Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রক এন রোল: বিশ্ব সঙ্গীতের জনপ্রিয় এক ধারা

সারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় সঙ্গীতের ধারা রক এন রোল। জনপ্রিয় এই সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ১৯৫১ সালে গায়ক অ্যালান ফ্রিড প্রথম এই শব্দ তিনটি ব্যবহার করেন। প্রথমদিকে রেস মিউজিক এবং নির্দিষ্ট ঘরানার মানুষদের মধ্যে এই সঙ্গীত পরিচিতি পেলেও পরবর্তীতে তা সার্বজনীনতায় রূপ নেয়।

 ব্লুজ, গসপেল, রিদম এবং কালোদের অন্যান্য সঙ্গীতের নানা ধারা এসে যুক্ত হয়েছে এই রক এন রোল সঙ্গীতে। এই সঙ্গীত কালোদের সঙ্গীত থেকে বের হয়ে কীভাবে সারা বিশ্বের সঙ্গীতপ্রেমিক মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হলো তার পেছনে রয়েছে এক চমৎকার কাহিনী।

২৭ বছর বয়সী মার্কিন যুবক বিল হ্যালি গিটার বাজাতে খুব ভালবাসতেন। তিনি এবং তার ছয়জন সঙ্গীকে নিয়ে তৈরি করলেন গানের এক দল ‘কমেট’। ছোট্ট একটি গানের দল। ১৯৫৪ সালের ১২ এপ্রিল  তাদের গানের একটি রেকর্ড বের করার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কে সমবেত হলো দলটি। তাদের রেকর্ড করা গানটির নাম ছিল ‘রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক’।

বিল হ্যালি ও তার গানের দল কমেট; Image source: Comet Over Hollywood

গানের দল থাকলেই এ ধরনের গানের রেকর্ড বের করার চল তখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। আপাতদৃষ্টিতে সামান্য ঘটনা মনে হলেও, সেই সামান্য ঘটনাটিই যে পরবর্তীতে অসামান্য এক সঙ্গীতের জন্ম দেবে কেউ কি তখন ভাবতে পেরেছিল?

এই গানই একদিন পৃথিবী জয় করবে সেই সময় তা ছিল ধারণারও অতীত। ১৯৫৬ সালের মধ্যেই এই গান ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে। এতদিন সবাই মনে করতো, এই গান তো একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষেরাই গেয়ে থাকে। মূলত কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গ ও ইহুদির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এই সঙ্গীত। আর তাই এই গান ছিল অন্য সকলের কাছে অস্পৃশ্য। কিন্তু সঙ্গীতকে তো আর দেশ, কাল, ভাষা দিয়ে আটকে রাখার বিষয় না। সে তো সার্বজনীন। সঙ্গীতের ভাষা আন্তর্জাতিক। 

প্রথমদিকে সবাই খুব একটা পাত্তা দেয়নি হ্যালির গানের দলটিকে। অনেকটা অবজ্ঞার চোখেই দেখতো গ্রুপটিকে। নাক সিঁটকে ছিলেন বাঘা-বাঘা সব গায়ক, সঙ্গীতজ্ঞ থেকে সঙ্গীত সমালোচক। এদের গানকে বলা হতো ‘রেস মিউজিক’, অর্থাৎ যা কি না নিজেদের জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তখন এদের গান বলতে লোকে বুঝতো কালো মানুষের সঙ্গীত।

বিল হ্যালির যুবক বয়সে তোলা ছবি; Image source: d4haley.com

সাধারণ এদের গানের লিরিকগুলো খুব সহজ, সরল। গানগুলোতে দুটি শব্দের ওপর জোর দেওয়া হতো- ‘রক’ এবং ‘রোল’। প্রথমদিকে শব্দ দুটি ব্যবহারের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জনা ছিল না। ছিল না কোনো যোগাযোগ। এই দুটি শব্দের একটানা উচ্চারণের মধ্যে যে ছন্দ রয়েছে, তাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হতো এই সময়ের গানগুলোতে। এই ছোট শব্দ দুটিকে প্রথম একই যোগসূত্রে এনেছিলেন অ্যালান ফ্রিড। এতদিন পর্যন্ত যা ছিল শুধু কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গীত, তাকেই একটা জোরালো নাম দিয়ে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে জনপ্রিয় করতে চাইলেন অ্যালান।

তিনি স্বপ্ন দেখতেন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই সঙ্গীত। আকস্মিকভাবেই সঙ্গীতের জগতে এসে পড়েছিলেন অ্যালান। পঞ্চাশের দশকের প্রথমদিকে খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। একদিন রাস্তায় একটি জনপ্রিয় গান গাইতে গাইতে একজন গায়ক অসুস্থ হয়ে পড়ায় ফ্রিড আকস্মিকভাবে তার জায়গাটি দখল করে নেন। একটি গিটার হাতে নিয়ে সুরে ও ছন্দে মাতিয়ে দিয়েছিলেন পথচলতি মানুষদের। তার গানগুলো ছোট-বড় সকলেরই সমান প্রিয়। বিং ক্রসবি, ন্যাট কোল এবং ফ্র্যাঙ্ক সিনাত্রার মতো গায়কেরাও এই গানগুলো গেয়েছিলেন। এরপর ফ্রিড চলে এলেন ক্লিভল্যান্ডে।

হঠাৎ একদিন সেই শহরের সবচেয়ে বড় রেকর্ডিং কোম্পানির মালিক লিও মিনর্জের ডাক পড়লো। তার পৃষ্টপোষকতায় ফ্রিড রেকর্ড করলেন তার প্রথম গান। তিনি তার রেকর্ডকৃত গানগুলোকে পরিচিত করতে চাইলেন নতুন এক সঙ্গীতের ধারা হিসেবে, যার নাম দিলেন ‘রক-এন-রোল’। কালক্রমে এই তিনটি শব্দ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের কাছে।

অ্যালান ফ্রিড যিনি রক এন রোল নামটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন; Image source: wakr.net

ফ্রিড হয়ে উঠলেন জনপ্রিয় গায়কদের একজন। অবশ্য বিখ্যাত নামটির কপিরাইটের জন্য একটি পয়সাও দাবি করেননি তিনি। কিন্তু কয়েকটি রেকর্ড কোম্পানি তাকে এর বিনিময়ে কিছু পারিশ্রমিক দিয়েছিল। বিনিময়ে এই কোম্পানিগুলো ব্যবহার করতো রক-এন-রোল নামটি। এটাই হয়ে উঠলো নতুন প্রজন্মের প্রিয় সঙ্গীত।

গান গাইবার সময় মাইক্রোফোন ব্যবহার করার পক্ষপাতী ছিলেন না ফ্রিড। বিচিত্র ভঙ্গিমায় হাত-পা নেড়ে দর্শকদের তার সঙ্গে গলা মেলাতে আহ্বান জানাতেন তিনি। ‘গো ম্যান গো’ এই ছিল তার প্রিয় স্লোগান। গানের সাথে নাচতেন। এভাবে রক-এন-রোলের অনুষ্ঠানগুলো জমিয়ে তুলেছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে নিউইয়র্কে ঢুকে পড়লো রক-এন-রোল। সেই বছরেই বেরিয়েছে ‘রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক’। বিল হ্যালির রেকর্ড। রক সঙ্গীত জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। কিন্তু গায়কেরা তখনও কৃষ্ণাঙ্গ। অ্যালানই এই সঙ্গীতের প্রথম শ্বেতাঙ্গ গায়ক।

রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক গানটি প্রথম শোনা গেল ‘দ্য ব্ল্যাকবোর্ড জাঙ্গল’ ছবিতে। স্কুল জীবনে তরুণদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনই ছিল ছবিটির উপজীব্য। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পেল ছবিটা। তবে তরুণ-তরুণীদের বিদ্রোহের হাতিয়ার হয়ে ওঠার জন্য  আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হলো রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লককে।

১৯৫৬ সালে একটি অতি সাধারণ ছবি মুক্তি পেল রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক নাম নিয়ে। এই ছবিতেই প্রথম ঐক্যবদ্ধ হলেন অ্যালান ফ্রিড এবং বিল হ্যালি। শুধু সঙ্গীতের জোরেই সাধারণ মানের ছবিটি সুপারহিট হলো। অপেক্ষার শেষ। শুরু হলো পৃথিবীর সঙ্গীত ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রক-এন-রোল।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক চলচ্চিত্রেরর প্রচ্ছদ ; Image source: imdb.com

আজ থেকে ৬৬ বছর আগে ১৯৫২ সিালের ২১ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের প্রথম রক-এন-রোল কনসার্ট। মুনডগ করোনেশন বল, নামে এই কনসার্টের টিকেটের দাম ছিল ১ ডলার ৫০ সেন্ট। এতে অন্যান্যদের সাথে গান করেছিলেন অ্যালান ফ্রিড, পল উইলিয়ামসের মতো তারকা শিল্পীরা এবং তাদের দল।

রথম রক অ্যান্ড রোল কনসারর্টে গান পরিবেশন করছেন অ্যালান ফ্রিড ; Image source: Getty Images

ওই অনুষ্ঠানের এত টিকিট বিক্রি হয়েছিল যে সবাইকে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ঢুকতে দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রথম সেই অনুষ্ঠানে দেখা গেল এই গান শোনার জন্য কালোদের সাথে সাথে শ্বেতাঙ্গ যুবকদের ভিড়, যা দেখে আয়োজকরাও অবাক বনে যান। এই ঘটনার পরের দিন ক্লিভল্যান্ডের স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হয় বিশাল প্রচ্ছদ “Big Bang of rock’n’roll”। তবে অনুষ্ঠানটি খুব শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হতে পারেনি। 

রক এন রোলের জনপ্রিয় শিল্পী চাক বেরি; Image source: Getty Imageslauniondigital.com.ar

ধীরে ধীরে ‘রক-এন-রোল’ নামটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। পরবর্তীতে এই সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার পেছনে কালোদের মধ্যে ফ্যাট ডমিনো, লিটল রিচার্ড, চাক বেরি এবং শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে বো ডিডলি, বডি হোলি, এডি কোচারান এবং জেরি লি লুইস নামগুলোর বিশেষ অবদান রয়েছে। সারা বিশ্বের সঙ্গীত প্রিয় মানুষদের কাছে আলোড়ন সৃষ্টি করে এই সঙ্গীত। এর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা বর্তমান সঙ্গীত জগতে তাই আজও অমলিন।

ফিচার ইমেজ- Under30CEO.com

Related Articles