বেজে উঠেছে বিশ্বকাপের বাঁশি।
শুরু হয়ে গেছে উন্মাদনা। আর মাত্র কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা; চাইলে মিনিটেও হিসাব করতে পারেন। রাশিয়ার লুঝনিক স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপ কেবল মাঠের খেলা নয়। এটা মাঠের বাইরে ও মাঠে হাসি-কান্নার এক বিশাল আয়োজন। বিশ্বকাপের এই মহিমা যে, এটা খেলোয়াড়দেরও ঠেলে দেয় পেশাদার দুনিয়ার ওপরে কোথাও।
আমরা সেই বিশ্বকাপের দুয়ারে দাঁড়িয়ে। এই প্রথম রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। ২০১০ সালে তারা এই আয়োজনের স্বত্ত্ব পেয়েছে। সেই থেকে চলছে তোড়জোড়। ১৪ জুন থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই আসর। রাশিয়ার ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে ৩২ দলের মোট ৬৪টি ম্যাচ। আর শেষ ম্যাচে বিশ্ব খুঁজে পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
এই বিশ্বকাপ জুড়ে চলবে নানান তর্ক, চলবে নানা ধরনের উন্মাদনা। এসব তর্কে অংশ নিতে হলে চাই হাতে নানা রকমের পরিসংখ্যানের রসদ। পরিসংখ্যান কী বলে? কে এগিয়ে আছে? কে পিছিয়ে আছে? পেলের কৃতিত্ব বেশি? নাকি ম্যারাডোনার কৃতিত্ব বেশি? বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড দেখেছে কে? কে বিশ্বকাপে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল করেছে?
এমন সব পরিসংখ্যানের জোর না হলে কি চলে!
আর ফোর্বস পত্রিকা এসব পরিসংখ্যান দিয়ে সাজিয়েছে মজার এক লেখা। আজ সেই লেখাই রইলো আপনাদের জন্য।
২৫ – বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন লোথার ম্যাথিউস।
৫.৪ – বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলগড়। ১৯৫৪ সালে সুইজারল্যান্ড আসরে হওয়ার রেকর্ড।
৬৮,৯৯১ – ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ গড় দর্শক উপস্থিতি। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছিলো এই রেকর্ড।
১৭১ – এক আসরে সর্বোচ্চ গোল। দুবার ঘটেছে এই ঘটনা। ১৯৯৮ ফ্রান্স এবং ২০১৪ ব্রাজিল আসরে।
৭০ – বিশ্বকাপ ইতিহাসে ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৭০টি ম্যাচ জিতেছে। এছাড়া ব্রাজিল সর্বোচ্চ ৫টি ট্রফি জিতেছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার অংশ নিয়েছে; এবার নিয়ে ২১ বার।
৮ – সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল খেলেছে জার্মানি। কিন্তু এর মধ্যে ৪ বারই হেরেছে তারা। এটাও একটা রেকর্ড। জার্মানি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে, ১০৬টি।
২৫ – মেক্সিকো বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছে।
০ – চারটি দেশ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েও কখনো ম্যাচ জিততে পারেনি। এই চার দেশ হলো কানাডা, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও কঙ্গো।
২২৪ – জার্মানির আরও একটি রেকর্ড। তারা ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল করেছে। বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১২১টি গোল হজমও করেছে তারা।
২১ – বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ড্র করেছে ইতালি।
১০ – ব্রাজিলের সর্বোচ্চ ১০ জন খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখেছেন।
১১১ – আর্জেন্টিনার রেকর্ড। তাদের ১১১ জন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেছেন, যা বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ।
৫ – সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি শুট আউট ম্যাচে জড়িত ছিলো আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে একটিমাত্র ম্যাচে হেরেছে তারা।
৩ – সবচেয়ে বেশিবার পেনাল্টি শুটআউটে হেরেছে ইতালি ও ইংল্যান্ড।
৫ – সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার রেকর্ড। দুজন খেলোয়াড়ের যৌথভাবে আছে এই রেকর্ড। মেক্সিকোর গোলরক্ষক আন্তেনিও কারবাহাল ও জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউস খেলেছেন ৫টি বিশ্বকাপ। মেক্সিকোর রাফায়েল মার্কুয়েজ এবার পঞ্চম আসরে খেলতে পারেন। এ ছাড়া ইতালির জিয়ানলুইজি বুফনের নাম ৫ বিশ্বকাপের দলে ছিলো। কিন্তু ১৯৯৮ আসরে খেলেননি তিনি।
১৭ – মিরোস্লাভ ক্লোসা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বেশী গোলদাতা; ১৬ গোল করেছেন তিনি। তিনি চারটি বিশ্বকাপে ১৭টি ম্যাচ জিতেছেন। এর চেয়ে বেশি জয় আর কোনো একক খেলোয়াড়ের নেই। এছাড়া তিনি বিশ্বকাপে যে কারো চেয়ে বেশি নক আউট ম্যাচ খেলেছেন।
৪৩ বছর ৩ দিন – কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ফারিদ মনড্রাগন এখন অবধি বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাঠে নামা সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়। তবে এবারের বিশ্বকাপ শুরু হতেই ভেঙে যেতে পারে এই রেকর্ড। মিসরের গোলরক্ষক এসাম আল-হাদারি যদি শুক্রবার মাঠে নামেন, তিনি হয়ে যাবেন সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়। তার বয়স হবে ৪৫ বছর ৫ মাস। আল-হাদারি একই সাথে সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ অভিষেকের রেকর্ড করবেন।
১৭ বছর, ১ মাস, ১০ দিন – সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলার রেকর্ড। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই খেলোয়াড় ১৯৮২ বিশ্বকাপে নর্দান আয়ারল্যান্ডের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। যুগোস্লোভিয়ার বিপক্ষে তার মাঠে নামার এই রেকর্ড এ বছরও ভাঙছে না।
৫ – ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইউক্রেনের ওলেগ সেলেঙ্কো এক ম্যাচে ৫ গোল করেছিলেন। ক্যামেরুনকে ৬-১ গোলে হারানোর পথে সেলেঙ্কোর এই ৫ গোল হয়ে গেছে রেকর্ড। এখন অবধি এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল এটিই।
৪ – পোলিশ স্ট্রাইকার আর্নেস্ট উইলমোস্কি বিশ্বকাপে একটি ম্যাচে খেলেছিলেন। তাতে ৪ গোল করে দুটো রেকর্ড করেছিলেন। বিশ্বে আর কোনো খেলোয়াড়ের গোল গড় এত বেশি নেই, যেহেতু তিনি আর ম্যাচ খেলেননি। এছাড়া তার করা ৪ গোলের ওই ম্যাচে পোল্যান্ড হেরেছিলো। ব্রাজিল অতিরিক্ত সময়ে ৬-৫ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিয়েছিলো। ফলে ৪ গোল করেও ম্যাচ হারা বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় উইলমোস্কি।
৬ – ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি কার্ড পাওয়ার রেকর্ড। এই রেকর্ড আছে তিনজনের। ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান, ব্রাজিলের কাফু ও মেক্সিকোর রাফালে মার্কুয়েজ ৬টি করে কার্ড পেয়েছেন। মার্কুয়েজ এবার বাকিদের ছাড়িয়ে যেতে পারেন। এর মধ্যে গড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন জিদান। তিনি মাত্র ১২ ম্যাচে ৬ কার্ড পেয়েছেন।
২ – দুবার লাল কার্ড দেখা খেলোয়াড় আছেন দুজন। ক্যামেরুনের রিগোবার্ট সং ও ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান ২ বার করে লাল কার্ড দেখেছেন বিশ্বকাপে।
৩ – একমাত্র পেলে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে এই কীর্তি করেছেন তিনি।
২,২১৭ – সবচেয়ে বেশি মিনিট বিশ্বকাপ মাঠে ছিলেন একজন খেলোয়াড়। এই রেকর্ড ইতালির পাওলো মালদিনির।
১৩ – এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড। ফ্রান্সের জাঁ ফন্টেইন ১৯৫৮ বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য এই ১৩ গোল করেছিলেন, যা এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড হিসেবে অমর হয়ে গেছে বলা যায়। এছাড়া তিনিই একমাত্র পরপর ৬ ম্যাচে গোল করেছিলেন।
২৫ – সবচেয়ে বেশি ম্যাচে কোচিং করানোর রেকর্ড পশ্চিম জার্মানির হেলমুট শোয়েনের। সবচেয়ে বেশি ম্যাচ কোচ হিসেবে জেতার রেকর্ডও তার। ১৯৭৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, ১৯৬৬ সালে রানার্সআপ এবং ১৯৭০ সালে তৃতীয়। অবশ্য ১৯৭৮ সালে প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়েছিলেন। শোয়েনের এই রেকর্ড এবার ভেঙে দিতে পারেন জার্মানির জোয়াকিম লো।
৬ – সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপে কোচ হিসেবে আসার রেকর্ড। ব্রাজিলের কার্লোস আলবার্তো পাহেইরা ১৯৮২, ১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে কোচ হিসেবে গেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে তিনি ব্রাজিলের কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন।
৯ – রাভশান ইমাতভ সবচেয়ে বেশি ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপে তিনি ৯টি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন।
১৬ – বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড। আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে রয়েছে এই রেকর্ড।
৫০ – বিশ্বকাপে আজ অবধি ৫০টি হ্যাটট্রিক হয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকার বার্ট পাতেনাউ যে বিশ্বের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন, এই স্বীকৃতিটা ফিফা দিয়েছে ২০০৬ সালে এসে; ঘটনার ৭৬ বছর পর!