
আনকোরা এক শতকে আমাদের বসবাস। কিন্তু এর প্রথম সতেরো বছরেই পৃথিবী মাতিয়ে ফেলেছেন কিছু নির্ভীক প্রাণ। ভয়কে জয় করে অসাধ্য করেছেন সাধন। অদম্য অগ্রযাত্রায় একবারের জন্যও মৃত্যুচিন্তায় পিছপা হননি তারা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে দাপুটে পদক্ষেপে রেখেছেন স্বীয় অধ্যবসায়ের জ্বলন্ত স্বাক্ষর। চলুন, পড়ে আসি এই শতকের তেমনই পাঁচজন দুঃসাহসিকের অদম্য অগ্রযাত্রার Never Stop Expedition-এর সত্য গল্প…
অ্যালেক্স হনল্ড (জন্ম: ১৭ আগস্ট, ১৯৮৫)

অ্যালেক্স হনল্ড। ছবিসূত্র: Jimmy Chin
প্রথমেই বলবো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দুঃসাহসিক রক ক্লাইম্বারের কথা। তিনি বর্তমান বিশ্বে এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যক্তি, যিনি প্রায় কোনোকিছুর সাহায্য ছাড়াই একা একা ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যানের ৩ হাজার ফুট উঁচু গ্রানাইটের খাড়া পাহাড় এল কাপিতান (সংক্ষেপে এল ক্যাপ) বেয়ে চূড়ায় উঠেছেন! ২০১৭ সালের ৩ জুন ৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট সময় নিয়ে তিনি এই অসাধ্য সাধন করেন।

এল ক্যাপের পথে অ্যালেক্স। ছবিসূত্র: Jimmy Chin
এই সময়ের ভেতর যে কোনো একটা ভুলের মাশুলও তার দিতে হতো নিজের জীবন দিয়ে। এল ক্যাপ পাহাড়ের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অংশ দ্য নোজ বেয়ে ওঠারও স্পিড রেকর্ড তার আছে। দ্য নোজ (The Nose) হলো এল ক্যাপের সবচেয়ে বিখ্যাত ও অন্যতম ভয়ংকর রুট।

উর্ধ্বমুখী ভয়ঙ্কর দ্য নোজ রুট। ছবিসূত্র: snowbrains.com
২০১২ সালের ১৭ জুন হান্স ফ্লোরিনকে নিয়ে ২ ঘণ্টা ২৩ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে তিনি দ্য নোজ পাড়ি দেন। ক্লাইম্বিং-এর এই স্বভাব অ্যালেক্সের রক্তেই মিশে ছিল। তা না হলে, মাত্র ষোল বছর বয়সেই তিনি এর প্রতি ঝুঁকে পড়তেন না। সে বয়স থেকেই তিনি রক ক্লাইম্বিং এর One Finger Pull-Up-এ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। আঠারোর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের টপ জিম-ক্লাইম্বার হয়ে ওঠেন। কিন্তু এই ক্লাইম্বিং আর পারিবারিক নানা টানাপোড়েনে পড়াশোনার পাট চোকাতে পারেননি আর। ২০০৩ সালে হাই স্কুল পাশ করার পর পুরকৌশল পড়তে চলে যান ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু সেখানে পড়াশোনা শুরু করার আগেই তার নানা মারা যান, এর কয়েক ঘন্টা পরে অ্যালেক্সের বাবার সাথে তার মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ক্লাস মিস যেতে থাকে অ্যালেক্সের, অন্যদিকে ক্লাইম্বিং এর নেশায় আরো বুঁদ হয়ে ওঠেন। ফলাফল- ড্রপ আউট। আর চালিয়ে যেতে থাকা তার অতিপ্রিয় ক্লাইম্বিং।
ফেলিক্স বমগার্টনার (জন্ম: ২০ এপ্রিল, ১৯৬৯)

ফেলিক্স বমগার্টনার। ছবিসূত্র: felixbaumgartner.com
স্কাইডাইভার, বেস জাম্পার, অস্ট্রিয়ান ডেয়ারডেভিল। এক কথায়, একজন পুরোদস্তুর অ্যাডভেঞ্চারার। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর একটি হিলিয়াম বেলুনে চড়ে বমগার্টনার বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে চলে যান এবং প্রায় ৩৯ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে লাফ দেন।

লক্ষাধিক ফুট উপর থেকে লাফ দেওয়ার আগ মুহূর্তে বমগার্টনার। ছবিসূত্র: felixbaumgartner.com
তিনি প্যারাসুট খোলার আগ পর্যন্ত ৪ মিনিট ২২ সেকেন্ড মুক্তভাবে ভূপৃষ্ঠ বরাবর নেমে এসেছেন। যদিও পরবর্তীতে গুগলের অ্যালান ইউস্টেসের কাছে তিনি এই রেকর্ডটি হারান। অ্যালান ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর থেকে প্রায় ৪১.৪১৯ কিলোমিটার (১৩৫,৮৮৯.১০৮ ফুট) উচ্চতা হতে লাফ দেন। ইউস্টেস তার এই গতিপথে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১,৩০০ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করেন। অবশ্য এটি দ্রুততম গতিবেগ অর্জনের রেকর্ড নয়, এই রেকর্ড এখনো দখলে আছে অস্ট্রিয়ান স্কাইডাইভার ফেলিক্স বমগার্টনারের।

সুপারসনিক গতিতে নেমে আসছেন বমগার্টনার। ছবিসূত্র: redbull-photofiles.com
বমগার্টনারের রেকর্ড গতিবেগ প্রায় ১৩৫৭.৬৪ কিলো/ঘণ্টা যা কিনা ঘণ্টায় ৮৪৩.৬ মাইল বা ম্যাক ১.২৫ এর সমান। ম্যাক ১ মানে শব্দের সমান গতিবেগ (ট্রানসনিক)। ম্যাক ১.২৫ মানে শব্দের চেয়ে ২৫% বেশি গতি (সুপারসনিক)। আর ম্যাক ০.৬৫ মানে শব্দের গতির ৬৫% (সাবসনিক)। সাধারণত বিমানের গতি বোঝাতে ম্যাক ইউনিটটি ব্যবহৃত হয়।

মাটিতে নেমে আসার পর ফেলিক্স বমগার্টনার। ছবিসূত্র: felixbaumgartner.com
ছোটবেলা থেকেই উড়াউড়ি আর স্কাইডাইভিং-এর নেশা ছিল বমগার্টনারের। ২০০৩ সালের ২০ জুলাই ইংলিশ চ্যানেলের উপর স্কাইডাইভিং করেন। ২০০৪ সালের ২৭ জুন তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু (৩৪৩ মিটার, এখন পর্যন্ত পুরোপুরি নির্মিত হিসেবে) সেতু ফ্রান্সের মিলাউ ভায়াডাক্টের (যা কিনা ৩২৪ মিটার উচ্চতার আইফেল টাওয়ার থেকেও সুউচ্চ) উপর থেকে বেস জাম্পিং করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতু (এখন পর্যন্ত) ফ্রান্সের মিলাউ ভায়াডাক্ট। ছবিসূত্র: Ramya Iyer
এরপর ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি সেই সময়ের সবচেয়ে উঁচু দালান তাইওয়ানের তাইপেই ১০১-এর ৯২ তলার পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে লাফ দেন। এই অকুতোভয় ‘পাগল’ তার নিজ দেশের সেনাবাহিনীতেও চাকরি করেছেন কিছুদিন।
অ্যান্ড্রু স্কুরকা (জন্ম: ২৫ মার্চ, ১৯৮১)

আলাস্কা-ইউকন এক্সপেডিশনের সময় একটি নদী পার হচ্ছেন স্কুরকা। ছবিসূত্র: gearjunkie.com
এই মার্কিন নাগরিক একজন পেশাদার ব্যাকপ্যাকার। তাকে বলা যায়, বিশ্বখ্যাত এক ‘হাঁটাবাবা’। ২০০৭ সালের নভেম্বরে ৬,৮৭৫ মাইল লম্বা গ্রেট ওয়েস্টার্ন লুপে হাইকিং করেন তিনি। এজন্য দৈনিক ৩৩ মাইল গতিতে সময় লাগে তার ২০৮ দিন। এর আগে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে অতিক্রম করেন ৭,৭৭৮ মাইল লম্বা সি-টু-সি লুপ। এটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযোগকারী উত্তর যুক্তরাষ্ট্রের এক সুবিশাল হাইকিং ট্রেইল। এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে স্কুরকার ১১ মাস সময় লাগে, সাথে প্রায় ১,৪০০ মাইলের মতো স্নোবোর্ডিং করতে হয়। ২০১০ সালের মধ্য-মার্চে স্কুরকা পাড়ি দেন আলাস্কা-ইউকনের নিস্পাদপ প্রান্তর, যা এর আগে একা একা আর কেউই পাড়ি দেয়নি।

শত শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এমন পাথুরে জমিনকে সঙ্গী করে; এই স্থানটি ক্যানিং নদীর ব্রুক্স রেঞ্জ সংলগ্ন। ছবিসূত্র: andrewskurka.com

আলাস্কা-ইউকনের হাইকিং লুপ Image Source: andrewskurka.com
প্রায় ৪,৭০০ মাইল লম্বা এই লুপ স্কুরকা নিজে তৈরি করেন। কখনো স্কি, কখনো ট্রেকিং আবার কখনো বা প্যাকর্যাফটিং করে ১৭৬ দিনে তিনি পাড়ি দেন এই লুপ।
২০০২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৫ হাজার মাইল পথ ট্রেক করে ফেলেছেন। ঘোরাঘুরির স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ২০০৭ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক অ্যাডভেঞ্চার তাকে সে বছরের ‘Adventure of the Year‘ মনোনীত করে। তারা তাকে ট্রেকারদের সুপারম্যান এবং এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পথ অতিক্রম করা দ্রুততম হাইকারদের একজন হিসেবে বর্ণনা করেছে। ২০০৫ সালে বিখ্যাত ট্রাভেল ম্যাগাজিন ব্যাকপ্যাকার তাকে ‘Person of the Year‘ হিসেবে ঘোষণা দেয়। স্কুরকা ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট। তার আরো অনেক পরিচয় আছে। তিনি একাধারে একজন বক্তা, অ্যাথলেট, লেখক ও ব্লগার।
স্যান্ডি রবসন (জন্ম: ৬ নভেম্বর, ১৯৭৩)

স্যান্ডি রবসন। ছবিসূত্র: Ian Taylor
স্যান্ডি রবসন পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার এক দুঃসাহসিক কায়াকার, যিনি একাই জার্মানি থেকে তার দেশ অস্ট্রেলিয়া কায়াকিং করে প্রায় ২৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। ২০টি দেশের মধ্য দিয়ে (যার ভেতর বাংলাদেশও ছিল) প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে চলা তার এই অ্যাডভেঞ্চার শেষ হয় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে। স্যান্ডি তার এই পথচলার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন জার্মান কায়াকার অস্কার স্পেকের কাছ থেকে, যিনি ১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩১ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে জার্মানির উলম শহর থেকে অস্ট্রেলিয়া এসেছিলেন।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে করা অস্কার স্পেকের সেই এপিক যাত্রা, যা অধুনা স্যান্ডিকে অনুপ্রাণিত করে ছবিসূত্র: Australian National Maritime Museum
স্যান্ডি ২০১১ সালে জার্মানি থেকে যাত্রা শুরু করেন। তিনি তার পুরো যাত্রাপথকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করে নেন। প্রথম বছর তিনি সাইপ্রাস পৌঁছান। মাঝে তিনি রাজনৈতিকভাবে উত্তাল আরব উপদ্বীপ, পাকিস্তান ও ইরানকে বাদ দিয়ে ভারত থেকে যাত্রা আবার শুরু করেন। এরপর একে একে তিনি শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তিমুর, ইন্দোনেশিয়া পৌঁছান।

সারাহ স্টীনল্যান্ডের আঁকা স্যান্ডির দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম পর্যায়ের রুট ম্যাপ। ছবিসূত্র: sandy-robson.com/Map.html
চতুর্থ পর্যায়ে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশে আসেন। স্যান্ডির কাছে বাংলাদেশের স্মৃতি আজও চির অম্লান হয়ে আছে। তিনি এখনো তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের স্মৃতিচারণ করেন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশে স্যান্ডি রবসন। ছবিসূত্র: Khandaker Rahman
যাত্রার শেষভাগে, অর্থাৎ পঞ্চম পর্যায়ে তিনি পাপুয়া নিউগিনিতে এসে বিপদে পড়েন। এখানে এসে তিনি তার অগ্রজ অস্কার স্পেকের মতো ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হন। কিন্তু তাতেও দমবার পাত্র ছিলেন না স্যান্ডি।

এদেশকে নিয়ে যেমন তার উৎসাহের কমতি ছিল না, তেমনি এখানকার মানুষও বেশ উৎসুক ছিল তাকে নিয়ে। ছবিসূত্র: Khandaker Rahman
শত বিপদ মাথায় নিয়ে, ২০১৬ সালের ২ নভেম্বর বুধবার স্যান্ডি পৌঁছে যান অস্ট্রেলিয়ার সর্ব উত্তরের দ্বীপ সাইবাই আইল্যান্ডে। সমাপ্তিরেখা টানেন তার সাড়ে পাঁচ বছর ধরে করা ২৩ হাজার কিলোমিটারের এক সুদীর্ঘ এক্সপেডিশনের। অবশ্য এতকিছুর পরও তার কিছু আক্ষেপ ছিল। আক্ষেপ ছিল পথভ্রষ্ট ও মন্দ মানসিকতার কিছু ‘মানুষ’কে নিয়ে। সেজন্য তিনি বলেছিলেন,
“I’ve been through Bengal tiger territory and places where there are leopards in national parks in Sri Lanka, but by far the most scary thing is people [who] have the wrong intentions.”
ওয়াসফিয়া নাজরীন (জন্ম: ২৭ অক্টোবর, ১৯৮২)

ওয়াসফিয়া নাজরীন। ছবিসূত্র: Patrick Allan Morrow
সবশেষে বলবো এক বাংলাদেশি অ্যাডভেঞ্চারারের কথা, যিনি সাতটি মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ায় আরোহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের ওয়াসফিয়া নাজরীন। তিনি এখন পর্যন্ত একমাত্র বাঙালি (এপার ও ওপার বাংলা দুই-ই মিলিয়ে) যিনি সেভেন সামিট (সাত মহাদেশের সর্বোচ্চ সাত চূড়া) সম্পন্ন করেছেন। ওয়াসফিয়ার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের পাহাড়সকাশে। আর এই পর্বতনৈকট্যই তাকে পাহাড়প্রেমী করে তোলে। তিনি ২০১১ সালের জুলাই মাসে ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট অ্যালবার্সের উদ্দেশ্যে শুরু করেন তার সেভেন সামিট অভিযান। কিন্তু বিধিবাম! মাত্র ৩০০ ফিট নিচ থেকে ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে।
ওয়াসফিয়ার সাফল্যযাত্রা শুরু হয় আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমানজারোকে দিয়ে। ২০১১ সালের ২ অক্টোবর ৫,৮৯৫ মিটার বা ১৯,৩৪০ ফুট উঁচু এই পর্বতের চূড়ায় পদচিহ্ন রাখেন আমাদের ওয়াসফিয়া। একই বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৪০তম বিজয় দিবসে জয় করেন দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আর্জেন্টিনায় অবস্থিত অ্যাকোনকাগুয়া পর্বত (২২,৮৩০ ফুট)। কোনো প্রকার অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই, ১৮ থেকে ২০ কেজি বোঝা কাঁধে নিয়ে হিমালয় পর্বতশ্রেণীর বাইরে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু অ্যাকোনকাগুয়ার চূড়ায় ওঠেন তিনি। এরপরের গন্তব্য ছিল মাউন্ট এভারেস্ট। ২০১২ সালের ২৬ মে তিনি সামিট করেন বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থানটিতে। তিনি এখন পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশি। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৯ বছর।

মাউন্ট এভারেস্টে বাংলাদেশের ওয়াসফিয়া। ছবিসূত্র: thedailystar.net/wasfia-mounts-everest-51126
সেভেন সামিটের পরবর্তী মিশন ছিল অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ (৪,৮৯২ মিটার)। এরপর তিনি জয় করেন ইউরোপের সর্বোচ্চ চূড়া মাউন্ট এলব্রুস। রাশিয়ার সীমান্তঘেঁষা এই পর্বত আরোহণের সময় ওয়াসফিয়াকে স্নো ব্লাইন্ডনেসে আক্রান্ত হতে হয়েছিল। স্নো ব্লাইন্ডনেস হলো এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক সাময়িক অন্ধত্বের অবস্থা, যেটি তৈরি হয় সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির অতিরিক্ত এক্সপোজারে।

মাউন্ট ডেনালির চূড়ায় প্রথম বাংলাদেশি ওয়াসফিয়া। ছবিসূত্র: greatwalks.com.au
ওয়াসফিয়ার সেভেন সামিটের পথে ষষ্ঠ শৃঙ্গ ছিল উত্তর আমেরিকার মাউন্ট ডেনালি, (২০,২৩৭ ফুট বা ৬,১৬৮ মিটার) যেটি মাউন্ট ম্যাককিনলে নামেও পরিচিত। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি এই পর্বতচূড়ায় আরোহণ করেন। ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া কার্সটেনজ পিরামিডে আরোহণের মাধ্যমে ওয়াসফিয়া সম্পন্ন করেন তার চার বছরব্যাপী সেভেন সামিট মিশন। তিনি এই অর্জনকে উৎসর্গ করেন ’৭১ এর চেতনা ও এই চেতনার জন্য যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধাদেরকে।

Wasfia ডকুমেন্টারির প্রচ্ছদ। ছবিসূত্র: facebook.com/WasfiaNazreen/
ন্যাশনাল জিয়োগ্র্যাফিক ২০১৪-১৫ সালে তাকে ‘Adventurer of the Year’ ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে নির্বাচিত হন ‘Emerging Explorer’ হিসেবে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি উঁচু স্থানে তুলে ধরা এই ওয়াসফিয়া নাজরীনকে নিয়ে অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় Wasfia নামে ২০১৬ সালে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি করে RYOT।
ফিচার ছবিসূত্র: Patrick Allan Morrow