Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওয়েলশ ড্রাগন বনাম আজ্জুরি: গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই

ইউরো-২০২০ এর ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ খেলায় আজ বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় ইতালির রোমে অবস্থিত ‘স্তাদিও অলিম্পিকো’তে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি ও ওয়েলস। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতালি রয়েছে পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে আর সুইজারল্যান্ডের সাথে ১-১ গোলে ড্র ও তুরস্কের সাথে ২-০ গোলে জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েলস।

এ পর্যন্ত এই ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার মূলপর্বে তাদের দেখা না হলেও ইউরো বাছাইপর্বে চারবারের দেখায় তিনবারই জয় পেছে ইতালি। শুধুমাত্র ২০০২ সালেই একবার জয়ের দেখা পায় ওয়েলস।

এছাড়া বাকি সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে ইতালি জিতেছে সাতবার ও ওয়েলস জিতেছে ২ বার, ড্র হয়নি কোনো ম্যাচ। এই বিবেচনায় শেষ খেলায় পরিষ্কারভাবে ইতালিকেই ফেভারিট হিসেবে মানা যায়। সেই সাথে তাদের কাছে রয়েছে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা।

ইতালি

টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই বলা হয়েছিল যে গ্রুপ-এ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ১৬তে যাবে ইতালি। প্রথম দুই ম্যাচ শেষে দেখা যাচ্ছে, সেই কথামতোই তারাই টেবিলের সবার উপরে। তাদের এই টুর্নামেন্টের খেলা এতই পরিচ্ছন্ন ছিল যে এখনো কোনো খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখতে হয়নি। সেই সাথে ২ ম্যাচে ৬ গোল দিলেও তাদের এখনো কোনো গোল হজম করতে হয়নি।

আজ্জুরিরা এই টুর্নামেন্টে প্রথম দল হিসেবে নকআউট স্টেজে উঠেছে। গ্রুপে তাদের দ্বিতীয় খেলায় সুইজারল্যান্ডকে তারা ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয়। ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সাথে পেরে ওঠেননি সুইজারল্যান্ডের মিডফিল্ডাররা। এই লোকাতেল্লির পা থেকেই আসে তাদের প্রথম দুই গোল। অন্য গোলটি ৮৯ মিনিটে করেন সিরো ইমোবিলে।

এর আগের খেলায় তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারায় তারা। এতে করে প্রথম দল হিসেবে এই প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেন রবার্তো মানচিনির শিষ্যরা। ইতালি ওয়েলসের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচ জেতার রেকর্ড নিয়ে। তাদের সর্বশেষ হার ছিল ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পর্তুগালের সাথে।

সুইজারল্যান্ডের সাথে বাঁ পায়ের ফ্লেক্সর পেশিতে টান খেলে পরবর্তীতে উঠে যান কিয়েল্লিনি; Image Credit: Getty Image

ইতালি দলে বেশ কিছু ইনজুরির সমস্যা রয়েছে। পিএসজির মিডফিল্ডার মার্কো ভেরাত্তি প্রথম দুটি খেলায় নামতে পারেননি ইনজুরির সমস্যার জন্য। ওয়েলসের বিপক্ষেও তাকে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়া অধিনায়ক জর্জো কিয়েল্লিনি সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষের খেলায় চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন। যদিও তিনি আজকের অনুশীলনে ছিলেন, তবুও পরের ম্যাচে তার খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

ইতালির ইতোমধ্যে পরের রাউন্ড নিশ্চিত হওয়ায় তারা মূল একাদশের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিতে পারে। ইতালি দলের যারা সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাননি, তাদের জন্য একটি প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল ক্রেমোনেসে প্রিমাভেরা ক্লাবের সাথে। সেই খেলায় ইতালির ঐ রিজার্ভ দল ৯-১ গোলে উড়িয়ে দেয় ক্রেমোনেসে প্রিমাভেরাকে। হ্যাটট্রিক করেন আন্দ্রেয়া বেলোত্তি ও ফেডেরিকো কিয়েসা। প্রথম দুই ম্যাচ ইনজুরির জন্য না খেলা মার্কো ভেরাত্তিও খেলেন এই ম্যাচে।

তিনি যদি ওয়েলসের সাথে খেলতে নামেন, তবে তার বদলি দলে থাকা ইনফর্ম ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিকে বসানো হতে পারে। এই টুর্নামেন্টে ইতালির হয়ে যুগ্মভাবে দুই গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা লোকাতেল্লি ও ইমোবিলে।  ৪-৩-৩ ফরমেশনে নামা ইতালি এই ম্যাচে বেশ কিছু পরিবর্তন আনবে। গোলপোস্টে ডোনারুমারই নামার সম্ভাবনা বেশি। রক্ষণভাগে আসবে কিছু পরিবর্তন। আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জির পরিবর্তে দেখা যেতে পারে ডি লরেঞ্জোকে। দুই সিবি বোনুচ্চি আর আচের্বির সাথে লেফটব্যাক হিসেবে থাকতে পারেন এমারসন। মিডফিল্ডে ভেরাত্তি, ক্রিস্টান্তে ও বারেল্লার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ফরোয়ার্ডদের পরিবর্তে দেখা যেতে পারে জুভেন্টাসের দুই উইঙ্গার বার্নারডেস্কি ও কিয়েসাকে। তুরস্কের বিপক্ষে এক গোল করা লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে বিশ্রাম পাবেন। আর স্ট্রাইকার হিসেবে সিরো ইমোবিলের পরিবর্তে বেলোত্তি খেলতে পারেন।

ইতালির সম্ভাব্য একাদশ; Image Credit: Buildlineup

ইতালি এই ম্যাচে চেষ্টা করবে অন্তত তারা যেন না হারে। যদি তারা হার এড়াতে পারে, তবেই তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। ওয়েলসের খেলার সিস্টেম পুরোপুরি কাউন্টার-অ্যাটাক নির্ভর। ইতালির দুই ফুলব্যাকের মূল কাজ হবে ওয়েলসের এই গতিসম্পন্ন উইংকে আটকানো। এছাড়া নিয়মিত মুখদের না থাকার কারণে তাদের আজকের খেলাটি আগের দুইটি খেলার চাইতে কিছু রক্ষণাত্মক হতে পারে।  

ওয়েলস

অন্যদিকে, সবাইকে চমকে দিয়ে দুই খেলায় চার পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ওয়েলস। এই টুর্নামেন্টে তার প্রথম জয় পায় তাদের দ্বিতীয় খেলায় তুরস্ককে হারিয়ে।

অ্যারন রামসি ও কনোর রবার্টসের গোলে তুরস্ককে ভালোভাবেই ২-০ গোলের ব্যাবধানে হারায় তারা। যেহেতু তারা গ্রুপের তৃতীয় স্থানে থাকা সুইজারল্যান্ডের চেয়ে একদম পরিষ্কার তিন পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে, সেই হিসেবে এই খেলায় তাদের শুধু ড্র থেকে এক পয়েন্ট লাগবে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করবে। যদিও এই ইউরোতে সেরা চারটি তৃতীয় দলের পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এভাবে পরের রাউন্ডে যেতে তাদের নির্ভর করতে হবে অন্য গ্রুপগুলোর খেলার উপর। অবশ্য গোল-ব্যবধানের হিসেবে দেখলে সুইজারল্যান্ডের চেয়ে ৫ গোলে এগিয়ে তারা। তবে তারা যদি ইতালিকে হারিয়ে দেয়, তবে তাদের সামনে সুযোগ থাকবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের রাউন্ডে ওঠার। আবার তারা যদি হারে, কিন্তু সুইজারল্যান্ডও তুরস্কের কাছে হারে তবে ওয়েলস গ্রুপ রানারআপ হবে।

ওয়েলসের স্কোয়াডে কোনো ইনজুরি-সমস্যা নেই এখনো। তারা চেষ্টা করবে তাদের সেরা একাদশটাই নামানোর। তাদের রিয়াল মাদ্রিদ উইঙ্গার গ্যারেথ বেল রয়েছেন তুখোড় ফর্মে। তুরস্কের সাথে পেনাল্টি মিস করলেও বানিয়ে দিয়েছিলেন রামজি ও রবার্টসের গোল দু’টি। রব পেজ এই খেলার জন্য সামান্য কিছু পরিবর্তনও আনতে পারেন, যদি তিনি চিন্তা করেন শেষ ১৬’র জন্য তার খেলোয়াড়দের ফিট রাখতে হবে। কিন্তু এটি খুব বড়সড় একটি ঝুঁকির কাজ হয়ে যায়।

অনেকদিন তিনজনের ডিফেন্স লাইন খেলানোর পর এই টুর্নামেন্টে আবার চারজনের ডিফেন্স লাইন খেলানো শুরু করেছে ওয়েলস। এই ম্যাচের জন্য স্ট্রাইকার কিফার মুরকে বিশ্রাম দিয়ে ফলস নাইন হিসেবে হ্যারি উইলসনকে খেলাতেন পারেন। তার দুইও পাশে খেলতে পারেন গ্যারেথ বেল ও ড্যানিয়েল জেমস।

ওয়েলসের গত ম্যাচের নায়ক বেল ও রামজি।  আজকেও পুরো ওয়েলসবাসী তাকিয়ে তাদের দিকে; Image Credit: Getty Image

 

তবে এই খেলায় যদি হুট করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তিনজনের ডিফেন্স লাইন নামানো হয় তবে নিকো উইলিয়ামসকে লেফট উইংব্যাক খেলানো হবে। আর তখন সেন্টারব্যাক হিসেবে দলে ঢুকবেন ক্রিস গান্টার। এজন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হতে পারে অ্যারন রামজিকে। তবে ইনফর্ম রামজিকে এভাবে বসানোর সম্ভাবনা কম।

ইতালির মতো একই ৪-৩-৩ ফরমেশনে নামতে পারে ওয়েলসও। যদিও তাদের ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন করে ৫-২-৩ স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তিত হতে পারে।  এই ম্যাচে গোলরক্ষক হিসেবে থাকবেন ড্যানি ওয়ার্ড। ডিফেন্সে রবার্টস, নেফাম, রডোন ও উইলিয়ামস; মাঝমাঠে মোরেল, অ্যালেন ও রামজি; সাথে ফরোয়ার্ড হিসেবে বেল, উইলসন ও জেমস। এই পর্যন্ত ২ ম্যাচে তারা তিনটি গোল করতে পেরেছে। সমানসংখ্যক একটি করে করেছেন, রবার্টস, রামজি ও মুর।  

পরিকল্পনা হিসেবে ওয়েলসেরও শুধু ড্র হলেই চলবে। তবে জিততে পারলে তাদের সামনে সুযোগ থাকবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ইতালির খেলার ধরন দেখে তারা তাদের খেলার ধরন পরিবর্তন করতে পারে। তাদের প্রচণ্ড রক্ষণাত্মক খেলার পাশাপাশি দ্রুত কাউন্টার-অ্যাটাক হলো তাদের শক্তির মূল উৎস। ইতালি বেশি চাপ প্রয়োগ করলে চারজনের ডিফেন্স লাইন পরিবর্তন করে পাঁচজনের লাইন করা হবে।

ওয়েলসের দুই উইঙ্গারের গতি তাদের আক্রমণের মূল ভিত্তি। একপাশে গ্যারেথ বেল আর অন্যদিকে ড্যানিয়েল জেমস মাঠে গতির ঝড় তোলেন। উইলসনকে ফলস নাইন হিসেবে খেলানো হলে এই দুইজন অনেক বেশি সামনে চলে যাওয়ার লাইসেন্স পাবেন। ইতালির ডিফেন্স লাইনের পেছন দিয়ে তারা দৌড়ানোর চেষ্টা করবেন। তাদের খেলার ধরনই হবে এমন যে কোনোমতে বল কেড়ে নিয়ে লম্বা পাসে বল আক্রমণভাগে থাকা খেলোয়াড়দের পৌঁছে দেওয়া।

ওয়েলসের সম্ভাব্য একাদশ; Image Credit: Buildlineup

 

অন্য কোনো অঘটন না ঘটলে এই দুই দলেরই এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। মুখোমুখি লড়াইসহ অন্য বেশ কিছু পরিসংখ্যানে ইতালি পরিষ্কারভাবে এগিয়ে থাকলেও ওয়েলস ছেড়ে দেওয়ার পাত্র হবে না। যেখানে সবাই ধারণা করছিল তারা টেবিলের চারে থাকবে, সবাইকে ভুল প্রমাণ করে তারা চলে এসেছে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে। সেভাবেই শেষ খেলায় ইতালিকে হারিয়ে আরেকটি অঘটনের জন্ম তারা দিতেই পারে। 

Related Articles