Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর শাপমোচন

ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলটা যেন আটপৌরে মধ্যবিত্তের সংসার। টানাটানি লেগেই থেকে। এই নেই, ওই নেই। অনেক না থাকার মাঝেই সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশ দলকে।

এই তো, এবার ভারত সফরে গিয়েছে বাংলাদেশ খোদ নিজের সংসারের অনেক প্রতিকূলতাকে সঙ্গী করে। ভিন্ন ভিন্ন কারণে দলের দুই নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালকে পায়নি টাইগাররা। সম্প্রতি নতুন বলে ভরসা হয়ে ওঠা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে। কয়েকটি তরুণ প্রাণের সঙ্গে অভিজ্ঞদের নিয়ে সংকট উতরে ভারত যায় বাংলাদেশ।

ভারতে গিয়ে দিল্লির মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণের কবলে পড়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। এ যেন নানামুখী চাপের মহাসমারোহ বাংলাদেশকে ঘিরে।

বলা বাহুল্য, বিষম চাপেই বিপুল বিক্রমে জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ। ক্রিকেট ইতিহাসে অতীতেও যার প্রমাণ দিয়েছে টাইগাররা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই প্রতিপক্ষকে ছারখার করার দুর্বিনীত প্রচেষ্টা দেখা যায় বাংলাদেশ দলের মাঝে। চাপকে উড়িয়ে দিতে একাট্টা হয় দল। সম্মিলিত প্রয়াসে রচিত হয় ইতিহাস।

Image Credit: REUTERS/Anushree Fadnavis

২০০৮ সাল, আকস্মিকভাবে ভারতের নিষিদ্ধ আইসিএল লিগের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয় বাংলাদেশ। জাতীয় দল, বয়সভিত্তিক দল মিলে ১৪ জন ক্রিকেটার যোগ দেন আইসিএলে। তখন জাতীয় দলটা হারিয়ে ফেলে অনেক শক্তিমান, অভিজ্ঞ, প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার। গর্বের বিষয়, আইসিএল কাণ্ডের পর প্রথম ম্যাচেই জয়ের আবিরে রঙিন হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট।

মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বে তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল ড্যানিয়েল ভেট্টোরির নিউ জিল্যান্ডকে। ৯ অক্টোবরে পাওয়া ওই জয়টিও ইতিহাসের অংশ। কারণ, ওয়ানডেতে ব্ল্যাক ক্যাপসদের বিরুদ্ধে সেটিই ছিল টাইগারদের প্রথম জয়।

একই চিত্রের দেখা মিলেছে এবার ভারত সফরে। গত ৩ নভেম্বর প্রবল চাপে থাকা বাংলাদেশ দলের এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে শক্তিশালী ভারতকে। দেয়াল টপকানোর অভিপ্রায়ে লড়াই করা বাংলাদেশ শিবির উপহার দিয়েছে তেজঃদীপ্ত পারফরম্যান্স। বায়ু দূষণে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে থাকা দিল্লিতে নতুন করে ইতিহাস লিখেছে টাইগাররা। মুশফিকুর রহিমের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রথমবার ভারতকে হারানোর গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে পাওয়া জয়ে এসেছে অর্জনের সমাহার।

Image Credit: AP Photo/Manish Swarup

ঘুচেছে ২৯ বছরের আক্ষেপ

ক্ষুদে ফরম্যাটে আগের ৮ বারের চেষ্টায় ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। কয়েকবার নাগালে পেলেও তীরে শেষমেশ তরী ভিড়ানো সম্ভব হয়নি। দিল্লিতে নবমবারের চেষ্টায় ধরা দিল কাঙ্ক্ষিত জয়। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে ৫৩ মাস পর ভারতকে হারাল বাংলাদেশ। এর আগে সর্বশেষ জয়টি ছিল ২০১৫ সালের জুনে, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ-পরবর্তী ওয়ানডে সিরিজে। ২০১৬ বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুর হৃদয়ভাঙা ম্যাচের পর ৪৪ মাস অতিবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অতৃপ্ত আত্মা যেন প্রশান্তির যোগান পেয়েছে দিল্লিতে। ভারতের মাটিতেও যেকোনো ফরম্যাটে ৪৪ মাস পর জিতল বাংলাদেশ। শেষ জয়টাও ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে ধর্মশালায়।

ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। চন্ডিগড়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে। দিল্লিতে ম্যাচের আগে সব ফরম্যাট মিলে ৫টি ম্যাচ খেলে ২৯ বছরে, জয় ছিল না একটিও। জয়ের আক্ষেপ ঘুচল দিল্লীতে, ভারতের মাটিতে ভারতকে প্রথমবার হারানোর আনন্দ সঙ্গী হয় বাংলাদেশের।

মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর শাপমোচন

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাঙ্গালুরুর সেই দুঃস্বপ্নের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন তারা। মুহূর্তেই বিয়েবাড়ির আনন্দ থেকে শবযাত্রার উঠোনে রূপ নিয়েছিল বাংলাদেশের শিবির। লড়াই চলতে থাকা ম্যাচে তাদের ব্যাটেই জয়ের সুবাস পেয়েছিল টাইগাররা। উদ্বেলিত গোটা দেশও নিমিষেই হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয় মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ভুলে। জয়ের নায়কের মঞ্চ থেকে ছিটকে গিয়ে ‘ভিলেন’-এর চরিত্রে নাম উঠে যায় তাদের। দুই ভায়রা ভাইয়ের স্নায়ু ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতায় অবিশ্বাস্যভাবে ১ রানে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

তারপর থেকেই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর নামের পাশে ‘চাপের মুখে ব্যর্থ’ তকমাটা যোগ হয়ে যায়। গত তিন বছরে দু’জনই অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন বাংলাদেশকে, কঠিন পরিস্থিতিতে চাপকে জয় করেছেন, অসীম সাহসিকতায় লড়াই করেছেন। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে ব্যাঙ্গালুরুর ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি তাদের নাম। অবশেষে দিল্লিতে এসে ব্যাঙ্গালুরুর ক্ষততে প্রলেপ দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর দায়মোচনের স্বাক্ষর হয়েই থাকবে বাংলাদেশের এই জয়।

ইতিহাস এমনই হয়। ব্যাঙ্গালুরুর মতো এবার দিল্লিতেও ম্যাচের অন্তিমে ২২ গজে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। আস্কিং রান ক্রমশ বাড়ছিল, প্রয়োজন ছিল বিস্ফোরক কিছু। শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ২২ রান। উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান মুশফিক ছিলেন ৩৮ বলে ৪৩ রানে, মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ৩ বলে ৭ রান নিয়ে। খলিল আহমেদের করা ১৯তম ওভারের দুই বলে আসে দু’টি সিঙ্গেল। তারপরই বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। তৃতীয় বলেই পুল করে চার, চতুর্থ বলে স্কুপে চার। পঞ্চম বলে স্কয়ার ড্রাইভে চার। বদলে যায় দৃশ্যপট। এদিকে আবারও জয়ের তরী ডুবে যায় কি না, সেই আশঙ্কা ভর করে সবার মাঝে।

নাহ, মুশফিক খেই হারাননি। বরং মুন্সিয়ানা, পরিণত ব্যাটসম্যানের পরিচয় দিয়েছেন। শেষ বলেও এসেছে চার। টানা চার বাউন্ডারিতে কার্যত ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় ভারত। শেষ ওভারে ৩ বল খরচ করেই ৪ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। জয়সূচক ছক্কাটা মারেন মাহমুদউল্লাহ। সব মিলিয়ে দুই ভায়রা ভাই রাজ্যের অতৃপ্তি থেকে তৃপ্তির সাগরে অবগাহন করেন, যেখানে তাদের সঙ্গী হয় গোটা বাংলাদেশ। মুশফিক অপরাজিত ৪৩ বলে ৬০ রানে (৮ চার, ১ ছয়), মাহমুদউল্লাহ ৭ বলে অপরাজিত ১৫ রান করেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে মুশফিকের হাতে।

Image Source: Times of India

জয়ের পরও উদযাপন করেননি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। এত অপেক্ষা, এত প্রাণান্ত লড়াইয়ের পর ভারতের বিপক্ষে জয়। অথচ জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণে তাদের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলেছে, এ যেন হওয়ারই ছিল।

এটিই পরিণত দলের ছবি, যেখানে লুকিয়ে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর সফলতা, চাপ জয়ের নতুন প্রতিমূর্তি।

ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন মুশফিক

দিল্লিতে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মুশফিক। অবশ্য এই জয়টি সম্মিলিত চেষ্টার স্মারক বলতেই হবে। বোলার-ফিল্ডাররা ভারতকে ১৪৮ রানে আটকে ভিত গড়ে দিয়েছেন। সৌম্য সরকার, নাঈম শেখরা এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। মুশফিক একপ্রান্ত আগলে খেলে গেছেন। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে দারুণ ফিনিশ করেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।

অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনেও বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে ব্যাঙ্গালুরুর অতীত। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছেন, ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।

অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান বলেছেন,

‘এভাবে জিতলে কেউ মনে রাখে না। হেরে গেলে সবাই মনে রাখে… এমন যেকোনো খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে। ১০-১৫ বছরে এমন কিছু ম্যাচ আপনার ক্যারিয়ারে থাকতেই পারে। গত কয়েক বছরে আমি কিছু ম্যাচে শেষ পর্যন্ত থেকে জিতিয়েও ফিরেছি। সেগুলো আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। মানুষ ভুল করতেই পারে, তবে সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়াটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শেষ দিকে আমি আর রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) কথা বলেছিলাম। আমরা পরিষ্কার ছিলাম যে, কী করতে হবে। এবার আমরা ম্যাচ শেষ করতে পেরেছি। এটা ছিল আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার।’

Image Credit: Raton Gomes

ভারতের বিপক্ষে নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে ছিলেন মুশফিক। চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় লড়ে গেছেন ২২ গজে। তিনি বলেছেন,

‘বিশ্বকাপের ম্যাচ আর দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের ম্যাচ সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে যখন খেলবেন, তখন আপনি নিজেদের সেরাটা দিতে চাইবেন। আর এই সংস্করণে আমরা কখনো জিতিনি, আমাদের শুরু করাটা দরকার ছিল। সেই শুরুটা করতে পেরে আমরা অনেক খুশি। বিশ্বাস ছিল যে, আমরা ওদের হারাতে পারি। শেষ ওভারে আমাদের ৪ রান প্রয়োজন ছিল। আমি রিয়াদ ভাইকে (মাহমুদউল্লাহ) বলছিলাম, এক-দুই রান নিয়ে আমাদের ম্যাচটা জিততে হবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। এরপর রিয়াদ ভাই বাকিটা ভালোভাবে শেষ করেছে।’

মুশফিকের মতে, ব্যাঙ্গালুরুর ওই ম্যাচের চেয়ে দিল্লীর ম্যাচটি কঠিন ছিল। বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বলেছেন,

‘সেই ম্যাচে দুই ওভার আগেই আমরা জেতার মতো জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। আজকে (৩ নভেম্বর) কিন্তু এটা সহজ ছিল না। হয়তো উইকেট হাতে ছিল আজকে (৩ নভেম্বর), কিন্তু এই উইকেটে ১৪৮ রান তাড়া করা কঠিন ছিল। যদিও আমি সেট ব্যাটসম্যান ছিলাম, আমার জন্যও বাউন্ডারি বের করা সহজ ছিল না।’

নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, ব্যাঙ্গালুরুর স্মৃতি, সবই ছিল মুশফিকের মাথায়। তাই রয়েসয়েই এগিয়েছেন। শেষ ওভারেও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করেছেন করণীয় নিয়ে। মুশফিক বলেছেন,

‘নিদাহাস ট্রফি বা বিশ্বকাপ বলেন, অনেক ম্যাচেই আমরা খুব কাছে গিয়ে হেরেছি। আমাদের এবার একটা প্রতিজ্ঞা ছিল, ম্যাচ যদি ওইরকম ক্লোজে নিতে পারি, তাহলে সেখান থেকে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই। ওই মোমেন্টগুলো আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। ওই দুইটা ম্যাচের আমি অংশ ছিলাম। একটা ব্যাটিংয়ে, একটা ফিল্ডিংয়ে। এটাই আলোচনা করছিলাম, ওই জিনিসগুলো যেন আমরা ওভারকাম করতে পারি। এ কারণে শেষ ওভারের আগেও রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম, বড় শট না খেলে গ্যাপ কাজে লাগিয়ে এক-দুই নিয়ে খেলে আমরা যেন লক্ষ্যের কাছে যেতে পারি।’

Image Credit: MANJUNATH KIRAN / AFP

সেই ২০১৬, তিন বলে চৌচির বাংলাদেশের অন্তর

প্রথম রাউন্ডে নেদারল্যান্ডস, ওমানকে হারিয়ে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বের টিকিট পেয়েছিল বাংলাদেশ। এই পর্বের শুরুতে ‘বি’ গ্রুপে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। এর মাঝেই বড় আঘাত হয়ে আসে বোলিং অ্যাকশনের কারণে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির ছিটকে পড়ার খবর। বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচটার আগে বাংলাদেশ দলটা যেন বেদনাহত এক শিবির।

২৩ মার্চ, চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, আহত বাঘের থাবা কেমন হয়, তা আপন চৌহদ্দিতেই টের পেয়েছিল ভারত। ১৮ বছর পর ভারতের মাটিতে ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। বীরোচিত লড়াইয়ের পর জয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ এলো বলে! ১৮ বছরের অবজ্ঞার জবাব দেয়া হচ্ছিল মাত্র তিন ঘন্টায়। শেষ ৩ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ২ রান। নীরব, নিথর তখন চিন্নাস্বামীর গ্যালারি।

তারপরের সময়টা তো বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো দুঃস্বপ্ন বয়ে আনল। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মতো নির্ভরতার প্রতীকের আত্মাহুতিতে ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল দৃশ্যপট। চিন্নাস্বামীতে উপস্থিত দর্শকদের (পড়ুন, গোটা ভারত) হৃৎকম্পন জায়গা নিল ১৬ কোটি বাঙালির অন্তরে। তাদের ক্ষণিকের অসতর্কতা কষ্টের চোরাস্রোত বইয়ে দিল বাংলাদেশের অলিগলিতে। বেদনায় নীল হলো বাংলাদেশ, অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটা ১ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ দল।

Image Credit: DANISH SIDDIQUI

ম্যাচটার পরদিনই ছিল ভারতের জাতীয় হোলি উৎসব। ধোনি-পান্ডিয়াদের এই উৎসব পণ্ড করে দেয়ার পথেই ছিলেন মুশফিকরা। শেষ পর্যন্ত তাদের ভুলেই প্রায় দেড়শ’ কোটির ভারতে হোলি উৎসবের পূর্ণতা পায় রূদ্ধশ্বাস এক জয়ে।

প্রথমে ব্যাট করে ছোট ছোট কয়েকটি ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেটে ১৪৬ রান তুলেছিল ভারত। জবাবে ৯ উইকেটে ১৪৫ রান করতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ।

বুমরাহ’র ১৯তম ওভারে এসেছিল ৬ রান। শেষ ৬ বলে ১১ দরকার রান। পান্ডিয়ার করা প্রথম বলে সিঙ্গেল, পরের দুই বলে দুটি চার। মুশফিকের মারা ওই দুই চারই স্নায়ুক্ষয়ী সমীকরণটা সহজ করে দেয়, ৩ বলে ২ রান। বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করার প্রয়াসে চতুর্থ বলে তুলে মারেন মুশফিক। বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন তিনি, ৬ বলে ১১ রান করেন এর আগে। বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই পরের বলে মাহমুদউল্লাহও (১৮) বাউন্ডারিতে ক্যাচ দেন। মুহূর্তেই গগণবিদারী চিৎকারে জেগে ওঠে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। ঘোর লাগা অবিশ্বাসে মাঠের দৃশ্যে চোখ রাখছিলেন তখন স্টেডিয়ামে থাকা বাংলাদেশিরা।

পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে জয়ের জন্য প্রয়োজন ১ বলে ২ রান। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হলেও অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পান্ডিয়ার করা শেষ বলটা ব্যাটেই লাগাতে পারেননি শুভাগত। ধোনির হাতে বল জমার পরও রান নিতে ছোটেন মুস্তাফিজ। তিনি রাউট হলে সুপার ওভারের সম্ভাবনাও শেষ হয়। অবিশ্বাস্য ৩ বলের নাটকীয়তায় হেরে যায় বাংলাদেশ।

Image Credit: AFP

যেন সর্বত্র হৃদয় পোড়ার গন্ধ। জয় কত কাছে, তবু এত দূরে। এত কাছাকাছি এসেও এইভাবে ম্যাচ হারা যায়, তা কল্পনাতীত ছিল সবার কাছে। ভারতকে হারানোর এক স্বপ্নের অপমৃত্যু হয় দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ভুলে। দুর্ভাগ্যের হারই সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। আরেকটি হৃদয় এফোঁড়-ওফোঁড় করা পরাজয় কাঁদাল বাংলাদেশকে। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর সেই তিক্ততা, হৃদয় পোড়ার ক্ষততে তৃপ্তির প্রলেপ লাগাতে সক্ষম হয়েছে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ।

বেঙ্গালুরুতে সফল না হলেও এবার দিল্লীতে শাপমোচনের কাজটা সেরেছেন তারা। শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করে জয়ের সূর্য দেখেই ২২ গজ ছেড়েছেন ভায়রা ভাইয়েরা।

ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ

১) মাশরাফি
২) কাছের ক্রিকেট দূরের ক্রিকেট
৩) ক্রিকেট অভিধান

This article is in bangla language. It is about the change of the course of time conducted by Mushfiqur Rahim and Mahmudullah in T20 format. They made a mistake in the T20 world cup by failing to manage 2 runs from 3 balls, hence cost Bangladesh the match. On the top of that, Mushfiq got bullied because of his premature celebration. But as the time passed, both of them evolved in accordance with their previous experiences. They sailed the boat this time.

Image Credit: AFP

Related Articles