Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চেনা তারকাদের অজানা যত অপরাধ

ক্রাইম বা অপরাধ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খুব স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হরহামেশাই আমাদের চারপাশে কত ধরনের অপরাধ ঘটে যাচ্ছে, আমরা কেউ এসব নিয়ে মাথাও ঘামাই না। কিন্তু এই একই ব্যাপারগুলো যদি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মাধ্যমে না ঘটে কোনো সুপরিচিত মুখ বা তারকাদের দ্বারা ঘটে থাকে, তাহলে আমরা কী করি? তখনও এভাবেই কি এড়িয়ে যাই? একদম না।

মিডিয়া জগতের মানুষগুলো, যাদের আমরা তারকা বলে থাকি, তারা আমাদের কাছে অনেকটা আকাশের তারার মতোই। সব সময় প্রায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে, আবার কারও কারও কাছে তো তারা আইডল। এসব কারণেই হয়তো তারাও যে কোনো অপরাধ করতে পারেন বা অপরাধজনিত কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন, এই সাধারণ সত্যিটাও আমরা মেনে নিতে পারি না। ঠিক এজন্যই সেলিব্রেটি তথা তারকাদের কোনো অপরাধ যদি জনসম্মুখে চলে আসে, তাহলে পুরো ঘটনার রেশ সহজে যায় না। তবে আমরা ঠিক কতজন তারকাদের অপরাধ সম্পর্কে জানি? এমন অনেক সুপারস্টার রয়েছেন যাদের অতীতের অপরাধ সম্পর্কে আমাদের হয়তো কোনো ধারণাই নেই।  

তারকা হলেও তারা আমাদের মতোই মানুষ, আর দোষ-গুণ মিলেই মানুষ। আজকের এই লেখাটি এমনই কিছু সেলিব্রেটির অপরাধ নিয়ে, যা আমাদের অনেকেরই অজানা।

উইল স্মিথ – লাঞ্ছনা

বর্তমান সময়ের হলিউডের দারুণ জনপ্রিয় ও দাপুটে অভিনেতা উইল স্মিথকেও একসময় লাঞ্ছনার অভিযোগে এক রাত কারাবাস করতে হয়েছিলো। ১৯৮৯ সালে সেই সময়ে ‘ফ্রেস প্রিন্স’ খ্যাত উইল স্মিথ একজনকে মারাত্মক আঘাত করার অভিযোগে গ্রেফতার হন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে এতটা ক্ষিপ্রতার সাথে আঘাত করেন যে ভিক্টিমের এক চোখ কোঠর থেকে প্রায় বের হয়ে আসে এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উইলকে গ্রেফতার করে ফিলাডেলফিয়ায় এক রাতের জন্য কারাবন্দী করে রাখা হয়।

nme.com
তরুণ উইল স্মিথ

তবে এই একটি অপরাধ ছাড়া এই তুখোড় অভিনেতার জীবনে আইনের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টিকারী আর কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।

মার্ক ওয়ালবার্গ – খুনের প্রচেষ্টা

বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে, অ্যাকশন হিরো মার্ক ওয়ালবার্গ জাতিগত বৈষম্যজনিত কারণে খুনের প্রচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে পঁয়তাল্লিশ দিন জেলে ছিলেন এবং শেষপর্যন্ত হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

majorten.com
১৯৮৮ সালে বর্তমান সময়ের অ্যাকশন হিরো মার্ক ওয়ালবার্গ

৮ এপ্রিল, ১৯৮৮ সালে ওয়ালবার্গ দুজন ভিয়েতনামি আমেরিকান সৈন্যকে আক্রমণ করেন এবং এদের মধ্যে একজন আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারান। রিপোর্টে বলা হয়, এই অভিনেতা আক্রমণের সময় বেশ কিছু ‘বর্ণবাদী’ শব্দও ব্যবহার করেন। যদিও ওয়ালবার্গ দাবী করেন, তার এই কর্মকাণ্ড জাতিগত কোনো কারণে ছিল না। কিন্তু দুই বছর আগে আফ্রিকান-আমেরিকান শিশুদের উপর পাথর নিক্ষেপ ও বর্ণবাদী আচরণে তার হাত ছিল বলে আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় এবারের এই আক্রমণের পেছনেও বর্ণবাদ দায়ী ছিল বলে সবাই বিশ্বাস করেন।

ওয়ালবার্গ তার সাম্প্রতিক মানবপ্রীতি তথা মানব সেবার প্রক্ষাপটে তার রেকর্ড থেকে ‘খুনের প্রচেষ্টা’ অভিযোগ অপসারণের আবেদন দায়ের করেন। কিন্তু এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আমেরিকান-এশিয়ানরা তার এই আবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পিটিশন শুরু করে এবং এতে হাজার হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে। তাদের যুক্তি হলো, ওয়ালবার্গের খ্যাতি ও সম্পদের অনুদান তার বর্ণবাদী আচরণ ও কর্মের পদক্ষেপ মুছে ফেলার ক্ষমতা রাখে না এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ব্যথা ও কষ্ট কমিয়ে তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম না।

ম্যাথিউ ম্যাকনাহে – মাদকদ্রব্য রাখা

unbelievable-facts.com
সেই সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখে ম্যাথিউ ম্যাকনাহে

দর্শকনন্দিত ও অস্কার বিজয়ী অভিনেতা ম্যাথিউ ম্যাকনাহেকে ১৯৯৯ সালে তার অস্টিনের বাড়িতে প্রায় অবচেতন অবস্থায় নগ্ন নৃত্য প্রদর্শন ও বঙ্গ ড্রাম বাজানোর অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। যদিও প্রথমে ম্যাকনাহেকে মারিজুয়ানা ও মাদকদ্রব্য রাখার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়ে, তবে পরবর্তীতে কেবল মাদক বহন করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে জরিমানা করা হয়। 

বিল গেটস- লাইসেন্স ছাড়া গাড়িচালনা

বিল গেটসকে চেনে না এমন একজন মানুষও মনে হয় পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা মাল্টি-বিলিয়নিয়ার বিল গেটস দুই দুইবার গ্রেফতার হয়েছিলেন পুলিশের কাছে। যদিও মাত্র ২০ বছর বয়সেই এই তারকা বিলিয়নিয়ার সাফল্যের শীর্ষে আরোহণ করা মাইক্রোসফটের ব্যবসা শুরু করেন, তথাপি আইনের সাথে কিঞ্চিৎ মশকরা করার সময় ঠিকই বের করে নিয়েছিলেন।

majorten.com
বিল গেটসের এই হাসিই বলে দেয় আইন ভেঙে তিনি কম রোমাঞ্চিত হননি

১৯৭৫ সালে প্রথমবার গেটস গ্রেফতার হয়েছিলেন লাইসেন্সবিহীন এবং দ্রুতগতিতে তার পোর্শে ৯১১ চালানোর জন্য। আর ১৯৭৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো তাকে গ্রেফতার করা হয় লাইসেন্সবিহীন ও সংকেত দেখেও গাড়ি না থামানোর কারণে। যদিও তার এই অপরাধ খুবই নগণ্য, তবে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গকারী সবাই সমান বলেই হয়তো গেটসের এই সামান্য অপরাধও বেশ ফলাও করে প্রকাশ পেয়েছিল।

ক্রিস ব্রাউন – লাঞ্ছনা

ক্রমশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠতে থাকা আমেরিকান গায়ক ও সঙ্গীত রচয়িতা ক্রিস ব্রাউনকে থমকে দাঁড়াতে হয় তার বান্ধবী আরেক জনপ্রিয় পপ গায়িকা রিহানাকে শারীরিকভাবে আঘাত করার অপরাধে। এই দুই তারকার প্রেম যখন তুঙ্গে, ২০০৯ সালে দুজনই গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পান। অ্যাওয়ার্ড শোএর আগের রাতে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ব্রাউন রিহানাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন, যার ফলে রিহানাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

youtube.com
ক্রিস ব্রাউনের আঘাতের চিহ্ন রিহানার চেহারায় স্পষ্ট

এই অপরাধের শাস্তি স্বরূপ ব্রাউনকে পাঁচ বছরের প্রোবেশন এবং চৌদ্দশ ঘণ্টার শ্রমভিত্তিক সেবা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

ব্রুনো মার্স – মাদকদ্রব্য রাখা

২০১০ সালে লস ভেগাসের ‘হার্ড রক হোটেল অ্যান্ড ক্যাসিনো’র বাথরুম থেকে বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় গায়ক ব্রুনো মার্সকে একব্যাগ কোকেন সহ হাতেনাতে ধরা হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মার্স ২.৬ গ্রাম কোকেন সহ গ্রেফতার হয়েছিলেন।

zimbio.com
নিজের আইনজ্ঞের সঙ্গে ব্রুনো

ব্রুনো মার্স পরবর্তীতে জানিয়েছিলেন, এটি মাদকের সাথে তার প্রথম মিথস্ক্রিয়া। এই কেসে তাকে অভিযুক্ত করে জরিমানা, দু’শ ঘণ্টার কমিউনিটি সার্ভিস এবং ড্রাগ কোর্স কাউন্সেলিং করানো হয়।

মেল গিবসন – লাঞ্ছনা

বিখ্যাত অন-স্ক্রিন ওয়ারিয়র মেল গিবসন বলা যায় দুর্ভাগ্যবশতই লাঞ্ছনার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এই অস্কারজয়ী অভিনেতা ২০১০ সালের ৬ই জানুয়ারি কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার সঙ্গী ওকসানা গ্রিগরিভাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এই ঘটনার সূত্র ধরে গিবসনকে বেশ ভালো ঝামেলা পোহাতে হয়।

listverse.com
অভিনেতা মেল গিবসন

২০১১ সালে লস অ্যাঞ্জেলসের কোর্ট রুমে গিবসনকে ছত্রিশ মাসের প্রোবেশন ও বাহান্ন সপ্তাহের বাধ্যতামূলক ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কাউন্সেলিংয়ের নির্দেশ দেন বিচারক।

জে-জেড – ছুরিকাঘাত

র‍্যাপার জে-জেড বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বিশিষ্ট শিল্পীদের একজন হয়ে ওঠা এবং তার স্ত্রী বেওন্সের সাথে একটি বিলিয়ন ডলারের মূল্যমান তৈরির পূর্বে মারাত্মকভাবে একজনকে জখম করার অপরাধে দণ্ডিত হন।

zambianobserver.com
জে-জেড

১৯৯৯ সালে নিউইয়র্কের রেকর্ড নির্বাহী ল্যান্স রিভেরাকে হত্যা চেষ্টার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে রিপোর্টে জানা যায়, জে-জেডের অ্যালবামের অবৈধভাবে বিতরণ করার বিতর্কের ফল ছিল এই আক্রমণ। এই আক্রমণের অপরাধের শাস্তিস্বরূপ জে-জেডকে ৩ বছরের প্রোবেশন দেওয়া হয়।

ম্যাথিউ ব্রডারিক – দায়িত্বহীন ড্রাইভিং

আমেরিকান এ অভিনেতা ১৯৮৭ সালে একটি মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটান। ঐ সময়ে ব্রডারিক নর্থ আয়ারল্যান্ডে ছুটি উদযাপনের জন্য যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে তার বিএমডব্লিউ রাস্তার বিপরীত লেনে ঢুকে আরেক ভলভো গাড়ির উপর উঠে যায়। এই ভয়ংকর দুর্ঘটনায় ব্রডারিকের এক পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তার সাথে থাকা আরেক অভিনেত্রী জেনিফার গ্রে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। অপরদিকে এই দুর্ঘটনায় ভলভোর দুজন আরোহী অ্যানি (২৮) ও তার মা মার্গারেটকে (৬৩) হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।

metdaan.com
ব্রডারিক ও জেনিফার গ্রে

এই অপরাধের জন্য সর্বাধিক শাস্তি দশ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু পরবর্তীতে শুধুমাত্র দায়িত্বহীন ড্রাইভিংয়ের জন্য তাকে ১৭৫ ডলার জরিমানা করা হয়, যা ভিক্টিমের পরিবারের সাথে ‘ন্যায় বিচারের প্রতারণা’ বলে আখ্যায়িত হয়। যদিও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, ব্রডারিক ব্যক্তিগতভাবে ভিক্টিমের পরিবারের সাথে দেখা করবেন আর এই প্রতিশ্রুতির জের ধরে ২০০২ সালে শেষপর্যন্ত ব্রডারিক দেখা করেন।

Featured Image: Boston Herald

Related Articles