Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জিনিয়াস হয়ে ওঠার পেছনের রহস্য

‘সাধারণ’ থাকাটা যেন বড্ড একঘেয়ে ব্যাপার। অসাধারণের প্রতি আমাদের আকর্ষণ চিরন্তন। চলুন, আজ হোক জিনিয়াসদের অসাধারণত্বের গল্প। তবে তার আগে বলুন তো, ‘জিনিয়াস’ জিনিসটা আসলে কী? এটা আদতে হয় কীভাবে?

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, ‘জিনিয়াস’ বলতে মূলত বোঝায় এমন একজন ব্যক্তি, যিনি নিজের অসাধারণ সামর্থ্য, সৃজনশীলতা, স্বাতন্ত্র্য এবং চমৎকার কোনো অবদানের মধ্য দিয়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন সাধারণদের মাঝে।

তবে এটাই কি মূল ব্যাখ্যা? এই ব্যাপারে রবার্ট কুইলেনের একটি দারুণ উক্তি রয়েছে,

“জিনিয়াস বলতে যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, তা হলো স্থিতঃধীভাবে একটি নির্দিষ্ট দিকে মনোযোগ রক্ষার সামর্থ্য, যতক্ষণ অব্দি না সে ব্যাপারে সম্যক জ্ঞানলাভ করা যায়।”

কিন্তু তাতে তো দ্বিতীয় প্রশ্নের সমাধান হয় না। জিনিয়াস হয়ে ওঠার পেছনের গল্পগুলো কেমন? এই সাধারণের মধ্যে অসাধারণ হয়ে ওঠার পেছনে কারণগুলোই বা কেমন হতে পারে? নাহ, জিনিয়াস হওয়ার কিংবা গড়ার কোনো তরিকা বাতলে দিতে আসিনি। এমনকি এই প্রবন্ধ পড়ার পর কেউ রাতারাতি জিনিয়াসও হয়ে যাবেন না। তবে আশাহত হওয়ার বিশেষ কারণ নেই; জীনতত্ত্ব এবং আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সেই চেষ্টা ইতোমধ্যে করে চলেছে। তাই চলুন, গল্পচ্ছলেই কিছুটা সময় কাটানো যাক! বলতে পারেন, জিনিয়াস হয়ে ওঠার ‘লাইফ হ্যাক’!

রবার্ট কুইলেনের উক্তি; Image Source: quotefancy.com

‘জিনিয়াস’ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা

বলা হয়ে থাকে, একজন সাধারণ মানুষের জিনিয়াস হয়ে উঠতে যুগের পর যুগ লেগে যায়। বিশ্বকে বদলে দেওয়া অসাধারণ কাজ করতে সবাই পারেন না, সে সংখ্যা নেহায়েত কম। আর এই স্বল্পসংখ্যক মানুষদের মধ্যেই কেউ কেউ ‘জিনিয়াস’ আখ্যা পেয়ে থাকেন। তাতে সাধারণ বিবেচ্য বিষয় হিসেবে প্রথমেই যেটা আসে, সেটা হচ্ছে আইকিউ। অন্তর্দৃষ্টির এই ঝলকানি দেখানোটা শুধু বুদ্ধিই নয়, বরং প্রতিভারও উন্মেষ প্রমাণ করে। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আইকিউ ছিলো ২০০, মাইকেলঅ্যাঞ্জেলোর ১৭৭, গ্যালিলিও’র ১৮২ এবং আইনস্টাইনের ১৬২। নিশ্চিতভাবেই তাঁরা আইকিউয়ের দিক থেকে ছিলেন অন্যতম সেরা!

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আইকিউ ছিলো দুইশ’, যা আইনস্টাইন-গ্যালিলিওদের তুলনায় ঢের বেশি! Image Source: National Geographic

তবে শুধু আইকিউ হিসেব করাটাই জিনিয়াস পরিমাপের একমাত্র মাপকাঠি নয়। সাথে প্রয়োজন বিস্ময়কর কার্যক্ষমতা, অধ্যবসায় এবং দারুণ সৌভাগ্য। এর বাইরেও কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যকেও হিসাবের খাতায় নিয়ে নেওয়া যায়; তবে সেগুলো স্বতঃসিদ্ধ কিছু নয়, বরং জিনিয়াসদের জীবনচরিত ঘেঁটে পাওয়া কিছু সাধারণ ঘটনামাত্র!

পরিবার হয় খুব ভালো, নয়তো খুব খারাপ!

পিকাসো, মোৎসার্ট, বিটোভেন, আইনস্টাইন ও গয়েথ হলেন এমন কিছু জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব, যাদের বাবা-মা তাদের সৃজনশীলতায় বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। মোৎসার্ট আর বিটোভেন উভয়ের বাবাই ছিলেন পেশাদার সঙ্গীতশিল্পী এবং শৈশবে তাঁদের বাবাই শিখিয়েছিলেন কীভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজাতে হয়। মোৎসার্টের বাবা ‘লেওপোল্ড মোৎসার্ট’ ছিলেন জাল্‌ৎস্‌বার্গ আর্চবিশপের সভার সঙ্গীতজ্ঞ। বিটোভেনের বাবা ছিলেন একজন গুণী সুরকার, তাঁর তত্ত্বাবধায়নেই বিটোভেনের প্রথম হাতেখড়ি হয় সঙ্গীতে, পরবর্তীতে সাহচর্য পেয়েছেন খোদ মোৎসার্টেরও! দুঃখের বিষয়, এমন মহান একজন সঙ্গীতজ্ঞ নিজের শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টিকে কোনোদিন নিজের কানে শোনার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি। তাঁর অমর সৃষ্টি সপ্তম এবং নবম সিম্ফোনি রচনার সময়টাতে তিনি ছিলেন বধিরপ্রায়!

বিটোভেনের অমর সৃষ্টি নবম সিম্ফোনি, যা তিনি প্রায় বধির অবস্থায় প্রথম তৈরি করেছিলেন; Image Source: Orchestra Excerpts

পিকাসোর বাবা নিজেও একজন চিত্রকর ছিলেন, এবং তিনি তরুণ পাবলোর সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কাটিয়েছেন। সাত বছর বয়স থেকেই নিয়মিত চিত্রকর্মে সময় দিয়েছেন, রীতিমতো ঘটা করে আঁকাআঁকি শিখেছেন। পিকাসো পরে বলেছেন, তাঁর জীবনে বাবার প্রভাব অনস্বীকার্য। আইনস্টাইনকে নিয়ে বেশ জনপ্রিয় একটি কিংবদন্তী হলো, তাঁর বিজ্ঞানানুরাগের সূত্রপাত হয় একটি কম্পাস থেকে। আন্দাজ করতে পারছেন তো কে দিয়েছিলেন সেই কম্পাসটা? ঠিক ধরেছেন, তাঁর বাবা! আরো একজন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন আইনস্টাইন, তাঁর পারিবারিক বন্ধু ম্যাক্স। তাঁর দ্বারাই আইনস্টাইনের বিজ্ঞান ও দর্শনে হাতেখড়ি হয়। ভ্যান গগের জীবনেও তাঁর ভাই থিও’র প্রভাব ছিলো প্রকট।

তাহলে কি জিনিয়াস হওয়ার জন্য পরিবারটা অসাধারণ হওয়াটা আবশ্যক? জিনিয়াসদের জীবন পর্যালোচনা করলে সেটাকে ঠিক অত্যাবশ্যক মনে হয় না। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি তার পিতার সম্পর্কে খুব কমই জানতেন। তাতে কি তাঁর জিনিয়াস হয়ে ওঠা আটকে ছিলো? না, একদমই নয়! স্যার আইজ্যাক নিউটনের শৈশব কেটেছিলো সিঙ্গেল-প্যারেন্ট একটি পরিবারে, গোটা শৈশব তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন নিজের বাবা-মাকে ঘৃণা করতে করতেই। তাতে তাঁর জিনিয়াস হওয়াটা আটকে থাকেনি।

পিকাসোর আত্মপ্রতিকৃতি; Image Source: Cargo Collective

বিটোভেনের নাম কিছুক্ষণ আগেই নিয়েছি, সেই সূত্রে উঠে এসেছিলো তাঁর বাবার কথাও। তবে প্রদীপের নিচের অন্ধকারটুকুও একদম অস্বীকার করা চলে না। অনুশীলন সেশন সময় বিটোভেনের বাবা রীতিমতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠতেন, তাঁকে নির্যাতন করতেও পিছপা হননি কখনো। অন্য অনেক ক্ষণজন্মার মতো হয়তো বিটোভেনও ঝরে যেতে পারতেন, যদি না সেদিন নিজের ভালোবাসার পিছনে ছোটার সিদ্ধান্তটা না নিতেন। ভাগ্যিস সঙ্গীতটাকেই নিজের ধ্রুবতারা করে নিয়েছিলেন, নতুবা সঙ্গীতভুবন নিজেই অনেকখানি রঙ হারিয়ে বসতো!

নিজের কর্মক্ষেত্রে হতে হবে উৎসর্গীকৃত প্রাণ

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।” জিনিয়াস নিয়েই যেহেতু কথা চলছে, নেপোলিয়নের সুরেই বলা যায়, “আমাকে একজন জিনিয়াস দেখান, আমি আপনাকে একজন পরিশ্রমী মানুষ দেখাবো।” ভ্যান গগ ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে ২,০০০টি শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ করেছেন। এক দশক ধরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত চারটি শিল্পকর্ম, ভাবা যায়? অথচ কে বলবে, তিনি ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত সেভাবে আঁকাআঁকিটা শুরুও করেননি!

মাত্র দশ বছরের মধ্যেই এমন অন্তত ২০০০টি শিল্পকর্ম শেষ করেছেন ভ্যান গগ; Image Credit: vincent-van-gogh-gallery

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জার্নালগুলো এক স্পষ্ট সত্যের প্রতিনিধিত্ব করে- কাজই ছিলো তাঁর জীবনের একমাত্র সঙ্গী। তাঁর কোনো স্ত্রী-সন্তান ছিলো না, বোধ করি সেই সময়টুকুও করে উঠতে পারেননি। পিকাসো তো ছিলেন রীতিমতো যান্ত্রিক, কমপক্ষে ১২,০০০ শিল্পকর্ম কি আর যেমন-তেমন কথা? তিনি একবার গর্বভরে বলেছিলেন, “আমাকে একটি যাদুঘর দিন, আমি সেটা পূর্ণ করে দেবো।” কথাটা নিছক আস্ফালন ছিল না বৈকি! বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু গানই লিখেছিলেন চার হাজারেরও বেশি, আর সঙ্গে যোগ করে নিন তাঁর সুরকার, গায়ক, অভিনেতা, গল্পকার, উপন্যাসিক এবং কবি-প্রতিভাগুলোর কথাও। বলাই বাহুল্য, তাঁর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আর সঙ্গে এটাও ভুলে যাবেন না, শেষ জীবনে বেশিরভাগ সময়টাই তাঁকে পার করতে হয়েছে পক্ষাঘাতের বিষণ্ন এক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে!

জিনিয়াসরা বরাবরই তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র চাহিদাগুলোকে উপেক্ষা করে নিজ ক্ষেত্রে কাজ করে গেছেন নিমগ্নচিত্তে। সেই তুলনায় অলস ক্ষণজন্মাদের তালিকাতে খুব বেশি নাম খুঁজে পাওয়াতেই আসলে বেশ ঝামেলায় পড়তে হবে। ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল ‘আউটলায়ার্স’ নামক একটি বইতে দাবি করেন, কোনো সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হচ্ছে অন্তত দশ হাজার ঘন্টার অনুশীলন। ফলত, প্রতিভা বনাম প্রচেষ্টা বিষয়ক বিতর্কে বরাবরই বিজয়ী প্রচেষ্টা; ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়, শিখরে উঠতে হলে প্রচেষ্টাই মূল চাবিকাঠি!

মানসিক বা অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা থাকা

টেসলা এবং নিউটন দুজনেরই গুরুতর ‘পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’ ছিলো; Image Credit: missedinhistory.com

অধিকাংশ জিনিয়াসেরই নিষ্কণ্টক জীবন কাটানোর বিলাসিতা ঠিক ছিল না। পিকাসো, ভ্যান গঘ থেকে শুরু করে নিউটন, টেসলাদের জীবন ছিলো অত্যন্ত দুঃস্থ জীবনযাপন করেছেন। কেউ হয়তো বিয়েই করেননি, কেউ বা একাধিক বিয়ে করেছেন, কেউ কেউ সন্তান পরিত্যাগ করেছেন, আবার কেউ সংগ্রাম করেছেন নিঃসঙ্গ বিষণ্নতার সঙ্গে।

টেসলা এবং নিউটন দু’জনই স্বেচ্ছানির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন, দুজনেরই গুরুতর ‘পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’ ছিলো। মাইকেলঅ্যাঞ্জেলো এবং দা ভিঞ্চি দুজনই ঋণের দায় থেকে বাঁচার জন্য শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। কাফকা এবং প্রাউস্ট দু’জনেরই স্নায়ুরোগ ছিলো, তাদেরকে জীবনের একটা বড় অংশ কাটাতে হয়েছে বিছানায় শুয়ে শুয়েই; যদিও বেশিরভাগ সময়ই তাঁদের অসুস্থতার মূল কারণ ছিলো মনস্তাত্ত্বিক। ভলতেয়ার কিংবা সক্রেটিস জীবনের বিভিন্ন সময় দারিদ্র্য এবং নির্বাসনে কাটিয়েছেন, ঐতিহাসিকভাবে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে এরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে বৈকি! আবার আইনস্টাইনের মতো অসাধারণ প্রতিভাবান একজন বিজ্ঞানীর জন্য সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে প্রেমময় অনুভূতি, প্রেম যেন আইনস্টাইনের জন্য অনেকটা ‘সুইচ’-এর মতো কাজ করতো।

ফলে বাস্তবতা এই যে, ধনাত্মক হোক বা ঋণাত্মক যেকোনো অনুভূতিই কাজ করার উদ্যমকে ত্বরান্বিত করে এবং জিনিয়াসরা এ ব্যাপারে অন্যদের থেকে তুলনামূলক বেশি পটু!

খ্যাতির মোহ থেকে মুক্ত থাকা

ফ্রাঞ্জ কাফকা; Image Credit: Boston Archive

“গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না”, বাংলা ভাষায় বেশ প্রচলিত একটি প্রবাদ। কথাটা যে কতটুকু সত্যি, তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় বিখ্যাতদের জীবনচরিত আরেকবার পর্যালোচনা করে দেখলে। অধুনা আমরা যাদেরকে জিনিয়াস হিসেবে চিনি, অধিকাংশই এখন প্রয়াত। জীবদ্দশায় তাঁদেরকে খুব কম মানুষ চিনতেন, অনেকের জনপ্রিয়তাও ছিলো শূন্যের কোটায়। প্রখ্যাত উপন্যাসিক ফ্রাঞ্জ কাফকা কিংবা চিত্রশিল্পী ভ্যান গগ দু’জনই অত্যন্ত তরুণ বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, দুজনের কেউই মৃত্যুর আগে এতটা জনপ্রিয় ছিলেন না।

উপরন্তু জনপ্রিয়তা কখনো কখনো বরং সৃজনশীলতা চর্চায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অতীত সাফল্যকে বর্তমান রূপদান করতে ব্যর্থ হন অনেক প্রতিভাবানই। কারণ একটাই, নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলা। তার চেয়ে বরং নিজের খুবই বিশ্বস্ত এবং কাছের কিছু মানুষের মন্তব্যগুলো ছাড়া বাকিদের প্রত্যাশার কথা ভুলে গিয়ে নিজেকে উত্তরোত্তর ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করাটাই অধিকতর বাঞ্ছনীয়।

‘জিনিয়াস’ জন্মায়, নাকি পরিণত হয়?

অসামান্য প্রতিভাবান বলে কখনোই বিবেচিত হননি বটে, তবে তাতে ডারউইনের জিনিয়াস হয়ে ওঠাটা আটকে থাকেনি; Image Credit: Britannica

আগেই বলে হয়েছে যে এর আগের পয়েন্টগুলোকে ঠিক স্বতঃসিদ্ধ বলা চলে না। আবার এগুলোকে ‘নেহায়েত কাকতাল’ বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেও দেওয়া যায় না। জিনিয়াস হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশটা পাওয়ার জন্য এই ব্যাপারগুলো বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছিলো। তবে সেরকম পরিবেশ নেহায়েত কম মানুষ পান না পৃথিবীতে, আর সবাই জিনিয়াস হয়ে উঠতেও পারেন না। সেটার জন্য শুধু পরিবেশ হলে ঠিক চলে না, প্রয়োজন হয় সৃজনশীলতারও।

সৃজনশীলতা বলতে বোঝায় কোনো একজনের চিন্তাভাবনা, অন্তর্দৃষ্টি এবং কল্পনাশক্তির সমন্বিত একটি গুণ। আর এর উন্মেষ হতে পারে যেকোনো সময়ে, জীবনের যেকোনো পর্যায়ে। গত কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানী বুদ্ধিবৃত্তিক এমন আচরণে অবদান রাখে এমন জিনের সন্ধান করছেন। তবে অধিকাংশের মতামত, জিনিয়াস হয়ে ওঠার পিছনে অনুকূল পরিবেশের বিশদ একটি প্রভাব রয়েছে। আর সেটা সৃষ্টির জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তবে সত্যি বলতে, প্রকৃতিদত্ত প্রতিভা আর অনুকূল পরিবেশ থাকলেই ঠিক চলে না। অধ্যবসায়, প্রেরণা এবং জেদ না থাকলে নেহায়েত প্রতিভা আর পরিবেশ দিয়ে সত্যিকার অর্থে জিনিয়াস হয়ে ওঠা যায় না। এই যেমন, চার্লস রবার্ট ডারউইনের কথাই ধরা যাক! তাঁকে কখনও অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা কিংবা জিনিয়াস গোছের কিছু বলা হয়নি, তবু তিনি বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন তাঁর প্রখ্যাত ‘বিবর্তনবাদ’-এর কারণে। আর এর পিছনে যতটা না দায়ী ছিলো তাঁর প্রতিভা, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন হয়েছিলো ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং জেদের। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘অরিজিন অফ স্পিসিস’-কে সম্পূর্ণ করে তোলার জন্য ধৈর্য সহকারে টানা বিশ বছর কাজ করার পর ফলাফল পেয়েছিলেন। এরপর বাকিটা গোটা বিশ্বেরই জানা।

সারকথা

Image Credit: wallpapersontheweb.net

মোদ্দা কথা তবে কী দাঁড়ালো? জিনিয়াস হতে গেলে কি তবে উপরোক্ত ব্যাপারগুলো এতটাই জরুরি? নাহ, এমন বাঁধাধরা কোনো নিয়ম অবশ্যই নেই। তবে ইতিহাস ঘেঁটে এমন কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য দেখা গেলে সেগুলো নিয়ে কথা বলা চলে বৈকি। কিন্তু সেগুলোই সব নয়, হতে পারে না।

নতুন কিছু শেখার প্রতি হয়ে উঠুন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও অধ্যবসায়ী। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ অত্যাবশ্যক। আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, আপনি জিনিয়াস হতে পারবেন কিনা, সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব আপনার হাতে ঠিক নেই। আগেই উল্লেখ করেছি, অধিকাংশ জিনিয়াসই জীবদ্দশায় নিজের প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। সুতরাং প্রাপ্তির আশা ত্যাগ করে বরং আত্মকর্মে সর্বতোভাবে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়, জজ-ব্যারিস্টার নয়, অন্য কোনো বিশেষ পেশার প্রতি পক্ষপাতী সিদ্ধান্ত নয়, বরং নিজের ভালোবাসার জায়গাটুকু খুঁজে নিয়ে সেটাকেই জীবনের ধ্রুবতারা করে নেওয়ার মাধ্যমেই আসতে পারে চূড়ান্ত সফলতা। কে জানে, হয়তো অধুনা জিনিয়াস হিসেবে স্বীকৃত কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থেকেও হয়তো দারুণ কিছু করে বসতে পারেন যে কেউ! অপেক্ষা শুধু দুটো ব্যাপারের- নিবেদন আর পরিশ্রম।

তাহলে আর অপেক্ষা কীসের? কাজে লেগে পড়ুন! নাহ, জিনিয়াস হওয়ার লক্ষ্যে নয়, বরং কিছু একটা করে দেখানোর তাগিদ থেকে। ছোট্ট এই জীবন থেকে অল্প কিছু প্রাপ্তির জন্য সৃজনশীলতা চর্চাই হয়ে উঠুক লক্ষ্য।

ফিচার ইমেজ: cinemablend.com

Related Articles