Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাউরিজিও সারি: ব্যাংকার থেকে চেলসি কোচ হওয়ার গল্প

ফুটবল জগতে অজ্ঞাতকুলশীল কোনো ব্যক্তির কোচ হিসেবে ইতিহাসের অন্যতম সেরা হওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আরিগো সাচ্চি। মিলানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বার্লুসকোনি সবাইকে অবাক করে সাচ্চিকে নিয়োগ দিয়ে যেমন তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন, সাচ্চিও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তার মিলানের খেলা দিয়ে। সেই সাচ্চি কয়েক বছর আগে ইতালির যুব প্রতিভা তোলার দায়িত্বে থাকার সময় বার্লুসকোনিকে ফোন দিয়ে উত্তেজিতভাবে বলতে থাকেন, “সিলভিও, আপনি কি আমাকে নিয়ে যেমন বিশ্ব কাঁপিয়েছিলেন, তেমন ঘটনাই আবার করতে চান? আমার জানা এমন একজন আছেন, এমপোলির (দ্বিতীয় বিভাগের দল তখন) কোচ। কোনো টাকা লাগবে না, কেবল ফোনটা করুন। ইতালিতে তার মাপের আর কেউ নেই প্রতিভা তোলার দক্ষতা বিবেচনায়!

বার্লুসকোনি এবার আর ঝুঁকি নেননি এক সাবেক ব্যাংকার কাম কোচকে ধুঁকতে থাকা মিলানের দায়িত্ব দিয়ে। এই এমপোলির অজ্ঞাত কোচ, যাকে সাচ্চি বলেছেন ‘তার নিজের মতোই একজন’, যিনি এখনও একটি বড় শিরোপাও জেতেননি, অথচ চেলসির মতো ক্লাবের কোচ! তিনিই মাউরিজিও সারি। চলুন দেখে নেয়া যাক কে এই সারি?

আরিগো সাচ্চি, ইতিহাসের সেরা কোচের একজন; Image Source:Eurosport

ব্যাংক থেকে ডাগ আউটে

সারি কোনো বড় মাপের খেলোয়াড় ছিলেন না, স্থানীয় পর্যায়ে খেলা অল্পবিস্তর ফুটবল- এই যা। শ্রমিক ঘরানার পরিবার থেকে আগত এই কোচের ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্যাংকে। মোটামুটি ৪০ বছর বয়স অবধি ব্যাংকিং ক্যারিয়ারেই স্থির ছিলেন। কিন্তু চাকরির পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ক্লাবে কোচিং করাতেন। ফুটবলের প্রতি টানের জন্য ছুটির পরই মাঠে চলে আসতেন। একসময় বড় ঝুঁকিটা নিয়েই ফেললেন। নিশ্চিত ব্যাংকিং ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে স্থায়ীভাবে চলে এলেন ফুটবল জগতে ক্যারিয়ার গড়তে। ইতালি বরাবরই জাঁদরেল কোচদের জন্য বিখ্যাত, আর সেই কোচ পিরামিডের নিচে দাঁড়িয়ে এক ব্যাংকার স্বপ্ন দেখলেন চূড়ায় পৌঁছার।

এসি সানসোভিনো নামে এক দলের দায়িত্ব নিলেন, ৬ষ্ঠ সারির নিচের দিকের দল! ৬ষ্ঠ সারি বলে অবজ্ঞা করেননি, কঠোর প্রশিক্ষণ শুরু করালেন। তার নাম হয়ে গেল ‘মিস্টার ৩৩’! কেন জানেন? কর্নারের সময় খেলোয়াড়রা কিভাবে নড়াচড়া করবেন, জায়গা বদল করবেন- এমন ৩৩টি বিকল্পে অভ্যাস করিয়েছিলেন খেলোয়াড়দের! টানা ২ বছরের শ্রম ফলে পরিণত হতে শুরু করে। ৩য় বছর বলেই দেন যে, সেবার কাপ না জিতলে আর কোচিং করাবেন না!

নিরাশ হলেন না, জিতলেন ৬ষ্ঠ বিভাগের শিরোপা। এরপর দায়িত্ব পান ৩য় বিভাগের একটি দলের, যারা অবনমন বাঁচাতে লড়ছিল। অবনমন বাঁচাতে লড়া দলকে এনে দেন ২য় বিভাগে উত্তরণ। ইতালিয়ান দ্বিতীয় বিভাগের দল পেসকারা থেকে ডাক এলো। এক বছর ছিলেন, কিন্তু ফল ভালো না হওয়ায় ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হন। ফিরে এলেন ৩য় বিভাগের দল আরেজ্জোতে, যে দল থেকে সদ্যই বরখাস্ত হয়েছেন আন্তোনিও কন্তে! সারিও অবনমন ঠেকাতে পারেননি। কিন্তু ক্লাব তাকে আরেক বছর রেখে দেয়।

সেই বছরই ইতালির বড় দলগুলোকে একটু ঝলক দেখান তার সক্ষমতার। ইতালিয়ান কাপে যেখানে ৩য় বিভাগের দলও খেলতে পারে, সেখানে আরেজ্জোর মতো দল নিয়ে জুভেন্টাসকে ঠেকিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান, মিলানকে প্রায় হারিয়েও দিয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু ২০১১-তে সারি ক্যারিয়ারের সর্বনিম্ন দশাটা দেখেন। আরেজ্জো তাকে বরখাস্ত করে। এক বছর ছিলেন কোনো ক্লাব ছাড়া। নিশ্চিত ক্যারিয়ার ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে আসাটা কি তবে ভুল ছিল?

ক্যারিয়ার শুরু হয় সারির ব্যাংকিং দিয়ে; Image Source:Marca

পুনরুত্থান

ফুটবলের প্রতি ভালবাসা ছিল অটুট। চাকুরিবিহীন ১ বছরেও তার বিশ্বাস কমেনি। ইতালিয়ান কোচ পিরামিডের উর্ধ্বারোহণের আশাটা তখনো শেষ হয়ে যায়নি। এরপরই এলো সোনালী সুযোগ। ২০১২ সালে এমপোলি সারির কাছে আসে তাকে কোচ করার জন্য এবং সেটা ছিল দীর্ঘমেয়াদে থাকার প্রস্তাব। সারির জন্য এটাই ছিল অপেক্ষার সুস্বাদু ফল!

এমপোলি ঐতিহাসিকভাবে সফল দল, কিন্তু দ্বিতীয় বিভাগের আবর্তে ঘুরতে থাকা তাঁদের জন্য দরকার ছিল কোনো এক এক্স-ফ্যাক্টর। সারির ছোঁয়ায় এমপোলিতে বড় রকমের পরিবর্তন এলো। তিনি প্রায়ই একটা ব্যাপারে গর্ব করেন, আর তা হলো তরুণ প্রতিভাদের বোঝার ক্ষমতা। এমপোলিতে রুগানি, সাপোনারাদের মতো প্রতিভাদের তুলে আনেন। নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে লাগেন তরুণদের নিয়ে। এমপোলি দ্বিতীয় বিভাগে জ্বলে উঠলো। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে শেষ ম্যাচে লিভর্নোর কাছে হেরে অল্পের জন্য প্রথম বিভাগে উত্তরণ পাওয়া হয়নি। কিন্তু সারি হাল ছাড়লেন না। ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে এমপোলি এর পরের বছর মোটামুটি দাপটের সাথেই প্রথম বিভাগে উঠে আসে। আর এ ক্রমোত্থানটাই সাচ্চির চোখে পড়েছিল।

লীগের সবচেয়ে কম বাজেটের দল নিয়ে এমপোলি সেবার খেললো লীগের সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল। প্রায় শূন্য ট্রান্সফার নিয়েও তারা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। প্রচন্ড শক্ত রক্ষণ কাঠামোর উপর গড়ে ওঠা দলটি ইতালিয়ান লীগের মতো রক্ষণাত্মক লীগে খেলছিল সুন্দর ফুটবল। সুন্দর পাসিং আর আক্রমণ দিয়ে এমপোলি অনেকের মন জিতে নিল। ২০১৫ সালে ডাক এলো তার বাল্যকালের প্রিয় দল নাপোলি থেকে।

নাপোলির স্বপ্নযাত্রা

সারির নাপোলিকেই ভাবা হচ্ছিল জুভেন্টাসকে হারানোর মতো একটি দল; Image Source:Footie Spot

নাপোলির তৎকালীন কোচ রাফা বেনিতেজ নাপোলি ছাড়ার পর অল্পখ্যাত সারির নিয়োগটা অনেক নাপোলি সমর্থকের কাছেই অবাক হওয়ার মতো ঠেকলো। প্রথম তিন ম্যাচ জয়হীন থাকার পর হতাশা, সন্দেহ আরো বাড়লো। নাপোলির টিকিট বিক্রির হার ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এলো। নাপোলি লিজেন্ড ম্যারাডোনাও টুইট করে বললেন, সারি নাপোলির জন্য উপযুক্ত কি না তা নিয়ে তিনি সন্দিহান।

কিন্তু যে ব্যক্তি ২৫ বছর ধরে একটি খেলাকেই ধ্যানজ্ঞান করে এত দূর এসেছেন, তিনি কি আর এত সহজে হাল ছাড়েন? দ্রুতই নাপোলি সারির কাজের সুফল পেতে লাগলো। এমপোলির চেয়ে ভালো রক্ষণভাগের খেলোয়াড় পেয়ে আরো শক্ত রক্ষণ গড়ে তোলেন। রাফা বেনিতেজকে ভাবা হতো দারুণ রক্ষণাত্মক কোচ। সারি দায়িত্ব নেয়ার আগের মৌসুমে নাপোলি মোট গোল হজম করেছিল ৫৪টি, আর সারির অধীনে তা নেমে দাঁড়ায় ৩৪ এ! অথচ এই দলকে কোনোভাবেই রক্ষণাত্মক বলা যেত না। রক্ষণকে তিনি অভিধায়িত করেন এভাবে যে, “রক্ষণ হলো প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে আক্রমণ করার ব্যাপার!”

নাপোলিতে প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব ছিল না। সারি হিগুয়েনকে বানিয়ে তোলেন সিরি আ’র সবচেয়ে ভয়ানক স্ট্রাইকার হিসেবে। মেরতেন্স, লরেঞ্জো ইনসিনিয়েরা তার অধীনে ফুটতে থাকেন। ইনসিনিয়েকে ভাবা হতো ইতালির সেরা প্রতিভা হিসেবে, কিন্তু তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। শুধু ইনসিনিয়ের জন্য তিনি তার গোটা কাঠামোয় পরিবর্তন আনেন। এরপর ইনসিনিয়ের আসল রূপ দেখা যেতে থাকে। কিন্তু তার নাপোলির মূল খেলোয়াড় ছিলেন জর্জিনহো, যিনি মাঝমাঠ থেকে একাই খেলা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেন। সেবার জানুয়ারিতেও মনে হচ্ছিল নাপোলি জুভেন্টাসকে ধরেই ফেলবে, কিন্তু তা আর হয়নি। ২য় স্থানে লীগ শেষ করে নাপোলি, কিন্তু তাদের খেলা আস্তে আস্তে সর্বজন-নন্দিত হতে থাকে।

সারির তুরুপের তাস জর্জিনহো; Image Source:talkSPORT

তার পরের মৌসুমে নাপোলির টিকিট বিক্রি সূচকীয়ভাবে বেড়ে যায়। সুন্দর খেলার জন্য সমর্থকদের মুখে মুখে কোচের নাম চলে আসে। নাপোলি বড় ধাক্কা খায় হিগুয়েনের চলে যাওয়ায়। যাদের পেছনে ফেলার জন্য নাপোলির প্রাণান্তকর চেষ্টা, সেই জুভেন্টাসেই যোগ দেন হিগুয়েন। নাপোলি কিনে আনে ইউরোয় আলো ছড়ানো স্ট্রাইকার মিলিককে। নাপোলিতে যোগ দিয়েই চোটে পড়ে ৯ মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান মিলিক। স্ট্রাইকারবিহীন এক নাপোলির যাত্রা শুরু হয়। আর এটাই যেন সারির পূর্ণাঙ্গতা এনে দেয়।

উইংগার মেরতেন্সকে স্ট্রাইকার পজিশনে নিয়ে আসেন তিনি। উচ্চতা কম থাকায় ক্রসভিত্তিক খেলা খেলানো সম্ভব ছিলো না, নজর দিলেন খেলা বিল্ড-আপে। নাপোলির খেলা নতুন মাত্রা পায়। উইং থেকে কখনো মেরতেন্স, কখনো ক্যালেহন, কখনো হামসিক বা ইনসিনিয়ে মাঝে চলে আসতেন। তাদের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় ইতিমধ্যে সুন্দর ফুটবল উপহার দেয়া নাপোলি অন্যমাত্রায় পৌঁছে যায়। সেবারও লীগে রানার্সআপ হয় নাপোলি। গত মৌসুমে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নাপোলি শীর্ষে, গোটা ইতালিতে ভাবা হচ্ছিল নাপোলিই পারবে জুভেন্টাসের একাধিপত্য খর্ব করতে। শিরোপার এমনকি ৬ ম্যাচ বাকি থাকতে তারা জুভেন্টাসকে হারিয়ে সেই আশা আরো উস্কে দেয়।

কিন্তু হাতছোঁয়া দূরত্বে এসে স্বপ্নভঙ্গ হয় নাপোলির। শিরোপা জেতা হয়নি, কিন্তু ততদিনে সারির তুলনা হতে থাকে পেপ গার্দিওলার সাথে। অনেকের মতে, তিনি ইতালির নতুন আরিগো সাচ্চি। নাপোলি অনেকের মতেই গত মৌসুমের সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল খেলা দল। এত কিছুর পরও ফুটবলের প্রতি সারির আবেগ বোঝা যায় তারই একটি কথায়। ইতালিয়ান লীগে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কম বেতন পাওয়া কোচ। এ নিয়ে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “অফিস থেকে ফিরে যে কাজ আমি বিনা মূল্যে করতাম, আজ সেই কাজের জন্য টাকা পাচ্ছি- এর চেয়ে বেশি আর কী! আর আমি এখনো ট্রেনিং করাতে আসার সময় আমার স্ত্রীকে বলি না যে, আমি কাজে যাচ্ছি। এটা আমার পেশা না, ভালোবাসা।” সমালোচক ম্যারাডোনাও স্বীকার করে নেন তার সমালোচনা করা উচিত হয়নি! আর সারির শেষ মৌসুমে নাপোলি করে টিকিট বিক্রির রেকর্ড।

একপর্যায়ে নাপোলি ফ্যানরা তাকে ডাকতো ‘সারি পটার’; Image Source: Goal.com

খেলার ধরন ও ব্যক্তিত্ব

সারির খেলার ধরনকে সাচ্চি বলেছিলেন এভাবে যে, “দর্শন বিবেচনায় পেপ গার্দিওলা আর সারিকে সহোদর বলা যায়!” বল পায়ে রেখে খেলার দর্শনই তার কাছে মুখ্য। সারির খেলা মনোমুগ্ধকর, কিন্তু গোছানো। রক্ষণ কাঠামো কখনোই নড়বড়ে হতে দেন না, আবার তা-ই বলে তার দলের খেলা মরিনহো, সিমিওনেদের মতো রক্ষণাত্মকও না। সারির মতে, “ফুটবলে ভারসাম্যই সব, রক্ষণাত্মক বা আক্রমণাত্মক দল বলে কিছু বানানো যায় না, আদতে এগুলো দুর্বলতা।

নাপোলিতে আড়াই বছরে এক ম্যাচের জন্যেও ৪-৩-৩ থেকে বের হননি, কিন্তু তাতে দল একটুও অনুমেয় হয়ে ওঠেনি। আসল রহস্যই ছিল দলের খেলোয়াড়দের বোঝাপড়ার উপর। নাপোলিতেও নাকি তার ৩৮ রকমের বিকল্প বিন্যাস ছিল কর্ণার নিয়ে! মাঝমাঠভিত্তিক খেলায় জর্জিনহো ছিলেন তার প্রধান অস্ত্র। গত দুই মৌসুমে সিরি আ’র সেরা পাসিং মিডফিল্ডারের সাথে আলান ও হামসিকের মাঝমাঠ ছিল অপূর্ব। বল হারালে সাথে সাথে কাউন্টার প্রেসিংয়ে বল পুনরুদ্ধারের পেপ গার্দিওলা কৌশলেই কাজ করতেন তিনি।

দলের উইংব্যাকরা প্রচুর উপরে উঠে আসতেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার তার সাবেক খেলোয়াড়দের মতে ছিল প্রতিপক্ষকে নিয়ে করা গবেষণাগুলো। প্রতি ম্যাচের আগেই খেলোয়াড়দের সামনে যাবতীয় কার কী শক্তি, কার কেমন দুর্বলতা তা নিয়ে বিস্তারিত বলতেন, দুর্বলতা মাফিক ট্রেনিং করাতেন কিভাবে গোল করা যায় তা নিয়ে। মেরতেন্স বলেন, তাদের করা অনেক গোলের সূচনা থেকে জালে জড়ানো অবধি কোচ অনুশীলনে হুবহু প্র্যাকটিস করিয়ে দিতেন, এত গভীর ছিল তার গবেষণা। গতবার সবচেয়ে বিখ্যাত হয় ‘সারিবল’ নামের একটি শব্দ। জর্জিনহোকে মাঝে রেখে জালের মতো বল বিস্তার করে করে সুন্দর করে বল উপরে নিয়ে যাওয়াকে মিডিয়া নাম দিয়েছিল ‘সারিবল’।

সারির সাথে পেপ এর তুলনা হয় প্রায়ই; Image Source: Goal.com

কিন্তু সেই সাথে বড় কিছু দুর্বলতাও আছে। সারি একদমই দল ভাঙতে চান না। ম্যাচের পর ম্যাচ একই একাদশ খেলিয়ে যান। ‘পারফেকশনিস্ট’ কোচদের সমস্যা এটাই যে, তাদের এত চাহিদা আর প্রচন্ড ট্যাকটিক্যাল ব্যাপারের চাপে খেলোয়াড়রা সহজেই হাঁপিয়ে যান। গতবার এগিয়ে গিয়েও লীগ না পাওয়ার পেছনে স্পষ্টত দায়ী ছিল খেলোয়াড়দের ক্লান্তি। তিনি ছোট দলের বিপক্ষেও মূল একাদশ খেলিয়েই যান। খেলার দিকে অপত্য ভালোভাসার অভাব নেই, কিন্তু অনেকের মতেই পেশাদারিত্বের অভাব আছে। সংবাদ সন্মেলনে বাজে ভাষা ব্যবহারের ঘটনাও আছে, আছে ইগোসম্পন্ন খেলোয়াড়ের সাথে ঝামেলার ঘটনা। খেলার ধরনে আধুনিক হলেও ব্যক্তি সারি সেই ‘ওল্ড স্কুল’ ঘরানার। ট্রাউজার, টি-শার্ট ও ট্র্যাকসুট ছাড়া কিছুই পরবেন না। ক্লাব প্রেসিডেন্টের কথায়ও কোট-টাই পরে ডাগ আউটে আসেন না। পাঁড় ধূমপায়ী এই কোচের ক্যামেরার সামনে ধুম্রশলাকা সমেত আসতেও কোনো পরোয়া নেই। একটা বড় ব্যাপার হলো, সারি যা, তা তিনি ঢেকে রাখেন না।

কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন, সারির অর্জন কী? এককথায় শূন্য। সারি এখনবধি কোনো বড় ট্রফি জেতেননি, তবুও কেন চেলসির মতো বড় ক্লাব তাকে কোচ বানালো? অনেক কোচই ট্রফি জেতেননি, সবাই কি এত বড় দায়িত্ব পান? সারির ভেতরে বড় কোচের সব গুণই আছে। খেলা নিয়ে গবেষণা করা একনিষ্ঠ এই ব্যক্তির ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান অতুলনীয়, খেলার ধরন পেপ গার্দিওলা বা সাচ্চিদের মতো কিংবদন্তীদের সাথে তুলনীয়, তরুণ প্রতিভা তুলে আনায় সিদ্ধহস্ত- সকল উপাদানই মজুদ।

সাফল্য হয়তো সময়ের ব্যাপার মাত্র। অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দল নিয়েও সারি যা দেখিয়েছেন, সেই বিবেচনায় চেলসি নিয়ে তার সাফল্য পাওয়ারই কথা, যদিও ফুটবলে সব কিছু তাত্ত্বিকভাবে হয় না। কিন্তু ইংলিশ লীগ অবশ্যই এক নতুন চেলসিকে দেখবে। পেপ গার্দিওলা তো বলেই দিয়েছেন, “সারি ইংলিশ লীগের খেলার ধরন বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।” আমরাও সারির চেলসিকে দেখার অপেক্ষায়।  

ফিচার ছবিসত্ত্ব: Vivaronews

Related Articles