“তোমার আমার বিয়ের কথা রাখব নাকো গোপন, জানুক জানুক দেশবাসী, জানুক সর্বজন।”
বিয়ে একটা সামাজিক স্বীকৃতি বন্ধন। প্রত্যেকের জীবনেই বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন থাকে। কেউ বিয়ে করে ঘরোয়াভাবে, কেউ বা করে দেশবাসীকে জানিয়ে। চোখ নিমিষেই কপালে উঠে যাবে কারো কারো বিয়েতে খরচের পরিমাণ জেনে। খরচের তালিকা আকাশছোঁয়া হলেও অনেকেরই দাম্পত্য জীবন টেকেনি ১ বছরও।
তেমনই কিছু উল্লেখযোগ্য বিয়ের বর্ণনা দেয়া হলো।
ডায়ানা – প্রিন্স চার্লস
১৯৮১ সালে ডায়ানা এবং প্রিন্স চার্লসের রাজকীয় বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে খরচ হয় ১১০ মিলিয়ন ডলার। বিয়েতে ডায়ানার গাউনটি ডেকে দেয়া হয় ছোট সিকুইন এবং ১০ হাজার মুক্তার সমন্বয়ে। ডায়ানার বিয়ের পোশাকটি বানাতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩ মাস এবং খরচ পড়েছিল ৯০০০ পাউন্ড । অনিন্দ্য সুন্দর মুখশ্রী, সমাজসেবামূলক কাজের জন্য অচিরেই সকলের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেন ডায়ানা। ১৯৮১ সালের এই বিয়েতে উপস্থিত ছিল প্রায় ৩৫০০ জন মানুষ এবং সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বের ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ টিভি পর্দায় এই বিয়ের সাক্ষী হয়। ব্রিটিশ নিয়মের বাইরে গিয়ে ডায়ানা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছেন। রাজকীয় এই বিয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৯৬ সালে এই বিয়ের ইতি ঘটে!
প্রিন্স উইলিয়াম – কেট
২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়াম এবং কেট মিডলটনের বিয়ে হয়েছিল অতিমাত্রায় রাজকীয় স্টাইলে। ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে এই বিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। বিয়েতে আমন্ত্রিত হয়ে প্রায় ২০০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। উচ্চশিক্ষিত, আর্মি অফিসার, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাইলটসহ নানা গুণে গুণান্বিত এবং সফল প্রিন্স উইলিয়াম। পারিবারিক জীবনেও এখন পর্যন্ত সফল উইলিয়াম-কেট দম্পতী। ব্রিটিশ এই রাজপরিবারে গত সাড়ে তিনশো বছরের মধ্যে উত্তরাধিকার হিসাবে সাধারণ পরিবার থেকে প্রথম এসেছেন কেট মিডলটন । তাদের ঘর আলো করে ২০১২ সালে প্রিন্স জর্জ এবং ২০১৫ সালে প্রিন্সেস শার্লট জন্মগ্রহণ করেন।
প্রিন্স হ্যারি – মেগান মার্কল
৩ বছরের বড় প্রেয়সীর সাথে প্রেমের শুভ পরিণতি ঘটিয়ে এ বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে ১৯ মে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন প্রিন্স হ্যারি এবং মার্কিন টিভি সিরিয়াল ‘স্যুটস’ এর অভিনেত্রী মেগান মার্কেল। রাজকীয় এই বিয়েতে খরচ হয় প্রায় ৩২৫ কোটি পাউন্ড। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন ৬০০ জন অতিথি। রিসিপশনে আরো ২০০ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন। ১২০০ সাধারণ অতিথির জন্য আয়োজনের করা হয় উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠে। বিয়েতে তৈরি করা কেকের খরচ পড়ে ৫০ হাজার পাউন্ড। রাজপরিবারের নিজস্ব ক্রাউন এস্টেট আর উইন্ডসর গ্রেট থেকে সংগ্রহ করা ফুলের জন্য খরচ পড়ে ১ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড। খাওয়া দাওয়ার জন্য খরচ হয় ৩ লাখ পাউন্ড। পোশাকের জন্য খরচ হয় ৩ লাখ পাউন্ড। মেগানকে সাজাতে খরচ হয় ১০ হাজার পাউন্ড। বিয়ের আংটির জন্য খরচ হয় ৬ হাজার পাউন্ড।
এই বিয়ের জন্য প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কল দুজনকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেখার বিষয়, এই দম্পতি কতদিন একসাথে থাকতে পারেন।
ভানিশা মিত্তাল – অমিত ভাটিয়া
নিজের সন্তানের বিয়ে ধুমধাম করে পালন করতে কৃপণতা করেন না কোনো বাবাই। তার উপরের তিনি যদি হন অন্যতম ধনীদের একজন, তাহলে সেই বিয়ে তো রাজকীয়ভাবেই হবে। ভারতের ধনী ব্যবসায়ী লক্ষী মিত্তালের মেয়ে ভানিশা মিত্তালের বিয়েতে খরচ করা হয় ৬৬ মিলিয়ন ডলার। বিশ্বে ভারতীয় এই বিয়ের খরচ এখন পর্যন্ত খরচের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে বিশ্বরেকর্ড করেছে। খরচের দিক দিয়ে কোনো কমতি রাখেননি লক্ষী মিত্তাল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনেক তারকাই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। বিয়েতে মাত্র আধা ঘন্টা পারফর্মেন্স করেন কেলি মিনোগুর। সেজন্য লক্ষী মিত্তালকে গুনতে হয় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলার। রাখা হয়েছিল আইফেল টাওয়ারের উপর বিশেষ আতশবাজির প্রদর্শনী। এত আড়ম্বরের সাথে আয়োজন করা এই বিয়ে ২০১৩ সালে ভেঙ্গে যায়।
বিক্রম ছাত্তাল – প্রিভা সাদকে
২০০৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি মুম্বাই, দিল্লি এবং উদয়পুরে অনুষ্ঠিত হয় আরো একটি ব্যয়বহুল বিয়ে। তিন জায়গায় একযোগে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। ১০ দিন ধরে চলতে থাকে ব্যয়বহুল এই বিয়ের অনুষ্ঠান। পাত্রের নিউ ইয়র্ক ব্যবসায়ী এবং জেট সেটিং এর হোটেলিয়ার বাবা ছেলের বিয়েতে খরচ করে রেকর্ড গড়েছেন। বিয়েতে খরচ হয় ২০ মিলিয়ন ডলার। ভারতের ব্যয়বহুল বিয়ের তালিকায় বিক্রম ছাত্তাল এবং প্রিভা সাদকের বিয়ে শীর্ষস্থানে আছে। প্রিভা সাদকে একাধারে মডেল, অভিনেত্রী এবং ব্যাংকের বিনিয়োগকারী। দেশ এবং দেশের বাইরে থেকে অসংখ্য মানুষ এই বিয়েতে অংশগ্রহণ করেন। হলিউড, বলিউডের অনেক নামী তারকারাও অংশগ্রহণ করেন এই বিয়েতে। তবে এই বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বিল ক্লিনটন। অতিথিদের আনা-নেয়ার কাজে প্রাইভেট জেট বিমান থাকায় খরচের অঙ্কটা এত বিশাল।
ওয়েন রুনি – কলিন ম্যাক লগলিন
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং ইংল্যান্ড ন্যাশনাল টিমের অধিনায়ক হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন ওয়েন রুনি। ২০০৮ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত হয় এই বিয়ে। যেখানে খরচ হয় প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার। ভালো খেলা দিয়ে শক্ত অবস্থান গড়ার পাশাপাশি যেমন রেকর্ডও করেছেন, বিয়ের খরচে তাক লাগিয়েও রেকর্ড করেছেন। করেছেন রাজকীয় বিয়ে। অতিথিদের জেট বিমানে করে নিজ খরচে আনা-নেয়া করতে ওয়েন রুনিকে গুনতে হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ৫টি জেট বিমান ব্যবহার করা হয় এই বিয়েতে। ৬৪ জন ভিআইপি গেস্টের জন্য ছিল এই মহা আয়োজন। রাজকীয় এই বিয়ের যাবতীয় খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হয় তাকে। আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে একটি ম্যাগাজিন। ম্যাগাজিনটি ওয়েন এবং কলিনের বিয়ের ছবি কিনে নেয়। বর্তমানে ওয়েন রুনি এবং কলিন ম্যাক দম্পতি দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন।
চেলসি ক্লিনটন – মার্ক মেজভিনস্কি
চেলসি ক্লিনটন হলেন বিল ক্লিনটনের মেয়ে। আয়েশিতে যার জন্ম তার সবকিছুই আয়েশি, ব্যয়বহুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। তার উপর আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের মেয়ে, বিলাসিতা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যায় না। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা চেলসির সাথে পাত্র মার্ক মেজভিনস্কি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকারের বিয়ে হয়। ২০১০ সালে হাডসন নদীর পাশে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে উপলক্ষে নদীর পাড়ে সাদা রংয়ের এক বিশাল তাবু স্থাপন করা হয়। সেখানে প্রায় ৫০০ অতিথি যোগ দেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিয়েতে খরচ হয় ৫ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে চেলসি ক্লিনটন এবং মার্ক মেজভিনস্কি সন্তানসহ একসাথে সংসার করছেন।
লিজা মিনালি – ডেভিড গেস্ট
গায়কিতে তুমুল জনপ্রিয় হালের সেনসেশন লিজা মিনালি ২০০২ সালে বিয়ে করেন। পাত্র ডেভিড গেস্টও বহুগুণে গুণান্বিত। আমেরিকান এন্টারটেইনার, কমেডিয়ান, প্রডিউসার, টেলিভিশন পারসোনালিটি হিসাবে জনপ্রিয় ডেভিড গেস্ট। এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন তুমুল জনপ্রিয় হালের সেনসেশন মাইকেল জ্যাকসন। তিনি একাই নন, সাথে তার পাঁচ ভাইবোনও উপস্থিত ছিলেন এই বিয়েতে। গিটারের রানী বলা যায় যাকে, সেই ব্রেন মে, লিয়াম নিসন, জন কলিন্স, গ্লোরিয়া গেইনর, মিয়া ফ্যারোও ছিলেন অতিথিদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে। আলোচিত এই বিয়ের ইতি ঘটে খুব দ্রুত! বিয়ের মাত্র ১ বছরের মধ্যেই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তবে এটা শেষ হতেও সময় লাগে প্রায় ৫ বছর। এই ডিভোর্স হলিউডে ঘৃণ্যতম ডিভোর্স হিসাবে পরিচিত লাভ করে। ডেভিড গেস্ট অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী লিজা মিনালি অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে তাকে মারধর করেন।
ফিচার ইমেজ – pexels.com