Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সত্যিই কি এবার ফেদেরারের অবসরের সময় আসন্ন?

রজার ফেদেরারের স্থান টেনিস বিশ্বে, তথা পুরো ক্রীড়া জগতে অনবদ্য। প্রায় পুরো টেনিস বিশ্ব নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেয় যে, তিনিই সর্বকালের সেরা। কেবল খেলা আর সাফল্য দিয়েই কি তার এই অমরত্ব প্রাপ্তি? না। ফেদেরার তার ব্যক্তিত্ব, ভাবমূর্তি, খেলার প্রতি তার দায়িত্ব- সব মিলিয়েই অনন্য। ২০১৭ থেকে ফেদেরার যা করেছেন তা তার ব্যক্তিগত সাফল্যের ভান্ডারকে তো ঋদ্ধ করেছেই, নানা রকম খেলার হাজারো ক্রীড়াবিদের কাছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এক উদাহরণ হিসেবে।

২০১৬ সালে মারাত্মক চোট পাবার পর বড় অস্ত্রোপচার হয় তার। বয়স তখন ৩৫ পেরিয়েছে। সবাই ধরেই নিল ফেদেরারের যুগ শেষ। অনেক সাংবাদিক কলামের মাধ্যমে তাকে আহ্বান জানালেন অবসর নিতে! সেই ফেদেরার ২০১৭ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাদালকে মহাকাব্যিক এক লড়াইয়ে হারিয়ে সবার ধারণার বাইরে গিয়ে গ্র্যান্ডস্লাম জিতে নেন। এর পরে মাঝের সময়টা যেন আবার সবাইকে নিয়ে গিয়েছিল তার সেই তরুণ বয়সের দুর্দান্ত সময়টায়। সেই অদম্য ফেদেরার! কিন্তু হঠাতই ছন্দপতন। এবার সত্যিই কি তার অবসর আসন্ন?

টেনিস ইতিহাসের সর্বকালের সেরা রজার ফেদেরার; Image Source: Tennis365.com

অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তনের পরই আসে ফর্মের নিম্নগতি

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর উইম্বলডন জেতার পাশাপাশি জিতে নেন মিয়ামি, ইন্ডিয়ান ওয়েলস, সাংহাই সহ বড় বড় আরো কিছু শিরোপা। এই বছরের শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। মৌসুমের শুরুর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোনো সেটে না হেরেই ফাইনালে পৌঁছে যান। সেখানে পাঁচ সেটের এক দারুণ লড়াইয়ে হারান মারিন চিলিচকে। কে বলবে সেই ম্যাচ দেখে যে, ৩৬ পেরোনো এক খেলোয়াড় ব্রিসবেনের অসহ্য গরমে পঞ্চম সেটেও এত পরাক্রম দেখাচ্ছেন? সবচেয়ে বেশি বয়সে গ্র্যান্ডস্লাম জেতার রেকর্ডটি নিজের করে নেন। শীর্ষস্থান হাতে পাওয়ার খুব কাছাকাছি অবস্থায় রটারড্যাম ওপেনে নিজের নাম লেখান। সেই টুর্নামেন্টও দাপটের সাথে জিতে নেন। আগাসিকে টপকে তিনিই হন সবচেয়ে বেশি বয়সী হিসেবে নাম্বার ওয়ান হওয়ার রেকর্ডের মালিক।

আগের বছর মিয়ামি ও ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্সে কাওকে তার সামনে দাঁড়াতেই দেননি। এবারও সেই মুকুটদ্বয় রক্ষার মিশনে নামেন। পৌঁছে যান মিয়ামি ওপেনের ফাইনালেও। সেই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। দেল পোর্তোর সাথে ফাইনালেই আসল কাহিনী শুরু। নাটকীয় এক ফাইনালে স্রোতের বিপরীতে গিয়ে ম্যাচ নিজের দিকে টেনে আনেন। সার্ভে ফেদেরার, স্কোর ৪০-০, আর একটি পয়েন্ট হলেই শিরোপা তার। এগুলোকে বলা হয় ম্যাচ পয়েন্ট। একটি এইস হলেও চলতো। তিন তিনটি ম্যাচ পয়েন্ট হাতছাড়া করে ব্রেক দেন দেল পোর্তোকে। আর ম্যাচে ফেরেননি। ফাইনালে হেরেই যান। ফেদেরারের সেই পুরনো অভ্যাস যেন আবার ফিরে আসে, ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েও ম্যাচ হারার অভ্যাস!

ইউএস ওপেন থেকে বিদায়ের পর; Image Source: eurosport.fr

ইন্ডিয়ান ওয়েলেসের প্রথম রাউন্ডেই অঘটনের শিকার হন অখ্যাত এক খেলোয়াড়ের কাছে। এরপর ক্লে মৌসুম শুরু হয়। প্রত্যাশিতভাবেই তিনি বিশ্রামে যান। বয়স ও শরীরের ধকলের কথা বিবেচনায় ফ্রেঞ্চ ওপেনসহ পুরো ক্লে মৌসুমটা ছেড়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল উইম্বলডনে সেই শক্তি কাজে লাগানো। একই ফর্মুলা ব্যবহার করে ২০১৭-তে উইম্বলডন জিতেছিলেন দাপটের সাথেই।

উইম্বলডনের প্রস্তুতির শুরুটাও হলো দারুণ। নিজের প্রিয় ঘাসের কোর্টের প্রথম টুর্নামেন্ট স্টুটগার্ট ওপেন জিতে নেন অবলীলায়। এরপর আরেক টুর্নামেন্ট গ্যারি ওয়েবার ওপেনের ফাইনালে উঠে যাওয়ার পর সবাই ভাবতেই লাগলেন আবারো ২০১৭ সালের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। সব বেটিং সাইটেই ফেদেরার পরিষ্কার ফেভারিট। ধাক্কাটা দেন তরুণ তারকা বর্না করিচ। গ্যারি ওয়েবার ওপেনের ফাইনালে করিচের কাছে হেরে যান। বলা বাহুল্য, তাতেও ফেদেরারের ফেভারিট তকমা একটুও টলেনি।

গ্র্যান্ডস্লামের শুরুটা করেন দারুণ। ড্র-ও ছিল তার অনুকূলে। কোয়ার্টার ফাইনালে যখন উঠে যান কোনো সেট না হেরেই, তখন ২১ নম্বর স্লাম জয়টা কেবল সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিলো। কেভিন এন্ডারসনের সাথে ২-০ সেটে এগিয়ে থাকা অবস্থাতেই ম্যাচ পয়েন্টের সামনে থেকেও সেই সুযোগ হারান। এরপর ৫ম সেটে ম্যারাথন লড়াইয়ে ফেদেরার হার মানেননি, বলা যায় হার মেনেছিল তার শরীর। প্রায় ৩৭ বছরের শরীর যে বড় পর্যায়ের লম্বা ম্যাচ খেলার অবস্থায় নেই তা আগেও বোঝা গিয়েছিল, কিন্তু চাক্ষুষ হলো সেই ম্যাচে। আপসেট বলুন আর যা-ই বলুন, ফেদেরার তার প্রিয় ও সম্ভাবনার ট্রফি রেস থেকে ছিটকে গেলেন সেই ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়েও!

এরপর হার্ডকোর্ট মৌসুমের নর্থ আমেরিকা ট্যুরের শুরুতে সিনসিনাটি ওপেনেও আবার সেই দুর্ধর্ষ শুরু। এমনকি একই দিনে ম্যাক্স মেয়ার ও তারকা ভাভরিংকাকে হারিয়ে সম্ভাবনা জাগান আরেকটি মাস্টার্স জয়ের। উঠেও যান ফাইনালে। ফাইনালে সেই নোভাক জকোভিচের সাথে দেখা। নিজের ক্যারিয়ারের অন্যতম বাজে এক ম্যাচে ফেদেরার হেরে যান সরাসরি সেটে। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লাম ইউএস ওপেনের আগে তাকে আর কেউ ফেভারিট মানেননি। তবুও শুরুটা চিল দারুণ। এমনকি তারকা তরুণ কিরিয়সকে যেভাবে উড়িয়ে দেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছিলো না কে তরুণ তুর্কি আর কে ৩৭ এর বুড়ো! অখ্যাত এক মিলম্যানের সাথে চতুর্থ রাউন্ডে প্রথম সেট সহজে জেতার পর শুরু তার ‘এরর মোড’। দ্বিতীয় সেটে সহজেই জেতা যায়- এমন অবস্থান থেকে সেট হারেন, আর চতুর্থ সেটে এগিয়ে গিয়েও টাইব্রেকে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ যান। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে এই ম্যাচে ফেদেরারের ভুল সংখ্যা ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

সেট পয়েন্ট বা ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে হারাটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত; Image Source: Samaj Weekly

সাংহাই মাস্টার্সেও সেই একই অ্যালগরিদমে দূরন্ত সূচনার পর সেমিতে হার, প্যারিস মাস্টার্সেও একই অবস্থা। মাঝে নিজ শহর বাসেল ওপেন নিজের করে নেন এই টেনিস সম্রাট। বছরের শেষ মর্যাদার আসর এটিপি ফাইনালসে তারই ‘শিষ্য’ আগামীর তারকা জারেভের কাছে সেমিফাইনালে হেরে যান। পুরো মৌসুমে যেন সেই একই ছবি!

দুর্বলতা, নাকি প্রকৃতির নিয়ম?

ফেদেরারের আগে যাকে সেরা ভাবা হতো, সেই সাম্প্রাস অবসর নেন ৩২ বছর বয়সে। ৩৭ বছর নাগাদ সাম্প্রাস পুরোদস্তুর বিশ্লেষক হয়ে যান। সাধারণত টেনিস বত্রিশের পর খেলা খুবই চ্যালেঞ্জের। সেই জায়গায় ৩৬ বছর বয়সেও ফেদেরারের গ্র্যান্ডস্লাম আছে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মে এই অগ্রযাত্রার গতি একসময় মন্থর হতোই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ফেদেরার এই সময়ে প্রবেশ করে ফেলেছেন।

একটি মাস্টার্স টুর্নামেন্ট হয় সপ্তাহব্যাপী। প্রতিদিনই ম্যাচ থাকে একটি করে তিন সেটের। গ্র্যান্ডস্লাম হয় দুই সপ্তাহব্যাপী, যেখানে একদিন পর পর পাঁচ সেটের ম্যাচ। তাই টেনিসে এ সময় সবচেয়ে জরুরি দিক হলো শরীরের ‘রিকভারি’। ফেদেরার নিজেই বলেছিলেন, তার ২৫ বছরের শরীর ৫ সেটের ম্যাচ টানা এক সপ্তাহ খেলার অবস্থায় থাকতো, কিন্তু এখন নাকি তেমন হয় না। সেজন্যই তিনি খেলার ধাঁচও বদলে ফেলেন। সার্ভে উন্নতি করে ম্যাচ ছোট করার কৌশলে ৩৫ এর পরেও এসে জিতেছেন তিনটি স্ল্যাম। কিন্তু এই কৌশলও এখন খাটছে না। কোনো ম্যাচে এক সেট বেশি খেলে জিততে হলেই পরের ম্যাচে দম ফুরিয়ে যাচ্ছে তার। শরীর তার সীমাবদ্ধতা দেখাচ্ছে, যখন সবাই আশা করছে ফেদেরার নামা মানেই জয়!

যে দৃশ্যটি সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে পীড়াদায়ক; Image Source: People Magazine

মানসিকতা

ফেদেরারের নতুন করে প্রত্যাবর্তনের পর তার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক ছিল মানসিকতা। যে মানসিকতার জন্য ফেদেরার একসময় নাদালের কাছে টানা হেরেছেন, সেই দিকটিই বদলে ফেলে নাদালকে টানা হারিয়েছেন এই বয়সেও। ব্রেক পয়েন্টের সামনেও থাকতেন অবিচল। কিন্তু হঠাৎ ফেদেরার আবার সেই আগের কিছু জিনিস দেখাচ্ছেন, যেগুলো তার ক্যারিয়ারের কিছু অপূর্ণতার জন্য দায়ী। এর মাঝে একটি হলো ম্যাচ পয়েন্টে এসে বা সেট পয়েন্টে এসে হেরে যাওয়া। এক পয়েন্ট পেলেই ম্যাচ বা সেট- এমন অবস্থা থেকে অনেক ম্যাচ হেরেছেন তিনি। মিয়ামি ওপেনের পর আবার সেই ভূত চেপে বসেছে। অনেক ম্যাচেই ফেদেরার ভাল অবস্থানে থেকেও জিততে পারেননি।

বর্ধিত প্রতিযোগিতা

জকোভিচের ক্যারিয়ারের একটি বড় দিক হলো, তিনি একইসাথে নাদাল ও ফেদেরারের সময়ভেদে একাধিপত্যে বাগড়া দিয়েছেন। তার আবার সেই অদম্য ফর্ম ফিরে পাওয়ার মানে হলো কোনো টুর্নামেন্ট জিততে হলে এই দেয়াল পার হতেই হবে। শারীরিকভাবে ফেদেরার এখন আর সেই পর্যায়ে নেই। বর্না করিচ বা জারেভের মতো নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের কাছে হার আরেকটি জিনিস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তাদের বিপক্ষেও সর্বকালের সেরা এই খেলোয়াড় আর অপ্রতিরোধ্য নন।

জকোভিচের ফর্মে ফেরাটা ফেদেরারের জন্য সত্যিই এখন সরাসরি হুমকি; Image Source: The New York Times

টেনিসে ফেদেরারের অবদান খুব সহজে এভাবে বলা যায়, শুধু তার জন্যই একটি প্রজন্ম দীর্ঘ এই খেলার দর্শক বা ভক্ত হয়েছে, শুধু তারই জন্য। এখনো ফেদেরার তার হেরে যাওয়া ম্যাচেও এমন কিছু ক্লাসিক টাচ বা শট নেন বা এমন কিছু মুহূর্ত উপহার দেন, যা উঠতি বা হালের বড় তারকারা তাদের জয়ী ম্যাচেও দিতে পারেন না। তাই তার সমর্থক থেকে ধরে কোনো টেনিসভক্তই চান না ফেদেরার অবসর নেন। কিন্তু আপাতত এমনটা প্রতীয়মান হয় না যে, এই মহাতারকার পক্ষে আর কোনো গ্র্যান্ডস্লাম জয় সম্ভব হবে। কেননা বয়স, শারীরিক সক্ষমতা সব বিপক্ষে নিয়ে টেনিসের মতো এই অসম্ভব পরিশ্রম ও প্রতিযোগিতার খেলার সেরা প্রতিযোগিতাগুলো জেতা খুব কষ্টকর।

তবে পাঠক জানেন কি- ২০১৩ বা ২০১৫ সালের দিকে এমন অবসরের আহবান জানিয়ে প্রবন্ধ লেখার পর তার রাজসিক প্রত্যাবর্তনে বিমুগ্ধ সেই লেখকরা আবার অনুশোচনামূলক লেখা প্রকাশ করেছেন? একজন টেনিসভক্ত হিসেবে সেই প্রত্যাশাই থাকবে, যেন এই লেখাটিও মিথ্যা প্রমাণিত হয়! যেন আরো কয়েক বছর ফুলকি ছড়ায় টেনিস মহানায়কের ব্যাট।

This article is in Bangla language. It analyses the recent performance of Federar & the possibility of his signing off from tennis court.

Feature Image: Sporting News

Related Articles