সম্ভ্রান্ত এবং সৌন্দর্য- এই দুইয়ের সমন্বয়ে পৃথিবীর অনেক নারীই হয়ে উঠেছেন অনন্য। ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে তাদের জীবনকথা। যুগে যুগে মানুষের জানার আগ্রহ রয়ে গেছে এমন সম্ভ্রান্ত নারীদের জীবন সম্পর্কে। আসুন তবে আজকে জেনে নেই এমনই কিছু সম্ভ্রান্ত নারীর কথা।
প্রিন্সেস মার্গারেট
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট বোন প্রিন্সেস মার্গারেট। আজও বিশ্বের এক অন্যতম সুন্দরী সম্ভ্রান্ত রমণী হিসেবে পরিচিত তিনি। ১৯৩০ সালের ২১ আগষ্ট যুক্তরাজ্যের গ্লেমিস প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন প্রিন্সেস মার্গারেট। তাকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের একজন বিতর্কিত সদস্য হিসেবেও অনেকে আখ্যায়িত করে থাকেন। তিনি অ্যান্টনি আর্মস্ট্রং জনসের সাথে ১৯৬০ সালের ৬ মে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য অনেকেই তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে থাকেন। কথিত আছে, তিনি বহু পুরুষের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার পর থেকেই প্রচুর ধূমপান করতেন এবং জীবনের শেষ দিকে এসে এই ধূমপানের কারণে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজা এডওয়ার্ড সপ্তম হাসপাতালে মারা যান।
গ্রেস কেলি
মোনাকোর প্রিন্স তৃতীয় রেইনারকে বিয়ে করার পর গ্রেস কেলি রাজকীয় পরিবারে অন্তর্ভুক্ত হন। বিয়ের আগে তিনি হলিউডের একজন স্বনামধন্য চিত্রনায়িকা ছিলেন। জাদুকরী প্রাণবন্ততা এবং মায়াবী দৃষ্টির জন্য লোকে তাকে আজও মনে রেখেছে। তিনি ১৯২৯ সালের ১২ নভেম্বর ফিলাডেলফিয়ার হ্যানিম্যান ইউনিভার্সিটি হসপিটালে জন্মগ্রহণ করেন। একজন প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। প্রাপ্তবয়সে এসে কেলি সিদ্ধান্ত নেন, তিনি অভিনয়জগতে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করবেন, যদিও এতে তার পরিবারের কোনো সম্মতি ছিল না। ১৯৫২ সালে তিনি পুরোপুরিভাবে তার অভিনয়জীবন শুরু করেন ‘মোগাম্বো’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৬ সালের ১৯ এপ্রিল তিনি প্রিন্স তৃতীয় রেইনারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় গ্রেস কেলি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয় না। সেই রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
প্রিন্সেস শার্লেট অব মোনাকো
শার্লেট ক্যাসিরাগি ছিলেন গ্রেস কেলির নাতনী এবং বংশানুক্রমে তিনিও ছিলেন অপরূপ সুন্দরী। মোনাকোর প্রিন্সেস শার্লেট ক্যাসিরাগি মোনাকোর চতুর্থতম সিংহাসন আরোহণকারী। জীবনের আরো অনেক দিকেই তিনি সফল ছিলেন। অশ্বারোহণের প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে তিনি গুসির অশ্বারোহণের রাষ্ট্রদূতের উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়াও স্কিইং, স্নো-বোর্ডিং এবং সাঁতার কাটা ছিলো তার শখ। ১৯৮৬ সালের ৩রা আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন শার্লেট ক্যাসিরাগি। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্যাড এলমালেহের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন এবং ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তাদের একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় র্যাফেল। র্যাফেলের পিতা-মাতা বিবাহিত না হওয়ায় মোনাকোর সিংহাসনে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি অন্তর্ভুক্ত হননি।
প্রিন্সেস ডায়না
প্রিন্সেস ডায়না সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। তার নিজস্ব স্টাইল আর উদারতার জন্য মানুষ আজও তাকে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। প্রিন্সেস ডায়না জন্ম থেকেই রাজকীয় ছিলেন না। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তার বিয়ের পরই তিনি রাজকীয় উপাধি লাভ করেন। তার অনন্যসাধারণ প্রতিভা এবং কমনীয়তার কারণে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, রাজকীয় রমণীদের মধ্যে সর্বাধিক ফটোশ্যুট প্রিন্সেস ডায়নারই করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের ১লা জুলাই ইংল্যান্ডে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। নাচ-গানের প্রতি তার খুব শখ ছিলো। ছোট বাচ্চাদের তিনি অনেক ভালোবাসতেন এবং একটা সময় তিনি ইয়াং ইংল্যান্ড স্কুলে কিন্ডারগার্টেন টিচার হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রিন্সেস ডায়না অনেক চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি গৃহহীন, এইডস রোগে আক্রান্ত রোগী ও বাচ্চাদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। ১৯৮২ সালের ২১শে জুন তিনি প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রিন্স উইলিয়াম এবং প্রিন্স চার্লস হচ্ছেন তাদের সন্তান। দুর্ভাগ্যবশত, প্রিন্সেস ডায়না এবং প্রিন্স চার্লসের বিবাহিত জীবনের সুখী সমাপ্তি ঘটেনি। ১৯৯৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন।
গায়েত্রী দেবী
গায়েত্রী দেবী ১৯১৯ সালের ২৩ মে কুচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪০ সালের ৯ মে জয়পুরের রাজাধিরাজ দ্বিতীয় সাই মান সিং এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত জয়পুরের মহারাণী ছিলেন তিনি। তাকে জয়পুরের রাজমাতা বলা হতো। তিনি ভারতের ঐতিহ্যগত সৌন্দর্য্যর প্রতীক ছিলেন। ভোগ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ১০ রমণীর তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়েছিল। তার সময়ে তিনি কেবলমাত্র ভারতে নয়, সারা বিশ্বে একজন ফ্যাশন আইকন হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। তিনি একজন ভালো পোলো খেলোয়াড় এবং শ্যুটারও ছিলেন। তাই মাঝেমাঝেই তিনি শিকারে চলে যেতেন। শেষজীবনে এসে বেশ কিছুটা সময় অসুস্থ ছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৯ জুলাই ৯০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার।
প্রিন্সেস মেডেলিন অব সুইডেন
প্রিন্সেস মেডেলিন ছিলেন রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফ এবং সুইডেনের রানী সিলভিয়ার কন্যা। তার দীপ্তিময় হাসি এবং সৌন্দর্যের জন্য ফোর্বস ম্যাগাজিনের ‘হটেস্ট ইয়াং রয়াল’- এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। ১৯৮২ সালের ১০ জুন ড্রটিংহাম প্যালেসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০২ সালে জনাস বার্গস্ট্রম নামে একজন আইনজীবীর সঙ্গে তিনি পরিণয়ে আবদ্ধ হন এবং প্রায় সাত বছর তাদের সম্পর্ক চলতে থাকে। সবাই আশা করেছিলো, ২০১০ সালে প্রিন্সেস মেডেলিনের বড় বোনের বিয়ের পরই এই জুটিও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কিন্তু ২০১০ সালের দিকে এসে গুঞ্জন শোনা যায়, তাদের সম্পর্কটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। অতঃপর গুঞ্জন বাস্তবে পরিণত হয়। তাদের দীর্ঘ সাত বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটে। ২০১৩ সালের ৮ জুন প্রিন্সেস মেডেলিন ক্রিস্টোফার ও’নেইল এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
জারা ফিলিপস
জারা ফিলিপস ১৯৮১ সালের ১৫ মে ওয়েস্ট লন্ডনের সেন্ট মেরি’স হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতনী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তার অশ্বারোহণের প্রতি খুব ঝোঁক ছিলো। ২০০৫ সালে তিনি ইউরোপিয়ান ইভেন্টিং চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণ করে ব্যক্তিগত এবং দলগতভাবে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০০৬ সালে তিনি বিবিসি স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ৩০ জুলাই ইংলিশ রাগবি টিমের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মাইক টিনডালের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিনি রাজকীয় রমণীদের মধ্যে একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব।