রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়া থেকে রাশিয়ান সৈন্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার, সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে অবস্থিত হামেইমিম বিমান ঘাঁটিতে এক অঘোষিত সফরকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন,
আমি রাশিয়ান সৈন্যদেরকে প্রত্যাহার করে তাদের স্থায়ী অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফকে নির্দেশ দিচ্ছি।
সিরিয়ায় এ অপ্রত্যাশিত সফরকালে পুতিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তার সঙ্গী ছিল রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোগু। পরে তিনি সেখানে কর্তব্যরত রাশিয়ান সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এ সময় পুতিন আরো বলেন, দুই বছর ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর মস্কো এবং দামেস্ক ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) ধ্বংস করার লক্ষ্যে সাফল্য অর্জন করেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ান সৈন্যদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন,
তোমরা রাশিয়ান সৈন্যদের সর্বোচ্চ গুণাবলি প্রদর্শন করেছ। বন্ধুরা, তোমাদের মাতৃভূমি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
চলুন এক নজরে দেখে নিই সিরিয়াতে রাশিয়ার ভূমিকা এবং প্রত্যাহার সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- রাশিয়া সিরিয়াতে প্রথম বিমান হামলা পরিচালনা করেছিল ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এটি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় হস্তক্ষেপ। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে রাশিয়া তার সামরিক উপদেষ্টা এবং স্পেশাল অপারেশন ফোর্সকেও সিরিয়াতে মোতায়েন করে।
- এর আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর একচ্ছত্র প্রভাব বিরাজমান ছিল। কিন্তু রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ফলে এ অঞ্চলের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায় আরব বসন্তের ফলে সৃষ্ট বিদ্রোহের ফলে টালমাটাল অবস্থায় থাকা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সিংহাসন।
- এরপর থেকে গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া বাশার সরকারের বিরোধী গ্রুপগুলোর উপর বিমান হামলা চালিয়ে এসেছে। প্রকাশ্যে যদিও রাশিয়া তাদের সামরিক অভিযানকে আইএস দমনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলে ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে আইএসের পাশাপাশি আল-নুসরাহ ফ্রন্ট, সিরিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল সহ সবগুলো বিদ্রোহী গ্রুপের উপরেই তারা আক্রমণ চালিয়েছে।
- সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার বিমান হামলা এবং ইরানের প্যারামিলিটারি বাহিনীর সহায়তায় বাশারের সেনাবাহিনী সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। গত নভেম্বর মাসে এক বক্তব্যে বাশার আল-আসাদ সিরিয়াকে ‘রক্ষা’ করার জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ দেন।
- দীর্ঘ দুই বছর যুদ্ধ পরিচালনার পর গত সপ্তাহে রাশিয়া ঘোষণা করেছিল, সিরিয়া আইএসের হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েছে। ঐ ঘোষণার পরপরই সেনা প্রত্যাহারের এই ঘোষণাটি এলো।
- তবে প্রেসিডেন্ট পুতিন তার এবং সিরিয়ার সরকারের শত্রুদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়াতে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে, তাহলে রাশিয়া তাদের ওপর এমন আক্রমণ করবে, যা তারা এর আগে কখনো দেখেনি।
- পুতিন জানান, সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ সরিয়ে নিলেও রাশিয়া হামেইমিম বিমান ঘাঁটি এবং টার্টাস সমুদ্র বন্দরের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া ছাড়বে না। এগুলো সিরিয়ার সমুদ্রসীমায় অবস্থিত রাশিয়ান নৌবাহিনীর জন্য কারিগরী সহায়তা প্রদান করে যাবে।
- পুতিন মন্তব্য করেন, সিরিয়াতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রাজনৈতিক সমঝোতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সিরিয়ার শরণার্থীরা দেশে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
- কিছু কিছু শহর থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএসকে উচ্ছেদের ক্ষেত্রে একদিকে রাশিয়ার বিমান হামলা যেরকম কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে, অন্যদিকে আলেপ্পো সহ বিভিন্ন শহরে নির্বিচারে রাশিয়ান বিমান হামলার ফলে নারী-শিশু সহ হাজার হাজার বেসামরিক জনগণ নিহত হওয়ায় রাশিয়ার প্রচণ্ড সমালোচনাও হয়েছে।
- সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশিয়ান বিমান হামলায় এ পর্যন্ত ৬,৩২৮ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে, যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১,৫৩৭।
ফিচার ইমেজ- CNBC.com