দীর্ঘ নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে গত মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন গ্যারেথ বেল। তার সাবেক ক্লাব টটেনহ্যাম এক বছরের জন্য লোনে দলে ভিড়িয়েছে তাকে। যদিও রিয়ালের সঙ্গে বেলের এই বিচ্ছেদ আজীবনের বলেই ধরে নিয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো। রিয়াল ছাড়ার সংবাদটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর ইংরেজ পত্রিকাগুলোর শিরোনাম এবং সংবাদ অন্ততপক্ষে এমনটাই ইঙ্গিত করে।
অপরদিকে, চলতি মাসের প্রথম দিন টটেনহ্যামের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে গ্যারেথ বেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তার এজেন্ট। জোনাথন বার্নেট বলেন,
‘তাকে হাসতে দেখে আমার ভালোই লাগছে, তাকে খুশি রাখা আমার দায়িত্ব। তবে রিয়াল মাদ্রিদকে এত এত শিরোপা উপহার দেয়ার পরও সেখানে যোগ্য সম্মান পায়নি।’
মূল আলোচনা এখান থেকেই শুরু করা যেতে পারে। টটেনহ্যামে ফিরে সুখ খুঁজে পাওয়া গ্যারেথ বেলের মাদ্রিদ অধ্যায়ে কী এমন ঘটেছিল যা তাকে শেষ ৩ বছর বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল দলের মূল পরিকল্পনা থেকে? তার ইনজুরি সমস্যা নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু কিয়েভের ঐতিহাসিক ফাইনালে ঝলক দেখিয়ে আবার উদযাপনের মঞ্চ ছেড়ে সংবাদমাধ্যমে রিয়াল ছাড়ার ইচ্ছে জানানোর পর হয়তো বা প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজেও চমকে গিয়েছিলেন। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ পাঁচ বছরে নিজেদের চতুর্থ এবং টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় উদযাপনের অল্প সময় পরই এমন মন্তব্য শোনার জন্য যে প্রস্তুত ছিলেন না কেউই!
রিয়ালের হয়ে চারটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা, দু’টি লিগ শিরোপা এবং গোলের সেঞ্চুরি দিয়ে বিবেচনা করলে গ্যারেথ বেলকে নিঃসন্দেহে এখন অবধি ব্রিটিশ স্পোর্টসের সব থেকে বড় রফতানি হিসেবে উল্লেখ করা যায়। কিন্তু তার সাময়িক প্রস্থানের আড়ালে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম যে স্থায়িত্ব দেখতে পাচ্ছে, তা অবশ্যই স্পেনে খেলোয়াড়ি জীবনের ৭ বছরের সুখকর স্মৃতির তুলনায় বিষাদের আধিক্যই ইঙ্গিত করে। আর এজেন্ট জোনাথন বার্নেট গত ২ বছর যাবৎ যে আত্মকেন্দ্রিক মন্তব্য করে চলেছেন, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ধরেই নেয়া যায় দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বিদায় নিয়েছেন বেল। কিন্তু বিতর্কের জায়গাটি নিজেই সৃষ্টি করে গেছেন এই ওয়েলশ রাজপুত্র। বিদায় বলেননি রিয়ালকে, এমনকি কোনো সতীর্থকেও নয়; এমনকি যার হাত ধরে লস ব্লাঙ্কোসদের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন, সেই ‘পাপা পেরেজ’কেও নয়। ফ্লোরেন্তিনো হয়তো বা এটি নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। কিন্তু রিয়াল ভক্তদের মনে যে দাগ দিয়ে বিদায় নিয়েছেন, তা তো মুছেও ফেলতে পারবেন না তিনি।
যাই হোক, তিনি চলে গেছেন। হয়তো বা যখন চলে যেতে চেয়েছেন, তখন যেতে পারলেই রিয়াল সমর্থকদের বিদায়বার্তায় কৃতজ্ঞতা খুঁজে পেতেন। কিংবা ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রাপ্য সম্মাননা পৌঁছাত তার সাথে। গত সপ্তাহে মাদ্রিদভিত্তিক পত্রিকা ‘মার্কা’ শিরোনাম করেছিল,
‘জিদান যা চেয়েছেন, তাই হয়েছে।’
আসলেই কি জিদানের চাওয়ার বাস্তবায়ন করেছে রিয়াল? ধরেই নিলাম কিয়েভের ফাইনালে তাকে শুরুর একাদশে না রাখার সিদ্ধান্তটি ছিল জিদানের।
রিয়ালে জিদানের কোচিং ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়েও বহুবার উপেক্ষিত হয়েছেন গ্যারেথ বেল। ‘জিদান তার দলে বেলকে চান না’ – এটি গত দেড় বছর ধরে প্রায় সবারই জানা কথা। জিদান কেন চাননি, এর সপক্ষে অনেক কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। কিন্তু দিনশেষে আলোচনার বিষয়বস্তু অনেক কিছুই থাকে। গত ২ দশকে এত এত মনোমালিন্য নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে হয়নি কাউকে। তাই জানা দরকার, রিয়ালের সঙ্গে গ্যারেথ বেলের টানাপোড়নের পুরো সময়টার বৃত্তান্ত। সেই সাথে রিয়ালকে তিনি কী দিয়েছেন আর কী পেয়েছেন সে সব নিয়েও থাকছে বিস্তারিত।
রিয়ালের ‘গ্যারেথ বেল প্রোজেক্ট’
প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে রিয়াল মাদ্রিদ প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের একাধিক বড় ব্যর্থতা সবসময় আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রথমত, ২০০৯ সালে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেরেজের কল্যাণে মাদ্রিদের পাড়ি জমাননি। অব্যাহতি নেয়ার পূর্বেই সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ক্যালদেরন রোনালদোর সাইনিং নিশ্চিত করে যান। দ্বিতীয়ত, অনেক চেষ্টা করেও নেইমারকে বার্নাব্যুতে উপস্থাপন করতে পারেননি পেরেজ। এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সহজলভ্যতায় বেশ আলোচিত হয়েছিল সে সময়। কিন্তু পেরেজ মোড় ঘুরিয়ে নিতে বেশি সময় নেননি।
২০১৩ সালে সদ্য বিদায়ী মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা গ্যারেথ বেলের রিলিজক্লজ পরিশোধ করতে সম্মতি প্রকাশ করেন তিনি। ইংরেজ গণমাধ্যমে দুইদিন যাবৎ এই সংবাদটি ঘটা করে প্রচার করা হয়েছিল। ঐ হিসেবে বলা যায়, প্রথম থেকেই রিয়ালে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হন গ্যারেথ বেল। কারণ, রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্টদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় এবং তারকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে। ফ্লোরেন্তিনো অবশ্য ‘গ্যালাক্টিকোস’ যুগের সূচনা করে মর্যাদার ঐ সংজ্ঞাকে নতুনত্ব দিয়েছিলেন। বেলকে দলে ভেড়ানোর পর কোনো এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ একবার বলেই বসলেন,
‘নেইমারকে পাওয়া গেলে বেলকে কখনোই সাইন করাতাম না।’
গ্যারেথ বেলকে দলে নেয়ার বিপরীতে ৮৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্রিটিশ পত্রিকাগুলো। কিন্তু আরেক ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট মনে করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমে ৭৭ মিলিয়ন পাউন্ডের তথ্য দিয়েছে। তার মানে, মাদ্রিদ কর্তারা কখনোই চাননি দলের প্রধান তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর তুলনায় তাকে এগিয়ে রাখতে। হোক সেটি ট্রান্সফার ফি কিংবা প্রধান তারকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে। এটিকেও একটি পরোক্ষ রাজনীতি বলা যায়। কোনো কোনো সাংবাদিক গ্যারেথ বেলকে ফ্লোরেন্তিনোর ‘রোনালদো’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি রোনালদোর সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি, জেতেননি মর্যাদাপূর্ণ ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। আর এটি ফ্লোরেন্তিনোর তৃতীয় ব্যর্থতা।
প্রথম কয়েক মৌসুমের পারফরম্যান্সের প্রতি সুবিচার করেই হয়তো গ্যারেথ বেলকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ২০২২ সালের ৩০ জুন অবধি স্বাক্ষরিত ঐ চুক্তি অনুযায়ী বাৎসরিক ১৭ মিলিয়ন এবং সাপ্তাহিক ৬,০০,০০০ পাউন্ড পরিশোধ করে আসছে দলটি। চুক্তির শেষদিন অবধি এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে তাকে, আর এটি এখন অনেকটাই নিশ্চিত। ১ মৌসুমের জন্য তার টটেনহ্যামে যোগ দেয়ার চুক্তি অনুযায়ী বাৎসরিক বেতনের ৬০ শতাংশ পরিশোধ করবে রিয়াল মাদ্রিদ। বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে স্কোয়াডের সার্বিক ব্যয় কমানোর স্বার্থে এর থেকে ভালো কোনো প্রস্তাব ছিল না রিয়ালের হাতে।
কিন্তু রিয়ালের ঠিকানায় প্রস্তাব যে একেবারেই আসেনি, তা কিন্তু মিথ্যা। কারণ, কিয়েভের ফাইনালের পর তার ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনে বেশ কয়েকটি দলের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছিল রিয়াল। মরিনহো তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ। আক্রমণভাগকে শক্ত করতে বেলকে দলে নিতে ম্যানইউ কর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও টটেনহ্যামও তাকে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনও গ্যারেথ বেলের রিলিজক্লজ ১ বিলিয়ন ইউরো। প্রস্তাবগুলো পছন্দ না হওয়ায় প্রত্যাখ্যান করে দেয় রিয়াল কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে প্রস্তাব এসেছিল চীন থেকে, কিন্তু এবারও ট্রান্সফার ফি পছন্দ হয়নি রিয়ালের। বেল থেকে গেলেন মাদ্রিদে।
প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ হয়তো ভাবেননি, ৬০ শতাংশ বেতন পরিশোধ করে সাময়িক বিদায় দিতে হবে তার দ্বিতীয় অধ্যায়ের সব থেকে আলোচিত এই খেলোয়াড়কে। রিয়ালকে এমন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করানোর পেছনে গ্যারেথ বেল এবং তার এজেন্ট জোনাথন বার্নেটকে সরাসরি দায়ী করা যেতে পারে। গত মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ লিগ শিরোপা জিতলেও লা লিগায় গ্যারেথ বেল খেলেছেন মাত্র ১,০৯২ মিনিট। ২ গোল এবং ২ অ্যাসিস্ট থাকলেও এখন অবধি এটি তার রিয়াল ক্যারিয়ারের সব থেকে খারাপ মৌসুম বলা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রিদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান তিনি। অন্যদিকে, এজেন্ট জোনাথন বার্নেটের প্রস্তাব ছিল, চুক্তির পুরো অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করলে সাথে সাথেই লন্ডনের ফ্লাইট ধরবেন তিনি।
জোনাথন বার্নেট ঠিকই লন্ডনের ফ্লাইট ধরেছেন। তবে একা নন, সাথে গ্যারেথ বেল রয়েছেন। কিন্তু ফ্লোরেন্তিনোকে আরো একবার আঙ্গুল উঁচিয়ে দেখিয়ে গেলেন তারই স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রের একাংশ।
তবে এখানেই হয়তো শেষ হয়নি রিয়ালের ‘গ্যারেথ বেল প্রোজেক্ট’। কারণ, এই মৌসুমশেষে চুক্তির মেয়াদ থেকে যাবে আরো ১ বছর। ফ্লোরেন্তিনো তখন কীভাবে সামলাবেন, সেটি দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদল পর্যন্ত। সেই সাথে চোখ রাখতে হবে টটেনহ্যামের জার্সিতে গ্যারেথ বেলের পারফরম্যান্সের উপর। আর টটেনহ্যামের কোচ এখন হোসে মরিনহো!
ইনজুরি এবং গ্যারেথ বেল
গত ডিসেম্বরের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদ্রিদে পাড়ি জমানোর পর ২৫ বারের মতো ইনজুরিতে পড়েন গ্যারেথ বেল। মাদ্রিদ ভিত্তিক পত্রিকা ‘এএস’ এর মতে, এই ইনজুরির মধ্য দিয়ে টটেনহ্যামের হয়ে ৬ মৌসুমে ২৪ বার ইনজুরিতে পড়ার রেকর্ড ভেঙ্গেছেন তিনি। এতে করে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে, ওয়েলশ উইজার্ডের ইনজুরিজনিত সমস্যা তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিল। এএস-এর দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রিমিয়ার লিগে ৩২৩টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মধ্যে মাত্র ২০৩টি ম্যাচে মাঠে নামতে পেরেছিলেন বেল। স্পার্সদের হয়ে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ শুধুমাত্র ইনজুরির কারণে খেলতে না পারা বেলকে মাদ্রিদকর্তারা অবশ্য জেনেবুঝেই সাইন করিয়েছিলেন।
মাদ্রিদে নিজের প্রথম দুই মৌসুমে পারফরম্যান্সের কল্যাণে খুব সহজেই ভক্তদের সমর্থন পেয়ে যান গ্যারেথ বেল। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ২০১৫-১৬ মৌসুমে। সেবার একাধিক ইনজুরির কারণে মৌসুমের এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। আর চোট পাওয়ার পূর্বে লা লিগায় ২৩ ম্যাচে ১৯ গোল করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬ সালে সালের শুরু থেকে ইনজুরিতে জর্জরিত হয়ে পড়েন বেল। নিষেধাজ্ঞা এবং চোট পেয়ে শুধুমাত্র লা লিগায় ৩৮ ম্যাচের মধ্যে ১৯টিতেই অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। সেবার মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য লিগ শিরোপা জয়ের একেবারে নিকট গিয়েও ব্যর্থ হয় রিয়াল। মাদ্রিদভিত্তিক আরেক পত্রিকা ‘মার্কা’ তখন এর কারণ হিসেবে গ্যারেথ বেলের অনুপস্থিতিকেই দায়ী করেছিলেন।
পরবর্তী মৌসুমগুলো বেলের জন্য শুধুই হতাশা বয়ে এনেছে। চুক্তি নবায়নের পরও আশানুরূপ পারফরম্যান্স উপহার দিতে না পারায় সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দুয়োধ্বনিও জুটেছিল তার ভাগ্যে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে রিয়াল লিগ শিরোপা জিতলেও স্বরূপে ফিরতে পারেননি বেল। লিগে ১৯ ম্যাচ খেলে ৭ গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট করলেও ইনজুরির কারণে ৪ ধাপে খেলতে পারেননি মৌসুমের ২৯ ম্যাচ। অতঃপর ২০১৭-১৮ মৌসুমে কিছুটা ধারাবাহিক হয়েছিলেন তিনি। লা লিগায় ২৬ ম্যাচে ১৬ গোল এবং ২টি অ্যাসিস্টও করেছিলেন। সেবার ৩ ধাপে ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে ১৪টি ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। যদিও মৌসুম শেষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে জয়সূচক ২ গোল করে পুরো মৌসুমের হিসেব পুষিয়ে নিয়েছিলেন।
২০১৮-১৯ মৌসুমটি ছিল রিয়ালের ইতিহাসের অন্যতম খারাপ অধ্যায়। অতীতে গোল হজমের সকল রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন রামোস-ভারান-মার্সেলোরা। অন্যদিকে, কোচ জিনেদিন জিদান এবং দলের প্রধান তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর আক্রমণভাগে করিম বেনজেমা এবং গ্যারেথ বেলের উপর যে দায়িত্ব পড়েছিল তা পালনে ব্যর্থ হন উভয়েই। ঐ মৌসুমে ৫ দফায় ইনজুরিতে পড়ে ৯টি ম্যাচ খেলতে না পারলেও লা লিগায় সর্বমোট ২৯টি ম্যাচ খেলেছিলেন গ্যারেথ বেল। ৮ গোল এবং ৩টি অ্যাসিস্ট ব্যতীত উল্লেখযোগ্য কোনো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭ ম্যাচে ৩ গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট করলেও রাউন্ড অব সিক্সটিনের বাধা টপকাতে পারেনি তার দল রিয়াল মাদ্রিদ।
কাগজে-কলমে গত মৌসুমটি ছিল রিয়ালের হয়ে গ্যারেথ বেলের শেষ মৌসুম। একই সাথে দলের কোচ ছিলেন জিনেদিন জিদান, যিনি কখনোই গ্যারেথ বেলের উপর আস্থা রাখতে পারেননি। গত মৌসুমে লা লিগায় ১৪ ম্যাচ খেলে ২ গোল এবং ২টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেন মাত্র ১১৭ মিনিট, যা রিয়ালে যোগ দেয়ার পর যেকোনো মৌসুমের তুলনায় সব থেকে কম। আর যে কয়েক ম্যাচে বেলকে মাঠে দেখা গিয়েছিল তাতে বিরক্ত হয়েছিলেন রিয়াল সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামতের জায়গায় বেলের চেয়েও তরুণ ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগোকে একাদশে রাখার ক্ষেত্রে সমর্থন জ্ঞাপন করেন তারা।
যাই হোক, ট্রান্সফার মার্কেটের দেয়া তথ্যমতে ইনজুরির কারণে ৭ বছরে রিয়ালের হয়ে সর্বমোট ৮৫ ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। এই পরিসংখ্যান অবশ্যই তার টটেনহ্যাম ক্যারিয়ারের প্রথম ধাপের তুলনায় ভালো। কিন্তু ২০১৬ সালে রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি নবায়নের পর নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেলা বেলের জন্য একেবারেই খারাপ বলা চলে। মার্কার সাংবাদিক সান্তিয়াগো সেগুরোলা একবার লিখেছিলেন,
‘বেল জানেন না কীভাবে ফুটবল খেলতে হয়। তিনি শুধু দৌড়াতেই জানেন।’
মাদ্রিদ শহরে মার্কার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। আর তাই এই পত্রিকার সংবাদসমূহ সমর্থকগোষ্ঠীদের মধ্যে ভালোই প্রভাব ফেলে। মজার বিষয় হলো, এই সংবাদটিতে নেতিবাচক মন্তব্য খুব কমই পড়েছিল। যেমনটা তার বিদায়ের সংবাদে সমর্থকরা নীরবতা পালনের পাশাপাশি গোপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বুঝিয়েছিলেন। গ্যারেথ বেলের বিদায়ের সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, তার বিদায়ে মাদ্রিদের কেউই দুঃখ পায়নি বা পাচ্ছে না। এখন দেখার বিষয় টটেনহ্যামে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইনজুরির সংখ্যাটিকে কোথায় নিয়ে যান তিনি।
রিয়ালের কিংবদন্তি গ্যারেথ বেল
ফর্মে থাকা গ্যারেথ বেল প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, কেন তিনি বিশ্বসেরা ক্লাবে খেলছেন। তখনই তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন সময়ের সেরাদের কাতারে। গোল করেছিলেন এবং করিয়েছিলেন প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও তার ঐতিহাসিক মুহূর্ত, অবিশ্বাস্য কিছু গোল এবং অ্যাসিস্টসমূহ তাকে রিয়াল মাদ্রিদের একজন কিংবদন্তি হিসেবে মর্যাদা দিতে বাধ্য করবে।
তার উত্থান আকস্মিক হলেও পতনের কারণ হিসেবে শুধুমাত্র জিনেদিন জিদানের দিকে আঙ্গুল তোলায় কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ জিদান প্রথমবার মাদ্রিদের দায়িত্ব নেয়ার আগের মৌসুমেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন গ্যারেথ বেল।
জিদান শুধুমাত্র একজন ম্যানেজার হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করে দলের জয় নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। আর এই কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে সবাইকে তিনি খুশি করতে পারবেন না এমনটাই স্বাভাবিক। সে যা-ই হোক, সর্বোপরি রিয়ালের হয়ে তার অর্জনগুলো তাকে একজন কিংবদন্তির আসনেই বসিয়েছে। এর সপক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে।
আপনি ভাবতেই পারেন, কোপা দেল রে ফাইনালে বার্সেলোনাকে পরাজিত করার ম্যাচে তার ভয়ঙ্কর পারফরম্যান্স, কিংবা কিয়েভে বদলি হিসেবে নেমে নৈপুন্যের বদৌলতে আমি এমনটা বলছি। আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। কিয়েভের ফাইনালে বাইসাইকেল শট এবং জোড়া গোল কিংবা ২০১৪ সালে কোপা দেল রে’তে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৫৯.১ মিটার দূরত্ব ৭.০৪ সেকেন্ড পাড়ি দিয়ে জয়সূচক যে গোল তিনি করেছিলেন, সেটিই তাকে স্প্যানিশ ফুটবল এবং ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় করে রাখবে। আর এই বিষয়গুলা শুধুমাত্র প্রমাণ করে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে বরাবরই অদম্য।
অন্যদিকে, রিয়ালের হয়ে ৭ বছরে ১৩টি শিরোপা জেতা গ্যারেথ বেলকে কিংবদন্তির তকমা না দিয়ে উপায় নেই। ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাসহ প্রতি বছর গড়ে তার নামের সঙ্গে দুইটি করে শিরোপা যুক্ত হয়েছে। শিরোপার হিসেবে রিয়ালের আরো অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারকেও পেছনে ফেলেছেন ওয়েলশ রাজপুত্র। আর গোলের হিসেবে তার থেকে এক গোল পিছিয়ে রয়েছেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার রোনালদো লিমা। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো রিয়ালের জার্সিতে মোট গোল করেছেন ১০৪টি, অন্যদিকে গ্যারেথ বেলের গোল ১০৫টি! এছাড়াও প্রতিটি গোল করতে তার সময় লেগেছে ১৭০ মিনিট, যা শীর্ষ ৫ লিগে খেলা অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারের চেয়ে তাকে এগিয়ে রাখে। ইনজুরি কিংবা ফর্মহীনতায় শুরুর একাদশে যেমন উপেক্ষিত হয়েছেন, তেমনি একাদশে থেকেও পুরো ৯০ মিনিট খেলার মতো ভরসা অর্জন করতে পারেননি কোচদের।
শুধু গোল দিয়েই নয়, অ্যাসিস্টের সংখ্যায়ও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন গ্যারেথ বেল। রিয়ালের জার্সিতে তার সর্বমোট ৬৮টি অ্যাসিস্ট রয়েছে, যার মধ্যে ১৯টিই চ্যাম্পিয়নস লিগে। এতে করে খুব ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে, রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগের যে সোনালী সময় বিশ্ব ফুটবল উপভোগ করেছিল, তাতে গ্যারেথ বেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অ্যাসিস্টের হিসেবে তিনি পেছনে ফেলেছেন ডেভিড বেকহ্যাম, রাউল, লুইস ফিগোর মতো রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তিদের।এছাড়াও ৯টি ভিন্ন ভিন্ন ফাইনালে সরাসরি গোলে অবদান রাখার মতো কৃতিত্বপূর্ণ অবদানও রয়েছে গ্যারেথ বেলের নামের পাশে।
লা লিগায় ৭ বছরের মধ্যে ৪ মৌসুমেই ১০-এর অধিক গোল করেছেন বেল। পর্যাপ্ত সময় যদি মাঠে থাকতে পারতেন, তবে হয়তো এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারত। দীর্ঘ ৭ বছরে ২৫১ ম্যাচ খেলে ১০৫ গোল এবং ৬৮টি অ্যাসিস্টও অবশ্য নেহায়েত কম নয়। আর যখন ২৫ বার ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ খেলতে না পারার মতো বিষয় সামনে আসে, তখন সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার মতোই অর্জন রয়েছে তার দখলে।
একটি বিষয় স্পষ্ট যে, রিয়ালের দুঃসময়ে গ্যারেথ বেলকে পাশে পেয়েছিলেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। হয়তো আশানুরূপ পারফরম্যান্স পাননি, দিনশেষে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের ‘রোনালদো’-খ্যাত গ্যারেথ বেল জিততে পারেননি একটিও ব্যালন ডি’অর। সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্যালদেরনের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় এর উত্তরে হয়তো বা কিছুই বলতে পারবেন না ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট পেরেজ। আর গ্যারেথ বেলের বিদায় আরো একটু সুন্দরভাবে হতে পারত বলে যে ব্রিটিশ ভক্তরা পেরেজের সমালোচনা করছেন তাদের জন্য ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং ইকার ক্যাসিয়াসের প্রস্থানের ঘটনাগুলো ভালো উদাহরণ হতে পারে।
আবার কি ফিরতে পারবেন তিনি?
গ্যারেথ বেলের সামনে ফেরার যে সুযোগ, তা হয়তো তিনি হাতছাড়া করতে চাইবেন না। কিন্তু সুযোগগুলো লুফে নেয়ার জন্যে হলেও মরিনহোর কাছ থেকে যথাযথ গেম টাইম পেতে হবে তাকে। অন্যথায় ফর্মে ফেরা কিংবা চুক্তি অনুযায়ী রিয়ালে ফেরার সুযোগ হাতছাড়া করবেন তিনি। রিয়াল ভক্তদের অনেকেই হয়তো তার প্রত্যাবর্তন আশা করেন না। কিন্তু স্পার্সদের মাতিয়ে, নিজের সেরা পারফরম্যান্স পুনরুদ্ধার করলে কেনই বা তাকে আবার বরণ করে নেবে না তারা!
আর এই দুই জায়গায় তার ফিরে আসা কিংবা বিপরীতে ফিরে যাওয়ার হিসেব মৌসুম শেষে করা যাবে। আপাতত আরো কিছু ব্যাপার নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক।
চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কোচ বা ম্যানেজমেন্ট খারাপ পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যা কীভাবে আদায় করে, তা আমাদের পক্ষে জানা একেবারেই অসম্ভব। স্প্যানিশ পত্রিকাগুলো কখনও কখনও তাকে একটু ব্যতিক্রমী প্রশ্ন করলে তিনি বরাবরই এড়িয়ে যেতেন। এক সময় তিনি নিজে উদযাপন করতেন এবং সমর্থকদের মাতিয়ে রাখতেন। তবে রিয়ালের হয়ে গত অধ্যায়ের শেষ দিনগুলোতে আগের মতো কাটেনি তার সময়। আর এই সময়ের স্থায়ীত্ব এতটাই দীর্ঘায়িত হয়েছিল, যার ফলে গ্যারেথ বেল হয়তো এই ধরনের সমালোচনা এবং প্রশ্নকে একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনেই করতেন না। অথচ ২০১৮-১৯ মৌসুমের শেষাংশে জিদান তার মধ্যে এমন কিছু দেখেছিলেন, যা দলের অন্যদের মাঝে খুঁজে পাননি। সেভিয়া, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বেলকে একাদশে রেখেছিলেন তিনি।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে শুধুমাত্র আরো একটি নতুন মৌসুম যোগ হয়েছিল ফুটবল দুনিয়ায়। লা লিগায় কম সংখ্যক গোল কন্সিড করার রেকর্ড গড়ে শিরোপা জেতানোয় জিদান কর্তৃক গ্যারেথ বেলকে আড়ালে রাখার বিষয়টির ব্যাখ্যা হয়তো পাওয়া যাবে না। যদিও জিদান ব্যর্থ হলে সরাসরি প্রশ্নগুলো তার দিকেই ছুঁড়তেন সাংবাদিকদের একাংশ। তবে ট্রেনিংয়ে দেরিতে আসা, গলফ কোর্টে সময় ব্যয় করা কিংবা ওয়েলসের ম্যাচশেষে মাদ্রিদ এবং গলফ-বিষয়ক যে পোস্টার নিয়ে তিনি হাসিমুখে উদযাপন করেছেন, সেগুলোর প্রসঙ্গে পুরোপুরি উত্তর দিতে একেবারেই নারাজ গ্যারেথ বেল। টটেনহ্যামের ম্যাচশেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন,
“রিয়ালে থাকাকালীন ঘটনার জন্য আমি মোটেও আফসোস করছি না।”
গত মৌসুমে লিগ শিরোপা উদযাপনের সময় ভিড়ের এক পাশে দাঁড়িয়ে ক্লাবের প্রতি শেষ হাসিটুকুও উৎসর্গ করে গেছেন গ্যারেথ বেল। এখন তিনি এমন একজন কোচের অধীনে খেলছেন, যিনি তার উপর আশ্বস্ত। সেই সাথে পর্যাপ্ত গেমটাইমও নিশ্চিত করা হয়েছে তাকে। সমর্থকরাও তাকে দুয়োধ্বনি দেবে না সেখানে। বেঞ্চে বসে দুঃখের দিনগুলোকে সুন্দরভাবে বিদায় জানিয়েছেন গ্যারেথ বেল। এখন আর কিছুক্ষণ পর পর ক্যামেরার ফোকাস তার দিকে ঘুরিয়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গির ছবি দর্শকদের দেখানো হবে না। সকালের স্প্যানিশ পত্রিকাগুলোতেও সে সমস্ত ছবি উপরের পাতায় ছাপিয়ে চমকপ্রদ হেডলাইনও চোখে পড়বে না।
প্রথমবার যেদিন লস ব্লাঙ্কোস শিবিরে তিনি পদার্পণ করেন, সেদিন তিনি সাদা পোশাকে খালি মাঠে দাঁড়িয়ে গ্যালারিতে থাকা দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করেছিলেন। অথচ বিদায়কালে যেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঝুলন্ত শিরোপায় হাত ছুঁয়ে সাংবাদিকের খুশি রাখতে চেয়েছেন। বাস্তবিক অর্থে মানসিকভাবে অনেক আগেই রিয়ালকে বিদায় জানিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। টটেনহ্যামে প্রত্যাবর্তন ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।