আমদের এই কর্মমুখী জীবন সবাইকে কেমন যেন নিরানন্দ করে ফেলেছে। কাজের চাপে আমাদের জীবনের আনন্দটা কেমন যেন হারিয়ে ফেলেছি। অনেক সময় সাপ্তাহিক কিংবা অল্প সময়ের জন্য ছুটি পেলেও সময় স্বল্পতার কারণে দূরে অনেক জায়গাতেই যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু যদি একটু খোঁজ নিই তাহলে আমরা দেখতে পারি ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে কিছু পার্শ্ববর্তী জেলায় এমন কিছু সুন্দর জায়গা আছে যেখানে গেলে আপনি অনায়াসেই ১ দিনের ভেতর সুন্দরমতো ঘুরে এসে, গ্রামীণ পরিবেশের সাথে একাত্ম হয়ে নিজের গ্লানি থেকে নিমিষেই মুক্তি পেতে পারেন।
তেমনি একটি জায়গা হচ্ছে ঢাকা থেকে কিছু দূরে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত নিকলী হাওর। নিকলী ছাড়াও মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং ইটনা উপজেলা সহ বিস্তৃত এই বিশাল জলরাশি। ঢাকা থেকে কাছে হবার কারণে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক পর্যটক এখানে আসছেন এবং প্রতিনিয়ত তারা এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন। দিগন্ত বিস্তৃত হাওরের জলরাশি প্রথম দেখার পর যে কেউ এর প্রেমে পড়ে যাবে। দূর থেকে আরো যত দূরে চোখ যাবে, স্নিগ্ধ গ্রামের মতোই শান্ত অথৈ পানি প্রাণ জুড়িয়ে দেবে। জলের সীমানা শেষ হতেই যেন বিস্তৃত আকাশ। তারই মাঝখানে কিছু ঘরবাড়ি। নৌকার চালকদেরই বসবাস এখানে। মাছ ধরার সঙ্গেও জড়িত এ অঞ্চল।
নিকলী হাওরে আসার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। চাইলে বছরের বাকি সময়তেও আসতে পারেন, কিন্তু তখন এত বিস্তৃত জলরাশি থাকবে না এবং হাওরের আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যাবে না।
ঢাকা কিংবা অন্য যেকোনো জায়গা থেকে যেভাবেই নিকলী হাওরে আসেন না কেন আপনাকে প্রথমে নিকলী বেড়িবাঁধে আসতে হবে। বেড়িবাঁধ থেকে একটি বোট ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন পুরো হাওর।
আপনার হাতে কতক্ষণ সময় আছে, সে অনুপাতে সময়ের হিসেবে কিংবা আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী বোট ভাড়া করবেন। বোট মালিকেরা আপনার কাছে বেশি দাম চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে বিচক্ষণতার সাথে দরদাম করে মূল্য নির্ধারণ করবেন।
বোট ঠিক হলে হাওর এলাকাটা দেখতে শুরু করে দিন। যতই বোট পানির স্রোতের সাথে সামনে এগোবে ততই হাওরের আসল সৌন্দর্য দেখতে পারবেন। ভাগ্য যদি ভালো হয় আর সেদিন যদি বৃষ্টি পড়ে তাহলে হাওরে আরও সুন্দর একটা সময় কাটাতে পারবেন। কিছুক্ষণ ঘুরার পর চাইলে দুপুরের গোসল টা হাওরেই সেরে নিতে পারেন।
ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতির চরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। স্তরে স্তরে সাজানো সবুজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতির চর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ ঘণ্টা ঘুরলে মোটামুটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।
হাতে সময় থাকলে বোট দিয়ে চলে যেতে পারেন মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সংযুক্ত রাস্তাটি দেখতে। প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় পার করে নিকলী থেকে এখানে পৌঁছাতে পারবেন। দুই পাশে পানিতে থৈ থৈ করা এ রাস্তাটি আপনাকে অবশ্যই মুগ্ধ করবে। অনেক পর্যটক এখানে আসেন শুধু এ রাস্তাটি দেখবার জন্য। এখানে চাইলে পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধবদের সাথে ছবি তুলে একটি ভালো সময় কাটাতে পারবেন।
এভাবে সারাদিন ঘোরার পর আবার নিকলী বেড়িবাঁধ ফিরে যাবেন এবং এভাবেই আপনি একদিনের ভেতর সুন্দর একটি সময় হাওর এলাকাতে কাটাতে পারবেন।
খাবার
নিকলীতে খাবারের জন্য বেড়িবাঁধ এলাকায় কিছু খাবারের হোটেল পাবেন। সেখানে চাইলে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন। খাবারের মেন্যু হিসেবে প্রথম পছন্দ হতে পারে হাওরের তাজা ও সুস্বাদু মাছ। কাচকি, বোয়াল, ট্যাংরা, চিংড়ি সহ অনেক মাছ দিয়ে সেরে নিতে পারেন আপনার দুপুরের খাবার। জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকার ভেতর এখানে আপনার খাবার সেরে নিতে পারবেন। তাছাড়া মাছ ছাড়াও সবজি, মাংস ইত্যাদি এখানে পেয়ে যাবেন খাওয়ার জন্য।
কীভাবে যাবেন
আপনি আপনার ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা বাস অথবা ট্রেনে নিকলী হাওরে আসতে পারেন। বাসে ঢাকার মহাখালী কিংবা সায়দাবাদ থেকে ১৯০-২২০ টাকার ভেতর আসতে পারবেন। মহাখালী থেকে জলসিঁড়ি বাসের মাধ্যমে এবং সায়দাবাদ থেকে অনন্যা সুপার দিয়ে আপনি সরাসরি কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন। ঢাকা থেকে কটিয়াদি আসতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। আসার পর সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে নিকলী হাওর যেতে পারবেন। রিজার্ভ করলে ভাড়া ৩৫০ টাকার ভেতর হবে।
ট্রেনে আসতে হলে আপনাকে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে এগারসিন্দুর প্রভাতী ট্রেনে (বুধবার বন্ধ) সকাল ৭টার দিকে কমলাপুর থেকে রওনা দিয়ে আপনি সরাসরি গচিহাটা রেলস্টেশনে চলে আসবেন। ট্রেনে আসতে আপনার খরচ হবে ১২৫ থেকে ২০০ টাকার ভেতর শ্রেণিভেদে। ট্রেনে সময় প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট কিংবা ৩ ঘণ্টার মত লাগবে। গচিহাটা আসার পর রেলস্টেশন থেকে বের হয়ে একটি ইজি বাইক কিংবা সিএনজি দিয়ে ভাড়া ৩৫ টাকা কিংবা রিজার্ভ করে ২৫০ টাকার ভেতর ১ ঘণ্টার ভেতর নিকলী হাওর এ পৌঁছে যাবেন।