Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর রোমাঞ্চকর কিছু মোটরসাইকেল ট্রেইল

পৃথিবীর  বেশিরভাগ মানুষই মোটরসাইকেলকে বেশ রোমাঞ্চকর একটি বাহন হিসেবেই দেখেন। কারণ আপনার যদি একটি মোটরসাইকেল থাকে এবং তা আপনি চালাতে জানাতে জানেন, তাহলে পাড়ি দিতে পারেন দূর অজানায় সুদীর্ঘ কোনো অভিযাত্রায়। গায়ে লেদার জ্যাকেট, পায়ে বুট- পুরো অভিযাত্রীর সাজে আপনি। দুর্দান্ত গতিতে চলছে মোটরসাইকেল, ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগছে চোখে-মুখে, বাতাসে উড়ছে চুল… আর সামনে প্রতি মুহূর্তে আপনার সামনে উন্মোচিত হচ্ছে এক অদেখা ভুবন, অজানা জগত। যেতে চান এমন মোটরসাইকেল অভিযাত্রায়? তাহলে আজকের লেখাটি আপনার জন্য। আজকের লেখায় থাকছে বিশ্বসেরা শিহরণ জাগানিয়া কিছু রাস্তার কথা, যেগুলোর বাঁকে আপনি মোটরসাইকেলে করে হারিয়ে যেতে পারবেন।

টেইল অব ড্রাগন, নর্থ ক্যারোলিনা, যুক্তরাষ্ট্র

নর্থ ক্যারোলিনা ও টেনেসীর সীমান্ত ঘেঁষে চলে ডিলস গ্যাপ গিরিপথ। ডিলস গ্যাপে ইউএস ১২৯ ও এনসি ২৮ হাইওয়ে দুটি একে অপরকে অতিক্রম করেছে। ডিলস গ্যাপ গিরিপথের যে অংশে হাইওয়ে দুটি পরস্পরকে ছেদ করেছে, সেই অংশটিকে বলা হয় মোটরসাইকেলপ্রেমীদের স্বর্গ। কারণ এই ডিলস গ্যাপ পেরিয়ে টেনেসীতে গিয়ে পড়লে পড়বেন ‘টেইল অব ড্রাগন’ সড়কে। ১১ মাইলের এই সড়কে আছে ৩১৮টি বাঁক।

বিপদজনক বাঁকের সড়ক টেইল অব দ্য ড্রাগন; Image Source: elon news network

দুই লেনের এই রাস্তাটি গ্রেট স্মোকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কের ভেতর দিয়ে চলে গেছে। পার্কের মধ্যে যেহেতু গাড়ি-ঘোড়ার ঝামেলা নেই, তাই শান্তিতে মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন এই অংশে। পার্কের মধ্যে দিয়ে চলার সময় উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতির অপরূপ শোভা। পথের দু’পাশে ঘন বন মনে সতেজতা ছড়িয়ে দেবে। পার্কের পাহাড়ি বৈচিত্র্যও মনোমুগ্ধকর। চলতে চলতে একপাশে দেখবেন খাঁড়া উঁচু পাহাড়, আবার হঠাৎ চোখে পড়বে সুগভীর গিরিখাত।

তবে টেইল অব ড্রাগনের বিশেষত্ব এর বাঁকে। ঘন ঘন বাঁক পেরোনো রোমাঞ্চকর- এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু একটু অসতর্ক হলেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। ন্যাশনাল পার্কের পাহাড় বা বন ছাড়াও এখানে রয়েছে টেনেসী রিভার। পথে থেমে বিশুদ্ধ বাতাসে নয়ন জুড়াতে পারবেন টেনেসী নদীর দু’পাশের সবুজ উপত্যকার দৃশ্যে। টেইল অব ড্রাগনে প্রকৃতি তার রুদ্ধশ্বাস সৌন্দর্য আপনার সামনে মেলে ধরবে, কিন্তু আপনার টানটান উত্তেজিত স্নায়ু আপনার চোখকে বাধ্য করবে রাস্তার বাঁকে মনোযোগ রাখতে।

ট্রল ল্যাডার, নরওয়ে

নরওয়ের রমা মিউনিসিপ্যালিটিতে অবস্থিত ট্রল ল্যাডার একটি সর্পিলাকার গিরিপথ। এটি মূলত নরউইজান কাউন্টি রোড ৬৩ এর একটি অংশ, যা আন্দালসনেস শহর ও ভালদাল গ্রামকে সংযুক্ত করেছে। খাড়া পাহাড়ের ১১টি উঁচু-নিচু হেয়ারপিন স্টাইলের বাঁকের এই রাস্তাটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। ট্রল ল্যাডারের অবিশ্বাস্য উচ্চতা এবং ভয়াবহ বাঁক অতি দুঃসাহসী মোটরসাইকেল আরোহীদেরও বুক কাঁপিয়ে দেয়। 

মায়াবী ট্রল ল্যাডার; Image Source: Mapio.net

তবে তাতে দমে যায়নি কেউই। টুরিস্ট সিজনে এখান দিয়ে প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি অতিক্রম করে। ট্রল ল্যাডারের ৭০০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে পর্যটকদের জন্য প্ল্যাটফর্ম, যা থেকে ট্রল ল্যাডারের পুরো দৃশ্যপট চোখে পড়ে। চোখে পড়ে ৩২০ মিটার উচ্চতা থেকে পতিত স্টিংফসেন জলপ্রপাত। ট্রল ল্যাডারের পুরো পথটুকু ভ্রমণের সময় রোমাঞ্চের সাথে স্মৃতিতে গেঁথে নিতে পারবেন নরওয়ের চিরায়ত রূপ।

লস কারাকোলেস পাস, চিলি

পাসো দা লস লিবারতাদোরেস। আর্জেন্টিনা-চিলি সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে নান্দনিক সড়কগুলোর একটি। আন্দেজ অধ্যুষিত আর্জেন্টিনা-চিলি সীমান্তের অনেক জায়গাই দুর্গম ও জন-মানবহীন। ৩,২০৭ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গিরিখাতটিও তেমন। এটি চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো থেকে আর্জেন্টিনার মেন্দোজা এলাকায় যাওয়ার প্রধান পথ। তাই প্রচুর যানবাহনের ভিড় থাকে। তবে অত্যধিক উচ্চতা ও বাঁকের কারণে সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই রাস্তা তুষারে ঢাকা থাকে। তবে যদি বিপদজনক বাঁক ও তুষারঢাকা রাস্তা পেরিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে পারেন পুরোটা পথ, মিলবে উপযুক্ত পুরষ্কার।

লস কারাকোলেসের ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য; Image Source: medium.com

রোমাঞ্চের স্বাদের সাথে যুক্ত হবে নিচের সুইচব্যাকের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য দেখার সুযোগ ও দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ অ্যাকোঙ্কাগুয়ার দর্শন। সড়কটির আর্জেন্টিনার অংশটি আলতোভাবে উপরে উঠে গেছে, অন্যদিকে চিলির অংশটি পেঁচিয়ে নিচে নেমে গেছে। পুরো রাস্তার সবচেয়ে দর্শনীয় অংশ লস কারাকোলেস দ্য স্নেইলস, যা চিলির অংশে পড়েছে। রুটা ৬০ নামেও পরিচিত এই রাস্তাটি। প্রচণ্ড খাড়া পাহাড়ে ২০টিরও বেশি হেয়ারপিন সদৃশ বাঁক রয়েছে রাস্তাটিতে।

আমালফি কোস্ট, ইতালি

একপাশে খাড়া পাহাড়, একপাশে নীল সাগর। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কালো রাস্তা। বলছি বিশ্বের অন্যতম সেরা উপকূলবর্তী রাস্তা আমালফি কোস্টের কথা। ইতালির দক্ষিণে সরেন্তো থেকে সালের্নো উপকূল জুড়ে বিস্তৃত ৬০ কি.মি. দীর্ঘ এই রাস্তাটি। আমালফি কোস্ট ধরে চলতে গিয়ে চোখে পড়ে ভূমধ্যসাগরীয় চিরচেনা দৃশ্য- বিস্তীর্ণ নীল সাগর, পাহাড়ের কোলে বাড়িঘর, ব্যস্ত শহর, সবুজ বন।

আমালফি কোস্টের বৈচিত্র্যময় দৃশ্য; Image Source: enterprise.ch

আমালফি রাস্তার প্রস্থও বেশ নাটকীয়- কখনো হাইওয়ে, তো কখনো সরু পাহাড়ি পথ। ভূমধ্যসাগরের অনন্যসাধারণ তটরেখা ও সূর্যালোকিত নীল সাগরকে সামনে রেখে ছুটে চলা সত্যিই দারুণ আনন্দের অভিজ্ঞতা হবে।

প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র

প্রশান্ত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে চলে যাওয়া এই সড়কটি ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘে সড়ক। ১,০৫৬ কি.মি. দীর্ঘ এই সড়ক দশ ঘণ্টায় পাড়ি দেয়া যায়। তবে থেমে থেমে কয়েকদিন ধরে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরে দেখলে আপনি এর অসাধারণ সামুদ্রিক দৃশ্য, সমুদ্র তীরবর্তী গ্রাম, বিশুদ্ধ বনভূমির দেখা পাবেন খুব কাছ থেকে। প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ভ্রমণ শুরু করতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত শহর সানফ্রানসিসকো থেকে। সানফ্রানসিসকোতে পা রাখা মানে আপনাকে গোল্ডেন গেট পার্ক দেখতেই হবে। 

নীল আকাশের পটভূমিকায় সুদৃশ্য গোল্ডেন গেট ব্রিজ; Image Source: History.com

গোল্ডেন গেট ব্রিজের উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে রোমাঞ্চিত হন। ফিশারম্যান হোয়ার্ফে কিছুটা সময় কাটান। ইউনিয়ন স্কয়ারে বসে কফি খেয়ে জিরিয়ে নিন। বিখ্যাত সানফ্রানসিসকো ট্রামে করে এক চক্কর ঘুরে আসুন, তারপর হাঁটুন লম্বার্ড স্ট্রীটে। সানফ্রানসিসকো থেকে বেরিয়ে প্যাসিফিক কোস্ট ধরে এগোলে পড়বে হাফ মুন বে। এখানে আনো নুয়েভো স্টেট পার্কে একিফ্যান্ট সীল দেখতে পারবেন। তার নব্বই মিনিট পর পড়বে সান্তা ক্রুজ। সান্তা ক্রুজে বীচের সাথে পুরনো স্কুলের সমন্বয়- আপনি এখানে পাবেন খাঁটি আমেরিকান স্বাদ। সান্তা ক্রুজ থেকে আধা ঘণ্টা চললে মন্টারি বে। মন্টারি ক্যালিফোর্নিয়ার পুরনো রাজধানী ছিল। এখানে দেখতে পাবেন মন্টারি বে একুরিয়াম, ফিশারম্যান হোয়ার্ফ ইত্যাদি। তার তিন মাইল দক্ষিণে ক্যারামেল গ্রাম। ছবির মতো সুন্দর কটেজ, রেস্টুরেন্টে সাজানো গ্রামটির শোভা আপনাকে মুগ্ধ করবে। তারপরই পড়বে ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম সেরা পর্যটন আকর্ষণ বিগ সার। মহাসাগরের বুকে জেগে থাকা গ্রাফাইটের চাঁইগুলো সত্যিই বিস্ময়কর। তার পাশেই বিক্সবি ব্রিজ।

পাহাড়ের কোলে অপরূপ বিক্সবি ব্রিজ; Image Source: taxidio

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ছবি তোলা হয় যে ব্রিজের সেটি হচ্ছে এই ব্রিজটি। আশেপাশে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ফেইফার বীচ, র‍্যাগড পয়েন্ট ইত্যাদি। এই পর্যায়ে ড্রাইভিং থেকে রেস্ট নিন। এনচেন্টেড হিল এর হার্স্ট ক্যাসলে যান। বিশাল এই ক্যাসলে অসংখ্য জিনিস আছে দেখার মতো। লস এঞ্জেলসের চোখ-ধাঁধানো আলোয় চোখ ঝলসে যাওয়ার আগে সান্তা বারবারায় বিশ্রাম নিন। স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক আমলের ধাঁচে গড়া এই শহরটির বীচের জলে পা ভেজান। তারপর চলে যান লস এঞ্জেলসে। হলিউডের তারকাখচিত সাইডওয়াক ওয়াক অব ফেইমে হাঁটুন।

সানসেট বুলেভার্দ;  Image Source: quote master

সান্তা মনিকা পিয়ারে সূর্যাস্ত দেখুন। সানসেট বুলেভার্দ থেকে ঘুরে আসুন। ইউনিভার্সাল স্টুডিও ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। এছাড়াও দেখতে পারেন সান জোসের উইনচেস্টার মিস্ট্রি হাউজ, ম্যালিবু বীচ ইত্যাদি।

গ্রেট ওশন রোড, অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ মহাসাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ, শান্ত-সৌম্য সমুদ্রতটবর্তী শহর, সবুজের ছাউনি ঘেরা রেইনফরেস্ট, গাছে গাছে কোয়ালার লাফঝাঁপ, চুনাপাথরের পর্বত প্রভৃতির জন্য গ্রেট ওশন রোড বিখ্যাত। প্রায় ৬০০ কি.মি. দীর্ঘ এই রাস্তা সরাসরি মোটরসাইকেলে করে কয়েক ঘণ্টায় ঘুরে দেখা যায়, তবে তাতে এর আশেপাশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন আপনি। তাই আস্তে আস্তে ঘুরে দেখাই ভালো হবে।

মেলবোর্ন থেকে ঘণ্টা খানেক মোটরসাইকেল চালাতে পৌঁছে যাবেন টর্কিতে। টর্কিতে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সেরা কিছু সার্ফিং বীচ। এদের মধ্যে আবার সেরা বেলস বীচ।

ফেনিল সাগরের বেলস বীচ; Image Source: Mpora

কাছেই এঙ্গেলসী গলফ কোর্স। গলফ কোর্সের সবুজ গাছপালার আড়ালে ক্যাঙ্গারুরা লুকোচুরি খেলে। এ দৃশ্য দেখতে ভুলবেন না। পরবর্তী ত্রিশ মিনিট চোখে পড়বে অপরূপ সামুদ্রিক দৃশ্য। কারণ আপনি তখন চলছেন উপকূলীয় শহর লর্নের পাশ দিয়ে। তারপরের বিশ মিনিট আঁকাবাঁকা উপকূলীয় পথে চললে পড়বে কেনেট নদী এবং এর পাশের বিখ্যাত অধিবাসী কোয়ালা। তারপর কিছুদূর এগোলে চোখে পড়বে এপোলো বে-এর শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য। খাঁড়া পাহাড় আর বুনো সৈকতের এমন সম্মিলন আপনি আগে কখনো দেখেননি। তারপর বিখ্যাত অটওয়ে ন্যাশনাল পার্কের বিশাল এলাকা পেরিয়ে বিশ্রাম নিন বেকনস পয়েন্টে। যা-ই দেখুন না কেন, গ্রেস্ট ওশন রোডের সবচেয়ে বড় বিস্ময় সম্ভবত শিপরেক কোস্ট।

দৃষ্টিনন্দন টুয়েলভ এপোস্টলস, কার প্রতীক্ষায় কতকাল থেকে দাঁড়িয়ে; Image Source: World Apostles

কারণ এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত টুয়েলভ এপস্টলস। সমুদ্রের বুকে অতদ্র প্রহরীর মতো জেগে আছে চুনাপাথরের আটটি চাঁই। টুয়েলভ এপস্টলস ছাড়াও শিপরেক পয়েন্টে আরো আছে মনোমুগ্ধকর পাথরের ধনুক লন্ডন আর্চ, দ্য গ্রতো- যে গুহাতে আছড়ে পড়ে বিশাল সব ঢেউ।

This is a Bangla article on the world's best motorcycle rides. All the references are hyperlinked inside the article.

Feature Image - Wallpapers Craft

Related Articles