হল্যান্ডের জাতীয় দলে রোনাল্ড ক্যোমানের দিনগুলো ভালোই কাটছিল। তারুণ্যে ভরা একটি দল ছিল তার হাতে, যে দলকে তিনি নিজ হাতেই গড়েছিলেন। ২০২০ সালের ইউরোকে সামনে রেখে ক্যোমানের অধীনে হল্যান্ড দল প্রত্যাশামতো এগিয়েও যাচ্ছিল। কিন্তু এক বৈশ্বিক মহামারী সবকিছুকে থমকে দেয়। ইউরোপিয়ান সকল লিগ বন্ধ হবার সাথে সাথে পিছিয়ে যায় ইউরোও।
২০১৯-২০ মৌসুমে বার্সেলোনা লিগ শুরু হয়েছিল অ্যাটলেটিকো ক্লাবের সাথে পয়েন্ট হারিয়ে। দলের পারফরম্যান্স ক্রমে নিচের দিকে নামতে থাকলে মৌসুমের মাঝপথে বিদায় জানানো হয় তৎকালীন কোচ ভালভার্দেকে। সে সময় একবার বার্সা চেষ্টা করেছিল ক্যোমানকে কোচ হিসেবে আনতে। কিন্তু ইউরোকে সামনে রেখে তিনি তখনও ডাচ দলকে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। তাই সে সময়ের প্রস্তাবে সাড়া তিনি দেননি। বার্সা তখন নতুন কোচ হিসেবে নিয়ে আসে কিকে সেতিয়েনকে। কিন্তু ৬ মাস পর তিনিও ক্লাব থেকে বরখাস্ত হন।
বার্সেলোনা এবার প্রস্তাব দেয় জাভিকে। কিন্তু তিনি না করে দেন সে সময়ের বার্সা বোর্ডের সাথে তার ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে। তবে দ্বিতীয়বারের প্রস্তাবে রাজি হন রোনাল্ড ক্যোমান। কারণ, অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরো পিছিয়ে গেছে। এবার বার্সাতে না আসলে হয়তো আর কখনোই তার আসা হবে না। দায়িত্ব নেবার আগে থেকেই তিনি জানতেন বার্সার করুণ অবস্থা। তিনি বুঝেছিলেন, খাদে পড়ে যাওয়া এই দলকে তুলে আনা সহজ হবে না। এছাড়াও ক্লাব যেভাবে দেনার বোঝা কাঁধে নিয়ে ঘুরছে, দল সাজাতে বোর্ডও তাকে আর্থিক সহায়তা করার মতো অবস্থায় নেই। এরপরও তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন হয়তো ক্লাবের সাথে তার পুরনো মধুর স্মৃতি রোমন্থন করেই, হয়তো নিজের উপরেও ছিল তার অগাধ বিশ্বাস।
ক্যোমান কোচের আসনে বসার সাথে সাথেই দল থেকে ‘বুড়িয়ে যাওয়া’ কিছু খেলোয়াড় বিদায় নিল। তাদের ভেতর ছিলেন মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ, ভিদাল ও স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। ক্যোমান দলে এসে প্রথমেই একজন স্ট্রাইকার ও ডিফেন্ডার চেয়েছিলেন। কিন্তু বার্সা তাকে তার চাহিদামতো খেলোয়াড় এনে দিয়ে পারেনি। আসলে ক্যোমান বার্সাতে পুরো এক মৌসুমে কাটালেও এখন পর্যন্ত তার চাহিদামতো একটি খেলোয়াড়ও তিনি পাননি।
মৌসুমের প্রথমে নেলসন সেমেদোকে বিক্রি করে ফুলব্যাক ডেস্টকে আনার পেছনে তার কোনো হাত ছিল না। একইভাবে তার আসার আগেই পিয়ানিচের সাথে আর্থুরের সোয়াপ ডিল এবং পেদ্রি-ত্রিনকাওকে বার্সা কিনে ফেলেছিল। প্রেস কনফারেন্স ও বেশ কিছু ইন্টারভিউতে ক্যোমান বেশ খোলাসা করেই বলেছিলেন, নতুন স্ট্রাইকার হিসেবে তার পছন্দ মেম্ফিস ডিপাইকে। অপরদিকে, ডিফেন্ডার হিসেবে বার্সা চেয়েছিল ম্যানসিটি থেকে এরিক গার্সিয়াকে ফেরাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কোনোটাই হয়নি।
ক্যোমান সাধারণত ৪-২-৩-১ ছকে দলকে খেলিয়ে থাকেন, যেখানে দুইজন ডিফেন্ডারের উপরে ডাবল পিভট ভূমিকায় থাকেন দুইজন মিডফিল্ডার। অন্য সব চারজন ডিফেন্ডার খেলানোর কৌশলের মতো ক্যোমানও রক্ষণে ব্যবহার করেন দুইজন ফুলব্যাক, যাদের উপরে থাকে দুইজন উইঙ্গার। তবে তারা খেলা গড়ে তোলেন মাঝমাঠ থেকে। এজন্য মাঝে মাঝে তাদের লেফট অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা রাইট অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবেও দেখা যায়। এছাড়া, একজন প্রথাগত স্ট্রাইকার থাকে কোমানের কৌশলে। যার ঠিক নিচে থাকে একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বা নাম্বার টেন।
গত বছর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে লিগের প্রথম ম্যাচে ক্যোমান তার এই কৌশলই ব্যবহার করেছিলেন। সেখানে ডাবল পিভটের ভূমিকায় ছিলেন বুসকেটস ও ডি ইয়ং। নাম্বার টেন হিসেবে নামলেও লিওনেল মেসি ছিলেন মূলত ‘ফলস নাইন’ ভূমিকায়, যেখানে তার সাথে মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে দিচ্ছিলেন কৌতিনহো। ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ৪-০ গোলে জেতার পর একই কৌশল দিয়ে বার্সা জিতে নেয় সেল্টা ভিগোর সাথে দ্বিতীয় ম্যাচও। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে বার্সা সেভিয়ার সাথে ড্র করে পয়েন্ট হারায়। এ ম্যাচেই মূলত প্রথম ধরা পড়ে, ক্যোমানের এই ডাবল পিভট ট্যাকটিক্স বার্সার খেলার ধরনের সাথে ঠিক মিলছে না।
সেভিয়ার সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি করার পরের ম্যাচে গেটাফের সাথে হেরে আসার পরই পরিষ্কার হতে শুরু করে, দলের কোথাও সুর কেটে গেছে। বুসকেটস ও ডি ইয়ং যেমন তাদের নিজস্ব ফুটবল খেলতে পারছেন না, তেমনই এই ট্যাকটিক্সে স্বাচ্ছন্দ্যে নেই মেসিও। তবে প্রথম থেকেই ক্যোমান বারবার বলে গেছেন, এখন এটাই বার্সার জন্য উপযুক্ত কৌশল।
কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ, আলাভেজ ও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের সাথে পয়েন্ট হারানোর পর ক্যোমান নিজেও নড়েচড়ে বসেন। আনসু ফাতি, পিকে ও কৌতিনহোর ইনজুরির পর তিনি প্রথমবারের মত কৌশল পালটে ৪-৩-৩ ফরমেশনে স্থায়ী হন। কৌতিনহোর ইনজুরি ও এই নতুন কৌশল বার্সাকে বুঝিয়ে দেয় তরুণ তুর্কি পেদ্রির গুরুত্ব।
তবে কয়েক ম্যাচে ৪-৩-৩ কৌশল ব্যবহার করেও ক্যোমান তার পুরনো ডাবল পিভট রোলে ফিরে গেছেন। কিন্তু রিয়াল ভায়াদোলিদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিন ডিফেন্ডারের ৩-৪-২-১ বা ৩-৫-২ কৌশল নামিয়ে সফলতার দেখা পান। এরপর আর তাকে পেছনে তাকিয়ে দেখতে হয়নি; পুরো সিজনে ক্যোমানের যত সাফল্য, তা এই কৌশল দিয়েই এসেছে। পেদ্রিকে তিনি ব্যবহার করেছেন একজন অ্যাডভান্স মিডফিল্ডার হিসেবে, ডি ইয়ংকে তিনি দিয়েছেন ফ্রি রোল – যেখানে মধ্যমাঠ থেকে বল দেয়ানেয়া করে বা মেসির সাথে জায়গা অদলবদল করে তাকে দেখা গেছে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ঢুকে আক্রমণ গড়তে।
ক্যোমানের ৩-৪-২-১ ট্যাকটিক্সে যেন নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন সার্জিও বুসকেটসও। মৌসুমের প্রথম থেকে ক্রমাগত হতাশাজনক ফুটবল ও বাজে ফর্মের কবলে পড়ে বার্সার এই বর্ষীয়ান ফুটবলার দলে প্রায় জায়গা হারিয়েই ফেলেছিলেন। কিন্তু ৩ ডিফেন্ডারের নতুন এই কৌশল যেন তাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলেছে। রক্ষণে তিনজন থাকার কারণে মাঠে তিনি বেশ বড়সড় জায়গা পেয়ে যাচ্ছেন, আর ডি ইয়ং পুরো মাঝমাঠ জুড়ে রাজত্ব করছেন বলে তাকে মধ্যমাঠের বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণও করতে হচ্ছে না।
৩-৫-২ ফরমেশনে বার্সা নতুনভাবে জেগে উঠেছিল, মেসিও ফিরে পেয়েছিলেন তার পুরনো ফর্ম। কিন্তু এরপরও কেন তাদের সাফল্যের খাতায় যোগ দেয়নি বড় শিরোপা? এর উত্তর খুঁজতে হলে ঘাটতে হবে এ মৌসুমে খেলা বার্সার প্রতিটি ম্যাচ ও কোমানের কৌশল।
প্রথমে আসা যাক চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচগুলোতে। গ্রুপপর্বে বার্সেলোনা এক ম্যাচ হাতে রেখেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছিল। সে কারণেই ক্যোমান জুভেন্টাসের সাথে দ্বিতীয় লেগে কৌতিনহো, বুসকেটস বা অস্কার মিনগুজেয়াকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে ম্যাচ হারার অন্যতম কারণ ছি্ল দলের রক্ষণভাগ। লংলে ও আরৌহোর শিশুতোষ ভুলে বার্সা এক ম্যাচে উপহার দেয় দুটো পেনাল্টি। ঘরের মাঠে পিএসজির সাথে ৪ গোলে হারা ম্যাচেও মূলে ছিল ডিফেন্ডারদের ভুল। ইনজুরি থেকে ফিরে আসা পিকে, রাইটব্যাক সার্জিনো দেস্ত – কেউই পারেননি এমবাপের গতির সাথে পাল্লা দিতে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ ছেড়ে লা লিগাতে ফিরলেও দেখা যাবে, পুরো মৌসুমে বার্সেলোনা যখনই সুযোগ পেয়েছে লা লিগার লড়াইয়ে ফিরতে, তখনই কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের একক ভুলের মাসুল হিসেবে বার্সাকে হয় পয়েন্ট হারতে হয়েছে, কিংবা ভাগাভাগি করতে হয়েছে। এবং পয়েন্ট হারানোর পেছনে সেসব ভুল সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে ডিফেন্ডারদের মাঝেই।
আলাভেজের সাথে এ মৌসুমে প্রথম দেখায় বার্সা তাদের সাথে ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছিল। বলাই বাহুল্য, আলাভেজ শক্তিমত্তার দিক থেকে বার্সেলোনার সমকক্ষ নয় কোনোদিক থেকেই, আর তখন তারা লিগের লড়াইয়ে বেশ পিছিয়েও ছিল। কিন্তু লিগের লড়াইয়ে ফেরার এ ম্যাচে নেতো ও পিকের ভুলে বার্সা সহজ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হারিয়ে বসে।
এমন আরেকটি উদাহরণ কার্দিজের সাথে বার্সেলোনার ম্যাচ। লিওনেল মেসির একমাত্র গোলে বার্সেলোনা প্রায় ম্যাচটি জিতেই নিয়েছিল। কিন্তু ৮৭ মিনিটের ডিফেন্ডার লংলের এক ভুলে কার্দিজকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে বসে বার্সা। যদি এককভাবে কারও পারফরম্যান্স সামনে আনা যায়, তবে দেখা যাবে বার্সার প্রধান দুই ডিফেন্ডারের কারণেই বার্সা এ মৌসুমের সর্বাধিক পয়েন্ট হারিয়েছে।
এভাবে পয়েন্ট বিসর্জন দিয়েও মৌসুমের শেষের দিকে শিরোপা জয়ের দৌড়ে বার্সা ভালোভাবেই ফিরে এসেছিল। রিয়াল মাদ্রিদের সাথে মৌসুমের দ্বিতীয়বারের দেখায় হারার পরও তাদের সামনে সুযোগ ছিল পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার। এজন্য প্রয়োজন ছিল গ্রানাডার বিপক্ষের ম্যাচে জয়। কিন্তু আবারও সেই ডিফেন্ডারের ভুলে বার্সা মৌসুমের সব থেকে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে। এরপর লেভান্তের বিপক্ষে ড্র ও সেল্টা ভিগোর সাথে ঘরের মাঠে হার এ সবই কোনো না কোনো খেলোয়াড়ের একক ভুলের মাশুল।
তবে পুরো মৌসুমজুড়ে রক্ষণভাগ এভাবে হতাশ করলেও বার্সেলোনার আক্রমণভাগ ছিল বেশ চনমনে। প্রত্যেক ম্যাচেই দারুণ সব গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা থেকে গ্রিজমান বা মেসিরা গোলও করেছেন। তবে একজন প্রথাগত স্ট্রাইকারের অভাবে বার্সেলোনা ভুগেছে প্রতি ম্যাচেই।
এবার ক্যোমানের প্রসঙ্গে আসা যাক। ক্যোমানকে অনেকেই একগুয়ে কোচ হিসেবেই জানেন। মৌসুমের প্রথম দিকে ডাবল পিভটের কৌশল প্রতি ম্যাচে ব্যর্থ হবার পরও তা থেকে সরে না আসার জন্য তিনি বেশ সমালোচিতও হয়েছিলেন। তবে সব থেকে বেশি তিনি সমালোচিত হয়েছেন মিডফিল্ডার রিকি পুজকে ব্যবহার না করার জন্য।
রিকি পুজ সাধারণত একজন অ্যাটাকিং ঘরানার মিডফিল্ডার। শারীরিক শক্তির ফুটবল বা রক্ষণের দিকে তিনি তেমন পারদর্শী নন। অন্যদিকে, এ মৌসুমে ক্লাবে যোগ দেওয়া পেদ্রি আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণেও বেশ পারদর্শী। তাই পুরো মৌসুমজুড়ে রিকি পুজকে উপেক্ষা করে ক্যোমান খেলিয়ে গেছেন পেদ্রিকে।
তবে দলের দুর্বলতাকে আরও পরিষ্কারভাবে প্রতিপক্ষের সামনে তুলে ধরেছে ক্যোমানের সাবস্টিটিউট কৌশল। মৌসুমের প্রথম দিকে ম্যাচের অবস্থা না বুঝেই তিনি প্রায় মুখস্ত খেলোয়াড় বদল করতেন। কৌতিনহোর বদলে পেদ্রি, দেম্বেলের বদলে ত্রিনকাও কিংবা রবার্তোর বদলে দেস্ত – এই ছিল প্রত্যেক ম্যাচের বদলির সময়ের দৃশ্য।
পরবর্তীতে, ৩-৫-২ ফর্মেশনে খেলতে শুরু করার পরে দলে প্রায় অনিয়মিত হতে শুরু করেন ত্রিনকাও, আর মধ্যমাঠে নিয়মিত হতে শুরু করেন লা মাসিয়া থেকে আসা তরুণ মিডফিল্ডার মোরিবা। এই খেলোয়াড় বদলেও ক্যোমান একটু বেশি সর্তক হয়ে ট্যাক্টিক্যালি পিছিয়ে গেছেন। লা লিগার অধিকাংশ দলই কোনোভাবে এগিয়ে থাকলে দ্বিতীয়ার্ধে জমাট রক্ষণ তৈরি করে বসে। এমন রক্ষণ ভাঙতে দরকার হয় নিখুঁত ড্রিবলারদের, যারা ড্রিবল করে এক নিমিষে জমাট রক্ষণ ভেদ করতে পারেন। অথবা প্রয়োজন পড়ে ডিফেন্সচেরা পাস দেওয়া মিডফিল্ডারদের, যাদের মাধ্যমে উইং থেকে ক্রস করেও এমন জমাট রক্ষণের মাঝে গোল সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু এরিয়াল ডুয়েলে পারদর্শী খেলোয়াড় দলে না থাকার কারণে ক্যোমান কখনও উইং থেকে ক্রস করার পরিকল্পনা করেননি।
অথচ এমন অবস্থায় তিনি রিকি পুজ বা মিরালেম পিয়ানিচের মতো খেলোয়াড়দের ব্যবহার করতে পারতেন, যেখানে পুজ ও পিয়ানিচ ডিফেন্ডারদের চোখে ধুলো দিয়ে নিখুঁত পাস দিতে পটু। কিন্তু বদলি খেলোয়াড় হিসেবে সবরকম পরিস্থিতিতেই ক্যোমান ব্যবহার করেছেন কিছুটা রক্ষণাত্মক ভূমিকায় খেলা মোরিবাকে। এক্ষেত্রে যখন মধ্যমাঠ থেকে আরও সৃষ্টিশীল ফুটবলের প্রয়োজন ছিল, সেখানে মোরিবা রক্ষণে এনে দিয়েছেন দৃঢ়তা। তাতে অবশ্য মোরিবা উতরেও গিয়েছেন।
পুরো মৌসুমে ক্যোমানের বেশ কিছু চিন্তাধারার প্রয়োগ দারুণ কাজে লেগেছে। যেমন ডি ইয়ংয়ের ফ্রি রোল, পেদ্রিকে পুরোদমে মিডফিল্ডারের ভূমিকায় আনা, মিনগুয়েজাকে প্রথমে রাইটব্যাক ও পরবর্তীতে সেন্টারব্যাক হিসেবে ব্যবহার করা। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ম্যাচের তার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত কাজে দিলেও শক্তিশালী দল বা বড় ম্যাচে তার কৌশল ছিল চূড়ান্তমাত্রায় ব্যর্থ। রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, সেভিয়া, জুভেন্টাস, পিএসজির মতো বড় দলের বিপক্ষে ক্যোমানের সফলতার হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
তবে একজন কোচের দক্ষতা ও শিরোপা জেতানোর মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারার ক্ষমতাকে এক মৌসুমের পারফরম্যান্সের বিবেচনায় মাপাটাও সমীচীন হবে না বোধহয়। ক্যোমান বার্সেলোনাকে কোপা দেল রে জিতিয়েছেন। তার থেকে বড় কথা, দেনার চাপে জর্জরিত হয়ে ওঠা বোর্ড ও হারের বৃত্তে ঘুরতে থেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা একটি দলকে মনোবল ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার অধীনেই কাতালান এ ক্লাবটি পেয়েছে ভবিষ্যতে ক্লাবের হাল ধরার মতো চার খেলোয়াড়কে। তিনি নতুন কোনো খেলোয়াড় পাননি। ইনজুরি যখন একের পর এক আঘাত হেনেছে, তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন লা মাসিয়ার কাছে। পুরো মৌসুমে দলের অন্যতম দুইটি পজিশনে খেলে গেছেন ১৮ বছর বয়সী দুই কিশোর।
যদিও সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচের পর এভাবে লিগ হাতছাড়া হবার কারণে রোনাল্ড ক্যোমানের বার্সেলোনার কোচ হিসেবে থাকা বা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়ে গেছে। পরবর্তী মৌসুমে হয়তো কাতালানদের কোচের চেয়ারে তাকে দেখা না-ও যেতে পারে। তবে সবকিছু বিবেচনা করে ক্যোমানকে আরও একটি মৌসুম বার্সার দায়িত্ব দেয়া যেতেই পারে। একই সাথে তার ফুটবল দর্শন ও চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড়। কারণ অল্প সময়ে বড় সাফল্য লাভ করা যায় না। ফুটবলে তা আরও কঠিন কাজগুলোর একটি।
সভাপতি লাপোর্তার উচিত হবে এবার কোচ না বদলে বরং দলের গঠন ঠিক করার, খেলোয়াড়দের বেতনভাতাগুলো একটি নির্দিষ্ট ধাঁচে নিয়ে আসার। বার্সেলোনার এই দৈন্যদশার শেষ হয়তো এখনো আসেনি; ইনিয়েস্তা, জাভি, পুয়োল বিদায়ের পর তাদের শূন্যস্থান এখনও পূরণ হয়নি। এদিকে পিকে-বুসকেটস-মেসিও ক্যারিয়ারের অন্তিম মুহূর্তে চলে এসেছেন। তাদের বিদায়ের সাথে সাথে বার্সার যে বিশাল এক শূন্যতা তৈরি হবে, তার জন্য ‘কনটিঞ্জেন্সি প্ল্যান’ যদি এখনই তৈরি করা না হয়, তবে কাতালান এই ক্লাবের বিপর্যয়ের এ কেবল শুরু।