পর্বতারোহণ, পৃথিবীর সবচাইতে দুঃসাহসিক খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। শক্তি, সহ্য ক্ষমতা এবং ত্যাগের চূড়ান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা, অভিপ্রায় থাকলেই শুধুমাত্র এ খেলায় অংশ গ্রহণ করা যায়। অত্যন্ত বিপদজনক এই খেলায় বিপদগুলোও বলে-কয়ে আসে না। অনভিজ্ঞতা, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা এবং অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম আপনাকে যেকোনো সময় মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি সহ মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে। তবে অসংখ্য নেতিবাচকতা থাকা সত্ত্বেও পর্বতারোহণ একটি রোমাঞ্চকর, প্রাণবন্ত খেলা। যা ভালোভাবে শেষ করতে পারলে আত্মতৃপ্তির সাথে সাথে পুরস্কার হিসেবে জীবনের অধ্যায়ে যোগ হয় অসংখ্য অভিজ্ঞতা।
আজকের লেখাটি পর্বতারোহণে আগ্রহী শিক্ষানবিশদের প্রাথমিক পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে এবং পর্বতারোহণের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে শুধুমাত্র ধারণা দেবে।
১) পর্যাপ্ত গবেষণা
যাত্রা শুরুর আগে পর্বতারোহণ সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ বই ও আর্টিকেল পড়ুন। কোনো পর্বতে আরোহণ করতে গেলে কী দক্ষতার প্রয়োজন হতে পারে, কী ধরনের সরঞ্জাম সঙ্গে নেওয়া আবশ্যক এবং সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে কতটুকু শক্তিশালী এবং উদ্যমী হওয়া প্রয়োজন, এসব ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক। জানার চেষ্টা করুন, বিভিন্ন অঞ্চলে পর্বতারোহণের জন্য কোন সময়টা ভালো। আরোহণে আগ্রহী পর্বতগুলোর ব্যাপারে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করুন। এদের আবহাওয়া সম্পর্কে জানুন। যেহেতু পর্বতাঞ্চলগুলো মাইক্রো-ক্লাইমেট এর আওতাধীন, অর্থাৎ পর্বত নিজেরাই নিজেদের আবহাওয়া পদ্ধতি তৈরি করে, সেহেতু পূর্ব লক্ষণ দেখে আবহাওয়া কেমন হবে, তা কীভাবে চিহ্নিত করতে হয় শেখার চেষ্টা করুন।
বই পড়ার সাথে সাথে পর্বতারোহণের উপর করা তথ্যচিত্রগুলো দেখা, অভিজ্ঞ পর্বতারোহীদের সাথে আলোচনা করা, পর্বতারোহণ বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণও এ বিষয়গুলোর ব্যাপারে জানতে সাহায্য করবে।
২) মানসিক সক্ষমতা মূল্যায়ন
পর্বতারোহণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানসিক সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। কেননা, আপনাকে বিভিন্ন পরিস্থিতি, গতিপথ এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে দ্রুত এবং যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ পর্বতারোহণে আগ্রহীরাই সহজ জীবনধারায় অভ্যস্ত। হঠাৎ করে কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনও হয় না। আর যেহেতু প্রায় প্রত্যেকেই নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে নিজের দৈনন্দিন জীবন উপভোগ করে, সেহেতু বরফ শীতল, সুউচ্চ, রুক্ষ, জনমানবহীন অঞ্চলে হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাদের জন্য সহজ নয়।
যদি আপনি সহজেই কোনো পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ঘাবড়ে যান, তাহলে পর্বত আরোহণ আপনার জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতে যাচ্ছে। পর্বত আরোহণের আপনার প্রয়োজন হবে অবিচল ও শান্ত মনোভাব, পরিষ্কার চিন্তাভাবনা এবং দ্রুত সবচাইতে উত্তম সমাধান খুঁজে বের করার সক্ষমতা।
ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত, এমনকি আহত হওয়া সত্ত্বেও অনেক পর্বতারোহীই নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছুতে চায়। অনেকেই আবার ছেড়ে দেওয়াটাকেই ঠিক মনে করে এবং নিজের জন্য কম শ্রমসাধ্য কিছু খুঁজে নেয়। আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, আবহাওয়া, পরিস্থিতি অনুযায়ী আপনি যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুন না কেন, আপনার উচিত হবে বাস্তবধর্মী এবং নিজের প্রতি সৎ মনোভাব আগে থেকেই তৈরি করে রাখা। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফলে আপনি যেকোনো সময় কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, পর্বতে আপনার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে যেকোনো পরিস্থিতিতে আপনি কী ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন তার উপর।
৩) শারীরিক প্রস্তুতি গ্রহণ
পর্বতারোহণ তীব্রভাবে শারীরিক কর্মশক্তির উপর নির্ভরশীল। তাই শারীরিকভাবে পর্যাপ্ত ফিট থাকা আবশ্যক। আপনি চাইলেই নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত আট ঘণ্টার অফিস-ডেস্কক জীবনধারা থেকে বের হয়ে হঠাৎ করেই পর্বত আরোহণের প্রচেষ্টা করতে পারবেন না। আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক শক্তি ব্যবহার করে মাইলের পর মাইল এগিয়ে যেতে হবে, নির্দিষ্ট ওজনের ভারি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পর্বতের উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে উঠতে হবে, বিভিন্ন রিজ পাড়ি দিতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন শারীরিক সক্ষমতা এবং সহনশীলতা। তাই ফিট থাকার জন্য, কার্যশক্তি লাভের জন্য আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে নিম্নলিখিত ব্যায়ামগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।
- দৌড়ানো, জগিং; দৌড়ানোর ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর যেন দূরত্ব বাড়ানো হয়। এতে আপনার সহ্যশক্তি বৃদ্ধি পাবে। এটি পর্বতারোহণে বেশ জরুরি।
- সাইক্লিং, হাইকিং; প্রত্যেকবারের হাইকিং যেন পূর্বেরটির চাইতে শ্রমসাধ্য হয়।
- ওয়েট-লিফটিং; ব্যাকপ্যাকে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে হাঁটা বা দৌড়ানো। এক্ষেত্রে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামাও বেশ কার্যকর। বিশেষ করে আমরা যারা সমতলে বাস করে পর্বত আরোহণের স্বপ্ন দেখি, তাদের জন্য।
- সাঁতার কাটা; একে অল-ইন-ওয়ান ফিটনেস প্যাকেজ হিসেবে ধরা হয়। কেননা সঠিকভাবে সাঁতার কাটার সময় আপনার শরীরের অধিকাংশ মাংসপেশী একসাথে কাজ করে। শক্তি এবং ফ্লেক্সিবিলিটি বৃদ্ধি সহ হাই অল্টিচিউডে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সমাধানেও সহযোগিতা করে।
- ক্লাইম্বিং; আমাদের দেশে এর জন্য উপযুক্ত জায়গা না থাকলেও বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার ক্লাবগুলো আজকাল আগ্রহীদের বিশেষভাবে কৃত্রিম ক্লাইম্বিং পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের বিভিন্ন সেশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ঘরে, ছাদে ক্লাইম্বিং পরিবেশ সৃষ্টি করেও অনুশীলন করা যায়। তাছাড়া পুল-আপ, চিন-আপ, ফিঙ্গারট্রিপ পুশ-আপের মতো ব্যায়ামগুলোও করতে পারেন। এগুলো ক্লাম্বিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করবে।
এছাড়াও কার্ডিও, দড়ি লাফ সহ বিভিন্ন ব্যায়াম রয়েছে যেগুলো পর্যাপ্ত কর্মশক্তির সাথে সাথে সহ্যশক্তিও বৃদ্ধি করবে। নিজের পছন্দের ব্যায়ামটি বাছাই করুন এবং নিয়মিত অনুশীলন করার মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
৪) পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং পোশাক-পরিচ্ছদ সংগ্রহ
পর্বতারোহণের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সরঞ্জাম সংগ্রহে থাকা অপরিহার্য। সরঞ্জামগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে আপনার কাছে দু’ধরনের উপায় রয়েছে। প্রথমত, আপনি চাইলেই সরঞ্জামগুলো কিনে সংগ্রহ রাখতে পারেন। দ্বিতীয়ত, পরিচিত কারো কাছ থেকে ধার নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি যদি ক্রয় করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে তা কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও আপনাকে অনেক সুবিধা এনে দেবে। আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে, প্রত্যেকটি জিনিসই আপনার উপযোগী। আর আপনি যদি একের অধিক সময় পর্বতারোহণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে ক্রয় করার মাধ্যমে সংগ্রহ করাই উত্তম। কিন্তু আপনি যদি ধার করে সংগ্রহ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রথমত, ঐ সকল সরঞ্জামগুলো আপনার জন্য মানানসই না-ও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু পর্বতারোহণে ব্যাকপ্যাকের ওজনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে, সেহেতু আপনার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে আপনাকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ধার করা সরঞ্জামগুলো প্রয়োজনের চাইতে বেশি ভারি হলে সমস্যা দেখা দেবে। তবে হ্যাঁ, প্রথমবারের মতো ধার করে ব্যবহার করাই উত্তম। তাছাড়া কিছু কিছু জিনিস, যেমন পর্বত আরোহণের উপযোগী গরম কাপড়, জুতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ফিট হওয়া জরুরি। তাই এগুলো ক্রয় করে সংগ্রহে রাখাই সর্বোত্তম। প্রাথমিক অবস্থায় যেহেতু কঠিন কোনো পর্বত আরোহণে যাচ্ছেন না, সেহেতু অনেক সরঞ্জামই আছে, যেগুলো আপনার প্রথম পর্বত আরোহণের জন্য অপ্রয়োজনীয়। তাই আপনি কী ধরনের পর্বত আরোহণ করতে যাচ্ছেন তা বিবেচনায় এনে সরঞ্জাম সংগ্রহ করুন।
৫) পর্বত আরোহণের নীতিশাস্ত্র
অধিকাংশ পর্বতই পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত, যেগুলোতে আরোহণের ফলে সেখানকার পরিবেশের উপর প্রভাব পড়তে পারে। তাই পর্বতারোহীরা সবসময় পর্বতকে তার আদিম অবস্থানে রাখার ব্যাপারে সচেষ্ট। সেইসাথে সেখানকার সুযোগ সুবিধার অপব্যবহার না করা সহ স্থানীয় সংস্কৃতির উপর প্রভাব পড়তে পারে, এমন সব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। আর যেহেতু স্বাভাবিক পৃথিবী থেকে পর্বত বেশ দূরবর্তী, প্রায় জনমানবহীন এলাকায় অবস্থিত, সেহেতু নিরাপত্তার ব্যাপারেও সচেতন থাকা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে করণীয় কাজগুলো হলো:
- ‘Leave no trace’ আউটডোর এথিকসগুলো জানা।
- বন সংরক্ষণ নীতিগুলো মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।
- সব ধরনের অনুমতিপত্র সংগ্রহে রাখা।
- ক্লাইম্বিং কোডগুলো পড়া। কোডগুলো মূলত নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে তৈরি এবং নতুনদের জন্য অবশ্যই পাঠ্য।
- একা পর্বতারোহণের চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকা। প্রাথমিক অবস্থায় গাইড বা অভিজ্ঞ কোনো দলের সাথে আরোহণে বের হওয়া।
৬) প্রশিক্ষণ
আপনি যদি আপনার প্রথম পর্বতারোহণ কোনো কোর্সের আওতাধীন হয়ে করতে চান, তাহলে ঐ কোর্সের মাধ্যমেই আপনি আপনার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি সহপাঠী বা অন্য কারো সাথে আপনার প্রথম পর্বতারোহণের পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু প্রাথমিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পর্বতারোহণ ক্লাবগুলো সাধারণত যেসব প্রাথমিক জিনিসগুলো শিখিয়ে থাকে, সেগুলো হলো:
- আইস এক্সের ব্যবহার। যেমন: সেলফ-অ্যারেস্ট টেকনিক, আইস ক্লাইম্বিং ইত্যাদি।
- ক্র্যাভাস এবং স্নো-ব্রিজ অতিক্রম করার বিভিন্ন কলাকৌশল।
- ক্র্যাম্পনের ব্যবহার। ক্র্যাম্পন পরিধানরত অবস্থায় হাঁটার বিভিন্ন কৌশল।
- গ্লেসিয়ারের মধ্য দিয়ে হাঁটার কলাকৌশল।
- বিভিন্ন ধরনের ক্লাইম্বিং কলাকৌশল সহ রুট খোঁজা, ম্যাপ রিডিং, পিটন, বোল্টের ব্যবহার, গিট বাঁধা সহ দড়ি ব্যবহারের বিভিন্ন পদ্ধতি।
- সর্বোপরি, ফার্স্ট এইড ব্যবহার।
৭) পরিকল্পনা
আপনার প্রথম আরোহণ শিক্ষানবিশদের জন্য উপযোগী কোনো পর্বতে অভিজ্ঞ কোনো দলের সাথে হওয়া উচিত। অভিজ্ঞদের পরামর্শ এবং নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে এমন কোনো পর্বত বাছাই করুন, যেটি উচ্চতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থানের দিক দিয়ে আরোহণে সহজ। এমন পর্বত বাছাই করুন, যেটি আরোহণে তেমন টেকনিক্যাল জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, কিন্তু আপনাকে পর্বতের উচ্চতাজনিত সাধারণ সমস্যাগুলোর সম্মুখীন করবে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কী কী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে, সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা দেওয়ার সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিবে।
প্রথম আরোহণ যেন স্বল্প খরচের মধ্যে সম্ভব হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে ব্যয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জায়গায় আগত আরোহণের ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
আরোহণের জন্য নির্দিষ্ট পর্বতটি বাছাইয়ের পর, সেখানকার আবহাওয়া প্যাটার্ন, সম্ভাব্য ঝুঁকি, আরোহণের জন্য রুটগুলো নিয়ে গবেষণা করুন। যে রুট দিয়ে আরোহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন, সে রুটের বিভিন্ন সুবিধা, অসুবিধা সহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সম্পর্কে জানুন এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
৮) ভ্রমণ প্রস্তুতি
যদি বাছাইকৃত পর্বতটি আপনার দেশে বা নিকটবর্তী স্থানে না হয়ে দূরে বা অন্য কোনো দেশে হয়ে থাকে, তাহলে ভিসা, টিকিট জনিত সমস্যাগুলো সমাধানের পর, সে দেশে যাত্রা শুরুর আগে আপনার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো সর্ব প্রথম গুছিয়ে নিন। অপ্রয়োজনীয় বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে, এমন সব জিনিস আগে থেকেই বাদ দিন।
অনেক পর্বতে আরোহণের জন্য অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বাছাইকৃত পর্বত এলাকার পর্বত আরোহণ সংক্রান্ত ব্যাপারে নিয়োজিত অফিস থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র সংগ্রহ করুন।
অনুমতির নেওয়ার প্রয়োজন না হলেও কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা পর্বতাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় অফিসে আপনার সবরকমের তথ্য, যেমন আপনার এবং আপনার সাথে আরোহণে অংশগ্রহণ করা গাইড বা সঙ্গীদের নাম, ঠিকানা, আত্মীয় বা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার ঠিকানা, কোন রুট ব্যবহার করে বাছাইকৃত পর্বতে আরোহণ করবেন, ফেরার সম্ভাব্য সময় সহ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানিয়ে রাখুন। এতে করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না ফিরতে পারলে বা আবহাওয়া জনিত কোনো সমস্যায় পড়লে যেন আপনার বা আপনার সঙ্গীদের জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠাতে পারে এবং বিশেষ প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের খবর দিতে পারে।
৯) আরোহণ শুরুর পূর্বে
সাধারণত মূল আরোহণ শুরুর আগে আবহাওয়ার উন্নতির জন্য বা বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে অধিকাংশ সময়ই নির্দিষ্ট কোন স্থানে বেসক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু সময় বা পুরো রাত্রি কাটাতে হয়। এমনকি আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে সময়টা আরো বেড়ে যেতে পারে। সে সময়টা প্রয়োজনীয় পোশাকপরিচ্ছদ, সরঞ্জামগুলো চেক করে নিতে পারেন। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার, পানি আছে কিনা তাও দেখে নিতে পারেন। অভিজ্ঞ সঙ্গী বা গাইডের সাথে সম্ভাব্য ঝুঁকি, সুবিধা-অসুবিধা সহ আরোহণের রুট নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। ম্যাপে চোখ বুলাতে পারেন। এছাড়াও স্ট্রেচিং, হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানোর মতো সাধারণ ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। আর সে সময়ে অবশ্যই করণীয় কাজগুলো হলো পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া আর বিশ্রাম নেওয়া।
১০) আরোহণ
অধিকাংশ ক্লাইম্বিং ভোরে শুরু হয়, যাতে করে অন্ধকার হওয়ার আগেই ফিরে আসাটা নিশ্চিত করা যায়। তাছাড়া, যদি পর্বতের উপরে ক্যাম্পিং করে রাতে থাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে উপযুক্ত স্থানটি আগে থেকেই বাছাই করে নিতে হবে। আরোহণের সময় নির্ধারিত রুট ধরেই এগিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো সমস্যার কারণে রুট পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। শিক্ষানবিশ হিসেবে গাইড কিংবা অভিজ্ঞ সঙ্গীকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়াই সর্বোত্তম। এ সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে অভিজ্ঞরা কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়, সে ব্যাপারগুলোতে মনোযোগ দিয়ে জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করতে পারেন। নিয়মিত অল্প সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি এবং বিশ্রাম নিন। সব সময় হাইড্রেট থাকুন। সর্বোপরি, আরোহণের পর নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করুন, মুহূর্তগুলো ধরে রাখার জন্য ছবি তুলুন, পুরো মুহূর্তটা উপভোগ করুন।
১১) ফিরে আসাটা জরুরি
মনে রাখা উচিত, আরোহণের চাইতে নেমে আসাটা আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং বিপদজনক। যেহেতু দিনশেষে প্রায় প্রত্যেকেই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত থাকে, সেহেতু এ সময়ে সবচাইতে বেশি মনোযোগ ভ্রষ্টের প্রবণতা দেখা দেয় এবং দুর্ঘটনার পরিমাণও বেড়ে যায়। এগুলো এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে নামার চেষ্টা করুন। খাড়া কোনো জায়গায় নামার সময় নির্ধারিত পা রাখার জায়গাগুলো ব্যবহার করুন। বরফ বা পাথর ধ্বসের সম্ভাবনাগুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। সবসময় অভিজ্ঞ সহপাঠীদের অনুসরণ করে পথ চলুন।
পুনশ্চ: পর্বতারোহণ ক্ষেত্রটি এত বিশাল যে, উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটা ধাপ একেকটি পূর্ণ বই হিসেবে প্রকাশ হওয়ার দাবি রাখে। তাই, পর্বত আরোহণে আগ্রহী প্রত্যেকের উচিত উল্লিখিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা।
ফিচার ছবি: factorymedia.com