Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাঞ্জেল রিসেন্দিজ: রেলপথের মৃত্যুদূত

১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর, টেক্সাসের ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি প্লেসের প্রজনন বিশেষজ্ঞ ড. ক্লডিয়া বেন্টন তার হিউস্টনের বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। টেক্সাসের দক্ষিণ প্যাসিফিক রেলপথ থেকে পৌনে এক মাইল দূরে অবস্থিত বাসাটিতে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ একা। কারণ সেদিন বিকালেই তার স্বামী তাদের দুই মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গেছেন অ্যারিজোনার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পরদিন কলেজে প্রেজেন্টেশন ছিল বিধায় তার আর যাওয়া হয়নি তাদের সাথে।

সন্ধ্যা থেকে বিছানায় বসে একটানা কাজ করার পর ক্লান্ত ক্লডিয়া সেদিন তার বাড়ির দরজায় তালা না দিয়েই ঘুমেই পড়েন। আর মাঝরাতের দিকে তিনি যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন অজ্ঞাত এক লোক তার বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। লোকটি প্রথমে উপরের তলায় গিয়ে ঘুমন্ত ক্লডিয়ার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়।

তারপর ক্লডিয়ার মাথায় দুই ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রোঞ্জ মূর্তি দিয়ে আঘাত করে এবং তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। খুন করার পর সে কিছু টাকা, কিছু আইভরি মূর্তি, গয়নাগাটি, ইলেকট্রনিক গিয়ার ও একটি মাংস কাঁটার মেশিন নিয়ে ক্লডিয়ার জীপে করেই পালিয়ে যায়। পুলিশ ক্ষতবিক্ষত ক্লডিয়ার লাশ মেঝেতে উপুড় করা অবস্থায় পায়। তার মাথা আংশিকভাবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং শরীরের বাকী অংশ কম্বল দিয়ে ঢাকা ছিল।

সেই জীপটি পরে সান অ্যান্থনিও থেকে উদ্ধার করা হয়। গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের উপর পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে জানা যায় এই নরহত্যাকারীর নাম রাফায়েল রিসেন্দিজ-র‍্যামিরেজ, যার নামে ইতিমধ্যে আরও বেশ ক’টি হত্যার মামলা ছিল।

অ্যাঞ্জেল ম্যাতুরিনো রিসেন্দিজ

রিসেন্দিজের নামে ফ্লোরিডায় সিঁধেল চুরি, গাড়ি চুরি এবং জিঘাংসামূলক হামলা সহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিলো। তার ২০ বছরের সাজাও হয়েছিলো, তবে ১৯৮৫ সালের আগস্টে প্যারোলে মুক্তি পায় সে। পরে আবার নিউ মেক্সিকোতেও সিঁধেল চুরির দায়ে ১৮ মাসের জেল হয় তার, সেখানেও ১৯৯৩ সালে প্যারোলে মুক্তি পায়। মিসৌরি এবং ক্যালিফোর্নিয়াতেও কয়েক দফা জেল খেটেছে রিসেন্দিজ। তাকে ১৭ বার দেশছাড়া করা হয় ভুয়া ইমিগ্রেশন ডকুমেন্ট ব্যবহারের দায়ে। সে ৩০টিরও বেশি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছে বিভিন্ন সময়ে!

রাফায়েল রিসেন্দিজ-র‍্যামিরেজ; Source: Clark County Prosecuting Attorney

১৯৯৯ সালে রিসেন্দিজকে ধরার জন্যে দেশব্যাপী তল্লাশি চালনা হয়। ঠিক সেই সময় টেক্সাসের এল প্যাসো অবৈধভাবে সীমান্ত পার করার সময় সে INS (Immigration and Naturalization Service) এর হাতে ধরা পড়ে। এজেন্টদের কেউ জানতো না তার আসল পরিচয় এবং তাদের ডাটাবেজে রিসেন্দিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনুসন্ধান করার পর কিছু না পেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এফ.বি.আই রিসেন্দিজকে তাদের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ১০ জন অপরাধীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। সরকারীভাবে ঘোষণা দেয়া হয়, রিসেন্দিজকে ধরিয়ে দিতে পারলে কিংবা তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার পুরষ্কার দেয়া হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেই পুরষ্কারের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১২৫ হাজার ডলারে। এদিকে এফ.বি.আইয়ের এক তদন্তের পর জানা যায়, রিসেন্দিজ র‍্যামিরেজ আসলে অ্যাঞ্জেল ম্যাতুরিনো রিসেন্দিজের ছদ্মনাম; যার নামে রয়েছে চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ সহ বেশ কিছু খুনের অভিযোগ।

গ্রেফতার

আসল পরিচয় জানার জন্য রিসেন্দিজের সৎবোন কারকাভিজের কাছ থেকে তার ব্যাপারে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চালায় এফ.বি.আই.। কিন্তু সে প্রথমে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে। অবশেষে টেক্সাস রেঞ্জারদের সার্জেন্ট ড্রিউ কার্টার কথায় সে সাহায্য করতে রাজী হয় এবং ১৯৯৯ সালের জুলাইর ১৩ তারিখ রিসেন্দিজ কার্টারের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

গেফতারক্রিত অবস্থায় রিসেন্দিজ © Karen Warren

তাকে গ্রেফতার করার পর তার বাড়ি থেকে তল্লাশি চালিয়ে ক্লডিয়ার খুনের সাথে সংযুক্ত চুরি যাওয়া আইটেমগুলো শনাক্ত করা হয়।

জবানবন্দী ও বিচারকার্য

পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে রিসেন্দিজ নিজের সকল অপরাধ স্বীকার করে নিলেও আদালতে শুনানির সময় মানসিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সে নিজেকে নিরপরাধ হিসেবে দাবী করে। এমনকি তার আইনজীবী এই ব্যাপারে কিছু প্রমাণও হাজির করেন আদালতে। দেখানো প্রমাণ অনুযায়ী, রিসেন্দিজ প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত মানসিক রোগী, সেই কারণে তার ভাল-মন্দ বোঝার ক্ষমতা ছিল না। সে নিজেকে ঈশ্বর প্রেরিত দূত হিসেবে মনে করতো, অর্থাৎ খুন করার সময় তার উপর আজরাইল ভর করতো। এমনকি তার সকল খুনের পেছনে নাকি স্বয়ং ঈশ্বরের দৈব নির্দেশ রয়েছে!

বিশেষ করে ক্লডিয়া বেন্টনের খুনের ব্যাপারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে সাক্ষাৎকারে সে বলে, তাদের বাসার পর্দাবিহীন জানালা দিয়ে দেখা বেশকিছু মূর্তি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার পর কয়েকটি মূর্তি তার কাছে পৈশাচিক মনে হয়। এছাড়া বুকশেলফের মেডিক্যাল প্রকাশনাগুলো দেখে সে ধরে নেয়, ক্লডিয়া বাচ্চা শিশুদের উপর অবৈধ গবেষণা করেন।

২০০০ সালের ৮ই মে, ক্লডিয়া হত্যার বিচারের দিন তোলা ছবি; Source: Murderopedia

আদালতে বেশ লম্বা সময় ধরে বিচারকার্য চলার পর, একজন জুরি সদস্য রিসেন্দিজকে ক্লডিয়া বেন্টন হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন ২০০০ সালের মে মাসে। টেক্সাস কোর্ট অফ ক্রিমিনাল আপিলস এই রায়কে যৌক্তিক বলে ঘোষণা করে এবং ২০০৩ সালের মে মাসে সাজা প্রদান করেন। তার পরবর্তী প্রত্যেকটি আপিল রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় আদালত তার সমস্ত আপিল খারিজ করে দেয়। বেশিরভাগ সময় টেক্সাস মৃত্যুদণ্ডের মামলা দোষী সাব্যস্ত থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত যেতে ছয় বছরের বেশি সময় লাগে। শেষমেশ, ২০০৬ সালের ২১জুন আদালতের এক শুনানিতে রিসেন্দিজের মৃত্যুদণ্ডের তারিখ ঠিক করা হয়। বিচারক রায়ের শোনার পর রিসেন্দিজ বলে ওঠে,

“মৃত্যুতে আমি বিশ্বাস করি না। আমি জানি, দেহটা পচে যাবে। কিন্তু সত্ত্বা হিসেবে আমি অবিনশ্বর, আমি অমর!”

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে রিসেন্দিজ তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ আগেই স্বীকার নিয়েছিল। পরে দ্রুত তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, সেই আশায় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে দেয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে সে মোট ১৫টি খুনের ঘটনা ও কারণ বর্ণনা করে। বেশ কিছু ঘটনার বর্ণনায় তার কথার মানে দাঁড়ায়, সে এমন বাড়িতে প্রবেশ করতো, যেখানে শয়তানের উপাসনা করা হয় কিংবা বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপ চলে বলে তার মনে হতো।

হত্যাকাণ্ডের তালিকা

রিসেন্দিজ প্রথমদিকে খুন করার পর লাশ খাদে কিংবা পরিত্যক্ত কোনো পুরনো বাড়ির পাশে ফেলে আসতো। তারপর কিছুদিন সে খুন করার পর লাশ রেললাইনের পাশে ফেলে আসতো এবং পরের প্রত্যেকটি অপরাধপটই ছিল স্থানীয় রেলপথের দুয়েক মাইলের মধ্যে।

ক্রিস্টোফার মেয়ার হত্যার অপরাধপট; Source: Murderpedia

  • রিসেন্দিজ তার প্রথম খুনটি করে টেক্সাসের পূর্ব সান অ্যান্থনিওতে। ১৯৮৬ সালে, এক ভূমিহীন মহিলাকে সে .৩৮ ক্যালিবারের বন্দুক দিয়ে চারবার গুলি করে হত্যা করে এবং তার মৃতদেহ এক পরিত্যক্ত ফার্মহাউজে ফেলে যায়। রিসেন্দিজ তার জবানবন্দীতে বলে, মহিলার সাথে তার হোমলেস শেল্টারে পরিচয় হয়। এরপর দুজনে মিলে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বেরোয় আর টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্যে সাথে করে একটি বন্ধুকও নেয়। কিন্তু মহিলা তাকে অপমান করলে সে তাকে খুন করতে বাধ্য হয়!
  • এই খুনটি করার পরপরই, সে ঐ মহিলার বয়ফ্রেন্ডকেও খুন করে, সান অ্যান্থনিও ও উভ্লাদের মধ্যবর্তী কোথাও একটি খাদে লাশ ফেলে দিয়ে আসে। তাকে খুন করার পেছনে কারণ হিসেবে রিসেন্দিজ বলে, সে নাকি কালো জাদুর সাথে জড়িত ছিল। লোকটির লাশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং এ ব্যাপারে রিসেন্দিজের দেয়া তথ্য ছাড়া অন্য কোন তথ্যও জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।
  • ১৯৯১ সালের ১৯ জুলাই সান অ্যান্থনিও শহরের এক পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে পাওয়া যায় ডেভিড হোয়াইট নামের এক ২১ বছর বয়সী যুবকের লাশ। সেইসময় যথাযথ তথ্য প্রমাণের অভাবে মামলার কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। পরে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে দেয়া জবানবন্দীতে রিসেন্দিজ বলে, খুনটি সে নিজে করেছে কারণ হোয়াইট সমকামী ছিল। অপরাধপটের একটি মানচিত্রও এঁকে দেখায় সে।
  • ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ খুন হয় ১৯ বছর বয়সী জেসে হওইয়েল ও তার ১৬ বছর ভ্রমণ সহচর ওয়েন্ডি ফন হিউবেন। তাদের একজনের লাশ ফ্লোরিডার বেলেভিউয়ের এক রেলওয়ের পাশে পাওয়া গেলে তখন পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া যায়নি দ্বিতীয় লাশটির। পরে ইমিউনিটির প্রতিশ্রুতিতে রিসেন্দিজ তাদেরকে খুন করার কথা স্বীকার করে এবং দ্বিতীয় লাশটির কথা উল্লেখ করে।
  • ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে, ক্যালিফোর্নিয়ার কল্টন শহরের রেললাইনের ধারে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যদিও কোনো যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হয় খুনটি রিসেন্দিজ করেছে।

ক্রিস্টোফার মেয়ার ও তার বান্ধবী হলি ডান; Source: CBS News

  • লেক্সিংটন কেন্টাকি- ১৯৯৭ সালের অগাস্টের ২৯ তারিখ ২১ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার মেয়ার তার বান্ধবী হলি ডানকে নিয়ে এক পার্টিতে যাওয়ার সময় রিসেন্দিজের হামলার কবলে পড়ে। রিসেন্দিজ প্রথমে তাদের কাছ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় এবং মেয়ারকে বেঁধে শক্ত কিছু দিয়ে তার মাথায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে। পরে হলিকে ধর্ষণ করার পর তার মাথায় একই বস্তু দিয়ে আঘাত করে রেললাইনের ধারে ফেলে রেখে যায়। মেয়ার মারা গেলেও হলি সেদিন ঘটনাক্রমে বেঁচে যায় এবং পরে বেন্টন মার্ডারের শুনানিতে সে রিসেন্দিজের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দেয়।
  • ১৯৯৮ সালের অক্টোবরের ২ তারিখ টেক্সাসের হিউজেস স্প্রিংসের এক বাড়িতে বসবাসকারী ৮৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা লেফি ম্যাসনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই খুনটির পর থেকে রিসেন্দিজের সমস্ত জ্ঞাত অপকর্মগুলো ঘটেছে বাড়ির ভিতরেই।
  • সেই বছরেই, ডিসেম্বরের ১১ তারিখ জর্জিয়ার কার্ল শহরের এক বাড়ির ভেতরে পাওয়া যায় ৮১ বছর বয়সী ফ্যানি বায়ের্স নামের আরেক বৃদ্ধার লাশ। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন থেকে ধারণা করা হয়, তাকে মুগুর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রথমে সেই খুনের দায়ে অন্য একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও, রিসেন্দিজের দেয়া তথ্যের মাধ্যমে জানা যায় আসলে লোকটি নির্দোষ। পরে তার উপর আনিত অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয় এবং রিসেন্দিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
  • উপরের খুনটির ঠিক পাঁচদিন রিসেন্দিজ পরই ড. ক্লডিয়া বেন্টনকে হত্যা করে, যার বর্ণনা ইতিমধ্যে উপরে দেয়া হয়েছে।

ড. ক্লডিয়া বেন্টন ও  নাওমি ডমিঙ্গেজ; Source: Murderpedia

  • এর পরের বছর, ১৯৯৯ সালে রিসেন্দিজ আবারও জোড়া খুন করে। মে মাসে ২ তারিখ, টেক্সাসের উইমারে বসবাসরত নরম্যান সিরনিক ও তার স্ত্রী ক্যারেনকে, তাদের নিজেদের বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদেরকে ঘুমন্ত অবস্থায় ভারী হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। খুন করার আগে রিসেন্দিজ ক্যারেনের উপর শারীরিক নির্যাতন করে। খুন করার পর দুজনের শরীরই কম্বল দিয়ে ঢেকে দিয়ে, সে তাদের ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাটির তিন সপ্তাহের চুরি যাওয়া সেই ট্রাক সান অ্যান্থনিওতে পাওয়া যায়।
  • রিসেন্দিজ তার পরের খুনটি করে জুনের ৪ তারিখ হাউস্টেন শহরে। এবারে তার হাতে নির্যাতনের শিকার হন নাওমি ডমিঙ্গেজ নামের এক ২৬ বছর বয়সী মহিলা। রিসেন্দিজ তাকে ধর্ষণ করার পর খুন্তি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে এবং তার গাড়ি চুরি করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
  • সেদিন নাওমিকে হত্যা করার পর, রিসেন্দিজ তারই গাড়ি চালিয়ে যায় টেক্সাসের শুলেনবার্গ শহরে। সেখানে সে জোসেফিন কনভিকা নামের ৭৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে একই খুন্তি দিয়ে খুন করে। খুন্তিটি বৃদ্ধার মাথায় বিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। জোসেফিনের বাড়ির পেছনের ঘরে লাশের সাথে পাওয়া গিয়েছিল রিসেন্দিজের অপরাধের খবর ছাপানো একটি পত্রিকা এবং একটি খেলনা ট্রেন। নাওমির গাড়িটি ঘটনার এক সপ্তাহ পর ডেল রিওর আন্তর্জাতিক সেতুর নিচে পাওয়া যায়।

জর্জ মর্বের ও তার মেয়ে ক্যারোলিন ফ্রেডরিক; Source: CBS News

  • এই মাসেরই ১৫ তারিখ, জর্জ মর্বের (৮০) ও তার মেয়ে ক্যারোলিন ফ্রেডরিকের (৫১) লাশ পাওয়া যায় তাদের ইলিনয়ের গ্রামের বাড়িতে। মর্বেরের লাশটি চেয়ারের সাথে বাঁধা ছিল এবং তার মাথার পেছনে শটগানের গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। ক্যারোলিনকে ধর্ষণ করার পর একই শটগান দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।

উপরের ক্রাইমগুলো ছাড়াও রিসেন্দিজ আরও দুটি খুনের কথা শিকার করে তবে সেব্যাপারে কোনও তথ্য দিতে রাজী হয়নি সে।

শেষ অংক

আদালতে যখন রিসেন্দিজের ফাঁসির রায় দেয়া হচ্ছিল তখন তাকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা যায়- ‘ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা কর’। সেদিন কোর্টে জর্জ বেন্টন, জোসেফিনের ছেলে, ক্যারেনের ভাই, ক্যারোলিনের ছেলে এবং রিসেন্দিজের পরিবার উপস্থিত ছিল।

নিজের শেষ বিবৃতিতে নিহতদের আত্মীয়দের উদ্দেশ্যে সে বলে-

“আমি জানি না আপনারা আমাকে কখনও অন্তর থেকে ক্ষমা করতে পারবেন কিনা। তবে না করলেও ক্ষতি নেই। আমি জানি, শয়তানের প্ররোচনায় আমি অনেক বড় পাপ করে ফেলেছি। শুধু এটুকুই বলবো, যদি পারেন তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং এভাবে শয়তানের প্রতারণায় পড়ার জন্যে ঈশ্বরের কাছে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমার উপর ধৈর্য ধরে রাখার জন্য। আপনাদের এভাবে কষ্ট দেয়ার কোনো অধিকার আমার ছিল না। এই কষ্টটুকু আপনাদের কখনও প্রাপ্য ছিল না”।

২০০৬ সালের ২৭ জুন রাত ৮টা ৫ মিনিটে প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে রিসেন্দিজের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার শরীরে ইনজেকশন পুশ করার পর থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত সে হিব্রু ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রার্থনা করছিল।

তথ্যসূত্র: টেক্সাস এক্সিকিউশন তথ্য কেন্দ্র, টেক্সাস অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অফ ক্রাইমাল জাস্টিস,
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস,ডালাস মর্নিং নিউজ, হিউস্টন ক্রনিকল, হান্টসভিল আইটেম, সান আন্তোনিও এক্সপ্রেস-নিউজ, কোর্ট টিভি।

ফিচার ইমেজ-  digital Art

Related Articles