ধর্ম বা Religion শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত ও চর্চিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি। ধর্ম নিয়ে আলোচনা বা ভাবনা শুরুর প্রথমেই মননে একটি প্রশ্নের উদয় হয়– ধর্ম কী? ধর্মের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে ধর্ম প্রবর্তক এবং সমাজতাত্ত্বিকগণের কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যায়। ধর্ম প্রবর্তকেরা ধর্মকে উপস্থাপন করেছেন একটি মহাপবিত্র ও পরম মতবাদ বা জীবনাদর্শ হিসেবে। আর সমাজতাত্ত্বিকেরা ধর্মের সংজ্ঞা, প্রকৃতি, আচারিক কার্যকলাপকে বিচার করেছেন নৈর্ব্যক্তিকতার মানদণ্ডে।
ধর্মগুরু বা ধর্ম প্রবর্তকেরা ধর্মকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে স্থাপন করেছেন যেখানে প্রবেশ করতে হলে ব্যক্তিকে ব্যাপক আচার-নিষ্ঠ হতে হয় এবং কিছু মৌলিক বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়।
ধর্ম কী?
ধর্মকে মোটা দাগে সংজ্ঞায়িত করার আগে ব্যক্তি ও বস্তুর ধর্মভিত্তিক গুণের কথা বলা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি বস্তুর একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন: তরলের বৈশিষ্ট্য গড়িয়ে যাওয়া, অগ্নির বৈশিষ্ট্য পোড়ানো, বায়ুর বৈশিষ্ট্য আয়তনহীনতা ইত্যাদি। এ বৈশিষ্ট্যগুলো বস্তুর পরম গুণ। হাজার বছর আগেও এ গুণ ছিল, হাজার বছর পরেও থাকবে। বিচ্ছিন্ন করার উপায় নেই। সেরকম মানুষ বা Homo sapiens দেরও কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলোকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ভৌত ও মানবিক। দৃষ্টি, শ্রবণ, স্বাদ ইত্যাদি ভৌত বৈশিষ্ট্য আর, বিশ্বাস, আচরণ ইত্যাদি মানবিক বৈশিষ্ট্য যেগুলো নিম্ন শ্রেণির প্রাণীর মাঝে দেখা যায় না। মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেই পরে ধর্ম নামে সংজ্ঞায়িত ও প্রচারিত করা হয়েছে।
মানুষের লিখিত ইতিহাসের বয়স ৫০০০ বছর হলেও ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিকগণ মানবেতিহাস রচনা ও গবেষণার সময় তার আগের মানুষদের মাঝেও এমন কিছু আচারানুষ্ঠানের দেখা পেয়েছেন যেগুলোকে পবিত্র বলে পালন করত সে যুগের মানুষ। অনেক সমাজতাত্ত্বিক ধর্মের অনেক রকম সংজ্ঞা দিয়েছেন। তন্মধ্যে, ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক এমিল ডুর্খেইমের (Émile Durkheim) সংজ্ঞাটি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য।
“A religion is a unified system of beliefs and practices relative to sacred things… beliefs and practices which unite into a single moral community…. all those who adhere to them.”
অর্থাৎ, ধর্ম হচ্ছে পবিত্র বস্তুর সাথে যুক্ত বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সামগ্রিক ব্যবস্থা যা বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি নৈতিক সম্প্রদায় সৃষ্টি করে।
ধর্ম নিয়ে ডুর্খেইমের এ সংজ্ঞাটি ধ্রুপদী এবং ব্যাপক। প্রচলিত ধর্মগুলোর অনেকগুলোতে (যেমন: বৌদ্ধ মতবাদ, কনফুসীয়বাদ ইত্যাদি) ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমান কোনোরূপ সত্তায় বিশ্বাসকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হয়নি। তবুও, সেখানে কিছু পবিত্র ও পরম বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস করা হয়। তাই, ডুর্খেইমের sacred বা পবিত্র শব্দটির ব্যবহার সংজ্ঞাটিকে জুতসই করেছে। তিনি পবিত্র ও লোকজ দুটো বিষয়ের মাঝে মোটা দাগে বিভাজন টেনেছেন। যাপিত জীবনে সমাজে যেটি বা যেগুলো গোষ্ঠীগতভাবে পবিত্র সেগুলোই ধর্ম।
ধর্মের উৎপত্তির সামাজিক তত্ত্ব
ধর্ম বা পবিত্র বিশ্বাসমালার উৎপত্তি নিয়ে অনেক ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে। নৃতাত্ত্বিকগণ অনেক সমাজ ও তাদের সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণের পরে ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদগুলো প্রদান করেছেন। জনপ্রিয় মতবাদগুলো হচ্ছে টাইলরের সর্বপ্রাণবাদ, ম্যারেটের প্রাক-সর্বপ্রাণবাদ, ডুর্খেইমের ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব, মার্কসীয় তত্ত্ব ইত্যাদি।
সর্বপ্রাণবাদ বা Animism
সর্বপ্রাণবাদে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্তা হচ্ছে ‘আত্মা’। ল্যাটিন শব্দ Anima-র বাংলা তর্জমা করলে হয় আত্মা। ল্যাটিন ‘অ্যানিমা’ থেকেই অ্যানিমিজম শব্দের উৎপত্তি। ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ ও গবেষক এডওয়ার্ড বার্নেট টাইলর (E. B. Tylor) সর্বপ্রাণবাদের প্রবক্তা। তার মতে, ধর্ম বা রিলিজিয়নের উৎপত্তি হয়েছে আদিম মানুষের আত্মা বা অ্যানিমায় বিশ্বাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে।
মানুষের আত্মা সম্পর্কীয় ধারণাটি তৈরি হয়েছে মূলত দুটো অভিজ্ঞতা বা চেতনার ওপর ভিত্তি করে। একটি স্বপ্নের অভিজ্ঞতা অন্যটি মৃত্যুর চেতনা। সে যুগে মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করে প্রতিটি বস্তু ও অবস্তুগত সত্তার ভেতরে একটি নির্যাস বা আত্মা রয়েছে যেটি পরম এবং আত্মা সদা চঞ্চল। নিদ্রারত অবস্থায় দেখা স্বপ্নগুলোকে মানুষ গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে এবং ভাবা শুরু করে স্বপ্নে দেখা ঘটনাগুলোয় আত্মা সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। সে হিসেবে, জড় ও অপ্রাণীবাচক সত্তাগুলোর ওপরও আত্মাবাদ আরোপ করা হয়। প্রকৃতির চলনক্ষম ও অচলনক্ষম প্রতিটি সত্তাকেই আত্মাধীন বলে কল্পনা করা হয়।
মানুষ নিদ্রা ও মৃত্যুর সাদৃশ্যকরণ করে। মৃত্যুর পরে আত্মা মুক্ত আত্মা হিসেবে মুক্তি পায় অথবা প্রেতাত্মা হিসেবে আবার উত্তর-পুরুষগণের কাছে ফিরে আসে, যার সাথে সাক্ষাতের অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে স্বপ্ন। সর্বপ্রাণবাদ মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ধর্মতাত্ত্বিক ধারণাকে প্রতিফলিত করে। টাইলর মনে করেন, সর্বপ্রাণবাদ ধারণা থেকেই পরবর্তীতে প্রকৃতিপূজা ও একেশ্বরবাদের ধারণাটি এসেছে। মৃত্যুর পরের জীবন, স্বর্গ-নরকের ধারণা, পাপ-পুণ্যের হিসাব, কবরের আজাব, জন্মান্তর ইত্যাদি ধারণাগুলোর আদিসূত্র সর্বপ্রাণবাদে লুকিয়ে আছে। এখনও অনেক আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং সভ্যদেরও অনেকেই সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাস করে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কেউ কেউ এখনও বৃক্ষপূজা (তুলসীগাছ পূজা, বটগাছ পূজা) ও প্রাণীপূজা (সর্পদেবী মনসার উপাসনা, দুর্গার বাহন সিংহের স্তুতি) করে থাকে। টাইলরের সর্বপ্রাণবাদের সুনির্দিষ্ট ও শক্তপোক্ত প্রমাণ-উপাত্ত না থাকলেও অধিকাংশ সমাজতাত্ত্বিক একেই ধর্মের উৎপত্তিগত তত্ত্বগুলোর ভেতর সবচেয়ে আধ্যাত্মিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
প্রাক-সর্বপ্রাণবাদ বা Animatism
অ্যানিমিজম বা অ্যানিম্যাটিজমের মধ্যে চেতনাগত কিছু সাদৃশ্য থাকলেও যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। স্যার টাইলরের সর্বপ্রাণবাদ তত্ত্ব প্রদানের ২৯ বছর পরে আরেক ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ রবার্ট ম্যারেট ১৯০০ সালে ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত আরেকটি তত্ত্ব প্রদান করলেন। একে pre-animism বা প্রাক-সর্বপ্রাণবাদ বলে প্রচার করা হয়।
ম্যারেট সাহেব মেলিনেশীয় ধর্মতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে করতে লক্ষ করলেন যে, আদিম মানুষ আত্মা বা anima-র ধারণা লাভের আগে একটি অতি প্রাকৃতিক নৈর্ব্যক্তিক শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। এটি ভূত-প্রেত, আত্মা-প্রেতাত্মার ঊর্ধ্বে এমন একটি শক্তি যেটিকে অব্যক্তিক বলে চিহ্নিত করেছিল সে যুগের মানুষ। এ শক্তির নাম দিয়েছিল তারা ‘mana’ বা ‘মানা’। তারা বিশ্বাস করত এটি উদ্ভিদ-প্রাণী সবকিছুর ঊর্ধ্বে এমন একটি শক্তি যাকে ধারণ করতে হয়। যাকে ধারণ করলে অসাধ্য সাধন করা যায়। নারী-পুরুষ যে কেউ সেই অবিনশ্বর শক্তিকে তুষ্ট করে তাকে ধারণ করতে পারত এবং অন্যের মাঝে সেটি সঞ্চারিতও করা সম্ভব ছিল।
আদিম মানুষ সেই মানাকে ভয়, ভক্তি ও ভরসা করা শুরু করে। mana শব্দ থেকেই Manaism এর উৎপত্তি যেটি Animatism এর আরেকটি নামও বটে। বাংলায় Animatism এর যোগ্য প্রতিশব্দ হয় মহাপ্রাণবাদ। ম্যারেটের মতে, মানার ধারণা লাভ এবং বিশ্বাসই ছিল আদিম মানুষের আধ্যাত্মিক সাধনা বা সমষ্টিগত পবিত্র চিন্তার সর্বোচ্চ উৎকর্ষ। অ্যানিম্যাটিজম থেকেই মানুষের চিন্তা ও বিশ্বাসে বিবর্তন শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় একেশ্বরবাদ ও বহুশ্বরবাদের জন্ম হয়।
ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব বা Functionalism
ফরাসি সমাজতাত্ত্বিক এমিল ডুর্খেইম ক্রিয়াবাদী তত্ত্বের আলোকে ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, সামাজিক ঐক্য ও সংহতি টিকিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা ও পাপবোধের ব্যাপারে সচেতনতা ও ভীতি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ধর্মের উৎপত্তি। বিশ্বের প্রসিদ্ধ ধর্মগুলোর উৎপত্তির পটভূমি ও ইতিহাসের পাশাপাশি মানবেতিহাসের তুলনামূলক বিশ্লেষণের আলোকে তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন যে বিশৃঙ্খল সমাজকে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ রকমের অবস্থা থেকে উদ্ধার করে একটি শৃঙ্খলিত ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজে ধাবিত করার একটিই মাত্র উপায় ছিল– মহাজাগতিক, পবিত্র ও অতিপ্রাকৃত শক্তির অবতারণা করা, যেটিতে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে সমাজে বসবাসকারী প্রত্যেকে একটি দলভুক্ত হবে এবং কিছু নির্দেশমালা মেনে চলবে কঠোরভাবে।
বিশ্বাসীদের দ্বারা আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে ধর্ম আরো মূর্ত রূপ ধারণ করে। ডুর্খেইমের মতে ধর্ম মূলত চারটি ক্রিয়া বা Functions সম্পাদন করে।
- শৃঙ্খলা বিধান করে
- পারস্পরিক সম্পর্ক শক্তিশালী করে
- সামাজিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনরুৎপাদন করে
- প্রফুল্লতা দান করে
ডুর্খেইমের ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত এ মতবাদটি ঋজু এবং সাবলীল। এ মতবাদে আধ্যাত্মিক চেতনাকেও বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
মার্কসীয় তত্ত্ব বা Marxism
কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ধর্মকে মনে করেছেন শোষক শ্রেণির একটি হাতিয়ার হিসেবে, যেটিকে তারা ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক অসমতাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে। ধর্মকে মার্কস ও এঙ্গেলস সমাজের আর পাঁচটা অনুষঙ্গের মতোই একটি অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ঐশ্বরিকতা বা মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য পৃথিবীর জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে সংগ্রাম করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন তারা। মার্কসের ভাষায়,
“Religion is the impotence of the human mind to deal with the occurrences it can not be understood.”
অর্থাৎ, ধর্ম মানব মনের একটি দুর্বলতম অনুষঙ্গ যেটি অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যা করে মানব মনকে প্রবোধ দেয়।”
মার্কসের মতে, অর্থনীতি হল মানবেতিহাসের বস্তুগত ভিত্তি। দর্শন, শিল্প-সাহিত্যের আগে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ। বৈষয়িক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করে। সম্পদ থেকে ধীরেধীরে রাষ্ট্র, সমাজ, নীতি, আদর্শ, ধর্ম, তত্ত্ব ইত্যাদির জন্ম হয়। মূলভাব হচ্ছে– অর্থনৈতিক উপরিকাঠামোর উপরে মানব সমাজের অন্যান্য বিষয়গুলো দাঁড়িয়ে আছে।
মার্কস ও এঙ্গেলস দেখেছিলেন, মানুষের চারদিকের পরিবেশগত অক্ষমতা এবং সেটি হতে পরিত্রাণের সান্ত্বনা হিসেবেই ধর্মের উদ্ভব হয়েছে। তারা তাদের ‘পুঁজি’, ‘এন্টি দ্যুরিং’, ‘লুদভিগ ফয়েরবাখ’, ‘চিরায়ত জার্মান দর্শনের অবসান’-সহ অন্যান্য রচনায় প্রমাণ করে গিয়েছেন যে আদিম সমাজের মানুষের প্রকৃতির সাথে লড়াইয়ের অসহায়ত্ব থেকেই ধর্মের উৎপত্তি। পাশাপাশি, গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজের দাস, সামন্ত, পুঁজিবাদী ও প্রাচ্য স্বৈরাচারী পর্যায়গুলোতে শাসক, প্রভু, সামন্ত, রাজাবর্গের শোষণের প্রতি প্রতিবাদের অক্ষমতা বা পরাজয় থেকে যে অসহায়ত্ব সৃষ্টি হয়েছিল সেটি থেকেই মানুষ একটি অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করে। শোষিতের দল মৃত্যু পরবর্তী একটি জীবনে বিশ্বাস করা শুরু করে যেখানে অনন্ত সুখের সংবাদ দিত ধর্মগুরুরা। আর এভাবেই সমাজে ধর্ম একটি শক্তিশালী মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
ধর্ম নিয়ে মার্কসের সবচেয়ে প্রচলিত উক্তিটি হল–
“Religion is…
the sigh of the oppressed creatures,
the sentiment of a heartless world,
and the soul of the soulless conditions.
It is the opium of the people.”
বাংলায়, “ধর্মীয় দুঃখবাদ হচ্ছে বাস্তব দুঃখবাদের প্রকাশ ও বাস্তব দুঃখবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ধর্ম হচ্ছে নির্যাতিত জীবের দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, আত্মাহীন এক জগত পরিবেশের কল্পিত আত্মা। ধর্ম জনগণের জন্য আফিম।”
মার্কসের সমালোচনাকারীরা এবং ধর্মান্ধরা শুধু শেষ পঙক্তিটি ব্যবহার করে মার্কসের ধর্মের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিটি তুলে ধরার জন্য। কিন্তু পুরো বক্তব্যটি পড়লে স্পষ্টতর হয় মার্কসের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি। মার্কসবাদ সর্বদাই বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়েছে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যেটি যুক্তিগ্রাহী সেটিই গ্রহণীয়। অলীক কল্পনা বা যুক্তিহীন বিশ্বাসের ওপর মার্কসবাদ তৈরি হয়নি। মার্কস যেমন শ্রেণিবৈষম্যেহীন ইউটোপিয়ান সমাজের ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন তেমনই ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন অলীক বিশ্বাস ও কপোল কল্পনার অবসান হয়ে একটি যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক সমাজের উদ্ভবের। মার্কসবাদীরা বিশ্বাস করে সমাজ যত প্রগতির দিকে অগ্রসর হবে তত সেখানে ধর্মের গুরুত্ব হ্রাস পাবে।
আরো দেখুন- ধর্মের উৎপত্তি সংক্রান্ত সামাজিক তত্ত্বগুলোর পারস্পরিক তুলনা