকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। সৃজনশীলতার তিনটি মূল উপাদান হলো অনুকরণ, রুপান্তর ও সংমিশ্রণ, যা রিমিক্সেরও তিনটি মূল উপাদান।
শিল্প, সাহিত্য, আবিষ্কার, গবেষণামূলক উদ্ভাবন- এই সকল কিছুর পেছনে একটি প্রভাবক কাজ করে, তা হলো অনুকরণ বা কপি। পূর্বের ধারণা কপি করে নতুন ধারণা তৈরির মাধ্যমে সভ্যতা গড়ে ওঠে। এটি যেকোনো ক্ষেত্রে জ্ঞানার্জনের মূলবিন্দু। স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব জ্ঞান উৎপন্ন করে না। তারা শুধুমাত্র সমাজে বিদ্যমান ধারণা বা আইডিয়াগুলোকে মস্তিষ্কে কপি করে। এভাবেই গড়ে ওঠে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
রিমিক্স করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এটা করতে আপনার কোনো মূল্যবান যন্ত্রপাতি, প্রচারক, এমনকি দক্ষতারও প্রয়োজন নেই। শুধু জানতে হবে কীভাবে মূল বিষয়বস্তুকে কপি করতে হয় এবং বিভিন্ন ধারণার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইডিয়া তৈরি করতে হয়। বর্তমানে নিউজ রিপোর্ট থেকে শুরু করে টিভি শো, ব্লকবাস্টার মুভি, মিউজিক, ফটোগ্রাফি- সকল ক্ষেত্রে অন্তহীনভাবে রিমিক্সের ব্যবহার ঘটে চলেছে। রিমিক্সের এই আদ্যোপান্ত নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
অনেকের ধারণা, রিমিক্স আসলে বর্তমান যুগের বিষয়বস্তু। কিন্তু মোটেও তা নয়। মানবজাতির সংস্কৃতির মূল থেকেই রিমিক্স ধারণাটি জড়িয়ে আছে। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীতে গ্রিসের মহাকবিদের দ্য ইলিয়াড ও দ্য ওডেসি উপস্থাপন থেকে শুরু করে ইংরেজ কবি জিওফ্রে চসার ও তার সহ-ইতালীয় কবি গিওভান্নি বোক্কাচিও রিমিক্সের দ্বারা বিশ্ব সাহিত্য সমৃদ্ধ করেন। এমনকি শেক্সপিয়রও এর থেকে বাদ যাননি। ১৯২৪ সালে প্যারিসে সুরেলিজম বিপ্লব রিমিক্স সংস্কৃতির নবজাগরণ ঘটায়, যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ১৯৩৬ সালে জোসেফ কর্নেলের রোজ হোবার্ট (Rose Hobart) নামে একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র।
যেকোনো কিছু আবিষ্কারের ক্ষেত্রে প্রভাবক প্রয়োজনীয়। বিশ্বের যেকোনো শিল্পী ও বিজ্ঞানীকে এককথায় হ্যাকার বলা যায়। কারণ তাদের আবিষ্কারের পেছনেও রিমিক্সের অবদান ছিল। উদাহরণস্বরূপ। জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিনের উন্নয়ন সাধন করতে পেরেছিলেন ১২ বছর যাবত থমাস নিউকোমেনের বাষ্পীয় ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করেছিলেন বলে। ক্রিস্টোফার লাথাম শোলস টাইপরাইটারের কি-বোর্ড পিয়ানো থেকে অনুকরণ করে তৈরি করেছিলেন এবং QWERTY লেআউটে রূপান্তরিত করেছিলেন যা আমরা বর্তমানে কম্পিউটার কি-বোর্ডে ব্যবহার করছি।
টমাস আলভা এডিসন লাইট বাল্ব আবিষ্কার করেননি, কারণ তাঁর প্রথম প্যান্টেটটি ছিল ইলেকট্রিক ল্যাম্পের উন্নয়ন নিয়ে। তিনি প্রায় ছয় হাজার ভিন্ন ভিন্ন যন্ত্রাংশের সংমিশ্রণ ঘটান ফিলামেন্ট তৈরির জন্য। হেনরি ফোর্ড ও ফোর্ড মোটর কোম্পানি নতুন কিছু আবিষ্কার করেননি, বরং তারা অ্যাসেম্বলি লাইন (১৮৬৭), ইন্টারচেঞ্জেবল পার্টস (১৮০১), অটোমোবাইলের (১৮৮৫) মতো বিদ্যমান ধারণাগুলোর রিমিক্সিং প্রয়োগের মাধ্যমে ১৯০৮ সালে সর্বপ্রথম বৃহৎ গাড়ির বাজার সৃষ্টি করেন ‘মডেল টি’ তৈরির দ্বারা। এগুলো সবই মূল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। কিন্তু কোনোটাই অরিজিনাল আইডিয়া নয়। আবিষ্কারগুলো বিভিন্ন ধারণার রিমিক্স। আর এটাই আবিষ্কারের চলমান প্রক্রিয়া।
তবে প্রযুক্তিতে রিমিক্সের সবচেয়ে বড় চমকটি দেখায় স্টিভ জবসের অ্যাপল কোম্পানি। মূলত ১৯৭০ এর শুরুর দিকে পার্সোনাল কম্পিউটারের বিপ্লব শুরু করে জেরক্স (XEROX) কোম্পানি। তারা দ্য আল্টো (The Alto) নামে একটি গ্রাফিক্যাল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করে যা মাউস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু দ্য আল্টো কোনো বাণিজ্যিক পণ্য ছিল না। পরবর্তীতে জেরক্স ১৯৮১ সালে স্টার ৮০১০ (Star 8010) নামে একটি অপারেটিং সিস্টেম বাজারে আনে, যা অ্যাপলের লিসা (১৯৮৩) ও ম্যাকিনটোশ (১৯৮৪) বাজারে আনার যথাক্রমে দুই ও তিন বছর আগে। অথচ ম্যাকিনটোশের অধিকাংশ ফিচার ছিল আল্টোর অনুকরণে তৈরি।
আল্টোর ডকুমেন্ট ও ফ্লোডার আইকন, পপআপ মেনু, এমনকি স্ক্রল পয়েন্টারও ম্যাকিনটোশ হুবহু অনুকরণ করে। তবে ফাইল ডিলিট করে ট্র্যাস ক্যানে রাখা, ফাইল সহজে কপি-পেস্ট করা, প্রোগ্রাম উইন্ডো রিসাইজ করা এবং মাউসের ব্যবহারের মতো ফিচারগুলো আল্টোতে করা কষ্টসাধ্য ছিল। আর ম্যানকিনটোশ এই ফিচারগুলোতেই বেশি জোর দেয় যাতে তা সহজে ব্যবহার করা যায় এবং ফিচারের ধারণাগুলোর সংমিশ্রণ করে নতুন একটি রূপ দেয়। ফলে আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অ্যাপলের উৎপাদন ব্যয় জেরক্সের তুলনায় অনেকাংশে কমে যায়। যেখানে স্টার ৮০১০ মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল সতের হাজার মার্কিন ডলার সেখানে লিসার ও ম্যাকিনটোশের মূল্য নির্ধারিত হয় যথাক্রমে দশ হাজার ও দুই হাজার পাঁচশ মার্কিন ডলার। ফলশ্রুতিতে জেরক্স তার পিসির বাজার হারায় এবং অ্যাপল সফল হয়।
পাবলো পিকাসো বলেছিলেন “Good artists copy, great artists steal”। স্টিভ জবস পিকাসোর উক্তিটির গুরুত্ব অন্য যেকোনো প্রযুক্তিবিদের তুলনায় বেশি বুঝেছিলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে স্বীকার করেন তাদের কপি করার ব্যাপারে আর বলেন, “We are always shameless about stealing great ideas”। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড যখন অ্যাপলের অধিকাংশ ফিচার অনুকরণ করে তখন ২০১০ সালে স্টিভ জবস অ্যান্ড্রয়েডকে হুমকি দিয়ে বলেন, “I’m going to destroy Android, because it’s a stolen product. I’m willing to go thermonuclear war on this.” কিন্তু স্টিভ জবসের এই ‘অন্যের থেকে কপি করা আবিষ্কার’ আর ‘কাউকে কপি করতে না দেয়া’র যে রক্ষণশীল মানসিকতা, তা কখনো প্রযুক্তি জগতে রিমিক্সের প্রতিবন্ধকতা হতে পারেনি।
অনেকে বলতে পারেন, জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার মুভিটি কোনোরকম অনুকরণ হতে আসেনি। কিন্তু এই মুভি সাই-ফাই, ফ্যান্টাসি ও বিশেষত উপনিবেশবাদ সম্পর্কিত কিছু মুভি, যেমন- ড্যান্সেস উইথ উল্ভস(১৯৯০), দ্য লাস্ট সামুরাই (২০০৩), দ্য লাস্ট অব দ্য মোহিকানস (১৯৯২), ডুন (১৯৮৪), লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (১৯৬২), ফার্ন গুলি (১৯৯২) ও পোকোহানটাস (১৯৯৫) অনুকরণে নির্মিত। রিমিক্সের ফলে আজ মুভি জনরা থেকে সাব-জনরায় বিভক্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ হরর জনরার ফিল্মে আমরা আজ সুপারন্যাচারাল, স্ল্যাশার, জম্বি, ক্রিয়েচার নেচারের মতো সাব-জনরা দেখতে পাই।
ফিল্ম রিমিক্সের আরেকটি ভাল উদাহরণ জর্জ লুকাসের স্টার ওয়ার্স মুভি সিরিজ। এর মূল গল্পের ভিত্তি গড়ে উঠেছে জোসেফ ক্যাম্পবেল রচিত দ্য হিরো উইথ অ্যা থাউজেন্ড ফেস উপন্যাস অনুকরণে, মূল ওপেনিং টাইটেল ডিজাইন করা হয়েছে ফ্ল্যাস গর্ডন (১৯৩৬) সিরিজের অনুকরণে আর জাপানি পরিচালক আকিরা কোরোচাওয়ার হিডেন ফোর্ট্রেস (১৯৫৮) মুভির অ্যাধাত্মিক মার্শাল আর্ট ও তলোয়ার যুদ্ধের মতো আর্টগুলোর অনুকরণে। এছাড়া স্টার ওয়ার্সের স্পেসশিপ ও এয়ার-স্ট্রাইকের দৃশ্য ড্যামবাস্টার্স (১৯৫৫), সিক্স থ্রি থ্রি স্কোয়াড্রন (১৯৬৪) ও ২০০১: আ স্পেস ওডেসির (১৯৬৮) অনুকরণে, হলোগ্রাফিট প্রোজেকশন মেশিন ফরবিডেন প্ল্যানেট (১৯৫৬) মুভির অনুকরণে এবং কিছু চরিত্র, যেমন- স্টার ওয়ার্সের C-3PO ও R2-D2 যথাক্রমে মেট্রোপলিসের (১৯২৭) দ্য মেশিন ম্যান ও সাইলেন্ট রানিং (১৯৭২) মুভির ডিউই ড্রোনের অনুকরণে তৈরি।
হলিউডে গত দশ বছরে প্রতিবছর যে দশটি ব্যবসাসফল মুভি মুক্তি পেয়েছে তার ৭৪ শতাংশই বিভিন্ন বেস্টসেলার বই, কমিক বুক্স ও ভিডিও গেমের কাহিনী অনুকরণে তৈরি। কারণ পরিচালকদের ধারণা, এটিই মুভির স্বল্প সময়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল। মার্ভেলের দ্য অ্যাভেঞ্জার্স, রেসিডেন্ট ইভিল মুভি সিরিজ, হ্যারি পটার মুভি সিরিজ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ট্রান্সফরমার্স মুভি সিরিজও অ্যানিমেটেড কার্টুন থেকে তৈরি, যে কার্টুন আবার শিশুদের খেলনার অনুকরণে নির্মিত। অর্থাৎ পূর্বের বিভিন্ন মুভির মূল স্টোরিলাইনকে অনুকরণ ও কিছুটা ওলটপালট করে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করাই এখন হলিউডের মূল কৃতিত্ব।
সাধারণত মিউজিকের মাধ্যমেই আমরা রিমিক্স শব্দটির সাথে অধিক পরিচিত। মূলত হিপহপ মিউজিকের মাধ্যমে রিমিক্স জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হিপহপ মিউজিক ভিন্ন ভিন্ন মিউজিক রেকর্ডিংয়ের অনুকরণ ও সংমিশ্রণে তৈরি। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে সুগার হিল গ্যাংয়ের র্যাপার্স ডিলাইট হিপহপটি গুড টাইমস ব্যাণ্ডের শিক গানের বেইস লাইনের অনুকরণে গাওয়া হয়। পরবর্তীতে গ্রাণ্ডমাস্টার ফ্ল্যাশ তাদের দ্য এডভেঞ্চারস অব গ্রাণ্ডমাস্টার ফ্ল্যাশ, এমনকি উইল স্মিথও ইটস অল গুড গানে এই বেইস লাইন কপি করে হিপহপ মিউজিক তৈরি করেন।
অনেকের মতে, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত লেড জ্যাপলিন নামক ইংলিশ ব্যাণ্ডটির হাত ধরেই হেভি মেটাল মিউজিকের উদ্ভব হয়। কিন্তু হেভি মেটালের প্রথম ধারণা পাওয়া যায় ১৯৬১ সালে প্রকাশিত উইলিয়াম বোরোগের লেখা দ্য সফট মেশিন উপন্যাস থেকে। এমনকি উক্ত উপন্যাসটিও কাট-আপ পদ্ধতির দ্বারা বিভিন্ন লেখকের লেখাকে ওলটপালট করে সাজিয়ে প্রকাশ করা হয়। তাই উইলিয়াম বোরোগ শুধুমাত্র হেভি মেটালের ধারণাই প্রথম আবিষ্কার করেননি, বরং সূচনা করেন রিমিক্সের প্রথমদিকের যাত্রা। তবে লেড জ্যাপলিন রিমিক্সের ধারণাকে চুরি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। কারণ তারা উইলি ডিক্সনের ব্রিং ইট অন হোম, হাওলিং উলফের কিলিং ফ্লোর, জেইক হোমসের ডেইসড এন্ড কনফিউসড ও স্পিরিটের টৌরাস গানগুলোর কথা ও সুরকে কোনো রূপান্তর ও সংমিশ্রণ না ঘটিয়ে হুবহু নকল করে, যার ফলে তারা ২০১০ ও ২০১৪ সালে আইনী বিচারেরও সম্মুখীন হয়। একইভাবে জর্জ হ্যারিসনও ১৯৮১ সালে তার মাই সুইট লর্ড গানের কথা দ্য চিফনস-এর হিস সো ফাইন গান হতে নকল করার অপরাধে ১.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেন।
বর্তমানে কুটিমান (Kutiman), ক্যাসেটবয় (Cassette Boy), গার্ল টকের (Girl talk) মতো ইউটিউবাররা মিউজিক রিমিক্স তৈরি করে বেশ দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কুটিমান ইসরায়েলের তেল-আবিব শহর জুড়ে বিভিন্ন মিউজিশিয়ানদের একক যন্ত্রসংগীত রেকর্ড করে পরে সেগুলো রিমিক্স করে। তার একটি মিউজিক রিমিক্স থ্রুইউ (ThruYou) ইউটিউবে দুই সপ্তাহে এক কোটি ভিউ পায়। এছাড়া ডেনজার মাউসের দ্য গ্রে অ্যালবাম (২০০৪) ও কেল্পটোন্সের আ নাইট অ্যাট দ্য হিপ হপেরা (২০০৪) রিমিক্সের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার অন্যতম নিদর্শন।
বর্তমানে রিমিক্সে ভিডিং (Vidding) এর ব্যাপারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভিডিং হলো এডিটিং সফটওয়্যারের দ্বারা কোনো ফুটেজ থেকে টিভি শো বা মুভিকে মিউজিকে এডিটিং করার পদ্ধতি। ১৯৭৫ সালে স্টার ট্রেক মুভি সিরিজের অনুকরণে নির্মিত ক্যান্ডি ফংয়ের স্লাইড মিক্সগুলোর মতো ভিডিং রিমিক্সের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ডাই (DIY= Do It Yourself) মিডিয়া প্রোডাকশনের অন্তর্গত জিএমভি (GMV= Gaming Music Video), এএমভি (AMV= Anime Music Video), মেশিনিমা (Machinima) এবং রাজনৈতিক রিমিক্স ভিডিওগুলোতে ভিডিং এর বিচিত্র ও স্পন্দনশীল প্রভাব লক্ষ্যণীয়। এমনই একটি রাজনৈতিক প্যারোডি রিমিক্স হলো জনাথন ম্যাকিনটোশের“Donald Duck Meets Glenn Beek in Right Wing Radio Duck“, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রেডিওহোস্ট গ্যালেন বেকের রেডিও শোর সাথে পঞ্চাশটি ডিজনি শর্টসকে রিমিক্স করে তৈরি করা হয়।
রিমিক্সের অনুকরণের অনৈতিক দিক থাকার পরও দিন দিন তা জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ একে কেউ অপরাধ হিসেবে দেখছে না। এমনকি ক্রিয়েটিভ কমনসের কো-ফাউন্ডার ও কপিরাইট ক্যাম্পেইনার লরেন্স লেসিগ তার ২০০৮ সালে প্রকাশিত রিমিক্স বইতে লেখেন, “রিমিক্সের এই জগা-খিচুড়ির সংস্কৃতি আমাদের সাংস্কৃতিক স্বাক্ষরতার বির্বতনকে ফুটিয়ে তোলে। রিমিক্স হলো সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে একটি জটিল অভিব্যক্তি।“
ব্রিটিশ-কানাডিয়ান লেখক ও ব্লগার কোরিও ডক্টরো বলেন, “ইন্টারনেট হলো আধুনিক যুগের সবচেয়ে দক্ষ অনুকরণ যন্ত্র। আমি আইনবিরোধী নই। তবে আমরা কী ধরনের নিয়ন্ত্রণ চাই তা বিবেচনা করা দরকার। ইন্টারনেটে কেন্দ্রীয়করণে উৎসাহিতকরণ, নেটওয়ার্ক বৈষম্যকে অনুমোদন দেয়া, ডিজিটাল অধিকার ব্যবস্থাপনাকে সুরক্ষিত রাখা, অবৈধ শেয়ার ক্রপিং মোকাবেলা, সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি ও সেন্সরশিপের মতো প্রোটোকল থাকতে পারে; আবার অনলাইনভিত্তিক যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত ও বহুমাত্রিক পাবলিক স্পেস নেটওয়ার্কও গড়ে তোলা যেতে পারে।” তবে আইনপ্রণেতাদের এখন ডিএমসিএ (DMCA= Digital Millennium Copyright Act) পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে।
প্রাণীদেহে জিনের উৎপত্তি হয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে লুকা (LUCA= Last Universal Common Ancestor) নামক অর্গানিজম থেকে। লুকার পুনঃউৎপাদনের দ্বারা জিনসমূহ একে অপরকে কপি করার মাধ্যমে পরিবর্তন, সংমিশ্রণ ও রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় উন্নত হতে থাকে এবং এভাবেই পৃথিবীতে বিলিয়ন বিলিয়ন জীব প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে। একইভাবে সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন হয়। এখানে জিনের বদলে থাকে মিমস বা অনুকরণীয় জ্ঞান, আইডিয়া বা ধারণা, বিহেভিয়ার বা আচার-আচরণ, স্কিল বা দক্ষতা। এসব সামাজিক উপাদানের অনুকরণ, পরিবর্তন ও সংমিশ্রণের মাধ্যমে সমাজ-সংস্কৃতিতে যুগ যুগব্যাপী পরিবর্তন ঘটে চলেছে ও চলবে। আর এটাই সামাজিক বিবর্তন।