স্লেশউইগ-হোলস্টেইনে যখন লড়াই চলছে, তার মাঝেও জার্মান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি চালিয়ে যাচ্ছিল সমগ্র জার্মানির জন্য একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়নের কাজ। জার্মানিতে অস্ট্রিয়ার ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় তাদের বাইরে রেখে অখণ্ড জার্মানির কথা অধিকাংশ সদস্যই ভাবতে পারছিল না। আবার জার্মানির প্রধানতম রাষ্ট্র হিসেবে প্রুশিয়ার ব্যাপারও তাদের মাথায় রাখতে হচ্ছিল।
প্রস্তাবিত সমাধান অ্যাসেম্বলি ১৮৪৮ সালের অক্টোবর মাসে গসডয়েচ (grossdeutsch/greater-German) নামে এক ব্যবস্থার প্রস্তাব করল। এতে করে হাবসবুর্গদের জার্মান সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূখণ্ড নতুন একটি জার্মান সাম্রাজ্য/রাইখের অন্তর্ভুক্ত হবে। জার্মান সংবিধান অনুযায়ী এরা ভিন্ন একটি অস্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। জার্মানির অভ্যন্তরে অস্ট্রিয়ার অন্যান্য অঞ্চল সরাসরি ভিয়েনা থেকে শাসিত হবে।
এদিকে অক্টোবরের শেষদিকে প্রায় ২,০০০ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অস্ট্রিয়ান সরকারী বাহিনী ভিয়েনা থেকে বিপ্লবীদের উৎখাত করে। তাদের প্রধান, অস্ট্রিয়ান মিনিস্টার-প্রেসিডেন্ট শোয়ার্জেনবার্গ জার্মান গসডয়েচ মেনে নেবার কোনো কারণ দেখলেন না। ২৭ নভেম্বর তিনি জানিয়ে দিলেন অস্ট্রিয়া হাবসবুর্গ রাজতন্ত্রের অধীনস্থ এলাকার কোনো ভাঙন সহ্য করবে না।
অস্ট্রিয়ার থেকে দাগা খাবার পর অ্যাসেম্বলির সংখ্যালঘিষ্ঠ একটি দল সক্রিয় হয়ে উঠল। তারা আনল ক্লাইনডয়েচ (kleindeutsch /lesser-German) প্রস্তাব, যেখানে অভিন্ন জার্মান রাষ্ট্রে অস্ট্রিয়ার কোনো ভূমিকাই থাকবে না। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বময় ক্ষমতা চলে যাবে প্রুশিয়ার কাছে।
জার্মান সম্রাট
অভিন্ন জার্মান রাষ্ট্রের দিকে চোখ রেখে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি গঠন করেছিল একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যার আসলে জার্মান রাজ্যগুলোর উপর কোনো সত্যিকার ক্ষমতাই ছিল না। তবে অস্ট্রিয়ান আর্চডিউক জন তাদের নির্বাহী প্রধান বা রিজেন্ট ছিলেন বলে এর আইনগত একটি ভিত্তি থেকে যায়।
১৮৪৮ সালের নভেম্বরে এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী গ্যাগার্ন বার্লিনে এলেন। উদ্দেশ্য ফ্রেডেরিক উইলিয়ামের সাথে কথা বলে তাকে জার্মান সম্রাট (এম্পেরর/কাইজার) হতে রাজি করানো। ফ্রেডেরিক প্রথমে রাজি হলেন না। এর কারণ খুব কঠিন নয়। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ছিল লিবারেল আর জাতীয়তাবাদীদের আখড়া। তাদের কাছ থেকে জার্মান সম্রাটের পদবি গ্রহণ করলে একদিকে যেমন জার্মানির অন্যান্য রাজপরিবারগুলো নাখোশ হবে, অন্যদিকে অস্ট্রিয়া, রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো ক্ষেপে যেতে পারে। তবে তিনি ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন যদি অস্ট্রিয়ান এবং জার্মান রাজপরিবারগুলো থেকে এই প্রস্তাব তোলা হয়, তাহলে হয়তো তিনি মেনে নিতে রাজি আছেন।
নতুন সংবিধান
ফ্রেডেরিকের মনোভাব ইতিবাচক ধরে নিয়ে অ্যাসেম্বলি নতুন উদ্যমে সংবিধান লিখতে শুরু করে। এদিকে ১৮৪৯ সালের ৪ মার্চ অস্ট্রিয়া তাদের সংবিধান প্রকাশ করে। কিন্তু ভিয়েনার কাছে এই সংবিধান ছিল সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। ফলে অস্ট্রিয়াকে রেখে অভিন্ন জার্মানির স্বপ্ন যারা সাজাচ্ছিল তারা আরেকটি ধাক্কা খেল।
১৮৪৯ সালের ২৭ মার্চ জার্মান সংবিধান অ্যাসেম্বলিতে পাশ হলো। এখানে ফ্রেডেরিকের চাহিদা অনুযায়ী জার্মান সম্রাটের পদ বংশানুক্রমিক করা হয়েছিল হনজোলার্ন পরিবারের কথা চিন্তা করেই। ২৮ তারিখ সম্রাট নির্বাচনে অনুমিতভাবেই ফ্রেডেরিক উইলিয়াম বিজয়ী হন। তাকে নতুন করে এই পদ গ্রহণের প্রস্তাব দিতে প্রুশিয়ান লিবারেল সদস্য সিমসনের নেতৃত্বে একদল বার্লিন রওনা হয়। ফ্রেডেরিক তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেও তার পুরনো যুক্তি আবার তুলে ধরলেন, জার্মান রাজপরিবারগুলো সম্মতি না দিলে তিনি এই সম্মান গ্রহণ করতে পারেন না।
ফ্রেডেরিক আসলে ভয় পাচ্ছিলেন তিনি অ্যাসেম্বলির মাধ্যমে জার্মান সম্রাট নিযুক্ত হলে একদিকে তার ক্ষমতা হ্রাস পাবে, আবার পরাশক্তিগুলোর কাছে তিনি অপাংক্তেয় হয়ে যাবেন। বোন শার্লট, যিনি তখন পরিচিত জারিনা আলেক্সান্দ্রা ফেডোরোভনা নামে, তার কাছে লেখা চিঠিতে রাজা মতামত দিলেন অ্যাসেম্বলি তাকে এমন কিছু সাধছে, যা দেবার কোনো অধিকার প্রথম থেকেই তাদের ছিল না। তবে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন এই চিঠির মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশান জারকে আশ্বস্ত করা, যার কাছে এই চিঠির বিষয়বস্তু গোপন থাকবে না বলে ফ্রেডেরিক জানতেন।
অ্যাসেম্বলির ভাঙ্গন
জার্মান সংবিধান রচিত হয়েছিল ক্লাইনডয়েচ মডেলে। প্রতিবাদে শোয়ার্জেনবার্গ অস্ট্রিয়ার প্রতিনিধিদের ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে ডেকে পাঠালেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন অস্ট্রিয়া শুধু তখনই একীভূত জার্মানির ধারণা মেনে নেবে, যখন তা অস্ট্রিয়ার স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। সংবিধান প্রণয়নের পর আর্চডিউক জন পদত্যাগ করতে চাইলেও শোয়ার্জেনবার্গ তাকে পরামর্শ দেন আপাতত পদ ধরে রাখতে।
১৮৪৯ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ছোট ছোট প্রায় ২৮টি রাজ্য সংবিধানের প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করলেও বড় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র ভুর্তেমবার্গ ছাড়া আর কেউ এতে সায় দেয়নি। হ্যানোভার, স্যাক্সোনি, বাভারিয়ার মতো বড় বড় শক্তিগুলো প্রুশিয়ার দিকে চেয়ে ছিল। ২১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রুশিয়া সংবিধান প্রত্যাখ্যান করল। গ্যাগার্ন রিজেন্টের সাহায্য চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে মে মাসের ১০ তারিখ গ্যাগার্ন পদত্যাগ করলেন। এর পরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অ্যাসেম্বলির স্বল্পসংখ্যক রক্ষণশীল সদস্যরাও একে একে চলে যান। থেকে যাওয়া লিবারেলরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মান রাষ্ট্রের সম্মতির ভিত্তিতে রাজপরিবারগুলোর কাছে সংবিধান মেনে নেয়ার দাবি জানাল।
রাদোভিতজ প্ল্যান
২২ এপ্রিল, ১৮৪৯।
ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে প্রুশিয়ার প্রতিনিধি এবং ফ্রেডেরিকে ঘনিষ্ঠ জোসেফ মারিয়া ভন রাদোভিতজ বার্লিনে এলেন। তার উপর ভার পড়ল অখণ্ড জার্মানির একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তৈরির। অস্ট্রিয়াকে শান্ত রাখতে তিনি দুটি ইউনিয়নের প্রস্তাব করেন। প্রুশিয়ার নেতৃত্বাধীন উত্তর ও মধ্য জার্মান রাষ্ট্রগুলোর একটি ফেডারেল ইউনিয়ন, যা অস্ট্রিয়ার সাথে দ্বিতীয় আরেকটি ইউনিয়ন দ্বারা যুক্ত হবে। সারা মে মাস জুড়ে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের সাথে আলোচনা চলল। গোথ শহরের এক সম্মেলনের পর ২৬টি ছোট রাজ্য তার প্রতি সমর্থন দেয়। অস্ট্রিয়াও ইতিবাচক মনোভাব দেখাল।
কিন্তু প্রুশিয়ার ব্যাপারে সন্দিহান থাকায় বাভারিয়া আর ভুর্তেমবার্গ বিরোধিতা করে। তা সত্ত্বেও স্যাক্সোনি আর হ্যানোভারকে সাথে নিয়ে ১৮৪৯ সালের ২৬ মে এরফুর্ট শহরে একটি ফেডারেল ইউনিয়নের চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রুশিয়া (এরফুর্ট ইউনিয়ন)। পরের বছর জানুয়ারি মাসে এই ইউনিয়নের সংসদের নির্বাচনে ভোট এত কম পড়ে যে স্যাক্সোনি আর হ্যানোভার চুক্তি থেকেই বেরিয়ে যায়। ফলে প্রুশিয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। অস্ট্রিয়ানরাও ভোল পাল্টে ফেলে। ১৮৫০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে তারা তাদের পুরনো অখণ্ড হাবসবুর্গ ভূখণ্ডের সুর বাজাতে থাকে, সাথে সাথে ফেডারেল ডায়েটের পুনরুজ্জীবন চেয়ে বসে। রাশিয়াও এই ব্যাপারে তাদের সমর্থন দিল।
জার্মানিতে নতুন গোলযোগ
এদিকে সাংবিধানিক মতপার্থক্যকে পুঁজি করে লিবারেল আর জাতীয়তাবাদীদের উগ্রপন্থী অংশ সক্রিয় হয়ে উঠল। ১৮৪৯ সালের মে মাসে ড্রেসডেনে তার গণ্ডগোলের সৃষ্টি করে। বাভারিয়ার কিছু অঞ্চলেও তাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সবথেকে বড় সাফল্য তারা অর্জন করে ব্যাডেনে। সেখানে সরকারী বাহিনীর একাংশের সহযোগিতায় বিপ্লবীরা ব্যাডেনকে রিপাবলিক ঘোষণা করে। ব্যাডেনের শাসক পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
প্রুশিয়া এবং অন্যান্য জার্মান শক্তি দ্রুত সক্রিয় হয়। বিপ্লবীদের দমন করতে তারা অগ্রসর হলো ব্যাডেনের দিকে। এদিকে অ্যাসেম্বলির সদস্যরা ভয় পেলেন বিপ্লবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল তকমা দিয়ে তাদের উপর হত্যা নির্যাতন নেমে আসে কিনা। ফলে ৩১ মে তারা অধিবেশন সরিয়ে নেন ভুর্তেমবার্গের স্টুটগার্টে। বহু সদস্য অ্যাসেম্বলি ত্যাগ করেন, ফলে স্টুটগার্টে মাত্র শ’খানেক ডেপুটি উপস্থিত হন। এখানে অবশিষ্ট ডেপুটিরা সংবিধান মেনে নিতে চাপ সৃষ্টি করবার জন্য ১৬ জুন একটি জনতার সেনাদল গঠনের ঘোষণা দেন। ততদিনে প্রুশিয়া ব্যাডেনে বিপ্লবীদের পরাজিত করেছে। সেখানে অবশ্য রাজপরিবারের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে ১৮৫২ সাল পর্যন্ত প্রুশিয়ানরা থেকে গিয়েছিল। ব্যাডেন শান্ত করে প্রুশিয়ানরা নজর দিল অ্যাসেম্বলির দিকে।
জনতার সেনাদল গঠনের কথায় ভুর্তেমবার্গের সরকার নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। ১৭ জুন তারা অ্যাসেম্বলিকে স্টুটগার্ট ত্যাগের নির্দেশ জারি করে। অধিবেশন স্থলে সেনা মোতায়েন হয়। এরপর কার্যত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি শেষ হয়ে যায়, তবে রিজেন্টের অফিস তখনো বহাল তবিয়তে ছিল। ১৮৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর অস্ট্রিয়ার প্রকাশ্য অংশগ্রহণে কনফেডারেট ডায়েট নতুন করে পুনর্গঠিত হয়। তবে সেখানে তখনও অনেক জায়গার প্রতিনিধি নির্বাচন বাকি ছিল এবং অভিন্ন জার্মান রাষ্ট্রের ব্যাপারে প্রুশিয়া ও অস্ট্রিয়ার চিন্তাভাবনা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।
হেসে-কেসেল নিয়ে প্রুশিয়া-অস্ট্রিয়া দ্বন্দ্ব
হেসে-কেসেল রাজ্যের অবস্থান ছিল এমন এক স্থানে, যার পাশ দিয়ে রাইনল্যান্ড আর ওয়েস্টফ্যালেয়া থেকে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে রাস্তা চলে গিয়েছিল। প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর চলাচলে এই পথ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তাদের কাছে হেসে-কেসেলের কৌশলগত তাৎপর্য অনেক। ১৮৫০ সালের শেষদিকে এখানকার শাসক বিপ্লবী মতাদর্শ দমন করতে নিষ্ঠুর পন্থা অবলম্বন করতে চাইলে তার স্থানীয় ডায়েট এবং সেনাদলের অনেকেই বিরোধিতা করল। ফলে তিনি সেপ্টেম্বরে কনফেডারেট ডায়েটের পুনর্গঠনের পর তাদের সাহায্য চাইলেন।
অস্ট্রিয়ার শোয়ার্জেনবার্গ সুযোগ চিনতে ভুল করলেন না। হেসে-কেসেলে অস্ট্রিয়ান সেনা মোতায়েন থাকলে ফ্রেডেরিকের উপর চাপ সৃষ্টি হবে, ফলে তাকে বাধ্য করা যাবে কনফেডারেট ডায়েট এবং অখণ্ড জার্মানির ব্যাপারে অস্ট্রিয়ার প্রস্তাবনা মেনে নিতে। শোয়ার্জেনবার্গের মদদে ডায়েট আইন পাশ করে হেসে-কেসেলের সাহায্যার্থে সামরিক অভিযান অনুমোদন করে।
ফ্রেডেরিক প্রচণ্ড রেগে গেলেন। রাদোভিতজকে তিনি নিয়োগ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রুশিয়ান সেনাদের একটি ছোট দল হেসে-কেসেলের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে ঘাঁটি করল। ২৬ অক্টোবর ডায়েট হ্যানোভার আর বাভারিয়ান সেনাদের হেসে-কেসেলে অগ্রসর হবার আদেশ জারি করে। জার্মান গৃহযুদ্ধ আসন্ন হয়ে উঠল। পয়লা নভেম্বর বাভারিয়ান সেনাদের হেসে-কেসেলের সীমান্ত অতিক্রমের খবর প্রুশিয়াতে এসে পৌঁছলে মন্ত্রীসভা আলোচনায় বসল। বেশিরভাগই চাচ্ছিল যুদ্ধের দিকে না গিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে কোনো সমাধানে পৌঁছতে।
৫ নভেম্বর শোয়ার্জেনবার্গ দাবি করলেন প্রুশিয়ান সেনা উপস্থিতি সম্পূর্ণভাবে হেসে-কেসেল থেকে সরিয়ে নিতে। ফ্রেডেরিক এবার যুদ্ধপ্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। ২৪ নভেম্বর অস্ট্রিয়া আর রাশিয়ার যৌথ চরমপত্র পৌঁছল বার্লিনে। আগামি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হেসে-কেসেল থেকে প্রুশিয়ার সেনা সরিয়ে নিতে হবে, না হলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। রাশিয়ার সাথে লড়াই করবার কোনো ইচ্ছা প্রুশিয়ার ছিল না। উপরন্তু প্রুশিয়ান অভিজাতবর্গ রাজার উপর চাপ সৃষ্টি করলেন অস্ট্রিয়ার কাছে নতি স্বীকার করতে। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রুশিয়া সেনা সরিয়ে নেয়।
অল্মুটজ সম্মেলন
বোহেমিয়ার অন্তর্গত শহর অল্মুটজে (Olmütz) ২৮-২৯ নভেম্বর সব পক্ষের সভায় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো (Punctation of Olmütz, প্রুশিয়ানদের কাছে ছিল অল্মুটজের অপমান বা Humiliation of Olmutz)। প্রচণ্ডভাবে অনিচ্ছুক ফ্রেডেরিক কনফেডারেট ডায়েট মেনে নেন, তিনি সম্মত হন হেসে-কেসেলের সমস্যা সমাধানে কনফেডারেট বাহিনীতে প্রুশিয়ার অংশগ্রহনেও।
হেসে-কেসেল এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে সমস্ত প্রুশিয়ান সেনাদলকে ফিরিয়ে নেবার শর্তও জারি হয়। অস্ট্রিয়া আর প্রুশিয়া জার্মান কনফেডারেশনের কাঠামো কী হবে তা নিয়ে একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। কিন্তু ১৮৫১ সালে যখন কনফেডারেশনের কাঠামো বাস্তবায়িত হল, দেখা গেল যেই লাউ সেই কদুই রয়ে গেছে। ১৮১৫ সালের কনফেডারেশন থেকে বলার মতো কোনো পরিবর্তন হয়নি।