Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অদ্ভুত সব জাপানি খাবার

পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে খাবারের ধরন বিভিন্ন রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু অঞ্চল বা সংস্কৃতির মানুষ যেমন বহুল মশলা সমৃদ্ধ খাবারে অভ্যস্ত আবার অন্যদিকে দেখা যায় কেউ কেউ আবার খাবারের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ ও নমনীয় ব্যাপারই বেশি প্রাধান্য দেয়। এটা সত্যি যে পুরো পৃথিবীতে জাপানিরাই খাবারের ক্ষেত্রে খুব দুঃসাহসিক এবং অদ্ভুত সব আইডিয়ার দাবিদার।

নিখুঁত স্থাপত্য শিল্প, উন্নত প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত জাপান। অদ্ভুত গেম শো, কালারফুল এনিম, উদ্ভট সব গ্যাজেট সহ আরও নানাদিক দিয়ে জাপান অনন্য। একইভাবে জাপানি খাবারও আর সব দেশ ও তাদের কালচারের তুলনায় বেশ চটকদার ও উদ্ভট। জাপানি শেফরা তাদের ফিউশন রন্ধনপ্রণালির জন্য কুখ্যাত, এরা নিজেদের রন্ধনশিল্পের সঙ্গে বিশ্বের অন্য সব খাবারের সমন্বয় সাধন করে চলেছেন। আসুন, পরিচিত হই এমনই কিছু জাপানি খাবারের সাথে।

ড্যান্সিং স্কুইড

জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় ডিশ। দেখে মনে হবে স্কুইড এখনো জীবিত আছে কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে স্কুইড আগেই মারা গেছে। যখন আপনি স্কুইডের উপর সয়া সস ঢালবেন, সাথে সাথেই স্কুইড লাফাতে শুরু করবে। কারণ স্কুইড মারা গেছে বেশিক্ষণ হয়নি। মারা গেলেও এর শরীরের কোষগুলো তখনো সক্রিয়। ফলে সয়া সসের মধ্যে থাকা লবণ স্কুইডের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে বিক্রিয়া করা শুরু হয়। যার কারণে মৃত স্কুইড লাফাতে শুরু করে।

ড্যান্সিং স্কুইড পরিবেশন; সোর্স- bravotv.com

এই ড্যান্সিং স্কুইড অনলাইনে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেকে এটাকে ‘অ্যানিম্যাল ক্রুয়েল্টি’ বলে অভিযোগ করেন। তবে রান্না করার প্রক্রিয়াতেই স্কুইডের মস্তিষ্ক সরিয়ে ফেলা হয়। তাই পরিবেশনকালীন সময়ে সয়া সসের সংস্পর্শে আসার পর স্কুইড কোনো ব্যথা অনুভব করে না। 

হাবুসু 

একবার শুধু ভাবুন, আপনার সামনে বোতল ভর্তি পানীয় এবং সেই পানীয়ের মধ্যে কুণ্ডলী পাকানো সাপ দেখা যাচ্ছে! এখন আপনাকে দারুণ আপ্যায়ন করে বোতল থেকে সেই পানীয় গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করা হল। কী করবেন? পালাবেন নাকি খানিকটা চেখে দেখবেন এই অদ্ভুত আর ভয়ঙ্কর পানীয়টি?

flickr.com
বোতলজাত অবস্থায় হাবুসু; Source: flickr.com

হাবুসু হচ্ছে সেই পানীয় যার বোতলে আস্ত বিষাক্ত ভাইপার সাপ ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষের ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত হবেন না, পানীয়ের অ্যালকোহল সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই উদ্ভট পানীয়ের জনপ্রিয়তা জাপান ছাড়িয়ে চীন, ফিলিপাইনস এবং দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইপার সাপ দীর্ঘদিন (প্রায় একবছর) না খেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সক্ষম এবং এদের সঙ্গমকাল সুদীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বলে বিশ্বাস করা হয় হাবুসু পান করলে শরীরে শক্তি বাড়ে ও যৌন অক্ষমতা  দূর করে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

হাবুসু প্রস্তুতকারীরা অনেক সময় বাজারজাত করার আগেই বোতল থেকে সাপ বের করে ফেলে, আবার কোনো কোনো দুঃসাহসী সুরা-প্রস্তুতকারী সাপ বোতলে রেখে দেন যেন সবাই দেখতে পারে। হাবুসু প্রস্তুতকারীরা বোতলে ভাইপার প্রায় এক মাস সময় ধরে রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে এতে আর অন্যান্য উপাদান যোগ করে। এতে করে সাপের বিষ আর অনাকাঙ্ক্ষিত গন্ধ পানীয় থেকে চলে যায়।

সী গ্রেপস

একে অনেকে আবার ‘গ্রিন ক্যাভিয়ার’ নামেও চেনে। এরা আসলে এক প্রকার সী উইড। জাপানে এটি ইউমিবুদো নামেই পরিচিত। জাপানের দক্ষিণে ওকিনাওয়া আইল্যান্ডের অগভীর পানিতে সবুজ গোলাকৃতির শাওলা উৎপন্ন হয়। এই খাবারটি সাধারণত কাঁচা অবস্থায় সালাদ হিসেবে খাওয়া হয় পনজু সসের সাথে। খুব ছোট সবুজ বাবলের মতো দেখতে এই সী গ্রেপস মুখে দিয়ে চাবালেই মুখের মধ্যে লবণ স্বাদযুক্ত অনুভূতি পাবেন। জাপানী শেফরা বিভিন্ন ধরণের সী-ফুড প্রস্তুত করতেও এই সী উইড ব্যবহার করেন। যেমন স্মোকড স্যামন ব্লিনি এবং টুনা সাশিমিতে সী গ্রেপস-এর ব্যবহার হয়।

mensoregirl.com
সী গ্রেপস; Source: mensoregirl.com

এই সী গ্রেপসে উচ্চ পুষ্টিমানও আছে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা -3, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থ। তবে কিছু গবেষণায় জানানো হয়, সী গ্রেপসে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকে। যা সম্ভাব্য বিষাক্ততার দিকে ইঙ্গিত করে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এই সী উইডের জনপ্রিয়তা আছে। ফিলিপাইন্স ও মালয়েশিয়ার খাবারের মেন্যুতে নিয়মিতভাবে এর উপস্থিতি দেখা যায়।

হাচিনোকো

জাপানের বার-গুলোর অন্যতম জনপ্রিয় স্ন্যাক্স হচ্ছে হাচিনোকো। হাচিনোকো হচ্ছে তেলে ভাজা মুড়মুড়ে মৌমাছির শূককীট। শূককীট হলো মৌমাছির বাচ্চা। দারুণ মুড়মুড়ে ও মজাদার স্বাদের জন্য মৌমাছির শূককীট সয়া সস ও চিনি দিয়ে ভাজা হয়। হাচিনোকো খাওয়ার সবচেয়ে চমৎকার উপায় হচ্ছে বিয়ারের সাথে। এই মুচমুচে বাচ্চা মৌমাছি ভাজা খেতে যদি মন আঁকুপাঁকু করে তাহলে জাপানে গেলে ওখানকার বারে খোঁজ নিতে ভুলবেন না।

latifundist.com
খাবার হিসেবে সাজানো মৌমাছির শূককীট; Source: latifundist.com

ফুগু

খাবারের মেন্যুতে ফুগু যুক্ত করা যে সে ব্যাপার নয়। যদি কোনো শেফ ফুগু পরিবেশন করতে চান, তাহলে তাকে সবার আগে এই খাবার বানানো ও পরিবেশনের জন্য লাইসেন্স নিতে হবে। কারণ এটি টেট্রোডোটক্সিন (Tetrodotoxin) সমৃদ্ধ বিষাক্ত পাফার মাছ। সাইনাইডের তুলনায় ১২০০ গুণ মারাত্মক। এই মাছের ত্বক ও অঙ্গ সব বিষাক্ত। তাই শুধুমাত্র যোগ্যতাসম্পন্ন শেফই ফুগু প্রস্তুত করতে পারবে। অন্যথা নয়।  স্বাস্থ্য ঝুঁকি সত্ত্বেও, মানুষ প্রতিবছর প্রায় দশ হাজার ফুগু খায়। 

civilized.life
বিষাক্ত ফুগু; সোর্স- civilized.life

শিরোও নো ওদোরিগু

বেশিরভাগ মানুষই চাই তাদের খাবার খাওয়ার আগে মৃত হোক। তবে যারা এই খাবারটি খেতে ভালোবাসে  তাদের  ক্ষেত্রে  ব্যাপার  উল্টো। Shirouo এর মানে হচ্ছে ছোট স্বচ্ছ ধরনের মাছ। আর Odorigui এর মানে হচ্ছে যা খাওয়ার সময় দারুণ নড়াচড়া করে। ড্যান্সিং স্কুইডের পর জাপানীদের জন্য এটি আরও একটি খাবার যেটা খাওয়ার সময় মুখের মধ্যে লাফালাফি করে।

একটি বাটিতে ভিনেগার, মাছ এবং একটা ডিম ফেটে কুসুমটা দিয়ে দিন, ব্যাস আপনার খাবার রেডি!

viralthread.com
Shirouo no Odorigui; Source: viralthread.com

বাসাসি

বাসাসি জাপানিদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়। তবে ঘোড়া প্রেমিদের এই খাবারটি থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়। কবে থেকে বাসাসি খাওয়ার প্রচলন শুরু হয় তা নিয়ে বেশ গুজব আছে। কেউ কেউ বলেন এটি প্রথম খায় সামুরাইরা। যখন ১৮৭৭ সালে যুদ্ধাবস্থায় কাইয়োসুতে আটকা পড়েন তখন ঘোড়ার কাঁচা মাংস সামুরাইরা প্রথম খান। যুদ্ধরত সৈন্যরা দীর্ঘ ৫৩ দিন আটকা পড়ে থাকেন এবং জীবন বাঁচানোর তাগিতে ঘোড়ার মাংস খেতে বাধ্য হন। সাধারণত বাসাসি ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করা হয় সয়া সস, রসুন ও ওয়াসাবির সাথে। জাপানীরা বাসাসি দিয়ে ডেজার্টও  তৈরি করেন যেমন, বাসাসি আইসক্রিম।

flickr.com
কাঁচা ঘোড়ার মাংস; Source: flickr.com

যাযামুসি 

জাপানিদের আরেকটি মোটামুটি উদ্ভট কিন্তু জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে যাযামুসি, যা সমুদ্রের তীরবর্তী পোকামাকড় দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। যাযামুসি নামটির আক্ষরিক অনুবাদ হচ্ছে, mushi অর্থাৎ  পোকামাকড়  এমন স্থানে বসবাস করে যেখানে zaazaa অর্থাৎ পানির প্রবাহের শব্দ হয়। যাযামুসি একক কোনো পোকামাকড়ের নাম নয়, বরং সমুদ্রের পাড়ে যে সমস্ত পোকামাকড় পাওয়া যায় তার সবই। এই খাবার যেমন রেস্টুরেন্টে পাবেন ঠিক তেমন গ্রোসারি শপগুলোতে ক্যান আকারে কিনতেও পাবেন। 

eattheweeds.com
প্রস্তুতকৃত যাযামুসি; Source: eattheweeds.com

ফিচার ইমেজ- seriouseats.com

Related Articles