Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সৌন্দর্যের পথে বাধা প্রদানকারী কিছু খাবার

কথায় বলে, “মানুষ তা-ই, যা সে খায়”। আধুনিক পৃথিবীর সচেতন মানুষ তাই খাবারটা বেশ ভালোভাবেই বেছে নেয়। দৈনন্দিন তালিকায় রাখার চেষ্টা করে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী সব খাবার। এখন প্রায় সবাই বাইরের অস্বাস্থ্যকর খোলা খাবার এড়িয়ে যায়। বিশেষ করে চারপাশের রাসায়নিক প্রভাব, ভেজাল আর দূষণের সাথে লড়াই করতে গিয়ে মানুষ আরো বেশি ঝুঁকছে তাজা ফলমূল আর শাকসবজির প্রতি। দুধ, ডিম, মাংস, চা, কফি প্রায় সবারই খাদ্য তালিকায় রোজ থাকে। উপকারের আশাতেই সবাই আরো বেশি নিয়মমাফিক এসকল খাদ্য উপাদান গ্রহণের দিকে ঝুঁকলেও অনেক খাবারই আমাদের অজান্তেই আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে।

বিশেষ করে আমাদের ত্বক, নখ আর চুলে এসব খাবারের দ্বারা হওয়া ক্ষতির আভাস মেলে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের উপরেই অনেকটা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা, নমনীয়তা আর তারুণ্য নির্ভর করে। সেইসাথে আমাদের নখ ও চুল কেরাটিন নামের একই ধরনের প্রোটিন দ্বারা গঠিত হওয়ায় যেসকল খাবার একটির ক্ষতি করে, তা অপরটির জন্যও ক্ষতিকর। আবার আমাদের জীবনধারণেরও এমন কিছু দিক থাকে যা দৈনন্দিন আমাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দারুণ ক্ষতি করে যায়। যেমন- কন্ঠনালী ও ফুসফুসের জন্য ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো সাধারণ মানুষের মোটামুটি জানা, কিন্তু ত্বকের ও চুলের ওপরেও ধূমপানের মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ধূমপান রক্তে বায়োটিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা নতুন চুল গজাতে বাধা দেয় এবং নখ ও চুলকে দুর্বল করে ফেলে। আসুন জেনে নিই কোন কোন খাবার আমাদের শরীরের এসকল অংশের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

চিনি

এই তালিকায় প্রথমেই যে খাবারের নাম আসে, তা হলো চিনি। রোজ কিছু পরিমাণ চিনি আমাদের গ্রহণ করা হয়ে যায়ই। কিন্তু এই পরিমাণ যদি বেশি হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা আপনার শরীরের পাশাপাশি আপনার ত্বকের জন্যও হয়ে উঠতে পারে বিপদজনক। অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ। সেই সাথে তা ত্বকে সৃষ্টি করতে পারে ব্রণ, প্রদাহ ও অস্বাভাবিক লালচে ভাব। তাছাড়া ডায়াবেটিসের ফলে শরীর যে ইনসুলিন নির্গত করে, তা দেহে এন্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়,ফলে নারী-পুরুষ উভয়েরই মাথার গ্রন্থি সংকুচিত হয়ে যায়। এতে নতুন চুল গজাতে বাধা পায়। সৌন্দর্য সচেতন মানুষদের তাই খাবার তালিকা থেকে যতদূর সম্ভব চিনি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন সৌন্দর্য বিশারদরা।

দুধ

পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবার শরীরের সকল পুষ্টি চাহিদা পূরণকারী ‘সুষম খাদ্য’ নামে পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের খাদ্য তালিকায় তাই নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত এই খাবার রাখা ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার গ্রহণ স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য উভয়ের জন্যই বেশ ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। দুধে থাকে অনেক বেশি বৃদ্ধিকারক হরমোন এবং দেহের বৃদ্ধিতে সহায়তাকারী হরমোন। এমনকি প্রক্রিয়াজাতকরণের পরেও এই উপাদানগুলো কার্যকর থাকে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষের অতিরিক্ত পরিমাণে এই সুষম খাদ্য গ্রহণ অনেক সময় রক্তে ইনসুলিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া আপনার চোখের চারপাশে, থুতনি ও গলায় যদি সময়ের আগেই বলিরেখা দেখা যায়, তবে তা আপনাকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে বলছে। অতিরিক্ত দুধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবার গ্রহণ ত্বকে বয়সের ছাপ দ্রুত ফেলে, যা মুখের এই অংশগুলোতে আগে দেখা যায়।

ক্যাফেইন

চা,কফি ইত্যাদি যেকোনো ক্যাফেইন অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে। এতে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায় ও ত্বক প্রয়োজনীয় কোলাজেন হারায়। ফলে বলিরেখা পড়ে খুব দ্রুত। চা, কফি, চকোলেট, কোল্ড কফি- যে প্রকারেই হোক, ক্যাফেইনের অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এটি অনিদ্রাজনিত সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর; Source: today.com

লবণ

আমাদের রান্নায় থাকে প্রচুর তেল-মসলা, তাই এই অঞ্চলে রান্নায় লবণের ব্যবহারটাও বেশি। অতিরিক্ত লবণ আমাদের শরীরে তরল হয়ে থেকে যায়। বিশেষ করে কেউ যদি রাতে অনেক দেরিতে রাতের খাবার খেতে অভ্যস্ত হয়, তখন এই লবণ শরীরের ক্ষতি করে অনেক বেশি। অনেক সময় এর ফলস্বরূপ সকালে চোখ ও মুখ ফুলে যায়।

অতিরিক্ত পারদযুক্ত মাছ (সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে)

প্রায়ই দেখা যায় অনেক মানুষকে তাদের পাতলা হতে থাকা চুল ও ভঙুর নখ নিয়ে অভিযোগ করতে। বিশেষ করে সাগর উপকূলবর্তী মানুষদের মাঝে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এর কারণ অতিরিক্ত পারদযুক্ত মাছ বেশি বেশি খাওয়া। এই মাছ চুল পড়া বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে অবশ্য উল্লেখ্য যে, জাপানের অত্যন্ত জনপ্রিয় মাছ ‘সুসি’তে পারদের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। সামুদ্রিক মাছগুলোর মধ্যে সোর্ড ফিশ, ম্যাকরল ইত্যাদিতে পারদের পরিমাণ বেশি থাকে। এসকল মাছ তুলনামূলক কম খাওয়া হয় বলেই পারদের এই বিষক্রিয়ার ঘটনা কম দেখা যায়। তবে টুনা মাছের কয়েকটি প্রজাতিতেও পারদের পরিমাণ বেশি থাকে।

জাপানের জনপ্রিয় মাছ ‘সুশি’তেও থাকে প্রচুর পরিমাণে পারদ; Source: kotaku.com

অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’

অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ, ভিটামিনও। শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর আধিক্য চুল পড়া বৃদ্ধি করে। সেজন্য অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে যখন অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ করা হয়, তখন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়ে যেতে থাকে।

বায়ুরোধক প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার

বায়ুরোধকভাবে প্যাকেটজাত খাবারগুলোতে থাকে অতিরিক্ত চিনি, ক্যাফেইন, এমনকি কার্বন-ডাই-অক্সাইড, যা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরুপ। নিজেকে সুন্দর দেখতে চান তো এখনি এগুলো ত্যাগ করুন, আর মাত্র ২১ দিনের পর থেকে ত্বক নিজেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে। প্রক্রিয়াজাত খাবারের বেলাতেও তাই। সাদা পাউরুটি, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোমল পানীয়, লজেন্স ও ক্যান্ডির মতো খাবারগুলো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া তা হরমোনের অসামঞ্জস্য তৈরি করে, ত্বকের তেল নিঃসরণ করে, লোমকূপ প্রশস্ত করে ও বলিরেখা দ্রুত ফেলে।

দারুণ স্বাদের ফার্স্টফুড ডেকে আনতে পারে ভয়ঙ্কর ফলাফল; Source: australiantraveller.com

তাছাড়া এই তালিকায় রাখা যায় লাল মাংসের নাম। লাল মাংস শরীরের জন্য খারাপ স্নেহ ও কোলেস্টেরলে পূর্ণ থাকে। এটি আপনার রক্তচাপ, হৃদপিন্ড, ত্বক, চুল- এককথায় আপনার সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যের জন্যই খারাপ। আবার অতিরিক্ত অ্যালকোহল ত্বককে ধীরে ধীরে পানিশূন্য করে তোলে। এ কারণেই বিয়ার পান করার পরের দিন অনেক বেশি পানি পিপাসা পায়। যদি তখন পর্যাপ্ত পানি পান করা না হয়, তবে তা ত্বককে খুব দ্রুত বুড়িয়ে দেবে। ক্ষতিকর খাবারের এই তালিকায় ফাস্ট ফুডের নাম না রাখলেই নয়। বার্গার, পিজ্জা, বিভিন্ন ফ্রাই, এমনকি রেস্টুরেন্টের ফলের জুস যা-ই হোক না কেন, কোনো ফাস্ট ফুডই আপনার স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের বন্ধুবৎসল নয়। এমনকি কম বয়স্কদের জন্য এগুলো দেহের বৃদ্ধিকে বাধা দিয়ে বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে। সকল বয়সী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বাজারজাত বিভিন্ন কৃত্রিম মাখনও বেশ বিপজ্জনক।

আপনার একটু সচেতনতাই আপনার ও আপনার পরিবারের জীবনকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর করে তুলতে পারে। আমাদের প্রচেষ্টাও তারই জন্য।

ফিচার ইমেজ- HungryForever

Related Articles