(পর্ব ৭-এর পর)
পুতিনকে যারা অন্যান্য বিশ্বনেতার সমকক্ষ মনে করেন, তারা মনে করেন দোনবাস ইস্যু ছিল পুতিনের একটা ভুল পদক্ষেপ। ইউরোমাইদান আন্দোলন ছিল ক্রিমিয়া দখলের একটা অজুহাত। ক্রেমলিন অনেক আগে থেকেই ক্রিমিয়া দখলের চিন্তা করছিল। কিন্তু দোনবাসের ক্ষেত্রে এটা ছিল আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত। এর ফলে সেখানকার ইউক্রেনীয়দের প্রতি রুশদের অবজ্ঞাসূচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। এরকম কিছু হতে পারে তা ২০১৪ সালেই অনুমান করা উচিত ছিল।
দোনবাস নিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশ্য সময়ের সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটা হয়ে গেছে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে একটা দর কষাকষির হাতিয়ার। ক্রিমিয়া দখলের পর পুতিনের জনপ্রিয়তা অনেক বাড়তে থাকে। কিন্তু সেটা ছিল অল্প সময়ের জন্য। বছরের পর বছর ধরে চলে আসা অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে তার রেটিং কমতে থাকে।
আমি দোনবাসে আসার কিছুদিন আগে ক্রেমলিনের ওয়েবসাইটে একটা খোলা চিঠি প্রকাশ করা হয়। এটা রুশ ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখা হয়। এতে পুতিনের স্বাক্ষর থাকলেও মনে হয় না তিনি লিখেছেন। কারণ সাত হাজার শব্দের চিঠিতে পার্টি আর কংগ্রেসের অনেক বাহুল্য আলাপ ছিল। প্রেসিডেন্ট লিখলে আরো সংক্ষেপে লিখতেন। “ইউক্রেনীয় ও রুশদের ঐতিহাসিক ঐক্য” দিয়ে স্মরণ করানো হয় উনবিংশ শতাব্দী থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সম্মিলিত ইতিহাসকে। এক বন্ধুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে পুতিন স্মরণ করেন ইউক্রেনে বলশেভিকদের অত্যাচারের কথা। যদিও স্ট্যালিনের সময় নিয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। দোনবাসের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি লেখেন, “এটা আমাদের উভয়ের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক ঘটনা।”
তিনি ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদকে জার্মান ফ্যাসিজমের সাথে তুলনা করেন। তিনি দাবি করেন, “আধুনিক ইউক্রেন গড়ে তোলার পেছনে পুরোপুরি কৃতিত্ব সোভিয়েত আমলের।” ইউক্রেন যখন স্বাধীন হয়, একে “ঐতিহাসিক মাতৃভূমি” থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। এর ফলেই ইউরোমাইদানের মতো দুর্যোগ নেমে এসেছে দেশটিতে। তিনি লেখেন,
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ক্যু সমর্থন দিয়েছে। ধীরে ধীরে ইউক্রেনকে টেনে আনা হয়েছে বিপজ্জনক ভূরাজনৈতিক খেলায়। ইউক্রেনকে ইউরোপ আর রাশিয়ার মাঝখানে প্রতিবন্ধক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
এই চিঠি দেখে কিছু বিশেষজ্ঞ ধারণা করছেন, দোনবাস এলাকায় দমন নীতির ক্ষেত্রে পুতিন হয়তো খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। এই দমন নীতি পুতিনের শাসনামলের ‘নভোরাশিয়া’ আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। নভোরাশিয়া জার আমলের একটা পরিভাষা, যার অর্থ নব্য রাশিয়া। এই আদর্শ পুনরুজ্জীবিত হয়েছে রুশ উগ্র জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা, যারা পুনরায় রুশ সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে চায়।
নভোরাশিয়া কোনো বাস্তববাদী রাজনীতির অংশ না। এতে ইতিহাস আর গৌরবকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। পুতিন এই নীতির প্রতি কতটা দায়বদ্ধ তা স্পষ্ট না হলেও নভোরাশিয়া যে এখন রাশিয়ার নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ার অংশ, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দোনবাস আর ক্রিমিয়ার মতো জর্জিয়া আর মালদোভাতেও পুতিন হাইব্রিড যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। পুতিন প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইউরোপের প্রায় ২০ হাজার বর্গ মাইল অঞ্চল ভেঙে তিনটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোর মতো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোতে রাশিয়া নির্দয়ভাবে সাইবার আক্রমণ চালিয়ে আসছে তাদের সরকারদের বিব্রত করার জন্য।
রোমানভ, বলশেভিক আর স্ট্যালিনপন্থীদের মতো নভোরাশিয়ার প্রবক্তারাও মনে করে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ছিল একটা ভুল সিদ্ধান্ত। তারা ইউক্রেনের জনগণ বা সংস্কৃতিকে আলাদা করে দেখে না। এমনকি ইউক্রেনের অস্তিত্বই স্বীকার করে না। তারা শুধু রাশিয়াতেই বিশ্বাস করে।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন মিনস্ক প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। এতে দোনবাসকে ইউক্রেনের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। বিভিন্নভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় পুতিনও আসলে এরকমটাই চান। কিন্তু পুতিন চান এই অঞ্চলকে যেন আধা-স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু জেলেনস্কি সেটাতে রাজি না। পুতিন মিনস্ক প্রটোকলের বাইরে জেলেনস্কির কোনো কূটনৈতিক আলোচনার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। বরং গত বছর দুবার তিনি ইউক্রেন সীমান্তে সেনা পাঠিয়ে যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।
এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিম ইউরোপই রাশিয়ার আগ্রাসনের বিপক্ষে লড়ছে না। গত বছর রাশিয়ার মিত্র বলে পরিচিত তুরস্কও কিয়েভে টিবি২ ড্রোন পাঠিয়েছে। এই মাসে (জানুয়ারি ২০২১) এস্তোনিয়া অঙ্গীকার করেছে তারা ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করবে। কয়েকদিন পর রাশিয়া ও আমেরিকার কূটনীতিকরা ইউক্রেন সীমান্তের সঙ্কট নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এই আলোচনায় ইউক্রেনকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
২৪ আগস্ট ইউক্রেনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কিয়েভে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের রাতগুলোতে ইউক্রেনীয় সেনারা রাস্তায় কুচকাওয়াজের অনুশীলন করার সময় পুতিনকে গালাগাল করে স্লোগান দিচ্ছিল।
কুচকাওয়াজের বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেলেনস্কি পুতিনের নাম উল্লেখ করে কিছু বলেননি। তিনি দোনবাস প্রসঙ্গে বলেন,
আমরা সেখানে আমাদের জনগণের জন্য লড়ছি। আপনারা সাময়িকভাবে অঞ্চল দখল করতে পারবেন। কিন্তু ইউক্রেনের জনগণের ভালোবাসা পাবেন না। জনগণকে পাসপোর্ট বদল করতে বাধ্য করতে পারেন। কিন্তু পাসপোর্ট দিয়ে ইউক্রেনীয়দের হৃদয় জয় করতে পারবেন না।
এটা খুব একটা অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা ছিল না। তবে এতে দোনবাসের যুদ্ধ নিয়ে একটা প্রসঙ্গ নিয়ে আসে, যা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। যুদ্ধের ফলে দেশটা বিভক্ত হয়ে গেলেও অনেক ইউক্রেনীয়কে একতাবদ্ধ করেছে, যা আগে কখনো ছিল না। এর ফলে একটা জাতি তৈরি হয়েছে, আগে যা ছিল শুধুই অনিশ্চয়তায় ভরা এক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র।
দোনবাসের যুদ্ধকে “গৃহযুদ্ধ” বলা হলে ইউক্রেনীয় দেশপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে যান। একদিক দিয়ে তারা ঠিক। কারণ যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল রাশিয়ার দ্বারা। এখনো চলমান রেখেছে তারাই। তবে অন্তত একদিক দিয়ে তার ভুল। এটাকে গৃহযুদ্ধও বলা যায়, কারণ এটা ইউক্রেনীয়দের পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনীয়দের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে তারা নিজেদের কোনো জাতির অংশ মনে করে। ইউক্রেনীয় অথবা রুশ, যেকোনো এক জাতির অংশ হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে হচ্ছে। শেষপর্যন্ত এটাই হয়তো নির্দেশ করছে পুতিনের ভুল পদক্ষেপকে।
স্বাধীনতার উদযাপন অনুষ্ঠানের আমি দেখলাম পুরো রাস্তা জুড়ে ইউক্রেনীয়রা উল্লাস করছে। তাদের মুখে নীল আর হলুদ রঙ দিয়ে জাতীয় পতাকা অঙ্কন করা। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল, এগুলো আমি দেখছি এমন দেশে যেখানে দোনবাসও অবস্থিত। দোনবাসে আমি কারো মাঝে কোনো আশার আলো দেখতে পাইনি। সেখানকার যেসব লোকদের সাথে আমি কথা বলেছি, তারা স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের স্বর্ণযুগের সাথে বর্তমান সময়ের দুর্দশার তুলনা করে হতাশা ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন সোভিয়েত যুগে দোনবাসের একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল।
দোনবাসের যুদ্ধ জটিল হাইব্রিড যুদ্ধ। কিন্তু যে মতভেদ থেকে যুদ্ধের উৎপত্তি, তা খুব সরল। এখানে একপক্ষ পূর্ববর্তী যুগে ফিরে যেতে যায়, অন্যপক্ষ চায় না।
ওই সপ্তাহেই ভ্লাদিমির ভেরিয়োভকা কিয়েভের এক সামরিক হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার ডান হাত ছিল ব্যান্ডেজ করা, বাঁকানো। হাড়ের মধ্যে ধাতব রড স্ক্রু দিয়ে লাগানো ছিল। একটা ইন্ট্রাভেনাস পাম্প দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছিল। তার কামানো মাথার বাম দিকে একটা লাল গভীর ক্ষত দেখা যাচ্ছিল, যার বিস্তার ছিল প্রায় চোখের ভ্রু পর্যন্ত। ডাক্তাররা নিশ্চিত হতে পারেননি ঠিক কীসের আঘাতে এত বড় ক্ষতের সৃষ্টি হলো। তবে যে কারণেই হয়ে থাকুক, তার সৌভাগ্য যে চোখের দৃষ্টিশক্তি কিংবা প্রাণ এখনো অক্ষত আছে। এক ইঞ্চি নিচে আঘাত পেলেই তার চোখের কোটর দিয়ে চলে যেত আঘাতটা।
ইয়ারোস্লাভ যেদিন মারা যান, সেদিন সকালেই ভ্লাদিমিরের সাথে তার প্রথম দেখা হলেও ইয়ারোস্লাভের বাবা তাকে হাসপাতালে দেখতে আসেন। তার সাথে ইয়ারোস্লাভের বাগদত্তাও এসেছিলেন। তারা ব্যাগে করে ইয়ারোস্লাভের বাগানের ফল নিয়ে এসেছিলেন। তারা হাসপাতালের ওয়ার্ডের বাইরে এক ছাউনিতে বসে কথা বলছিলেন। ভ্লাদিমিরের চোখের মধ্যে একটা শূন্য দৃষ্টি দেখতে পাচ্ছিলাম। তিনি কথাও বলছিলেন খুব ধীরে ধীরে। মনে হচ্ছিল পেইনকিলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে এমন হচ্ছে। তাদের কথোপকথন ছিল কিছুটা অস্বস্তিকর।
ভ্লাদিমির ইয়ারোস্লাভের বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তার কি কোনো সন্তান ছিল? আমি আসলে ভুলে গেছি।”
তার বাবা বললেন, “না, না। ও তার বাগদত্তা। তাদের বিয়ে করার কথা ছিল ১৫ অক্টোবর। তার চুক্তির মেয়াদ তখন শেষ হয়ে যেত।”
ইয়ারোস্লাভের বাগদত্তা নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন।
ভ্লাদিমির বলেন, “সে তার বিয়ে নিয়ে কিছু কথা বলেছিল। কিন্তু আমাদের মাঝে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কোনো কথা হয়নি।”
ইয়ারোস্লাভের বাবা বলেন, “হ্যাঁ, সে এই ব্যাপারে শুধু আমাদের সাথেই কথা বলেছিল। তার সহকর্মীদের সাথে তখনো আলোচনা করেনি। সে একটা বাড়ি কিনে নতুন করে সাজিয়েছিল। সব তাদের নিজেদের মতো করে সাজিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘আমার চুক্তি শেষ হয়ে গেলে আমরা মানুষের মতো থাকা শুরু করব’। কেউ যদি আমাদের তখন বলত…।”
তিনি আর কথা শেষ করেননি।
ইয়ারোস্লাভকে দাফন করা হয়েছিল কিয়েভ থেকে তিন ঘণ্টা উত্তর-পশ্চিমে তার নিজের শহর পিদলিপনিতে। সেদিন সকাল থেকেই শোক প্রকাশের জন্য লোকজন ইয়ারোস্লাভদের বাড়িতে জড়ো হওয়া শুরু করেছিলেন। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশি, সহপাঠী, সহযোদ্ধা ও স্থানীয় সৈনিকরা ফুল নিয়ে আসেন। অনেকে নীল-হলুদ ইউক্রেনের জাতীয় পতাকা নিয়েও আসেন। ইয়ারোস্লাভের কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছিলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যোগ দেওয়ার জন্য। দুপুরের দিকে কয়েকশ মানুষের জটলা হয়ে যায় সেখানে।
বিকেল বেলা একটা পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজাতে বাজাতে বাড়ির সামনে আসে। মানুষজন গাড়ি আগানোর জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়। গাড়ির পেছনে থাকে একটা হামভি মিলিটারি ট্রাক। ট্রাকে করে ইয়ারোস্লাভের কফিন নিয়ে আসা হয়, যাতে নীল-হলুদ পুষ্পস্তবক লাগানো ছিল। গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য ক্যাডেটরা কফিনটি বের করে বাগানে নিয়ে যায়। ইয়ারোস্লাভের বাগদত্তা এ সময় অজ্ঞান হয়ে যান। তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। পাদ্রিদের আচার অনুষ্ঠান শেষ হলে যখন কফিন আবার হামভিতে ফেরত আনা হচ্ছিল, এক ক্যাডেট চিৎকার করে বলেন, “বীর যোদ্ধারা কখনো মরে না!” অন্য ক্যাডেটরাও তখন সমস্বরে বলে ওঠেন, “বীর যোদ্ধারা কখনো মরে না!” এক ব্যান্ড তখন অন্ত্যেষ্টিগাথা গাইতে গাইতে চার্চের দিকে যাওয়া শুরু করে। পেছনে পেছনে আসতে থাকে হামভি আর জনস্রোত।
আমি হাঁটার সময় সাথে পেলাম একটা ক্রাচে ভর দিয়ে আসা ষাটোর্ধ্ব এক লোককে। তিনি একটা পুরোনো তেলনিয়াশকা পরে এসেছিলেন, যা রুশ সামরিক বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এতে ঝোলানো পদকগুলো থেকে ঝনঝন শব্দ হচ্ছিল।
তিনি আমাকে বললেন, তিনি আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় সোভিয়েত প্যারাট্রুপারের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এটা নিয়ে গর্ব করেন। তিনি একইসাথে একজন ইউক্রেনীয়। তার বাড়ি দোনেৎস্কে। দোনবাসে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তিনি পিদলিপনি থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত হতে সাহায্য করেছিলেন। তখন থেকে তিনি একের পর এক এরকম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন। তিনি বললেন, আর কয়েক বছর আগে এরকম মৃত্যু হলে পুরো শহর জড়ো হয়ে যেত। শোকের মাতম করতে হাজার হাজার মানুষ আসত। কয়েকশজন নয়। এখন সবাই যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখতে দেখতে ক্লান্ত।
তিনি ইউক্রেনীয় হলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়কালের প্রতিই টান অনুভব করেন। তখনকার নেতারা নির্ভরযোগ্য ছিলেন। তারা নিষ্ঠুর হলেও সৎ ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়টা খুবই বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলতে পারলেন না তাদের কী আশা করা উচিত।
তিনি বললেন,
আফগানিস্তান যুদ্ধ ছিল একটা প্রকৃত যুদ্ধ। কিন্তু এই যুদ্ধে আসলে কী হচ্ছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।