Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাদাগাস্কার: বৈচিত্র্যময় এক জীবজগতের পুণ্যভূমি

আর্কিওলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন অনুযায়ী, সর্বপ্রথম প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে মাদাগাস্কারে মানুষের পদচিহ্ন রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর অবস্থান আফ্রিকার খুব কাছে হওয়ায় এখানকার মানুষের আচার-আচরণে এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় আফ্রিকান প্রভাব স্পষ্ট। যদিও জীবনধারণের নানা পর্যায়ে এশীয় ভাবধারায় চর্চাও পরিলক্ষিত হয়। 

পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম এই দ্বীপের নামকরণ করেন মার্কো পোলো। ১৫ শতকে ধীরে ধীরে এখানে সর্বপ্রথম ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে। পর্তুগালের নাবিক ডিয়াগো ডিয়াস ছিলেন সর্বপ্রথম ইউরোপীয়, যিনি মাদাগাস্কার দ্বীপে পা রাখেন। তিনিই এই দ্বীপের আবিষ্কারক। তার সম্মানার্থেই মাদাগাস্কারের উত্তরাঞ্চলের নাম রাখা হয়েছে ‘ডিয়াগো সুয়ারেজ’।

ভৌগোলিক অবস্থান

প্রাণীবৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর দ্বীপ। গ্রীনল্যান্ড, নিউ গিনি আর বর্নিওর পর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার পর এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র। এই দ্বীপকে আফ্রিকান মহাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে মোজাম্বিক চ্যানেল। দ্বীপটি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাদাগাস্কারের উপকূলরেখা প্রায় ৪,৮২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বীপের দৈর্ঘ্য প্রায় ১,৫৭০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ প্রায় ৫৭০ কিলোমিটার, এবং আয়তন ৫,৮৭,২৯৫ বর্গ কিলোমিটার।

বাস্তুসংস্থান

দ্বীপটির পূর্বাঞ্চল মূলত রেইনফরেস্টে আবৃত। পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চল তুলনামূলক শুষ্ক এবং ট্রপিক্যাল ফরেস্টে আবৃত। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতি আর প্রাণীকূলের সন্ধান পাওয়া যায় এই দ্বীপে। অদ্ভুতুড়ে আর বৈচিত্র্যময় প্রাণীর দেখা মেলে এখানে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এখানে যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়, তাদের অধিকাংশের দেখাই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

যার ফলে মাদাগাস্কারের উদ্ভিদ-প্রাণীকূলের অধিকাংশই এন্ডেমিক। এত বৈচিত্র্যময় জীবকূলের সমাবেশের জন্য এটি বর্তমানে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ইকোলজিক্যাল হটস্পটে পরিণত হয়েছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদাগাস্কারের প্রায় ৯৬ শতাংশ ভাস্কুলার উদ্ভিদ এন্ডেমিক, ৪৫ শতাংশ ফার্ন এন্ডেমিক, পাম জাতীয় উদ্ভিদগুলো ৯৭ শতাংশ এন্ডেমিক, ৮৫ শতাংশ অর্কিড এন্ডেমিক, মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এমন ৯০ শতাংশ সরীসৃপই এন্ডেমিক, মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এমন উভচরদের ১০০ শতাংশই এন্ডেমিক, ৩৭ শতাংশ পাখি আর ৭৩ শতাংশ বাদুর, যাদেরকে মাদাগাস্কারে পাওয়া যায়- তারাও এন্ডেমিক। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মাদাগাস্কারে যে জীবকূল পাওয়া যায়, তা অন্যান্য স্থানের স্বাভাবিক জীবকূলের মতো অতটাও সহজ বা স্বাভাবিক নয়, যার ফলে মাদাগাস্কারের একটা আলাদা বাস্তুতান্ত্রিক মূল্য তৈরি হয়।

মাদাগাস্কারের প্রাণীকূল

এ অঞ্চল ছাড়া অন্য কোনো অঞ্চলে এসব প্রাণী বা উদ্ভিদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এই দ্বীপের প্রাণীগুলোর অধিকাংশই একটু আলাদা ধরনের হয়। এদের স্বকীয়তার মধ্যেও যেন এক অদ্ভুতুড়ে নতুনত্ব বিদ্যমান। এ দ্বীপে প্রাণীগুলোর মধ্যে বিবর্তনের ধারা স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। কিছু কিছু প্রাণীর মধ্যে একাধিক প্রজাতির বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়; যেমন- ফসা।

একে দেখতে অনেকটাই বেজি, কুকুর আর বেড়ালের সংকর মনে হয়। প্রাণীটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ছয় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর লেজের দৈর্ঘ্য মূল দেহের দৈর্ঘ্যের কাছাকাছি। এদের মাথা খানিকটা বেড়ালের মতো, আকারে ছোট। থাবা অনেকটাই কুকুরের মতো, কান খানিকটা গোলাকার। এরা মাদাগাস্কারের অন্যতম প্রধান শিকারী। এরা দিনে-রাতে শিকার করে থাকে। এদের খাদ্যের অনেকটাই আসে লেমুর শিকারের মাধ্যমে।

 ফসা; Image Source: Skyrock.com

এরা খুবই চটপট করে গাছে উঠতে পারে। পুরুষ ফসাদের চেয়ে নারী ফসারা বেশি বলিষ্ঠ। এরা একাকী জীবন কাটাতে বেশি পছন্দ করে।

লেমুর মাদাগাস্কারের আরেকটি পরিচিত প্রাণী। এর চোখগুলো বড় বড়। মুখ দেখতে খানিকটা শেয়ালের মতো, আর শরীর অনেকটাই বানরের মতো। একটি লম্বা লেজও আছে। দৃষ্টিশক্তির তুলনায় এদের ঘ্রাণশক্তি প্রখর। এদের চোখ অনেকটাই রাতে চলাচল করার জন্য উপযোগী। এরা খুবই নিরীহ, ভীতু প্রকৃতির দলপ্রিয় প্রাণী। প্রায় ১০৫টির বেশি প্রজাতি বিদ্যমান। এরা নিশাচর। প্রজাতিভেদে ওজন ৩০ গ্রাম (মাউস লেমুর) থেকে ৯ কেজি (ইন্দ্রি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য মূলত ফুল, ফল ও পাতা। বনভূমি ধ্বংস করা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রাণীটি বিপন্ন।

লেমুর; Image Source: Britannica.com

প্যানথার ক্যামেলিয়ন একধরনের রঙিন গিরগিটি। দৈর্ঘ্য গড়ে ১৭ সেন্টিমিটার মতো হয়ে থাকে। নারী প্যানথার ক্যামেলিয়নরা দৈর্ঘ্যে পুরুষদের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। পুরুষ প্যানথার ক্যামেলিয়নদের দেহ বেশি রঙিন হয়। এদের জীবনকাল আনুমানিক ৫-৭ বছর।

প্যানথার ক্যামেলিয়ন; Image Source: Lizardtypes.com

টমেটো ফ্রগ হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি অন্যতম এন্ডেমিক প্রাণী। পুরুষ ব্যাঙগুলো হলুদ-কমলা রঙা আর নারী ব্যাঙগুলো লাল-কমলা রঙা হয়ে থাকে। জীবনের বেশিরভাগ সময় এরা পাতা এবং মাটির নিচে ঘাপটি মেরে বসে থেকে কাটিয়ে দেয়। এদের চামড়া থেকে একধরনের বিষ বের হয়, যা এদের আত্মরক্ষার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে কাজ করে। এরা সাধারণত লম্বায় ৬০-৯০ মিলিমিটারের মতো। পুরুষ ব্যাঙদের চেয়ে নারী ব্যাঙগুলো খানিকটা বড় হয়ে থাকে।

টমেটো ফ্রগ; Image Source: Pinterest.com

অ্যাংগোনোকা টরটয়েজ হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি এন্ডেমিক প্রাণী। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণীটির মাত্র চারশো জীবন্ত ফসিল প্রকৃতিতে বিদ্যমান। এদের খোলসের রঙ হালকা বাদামি। পুরুষ কচ্ছপদের দৈর্ঘ্য ৪১.৪২ সেন্টিমিটার মতো হয়ে থাকে এবং নারীদের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য ৩৭ সেন্টিমিটার হয়। পুরুষ এবং নারীর ওজন যথাক্রমে ২৩ এবং ১৯ পাউন্ডের মতো হয়ে থাকে। এই প্রজাতির কচ্ছপগুলোর মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষরা আকারে খানিকটা বড় হয়ে থাকে।

অ্যাংগোনোকা টরটয়েজ; Image Source: Thoughtco

মাদাগাস্কান ফ্লাইং ফক্সকে ‘মাদাগাস্কার ফ্রুট ব্যাট’ও বলে। এদের প্রধান আবাসস্থল হলো মাদাগাস্কারের সাবট্রপিক্যাল এবং ট্রপিক্যাল জঙ্গল। খাদ্যতালিকায় আছে ডুমুর, নানা রকম ফল এবং পাতা। এরা মাদাগাস্কারের সবচেয়ে বড় বাদুর। এদের শরীরের দৈর্ঘ্য ২৩.৫-২৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ডানার বিশালতা ১০০-১৫০ সেন্টিমিটার। এদের বুকের দিকের রঙ বাদামি। বাকি পাখার রঙ কালোমতো। পুরুষ বাদুরের মাথা নারীদের চেয়ে কিঞ্চিৎ বড়।

মাদাগাস্কান ফ্লাইং ফক্স; Image Source: Animalia.bio

অতীব সুন্দর পাখিটির নাম ব্লু কুউয়া। এটাও মাদাগাস্কারের এন্ডেমিক। মনোলোভা এই পাখির চোখের চারদিকের খানিকটা জায়গায় কোনো পালক নেই। কোকিল পরিবারভুক্ত হওয়ায় এর মধ্যে কোকিলের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। যেমন, খানিকটা বড় পা, লম্বা লেজ, বড় পাখা। এরা দৈর্ঘ্যে ৪৮-৫০ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। গায়ের রঙের অধিকাংশই নীল।

ব্লু কুউয়া; Image Source: Ebird

এরকম আরো অনেক অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাণীর বিচরণস্থল পৃথিবীর এই ৪র্থ বৃহত্তর দ্বীপ। আরো কয়েকটি প্রাণীর নাম উল্লেখ না করলেই নয়- এসিটি পাখি, ভাঙাপাখি, বপিস ব্যাঙ,পারসনস ক্যামেলিয়ন, রেড আউল, গোল্ডেন ম্যান্টেলা ইত্যাদি।

মাদাগাস্কারের উদ্ভিদকূল

মাদাগাস্কারের প্রাণীদের মতো এখানকার উদ্ভিদকূলও অনেক বৈচিত্র্যময়। পুরো মাদাগাস্কার জুড়ে প্রায় ১১,০০০ এর মতো উদ্ভিদ আছে, যাদের শুধু এ দ্বীপেই পাওয়া যায়।

বাওবাব গাছ মাদাগাস্কারের অন্যতম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গাছ। এই বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রায় নয়টি প্রজাতির মধ্যে ছয়টিই মাদাগাস্কারের স্থানীয়। এই ছয় প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে থাকা প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নাম আদানসোনিয়া জা (Adansonia za)। এর স্থানীয় নাম বোজি বা বোজেবি। লম্বায় ৩৩-১৩১ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। ব্যাসার্ধ ক্ষেত্রবিশেষে ২০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। উদ্ভিদের পাতাগুলো ৫-৮টি লোবে ভাগ করা। প্রতিটি পাতা লম্বায় ৫-১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থে ১.৫-২.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মাদাগাস্কারের উত্তরাঞ্চলের বাওবাব গাছগুলো মাদাগাস্কারের অন্যান্য এলাকার চেয়ে বড় হয়ে থাকে। সেখানকার গাছগুলোর পাতা লম্বায় প্রায় ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাওবাব গাছগুলো প্রায় তিন হাজার বছর বাঁচতে পারে। এদেরকে ‘উল্টো গাছ’ও বলা হয়, কারণ মাথার ডালপালাগুলোকে অনেকটাই বিন্যাসিত গাছের শেকড়ের মতো দেখায়।

বাওবাব গাছ; Image Source: Earth.com

বিসমার্ক পাম ট্রি হলো মাদাগাস্কারের আরেকটি স্থানীয় উদ্ভিদ, যা প্রায় ৩০-৬০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ঝড়ঝঞ্ঝার ফলে গাছটি সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ গাছ সহজেই খরা এবং লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এদের পাতা বাড়ির ছাদ, দেয়াল দেবার কাজে বাবহার করা হয়। তেতো সাবু তৈরি করা যায় এই গাছ থেকে, যা অনেকেই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।

বিসমার্ক পাম গাছ; Image Source: Gardenia.net

মাদাগাস্কারের স্থানীয় কলা গাছ বর্তমানে খুবই বিপন্ন। এদের উৎপাদন পুরো মাদাগাস্কারের একটি নির্দিষ্ট অংশে হওয়ায় এরা অধিক বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। এরা মাদাগাস্কারের শুষ্ক ট্রপিক্যাল বনাঞ্চলে জন্মে থাকে। এই গাছগুলো বিপন্ন হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে আছে কৃষির জন্য বনাঞ্চল ধ্বংসকরণ এবং একধরনের ফাংগাল রোগ।

মাদাগাস্কান কলা গাছ; Image Source: The culture trip

অক্টোপাস ট্রি, মাদাগাস্কারের আরেকটি নান্দনিক এন্ডেমিক উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদগুলো সাধারণত মাদাগাস্কারের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে শুষ্ক বনভূমিতে বেশি জন্মায়। দেহ কাঁটায় আবৃত আর পাতা ও কাণ্ড রসালো হওয়ায় এরা সহজেই শুষ্ক আবহাওয়ায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে।

মাদাগাস্কারের অক্টোপাস ট্রি; Image Source: Pinterest.com

 

মাদাগাস্কারের প্রায় ১২ হাজারের মতো উদ্ভিদ রয়েছে, যার ১০টির একটিই হলো অর্কিড। মাদাগাস্কারে প্রাপ্ত অর্কিডদের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ আবার এন্ডেমিক। এমনই একটি হলো ডারউইন্স অর্কিড। এদের আকৃতি অনেকটাই ছয়কোণা তারার মতো, এদের নেক্টার স্পার খানিকটা মূল দেহ হতে বের হয়ে এসে বাড়তি সৌন্দর্য দান করে।

ডারউইন্স অর্কিড; Image Source: Earthlingnature.wordpress.com

উদ্ভিদটিকে ‘ট্রাভেলার ট্রি’ বলা হয়, কারণ এর পাতার গোড়ায় থলের মতো স্থানে গাছ জরুরি সময়ে ব্যবহারের জন্য পানি জমিয়ে রাখে। ফলে ভ্রমণকারীরা যদি কখনো ভ্রমণে গিয়ে তৃষ্ণায় ভোগেন এবং আশেপাশে যদি কোনো ট্রাভেলার পাম ট্রি থাকে, তারা সহজেই তাদের তৃষ্ণা দূর করতে পারেন। এরা প্রায় ২৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছের মাথায় কলাপাতার মতো পাতা মেলে থাকা ময়ূরের পাখার মতো হয়ে সজ্জিত থাকে।

ট্রাভেলার্স ট্রি; Image Source: Pinterset.com

এছাড়াও এরকম আরো অনেক বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ মাদাগাস্কারে বিদ্যমান, যেগুলো মাদাগাস্কারের প্রকৃতিকে অনন্যসাধারণ করে তুলছে সর্বদা।

প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং আসন্ন চ্যালেঞ্জ

মাদাগাস্কার প্রাণ ও প্রকৃতির এক অপার মিলনক্ষেত্র। এখানকার প্রাণোচ্ছ্বলতা যেকোনো দেউলিয়া মনে এনে দেয় অপার প্রশান্তি। কিন্তু ক্রমশই মাদাগাস্কারের এই প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের দিকে অগ্রগামী হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা।

১৯৫০ সালে যেখানে এখানকার জনসংখ্যা ছিল ৪১ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, সেখানে ১৯৭৩ সালে জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৭৯ লাখ ৯৬ হাজারের মতো। ১৯৫০ সালের আগে এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ শতাংশের কম। ১৯৫০-৫৫ সালে তা ছিল ২.৬ শতাংশ এবং ১৯৬০-৭০ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। বোঝাই যাচ্ছে, গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি হটস্পট হিসেবে স্বীকৃত এই দেশ ক্রমান্বয়ে মানুষের ভারে ভারি হয়ে উঠছে। বাড়তি এই মানুষের মৌলিক অধিকার আহরণের জন্য ক্রমান্বয়ে মানুষ বনভূমির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কৃষিকাজের জন্য বনভূমি পোড়ানো হচ্ছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান অন্তরায় কৃষিকাজের জন্য বনভূমি পোড়ানো। ম্যানগ্রোভ বনভূমিগুলো চিংড়ি চাষের জন্য নষ্ট করা হচ্ছে। তাছাড়া, এখানকার মানুষের প্রোটিনের যোগানের অধিকাংশই পূরণ হয় স্থানীয় বন্যপ্রাণীর মাংস থেকে। বন্যপ্রাণীদের অবৈধ পাচারের ফলেও দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে বন্যজীবন।

পুড়ছে বন; Image Source: Lemur conservation network

১৯৫০ সালে যেখানে মাদাগাস্কারের পুরো আয়তনের ২৭ শতাংশ বনভূমিতে সম্পূর্ণ ঢাকা ছিল, ২০০০ সালে এসে তা দাঁড়ায় মাত্র ১৬ শতাংশে। মাত্র ৫০ বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ বনভূমি হারিয়ে যায়, যা খুবই শঙ্কার কারণ। আগেই বলা হয়েছে, মাদাগাস্কার হলো পৃথিবীর অন্যতম বৈচিত্র্যময় প্রাণী আর উদ্ভিদের আবাসস্থল। তাই বনভূমি রক্ষা না করলে বৈচিত্র্যময় এই প্রাণগুলো অচিরেই হারিয়ে যাবে।

চলছে বৃক্ষনিধন; Image Source: Madagascar Un ongoing blogposting project

ক্রমবর্ধমান মানুষের হাত থেকে বনভূমি আর প্রাণীকূলকে রক্ষার চেষ্টা শুরু হয়েছিল সেই ১৯২৭ সালে। তখন ফরাসি ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম বন্যপ্রাণী ও বনভূমি সংরক্ষণ শুরু করে। শুরুর দিকের এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার ১৮১ হেক্টর বনভূমি সংরক্ষিত হয়েছিল। মাদাগাস্কার সরকার সংরক্ষণ এলাকা বাড়ানোর জন্য “এসএপিএম সিস্টেম অভ মাদাগাস্কার’স প্রটেক্টেড এরিয়াস” প্রোগ্রাম চালু করে, যা মাদাগাস্কার সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ছিল। এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য ছিল, ২০০৩-০৮ সালের মধ্যে ‘প্রটেক্টেড এরিয়া নেটওয়ার্ক’ ১.৮ মিলিয়ন থেকে ৬ মিলিয়নে উন্নীত করা।

বন্যপ্রাণীদের সঠিক সংরক্ষণ যদি নিশ্চিত করতে হয়, তবে কয়েকটি জিনিসের দিকে বেশি নজর দিতে হবে। বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তায় যে আইন প্রচলিত আছে, তার সঠিক এবং কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। মানুষের জীবিকা এবং জীবনধারণে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। হাঁস, মুরগী, মাছ কিংবা খাবার উপযোগী চাষযোগ্য প্রোটিনের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে খাবারের উদ্দেশ্যে বন্যপ্রাণীদের শিকার কমাতে হবে। মাদাগাস্কারের অতি উচ্চ ইকোলজিক্যাল ভ্যালু সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদের আরো বেশি সচেতন করতে হবে। মাদাগাস্কারের স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণীদের অবৈধ শিকার ও রপ্তানি হওয়া রোধ করতে হবে।

ভালো থাকুক প্রাণ, ভালো থাকুক প্রকৃতি। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেব সবাই একই প্রকৃতিতে। প্রকৃতি সমান, সবার জন্য।

Related Articles