Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আসিমো: বিশ্বের প্রথম অ্যাডভান্সড হিউম্যানয়েড রোবট

‘আসিমো’ হোন্ডা প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিচালিত দুই দশকের চূড়ান্ত গবেষণার একটি পরিণতি। রোবোটিকস প্রযুক্তিতে হোন্ডা কোম্পানির এই অবদান না বললেই নয়। মূলত হোন্ডা মানুষের জন্য এমন একটি রোবট তৈরি করতে চেয়েছিল, যা মানুষের  মাঝে থেকে মানুষের কাজকর্মে সাহায্য করবে এবং মানবশ্রম লাঘব করবে। শুধু তাই না, পাশ্চাত্যের একাকীত্ব দূর করে বিনোদন দিতে পারবে এই ব্যাপারটি নিয়েও তারা চিন্তা করেছিল। এ সকল চিন্তার ফলশ্রুতি হচ্ছে ‘আসিমো’।

আসিমো গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়া

আসিমো ২০০০ সালের অক্টোবরে উন্মোচিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এর গবেষণা এবং উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৮৬ সাল থেকে। প্রথমে কিছু এক্সপেরিমেন্টাল ও প্রোটোটাইপ মডেল নিয়ে পরীক্ষাগারে গবেষণা করে দেখা হয়।

E0 মডেল

একটি সফল রোবট তৈরী করার জন্য প্রথমেই  দরকার ছিলো এমন একটি মডেল তৈরী করা যা হাঁটতে সক্ষম হবে। ১৯৮৬ সালে হোন্ডা কোম্পানি প্রথমেই কাজ শুরু করলো “টু-লেগড লোকোমোশন প্রিন্সিপাল” নিয়ে এবং  প্রথমে দুই পায়ে হাঁটতে সক্ষম রোবট তৈরি করা হলো।

‘E0’ এক্সপেরিমেন্টাল মডেল

প্রতিটি পদক্ষেপের  মধ্যে প্রায় পাঁচ সেকেন্ড সময় নিয়ে E0 মডেলটি সফলভাবে একটি সরল রেখায় খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে গবেষকেরা অনুধাবন করলেন  দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে হাঁটার জন্য  হাঁটার গতি বাড়ানো প্রয়োজন এবং অসমান বা অমসৃণ পৃষ্ঠতলে বা ঢালের উপর হাঁটতে পারা আবশ্যক।

E1, E2, E3 মডেল

দ্রুতগতিতে হাঁটার জন্য প্রথমে দরকার ছিল মানুষ কিভাবে হাঁটে তা জানা, যেহেতু লক্ষ্য হিউম্যানয়েড রোবট তৈরী। মানুষের হাঁটা ছাড়াও বিভিন্ন প্রাণীর হাঁটার প্রক্রিয়া নিয়েও গবেষণা করা হয়।

E1, E2, E3 এক্সপেরিমেন্টাল মডেল

১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মানুষের হাঁটা থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ ও তার উপর ভিত্তি করে একটি দ্রুত হাঁটার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল এবং E2 মডেলে ইনপুট শুরু হয়েছিল যা ১.২ কিলোমিটার/ ঘণ্টা গতিতে দ্রুত হাঁটতে পারতো সমতল পৃষ্ঠের উপর।

E4, E5, E6 মডেল

১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে গবেষকেরা “টু-লেগড লোকোমোশন প্রিন্সিপাল” এর উপর ভিত্তি করে হাঁটার বেসিক ফাংশন সম্পন্ন করেন। একইসাথে স্থিতিশীলভাবে হাঁটার জন্য প্রযুক্তি স্থাপন করে কয়েকটি মডেল তৈরী করা হয়, যেগুলো হলো E4, E5, E6।

 

E4, E5, E6 মডেল

প্রযুক্তির পরের ধাপ ও চ্যালেঞ্জ ছিল হাঁটতে পারা পায়ের সাথে শরীর যুক্ত করা এবং একটি হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করা ।

P1 প্রোটোটাইপ

১৯৯৪ সালে  P1 প্রোটোটাইপটি তৈরী করা হয় যা সুইচ এবং দরজার নব পরিচালনা করতে সক্ষম ছিল। একইসাথে এটি বাধা অতিক্রম করে হাঁটতে ও সিঁড়িতে উঠতে পারত।

P1 প্রোটোটাইপ

P2 প্রোটোটাইপ

১৯৯৬ সালের  P2 প্রোটোটাইপটি ছিল বিশ্বের প্রথম স্বনিয়ন্ত্রিত হিউম্যানয়েড রোবট যা বেতার প্রযুক্তিতে তৈরী এবং পূর্বের প্রোটোটাইপ অপেক্ষা আরও বেশি কম্প্যাক্ট।

P2 প্রোটোটাইপ

P3 প্রোটোটাইপ

১৯৯৭ সালের P3 প্রোটোটাইপটি ছিল বিশ্বের প্রথম সম্পূর্ণ  স্বাধীন স্বনিয়ন্ত্রিত হিউম্যানয়েড রোবট, যা আকারে এবং ওজনে বিবর্তিত হয়। এটি মানব পরিবেশে ব্যবহারের জন্য বেশ উপযুক্ত ছিলো।

P3 প্রটোটাইপ

আসিমোর উন্মোচন

২০০০ সালের ২০ নভেম্বর অনেকগুলো এক্সপেরিমেন্টাল ও প্রোটোটাইপের উপর পরীক্ষা চালানোর পর হোন্ডা কোম্পানি তাদের প্রতিক্ষীত বিশ্বের প্রথম অ্যাডভান্সড হিউম্যানয়েড রোবট ‘আসিমো’ উন্মোচন করে।

বিশ্বের প্রথম অ্যাডভান্সড হিউম্যানয়েড রোবট ‘আসিমো’

‘আসিমো’ নামটি ইংরেজী ‘Advanced Step in Innovative Mobility’ থেকে এসেছে।

আসিমোর বৈশিষ্ট্য

১। আসিমো ঘন্টায়  ৯ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে, আকার আকৃতিতে বেশ কম্প্যাক্ট এবং ওজনে হালকা (১৩০ সে.মি, ৫০ কেজি)। হাঁটা বা দৌড়ানোর সময় সামনে প্রতিবন্ধক থাকলে সে থেমে যায় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য রাস্তা পরিবর্তন করে।

ঘন্টায় ৯ কিঃমিঃ বেগে দৌড়ায় আসিমো মসৃণ ও অমসৃণ পথে

২। কণ্ঠস্বর বা চেহারা চিনে আসিমো হাত মেলাতে এবং সাড়া দিতে পারে।

স্বর ও চেহারা চিহ্নিত করে সাড়া

৩। ট্রে ঠেলে নিয়ে যাওয়া, বোতল খুলতে এবং পরিবেশন করতে পারে।

পানীয় পরিবেশন করছে আসিমো

৪। চলন্ত বস্তু বুঝতে পারে, গোল পোস্ট লক্ষ্য করে গোল দিতে পারে, এক পায়ে দাঁড়াতে পারে।

ফুটবল খেলছে আসিমো

এক পায়ে দাঁড়ানো আসিমো

৫। আসিমো মিউজিকের তালে তালে নাচতে পারে এবং দর্শককে বিনোদন দিতে পারে।

ডিজাইন কন্সেপ্ট

হোন্ডা কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি রোবট ডিজাইন করা যা মানব সমাজে থেকে বাসা বা অফিসে কাজ করতে পারবে। এজন্য আসিমোর উচ্চতা, ওজন এবং অপারেটিং সিস্টেম যথেষ্ট ইউজার ফ্রেন্ডলি। উচ্চতা ১৩০ সে.মিঃ.যা অফিসে বা বাসা-বাড়িতে কাজ করার জন্য সহায়ক।

ডিজাইন কন্সেপ্ট

ব্যবহৃত প্রযুক্তি

বেশ কয়েক  ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে রোবট ডেভেলপমেন্টে।

স্টেবল ওয়াকিং-এর জন্য যে প্রযুক্তি আসিমোতে ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো ‘ইন্টেলিজেন্ট রিয়েল টাইম ফ্লেক্সিবল ওয়াকিং’, যাকে বলা হয়  ‘i-WALK’

i-WALK প্রযুক্তির জন্য কন্ট্রোল ব্লক ম্যাপ

ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি

যে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সগুলো আসিমো ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলো হলো-

  • চলন্ত বস্তুর উপলব্ধি অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি বা বস্তু এর দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়, তবে তা উপলব্ধি করতে পারে।
  • ইশারা ও ইঙ্গিতের উপলব্ধি অর্থাৎ কোনো ব্যাক্তি  যদি কথা না বলে হাত দিয়ে ইশারা করে, তা বুঝতে পারে।
  • পরিবেশ উপলব্ধি।
  • মুখ উপলব্ধি করতে পারে অর্থাৎ মুখশ্রী আলাদা করতে পারে।
  • ভিন্ন ভিন্ন মানুষের কণ্ঠস্বর আলাদা করে চিনতে পারে।

অ্যাডভান্সড প্রযুক্তি

অ্যাডভান্সড পর্যায়ের কিছু সেন্সর আসিমো ডেভেলপমেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। সেগুলো হলো-

  • সরলরেখায় বা বৃত্তাকারে দ্রুতগতিতে দৌড়ানোর সময় রোবটের যেন শরীরের ভারসম্য ঠিক  থাকে এজন্য ‘পশ্চার কন্ট্রোল লজিক’ ব্যবহৃত হয়েছে।
  • আইসি কমিউনিকেশন কার্ড যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মরত ব্যক্তিদের তথ্য রোবটের ডাটাবেজে থাকে।
  • ভিজুয়াল সেন্সর যা রোবটকে দূর থেকে কর্মরত ব্যক্তিদের চিনতে সাহায্য করে।
  • গ্রাউন্ড সেন্সর যা রোবটকে মসৃণ-অমসৃণ পথ বুঝতে সাহায্য করে।
  • আল্ট্রাসনিক সেন্সর যা রোবটকে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা বুঝতে এবং সংক্ষিপ্ততর পথে চলতে সাহায্য করে।
  • হাতের কব্জিতে ফোর্স সেন্সর যার মাধ্যমে রোবট একটা নির্দিষ্ট ভরের বস্তু ঠেলতে পারে।

হোন্ডা কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বয়ংক্রিয় চলাচলে অবদান রাখা। আসিমো মোবিলিটির একটি সম্পূর্ণ কম্প্যাক্ট। আসিমো থেকে বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন এসেছে যেগুলো হলো ‘ইউনি-ক্যাব’ ও ‘ইউনি-এক্স’। এছাড়াও আছে ‘ওয়াকিং অ্যাসিস্ট ডিভাইস’।

“ইউনি-ক্যাব”, “ওয়াকিং অ্যাসিস্ট ডিভাইস”, “ইউনি-এক্স”

প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলাচলে সাহায্য করে এবং সাথে সাথে ভয়েজ রিকগনিশনের মাধ্যমে কমান্ড এক্সিকিউট করে।

একুশ শতকের মধ্যে হোন্ডা কোম্পানির স্বপ্ন ছিল যে আসিমো সত্যিই মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। সেদিন হয়ত খুব বেশী দূরে নেই যেদিন মানুষের পাশে বসে বা দাঁড়িয়ে রোবটেরাও কাজ করবে এবং মানুষের শারীরিক পরিশ্রম লাঘব করবে।

তথ্যসূত্র

১। asimo.honda.com/

২। roboticsbible.com/asimo-technical-features.html

৩। reekoscience.com/science-news/technology-science-news/asimo-honda-robot-has-learned-some-new-tricks

৪। en.wikipedia.org/wiki/ASIMO

৫। honda.com/mobility/say-hello-to-asimo

Related Articles