Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সিংহাসনের ষড়যন্ত্র পেরিয়ে মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের অভিষেক

|| ১ ||

২৬ ডিসেম্বর, ১৫৩০। আগ্রার পুরাতন দুর্গ। এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান হিন্দুস্তানের মহান শাসক জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবর। মৃত্যুর অনেক আগেই তিনি হিন্দুস্তানের পরবর্তী শাসক হিসেবে তার জ্যেষ্ঠপুত্র নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুনের নাম ভেবে রেখেছিলেন। অসুস্থ অবস্থাতেই তিনি হুমায়ুনকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে রাজদরবারে তার সভাসদদের সামনে নিজের ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন। তিনি বললেন,

‘আল্লাহর কৃপায় ও আপনাদের সমর্থনে আমি আমার জীবনে সব কিছুই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পৃথিবীতে আমার সব ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। তবে আমি সুস্থ অবস্থায় নিজের সব কাজ সম্পন্ন করতে পারলাম না। আজ আপনাদের সামনে আমি নিজের শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করছি। আমার পরে আমি মুঘল সিংহাসনে হুমায়ুনকে বসিয়ে যেতে চাই। আমি আশা করবো, আমার প্রতি আপনারা যেমন অনুগত ছিলেন, বাদশাহ হিসেবে আপনারা হুমায়ুনের প্রতিও ঠিক তেমনই অনুগত থাকবেন। তার সকল কাজকে সমর্থন জানাবেন। আমি আশা করছি, মহান আল্লাহর দয়ায় হুমায়ুন সফলভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবে।’

দরবারে উপস্থিত বাবরের সভাসদরা কান্নাভেজা চোখে তাদের প্রিয় সম্রাটের সামনে শপথ করলেন, তারা নিজেদের জীবন দিয়ে হলেও তাদের সম্রাটের শেষ ইচ্ছা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন।

|| ২ ||

হিজরি ৯১৩ সালের ৪ জিলকদ তারিখে কাবুলের দুর্গে সম্রাট বাবরের একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ছিল ১৫০৮ সালের ৬ মার্চ। হুমায়ুননামার বর্ণনাতে বাবরের এই পুত্রের জন্মের রাতটিকে বিশেষায়িত করে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে- “সেই বিশেষ রাতের সূচনায় গোধূলি লগ্নে আকাশে সূর্য একটি স্বর্গীয় আভা ছড়িয়ে দিয়েছিল।” জন্মের পর শিশুটির নাম রাখা হলো নাসিরুদ্দিন মুহাম্মদ। ডাকনাম হুমায়ুন। হুমায়ুনের মা মাহাম বেগম ছিলেন হেরাতের সুলতানের আত্মীয়।

কাবুলের চারবাগে হুমায়ুনের জন্ম উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসবে সম্রাট বাবর; Source: Wikimedia Commons

জন্মের মাত্র ৪ বছর পরেই হুমায়ুনের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। গণিত, দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞানে ছিল তার দুর্নিবার আগ্রহ। আরবি, তুর্কি, ফারসীতে ছোটবেলা থেকেই তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন। বাবর হিন্দুস্তানের উত্তরাংশ বিজয় করে নিলে তিনি হিন্দি ভাষার সাথে পরিচিত হন এবং ভাষাটি আয়ত্ব করে নেন। ইসলামী ধর্মতত্ত্ব, দর্শন আর তুর্কি সাহিত্য, ফারসি সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি একজন দক্ষ মানুষ ছিলেন। একজন বিদ্যানুরাগী আর চিন্তাশীল মানুষ হিসেবে বালক বয়স থেকেই তিনি বেশ বিখ্যাত ছিলেন। তবে তিনি কিছুটা অগোছালো প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। আর রাজপুত্র হিসেবে তার সামরিক শিক্ষার কথা আলাদা করে উল্লেখ করাটা বাহুল্য।

হুমায়ুন তার পিতার অধীনেই নিজের জীবনের প্রথম কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৩ বয়সে তিনি বাদাখশানের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৫২৬ সালের পানিপথের প্রান্তরে তিনি পিতার সাথে দৃঢ়চিত্তে সাহসিকতার সাথে লড়াই করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিতে সক্ষম হন। এর আগে হিসার ফিরোজায় এক আফগান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে তার দক্ষতার প্রতি বাবরকে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে নিজের সাহসিকতা, দক্ষতা আর যোগ্যতার চূড়ান্ত ছাপ রাখেন ১৫২৭ সালে রাজপুতদের বিরুদ্ধে সংঘটিত খানুয়ার যুদ্ধে। এই যুদ্ধটি মুঘলদের জন্য বেশ কঠিন একটি যুদ্ধ ছিল এবং এই যুদ্ধে পরাজয়ের মানে ছিল বিগত বছরগুলোতে মুঘলদের সমস্ত অর্জন জলাঞ্জলী দিয়ে কাবুলের দিকে পিছু হটা।

খানুয়ার যুদ্ধের পর হুমায়ুন আবারো বাদাখশানের শাসক হিসেবে বাদাখশান চলে যান। পরবর্তীতে ১৫২৯ সালে আবারো আগ্রায় পিতা বাবরের সাথে যোগ দেন।

|| ৩ ||

১৫২৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর সম্রাট বাবরের মৃত্যুর পর সম্রাটের ইচ্ছানুযায়ী তারই পুত্র হুমায়ুনের মুঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখানেই লেগে যায় একটি দ্বন্দ্ব। সম্রাট বাবরের জীবদ্দশায় তার সভাসদরা সিংহাসনে হুমায়ুনের অধিকার মেনে নিলেও সম্রাটের মৃত্যুর পরই সদ্য মারা যাওয়া সম্রাটের শেষ ইচ্ছার প্রতি নিজেদের ওয়াদার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে বেঁকে বসে। এই ষড়যন্ত্রের প্রধান ব্যক্তিটি ছিলেন বাবরেরই প্রধান উজির নিজাম উদ্দিন আলী। এবং তিনি বাবরের জীবদ্দশাতেই পরবর্তী মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে দেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি যুবরাজ হুমায়ুনকে মুঘল সিংহাসনে বসার উপযুক্তই মনে করেননি।

হুমায়ুনকে সিংহাসনে বসার পক্ষে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো হুমায়ুনের মা মাহাম বেগম ছিলেন একজন শিয়া মতালম্বী। যদিও হুমায়ুন নিজে শিয়া মতালম্বী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন সুন্নী মতালম্বী। কিন্তু প্রধান উজির চাননি হুমায়ুনের সিংহাসন প্রাপ্তির মাধ্যমে মুঘল সালতানাতে সাফাভী পারস্য সাম্রাজ্যের প্রভাব বৃদ্ধি পাক। আরেকটি প্রধান কারণ ছিল, তিনি মনে করতেন বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক হওয়ার মতো দক্ষতা বা প্রজ্ঞা কোনটিই হুমায়ুনের নেই।

অন্যদিকে বাবরের অন্যান্য পুত্র সন্তানরা বয়সের দিক দিয়ে হুমায়ুনের চেয়েও ছোট ছিলেন। বাবরের মৃত্যুর সময় কামরান মির্জার বয়স ছিল ২১ বছর, আসকারি মির্জার বয়স ছিল ১৪ বছর আর হিন্দাল মির্জার বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর। প্রধান উজির বাবরের পুত্রদের বয়সের এই সীমাবদ্ধতাটিকেই কাজে লাগিয়ে সিংহাসনের জন্য বাবরেরই শ্যালক মেহেদি খ্বাজাকে মনোনীত করেন। সম্পর্কের দিক দিয়ে মেহেদি খ্বাজা বাবরের বোন খানজাদা বেগমের স্বামীও ছিলেন।

বাবর জীবিত থাকতেই বাবরের নিকট মেহেদি খ্বাজার এই ষড়যন্ত্রটি ধরা পড়ে যায়। কিন্তু প্রধান উজির সেই যাত্রায় নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে সক্ষম হন। মুঘল রাজদরবারে কর্মরত মুকিম হারাভির পুত্র নিজাম উদ্দিন আহমেদ রচিত ‘তাবাকাত-ই-আকবরী’ গ্রন্থে প্রত্যক্ষদর্শী মুকিম হারাভির সূত্রে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে সংঘটিত ষড়যন্ত্রের এই ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে,

‘মহান বাদশাহ (বাবর) তখনো জীবিত। একদিন মুকিম হারাভি মেহেদি খ্বাজার শিবিরে প্রধান উজিরের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বাবরের দরবার থেকে ডাক পড়ায় মুকিম হারাভি প্রধান উজিরের সাথে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারেননি। মেহেদি খ্বাজা প্রধান উজিরকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসেন। প্রধান উজির কানে কিছুটা কম শুনতেন। মেহেদি খ্বাজা আশেপাশে আর অন্য কেউ আছে কিনা তা খেয়াল না করেই হঠাৎ আপন মনে বলে উঠলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় বাদশাহ হতে পারলে আমার প্রথম কাজ হবে তোমার আর অন্যান্য গাদ্দারদের চামড়া ছিলে ফেলা। এই কথা বলেই তিনি তার পেছনে মুকিম হারাভির উপস্থিতি টের পান। সাথে সাথেই তিনি মুকিম হারাভির কান টেনে ধরে গালি দিয়ে বলতে থাকেন, যা শুনেছো, যদি বুদ্ধিমান হও তাহলে তা প্রকাশ করবে না। তা না হলে তোমাকে পরপারে পাঠানো হবে।’

এই কথার পর মুকিম হারাভি মেহেদি খ্বাজার কথা মেনে নেন। এরপর দ্রুত বিদায় নিয়েই তিনি প্রধান উজিরের কাছে গিয়ে সব কথা বিস্তারিত খুলে বলেন। উজির কানে কম শুনলেও বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি দ্রুত হুমায়ুনকে ডেকে পাঠিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। হুমায়ুনের পরামর্শে মেহেদি খ্বাজাকে নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইসাথে তার জন্য দরবারের কারো সাথে সাক্ষাৎ কিংবা বাবরের দরবারে তার প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

মেহেদি খ্বাজাকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনার ব্যাপারে উজির নিজাম উদ্দিন আলীর সমর্থন থাকলেও, এই ঘটনার পর মেহেদি খ্বাজার পরিবর্তিত এই আচরণে তিনি ঘাবড়ে যান। মেহেদি খ্বাজাকে সিংহাসনে বসানোর চিন্তা বাদ দিয়ে তিনি সিংহাসনের প্রতি হুমায়ুনের দাবি মেনে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতেই বেশি সচেষ্ট হন। কিন্তু বাবরের মৃত্যুর পর হুমায়ুনের সিংহাসন আরোহণের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রধান উজিরসহ অন্যন্য সভাসদরা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। সম্রাট বাবরের মৃত্যুর পর ৪ দিন মুঘল সালতানাতের সিংহাসন খালি পড়ে ছিল। এই ৪ দিন মুঘল সালতানাত ছিল অভিভাবকহীন।

সম্রাট হুমায়ুন; Source: Wikimedia Commons

কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো বিকল্প খুঁজে না পেয়ে তারা অবশেষে দ্বিতীয় মুঘল সম্রাট হিসেবে হুমায়ুনের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। ১৫৩০ সালের ৩০ ডিসেম্বর নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

|| ৪ ||

১৫৩০ সালের ৩০ ডিসেম্বর যখন সম্রাট হুমায়ুন মুঘল সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন, তখন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বিশাল এক ভূখণ্ডের শাসনভার নিজের হাতে পেয়েছিলেন। হুমায়ুনের সিংহাসনে আরোহণের সময় মুঘল সাম্রাজ্যের ভূখণ্ডগুলোর ভেতরে মধ্য এশিয়ার বলখ, বাদাখশান, কান্দুজ, হিন্দুস্তানের পাঞ্জাব, মুলতান, বিহার, গোয়ালিয়র, ধোলপুর, চান্দেরি, বায়ানা আর বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশ উল্লেখযোগ্য। সেই হিসেবে বলা যায়, তিনি বিশাল বিস্তীর্ণ এক ভূখণ্ড পেয়েছিলেন। কিন্তু এর সবই ছিল অগোছালো। বিজয়ের পর মুঘল সাম্রাজ্য গুছিয়ে নেয়ার মতো প্রয়োজনীয় সময়টুকু সম্রাট বাবর পাননি। যার ফলে চারদিকেই বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল।

সম্রাট হুমায়ুনের তাম্রমুদ্রা; Source: Wikimedia Commons

সাম্রাজ্যের এমন অগোছালো পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গা থেকেই বিদ্রোহের খবর আসছিল। মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাট হুমায়ুনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল এসব বিদ্রোহ দমন করে পুরো সাম্রাজ্যকে নিজের অধীনে নিয়ে আসা। কিন্তু চারদিকের এই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিতে কিন্তু হুমায়ুনেরই নিকট আত্মীয়রা ভুল করলো না। সিংহাসনে বসার আগেই যেমন তিনি ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছিলেন, ঠিক তেমনই সিংহাসনে বসার পরেও তাকে আত্মীয়দের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হচ্ছিল।

এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন হুমায়ুনের সৎ বোন মাসুমা বেগমের স্বামী এবং হেরাতের শাসক হুসাইন বাইকারার নাতি জামান মির্জা। তিনি রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর একজন দক্ষ জেনারেল ছিলেন, কিন্তু নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিতে পারেননি। এছাড়া তাইমূরেরই রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত মুহাম্মদ সুলতান নিজেকে হিন্দুস্তানের শাসক হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন। আর মেহেদি খ্বাজার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। তবে যা-ই হোক, হুমায়ুন শেষপর্যন্ত সিংহাসনের দৌড়ে নিজেকে আত্মীয়দের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন।

সম্রাট বাবর মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের প্রধানের পদটি হুমায়ুনকে অলঙ্কৃত করতে দিলেও তার অন্য পুত্রদের তিনি হতাশ করেননি। নিজের সাম্রাজ্যে তিনি তাদের জন্যও বেশ কিছু অঞ্চল শাসন করতে দেয়ার জন্য হুমায়ুনকে নির্দেশ দিয়ে যান।

বাবরের ইচ্ছানুযায়ীই সম্রাট হুমায়ুন কামরান, আশকারী আর হিন্দালের মাঝে মুঘল সাম্রাজ্যের ভূমিগুলো বন্টন করে দেন। এই বন্টন প্রক্রিয়াতে কামরান মির্জা কাবুল, কান্দাহার আর পশ্চিম পাঞ্জাবের স্বাধীন শাসক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি নিজ নামে মুদ্রা প্রচলের অধিকার পর্যন্ত পান। এছাড়া আসকারী মির্জা পান সম্ভলের শাসনভার আর বাবরের কনিষ্ঠ পুত্র হিন্দাল মির্জা পান আলোয়ারের শাসনভার। সম্রাট বাবরের ইচ্ছানুযায়ী এই কাজটি হলেও পরবর্তীতে তা হুমায়ুনের জন্য বেশ বিপদ ডেকে এনেছিল। সম্রাট বাবর হয়তো চাইছিলেন সিংহাসন নিয়ে তার উত্তরাধিকারীদের মাঝেই কোনো যুদ্ধ বেঁধে না যাক। কারণ তিনি কামরানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণাই রাখতেন। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না, যা হবার তা হবেই। কামরানের সাথে শেষপর্যন্ত হুমায়ুনের দ্বন্দ্ব লেগেই যায়।

|| ৫ ||

মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ার পথটা হুমায়ুনের জন্য খুবই পিচ্ছিল ছিল। অনেক ষড়যন্ত্র আর বাঁধা-বিপত্তি পাড়ি দিয়ে তাকে পিতার সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসতে হয়েছিল। অবশ্য বসেও তিনি খুব একটা স্বস্তি পাননি। শুরুতেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে। তার ভাইয়েরাও তাকে কম বিরক্ত করেনি। তিনি তার পিতার কাছে ওয়াদাবদ্ধ ছিলেন যে, ভাইয়েরা তাকে যতই বিরক্ত করুক না কেন, তিনি যেন তাদের প্রতি কখনোই কঠোর না হন।

এই প্রতিজ্ঞাটি রক্ষা করতে গিয়ে তিনি তার পরবর্তী জীবনে বেশ কষ্ট করেছিলেন। সেসব পরে যথাসময়ে আলোচনা করা হবে। আর এখন মুঘল সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাট হিসেবে হুমায়ুনের প্রধান দায়িত্ব হবে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নিজের বিস্তীর্ণ কিন্তু অগোছালো ভূখণ্ডগুলোকে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করে হিন্দুস্তানের মাটিতে মুঘল সাম্রাজ্যকে অজেয় করে গড়ে তোলা। এই একটি ব্যপারে হুমায়ুন অনেকটাই নিশ্চিত যে তিনি তা করতে সক্ষম হবেন।

তথ্যসূত্র

  1. মোগল সাম্রাজ্যের সোনালী অধ্যায়, সাহাদত হোসেন খান, আফসার ব্রাদার্স, ২য় মুদ্রণ
  2. বাবরনামা, মূল: জহির উদ দিন মুহাম্মদ বাবুর, অনুবাদ: মুহাম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস, ঐতিহ্য, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  3. হুমায়ুননামা, মূল: গুলবদন বেগম, অনুবাদ: এ কে এম শাহনাওয়াজ, জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, প্রকাশকাল: জানুয়ারী ২০১৬
  4. ভারত উপমহাদেশের ইতিহাস (মধ্যযুগ: মোগল পর্ব), এ কে এম শাহনাওয়াজ, প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা, ৩য় সংস্করণ (২০১৫), প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারী ২০০২

এই সিরিজের আগের পর্বসমূহ

১। প্রাক-মুঘল যুগে হিন্দুস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা || ২। তরাইনের যুদ্ধ: হিন্দুস্তানের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া দুই যুদ্ধ || ৩। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: দাস শাসনামল || ৪। রাজিয়া সুলতানা: ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক || ৫। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: খিলজী শাসনামল || ৬। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তুঘলক শাসনামল || ৭। দিল্লি সালতানাতের ইতিকথা: তৈমুরের হিন্দুস্তান আক্রমণ ও সৈয়দ রাজবংশের শাসন || ৮। দিল্লী সালতানাতের ইতিকথা: লোদী সাম্রাজ্য || ৯। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর গঠন এবং গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস || ১০। রাজকীয় মুঘল সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কিছু অস্ত্রশস্ত্র || ১১। জহির উদ-দিন মুহাম্মদ বাবুর: ‘একজন’ বাঘের উত্থান || ১২। বাদশাহ বাবরের কাবুলের দিনগুলো || ১৩। বাদশাহ বাবর: হিন্দুস্তানের পথে || ১৪। বাদশাহ বাবরের হিন্দুস্তান অভিযান: চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি || ১৫। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান: হিন্দুস্তানে বাবরের চূড়ান্ত লড়াই || ১৬। খানুয়ার যুদ্ধ: মুঘল বনাম রাজপুত সংঘাত || ১৭। ঘাঘরার যুদ্ধ: মুঘল বনাম আফগান লড়াই || ১৮। কেমন ছিল সম্রাট বাবরের হিন্দুস্তানের দিনগুলো? || ১৯। মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যু: মুঘল সাম্রাজ্য এবং হিন্দুস্তানের উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের অকাল পতন

ফিচার ইমেজ: insightsindia.blogspot.com

Related Articles