Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কে জিততে চলেছে এবারের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট? || পর্ব ২

ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট সম্পর্কিত চলমান সিরিজের প্রথম পর্বে আমরা প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী, তারকা ধারাভাষ্যকারদের বিষয়ে জেনেছি। এবং একনজরে খেলোয়াড়দের পরিচিতিপর্বের মাঝপথে আছি। এমভিএল, নেপো আর ফাবিয়ানোর কথা আলোচিত হয়েছে, এ পর্বে থাকবেন বাকি পাঁচজন দাবাড়ু। পরে আসবে সার্গে কারিয়াকিনের মুল্যবান মতামত এবং বিগত ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টগুলোর আলোকে এবারের সম্ভাব্য ফলাফল।

আনিশ গিরি – বয়স ২৫ – রেটিং ২৭৭৬

ফেব্রুয়ারি ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২০ এই ১২ মাসের সর্বোচ্চ রেটিংধারী হিসেবে এই ক্যান্ডিডেটসে সুযোগ পেয়েছেন ডাচ গ্র্যান্ডমাস্টার আনিশ গিরি। এবার তার দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট, ২০১৬ আসরে সবগুলো গেমে ড্র করে (৭/১৪) চতুর্থ স্থান অর্জন করেছিলেন গিরি। টুইটারে যে গুটিকয়েক দাবাড়ু বেশি সরব থাকেন, গিরি তাদের অন্যতম। খেলার মাঠেও কিন্তু বাকিদের থেকে তিনিই বেশি অ্যাক্টিভ। ৭২২ গেম খেলে গত এক বছরে বাকি সবার থেকে এদিকে এগিয়ে আছেন এই নেপালি-রুশ বংশোদ্ভূত। দারুণ ছন্দে আছেন আনিশ; ওভার দ্য বোর্ডে যেমন, তেমনই অনলাইনেও! 

২৮ এপ্রিল টুর্নামেন্ট শেষে এই মেডেল কার গলায় উঠবে কে জানে! Image Courtesy: FIDE

 

সদ্য শেষ হওয়া টাটা স্টিল চেস মাস্টার্স-এ ইয়োর্ডেন ভান ফরেস্টের সাথে যৌথভাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন এই ডাচ (টাইব্রেকে দ্বিতীয়)। এই টাটা স্টিল চেস টুর্নামেন্টে তিনি ক্যান্ডিডেটসের বর্তমান শীর্ষস্থানধারী এমভিএলকেও একবার হারিয়েছিলেন, মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে যা নিশ্চয়ই খানিকটা এগিয়েই রাখবে গিরিকে। আবার অন্যদিকে অনলাইন দাবার কথা বলতে গেলে, চেসেবল মাস্টার্সের ফাইনালে ওঠেন গিরি, সেখানে কার্লসেনের কাছে হেরে যান। এরপর সেমি-মেজর টুর্নামেন্ট মিস্টার ডজি ইনভিটেশনালে চ্যাম্পিয়ন হন। লিজেন্ডস অফ চেস-এর সেমিফাইনালে ইয়ান নেপোমনিয়াশির কাছে হেরে গেলেও ম্যাগনাস কার্লসেন ইনভিটেশনালের ফাইনালে নেপোকে হারিয়ে প্রতিশোধ ঠিকই সুদে-আসলে তুলে নেন গিরি। আর এটিই ছিল ক্যান্ডিডেটসের পূর্বে খেলা সর্বশেষ মেজর (১৩-২১ মার্চ, ২০২১)। এটি নিশ্চয়ই তাকে দারুণ আত্মবিশ্বাস এনে দেবে। তাই আনিশ কুমার গিরির পক্ষে বাজি আপনি ধরতেই পারেন! 

পয়েন্ট তালিকায় বেশ ভালো পজিশনে আছেন গিরি, সাথে ফর্মটাও যাচ্ছে দারুণ; Image Courtesy: Lennart Ootes/FIDE

ওয়াং হাও – বয়স ৩০ – রেটিং ২৭৬৩

২০১৯ ফিদে গ্র্যান্ড সুইস জিতে নিজের প্রথম ক্যান্ডিডেটসে জায়গা করে নিয়েছেন চীনা দাবাড়ু ওয়াং হাও। বাকি সব প্রতিযোগীর চেয়ে সবচেয়ে কম গেম খেলেছেন হাও এই প্যান্ডেমিকের ভেতর। সম্ভবত করোনার সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা চাইনিজ দুই দাবাড়ুর উপর দিয়েই গেছে। গত এক বছরে অনলাইনে ডেটাবেইজে হাওয়ের মাত্র ২০টি গেম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার সব অনলাইনে। মে, ২০২০ অনলাইন নেশন্স কাপে তিনি বিদিত গুজরাতিকে হারান, কিন্তু কারুয়ানার বিপক্ষে দুবার হেরে যান। 

গত নভেম্বরের হাইনান দাংজৌ ইভেন্টও ভালো যায়নি ওয়াং-এর। ১৪ তে মাত্র ৫.৫ পয়েন্ট নিয়ে ভেসেলিন তোপালভ-এর সাথে যৌথভাবে শেষ স্থান অর্জন করেন। চেস ডট কমকে মেইলে হাও জানান, চীনে আরও দুটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন তিনি যেগুলো ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। একটিতে ফিফটি পারসেন্ট ও অন্যটিতে প্লাস টু স্কোর করেন হাও। সর্বোপরি বিশ্বের ১২তম র‍্যাঙ্কিংধারী এই দাবাড়ুর উপর প্রত্যাশার চাপ কম থাকবে ধরা হচ্ছে। 

পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি আশাহীন হয়ে যায়নি গ্রিশচুক-হাও এর জন্য; Image Source: FIDE 

অ্যালেক্সান্ডার গ্রিশচুক – বয়স ৩৬ – রেটিং ২৭৭৭

অ্যালেক্সান্ডার গ্রিশচুক ২০১৯ ফিদে গ্র্যান্ড প্রিক্স টুর্নামেন্ট জিতে এবারের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে নিজের স্থান অর্জন করেন। এর আগে ২০০৭ এবং ২০১১ ক্যান্ডিডেটস ম্যাচ খেলেছেন। নতুন পদ্ধতিতে আসার পর ২০১৩ এবং ২০১৮ ক্যান্ডিডেটসেও খেলেছেন তিনি, উভয় টুর্নামেন্টেই ১৪ তে ৬.৫ পয়েন্ট পেয়ে যৌথভাবে পঞ্চম হয়েছেন। সাশা (অ্যালেক্সান্ডার নামের কোনো ব্যক্তির ডাকনাম) গত প্যান্ডেমিকের বছর অনলাইনে মোটে ৪১৮টি গেম খেললেও ওভার দ্য বোর্ডে একটিও খেলতে পারেননি। রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপও মিস করেন তিনি। 

দুর্ভাগ্যজনকভাবে সময়টা ভালো কাটছে না এই রুশ গ্র্যান্ডমাস্টারের। ফিদে অনলাইন স্টেইনিজ মেমোরিয়ালে পয়েন্ট তালিকায় এক্কেবারে সবার শেষ স্থান অর্জন করেন সাশা। চেসেবল মাস্টার্স-এ কোনোমত নক-আউট পর্যায়ে যেতে পারলেও লিন্ডরেস অ্যাবে টুর্নামেন্ট ও এয়ারথিংস মাস্টার্সে নক-আউটেই উঠতে পারেননি বর্ষীয়ান এই দাবাড়ু। গ্রিশচুক তার দুর্দান্ত সব হাস্যরসাত্মক ইন্টারভিউয়ের কল্যাণে নেটিজেনদের কাছে খুবই বিখ্যাত, ইউটিউবে sasha thug life লিখে সার্চ করলেই তার অসাধারণ ভিডিওগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে! 

গ্রিশচুক এবং লিরেন চিন্তায় মগ্ন, রাউন্ড ৫, ২২ মার্চ, ২০২০; Image Courtesy: Maria Emelianova/FIDE

 

ডিং লিরেন – বয়স ২৭ – রেটিং ২৭৯১

এবারের ক্যান্ডিডেটসের প্রথম পর্বের সাত রাউন্ডে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেননি যারা, তাদের তালিকায় একেবারে প্রথমে নামটা আসবে ডিং লিরেনের। তার ২.৫/৭ পয়েন্ট এক ধাক্কাও বটে। কার্লসেন-কারুয়ানার পরই বিশ্বর‍্যাঙ্কিংয়ে এই চীনার অবস্থান, শুরু থেকেই কারুয়ানা এবং ডিংকে ফেবারিট ধরে নিয়েছিলেন দাবাবোদ্ধারা। কিন্তু সম্ভবত করোনার একটা মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা থেকে গেছে ডিংয়ের মনে। ক্যান্ডিডেটসের প্রথম ধাপের পর থেকে এখন অবধি ২২১টি অনলাইন গেম খেললেও ওভার দ্য বোর্ড গেম খেলেননি একটিও। সেখানেও ফর্মের খরা চলছে। ম্যাগনাস কার্লসেন ইনভিটেশনালের ২০২০ আসরে ম্যাগনাসকে প্রাথমিক পর্বে ৩-১ পয়েন্টে হারালেও সেমিফাইনালে তার কাছে ২.৫-১.৫ পয়েন্টে হেরে যান ডিং। এরপর হাইনাং দাংজৌ ইভেন্টে দ্বিতীয় হন এবং লিন্ডরেস অ্যাবেতে নক-আউট পর্বে দানিয়েল দুবভের কাছে হেরে বিদায় নেন। বর্তমানে ক্যান্ডিডেটসের র‍্যাঙ্কে শেষদিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থান তার।  

টুর্নামেন্টটা একদম ভালো যাচ্ছে না এই দুজনের; Image Courtesy: FIDE

কিরিল আলেকসেঙ্কো  – বয়স ২২ – রেটিং ২৬৯৬

ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে এবার নিজের প্রথম ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট খেলছেন রুশ দাবাড়ু কিরিল আলেকসেঙ্কো। তিনি ফিদে গ্র্যান্ড সুইস টুর্নামেন্টে তৃতীয় হন, ওয়াইল্ড কার্ড পেতে এটি সহায়ক হয়েছে তার জন্য। গত বছর তিনি সর্বসাকুল্যে ২৬৩টি গেম খেলেছেন, যার মধ্যে ১৮২টিই চেস ডট কমের টাইটেলড টুয়েজডে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় পর্বে খেলা শুরু হলে প্রথম স্থান অর্জনের লক্ষ্য না থাকলেও নিশ্চয়ই মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন তিনি।  

টুর্নামেন্টের বর্তমান অবস্থান ও কিছু কথা

সাত রাউন্ড শেষে ক্যান্ডিডেটস-এর পয়েন্ট টেবিল; Image Courtesy: Imran Shorif Shuvo

ভবিষ্যদ্বাণী করা বরাবরই খুব কঠিন, যদি সেটি হয় ভবিষ্যতের কোনো কিছুর ব্যাপারে!”- মজার এই উক্তিটি মার্ক টোয়াইন, আলবার্ট আইনস্টাইন, যোগী বেরিসহ আরও অনেকের নামেই প্রচলিত আছে। ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটি আরও উপযোগী হিসেবে পরিদৃষ্ট হচ্ছে। এক ফেবারিট কারুয়ানা চতুর্থ পজিশনে থাকলেও আরেকজনের অবস্থান একবারে সাতে! নেপো-মাক্সিম এক্কেবারে শুরুতে আছেন পয়েন্ট তালিকার। বাকি রাউন্ডগুলো এভাবেই খেলতে পারলে হয়তো তাদেরই কেউ একজন বিজয়ী হবেন। কিন্তু মাঝ বরাবর যারা আছেন, তাদের উত্থানের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। অভিজ্ঞ ফাবি কিংবা ফর্মের তুঙ্গে থাকা গিরি দুজনই কিন্তু নিজের স্পট বুঝে নিতে জানেন। 

ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট ২০২০-২১ বিষয়ক চলমান সিরিজের এই দুই পর্বে এ পর্যন্ত আমরা মর্যাদাপূর্ণ এই ইভেন্টের নিয়মকানুন, প্রাইজমানি, খেলোয়াড়দের সম্পর্কে হালকা বিবরণী এবং বর্তমানের পয়েন্ট তালিকা দেখেছি। তৃতীয় এবং শেষ পর্বে আমরা এবারের ক্যান্ডিডেটস সম্পর্কিত ২০১৬ ক্যান্ডিডেটস বিজয়ী সার্গে কারিয়াকিনের মূল্যবান বিশ্লেষণ জানবো, এবং ২০১৩-১৮ পর্যন্ত বিগত ক্যান্ডিডেটস-এর ফলাফল আতশকাঁচের নিচে রেখে কাটাছেঁড়া করবো; সাথেই থাকুন।

Related Articles