Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লুকা মদ্রিচ কি পারবেন জিদান হতে?

সেবারও পরিস্থিতি অনেকটা এমনই ছিল। পরপর ২ বার ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে রোনালদো ১৯৯৮ বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা তৃতীয় বারের মতো ফিফা বর্ষসেরা হবার সম্ভাবনা নিয়ে। সিজনে ৪৭ ম্যাচে ৩৪ টি গোল, ইতালিয়ান লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা (২৫টি), এর সাথে উয়েফা কাপ ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার সহ চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপে গিয়েছেন দুর্দান্ত ব্রাজিল দলের মূল খেলোয়াড় হিসেবে– সব মিলিয়ে সম্ভাবনার পাল্লাটা তার দিকেই বেশি ছিল।

টুর্নামেন্ট সেরা হলেও ফাইনালের ব্যর্থতা রোনালদোকে পিছিয়ে দিয়েছিলো; Image Source: Ronaldo-98

সম্ভাবনার তালিকায় রোনালদোর কাছাকাছি যিনি ছিলেন তিনি হচ্ছেন ইতালির দেল পিয়েরো। জুভেন্টাসের হয়ে সেই বছর তিনি জিতেছিলেন ইতালিয়ান লীগ। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠতে পারলেও অবশ্য শিরোপা জিততে পারেননি। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ফাইনালে হেরে গিয়ে রানার্স আপ হয়েছিলেন। তবে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে উজ্জ্বল ছিলেন। ২১ গোল নিয়ে সিরি আ’র ৪র্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা, ১২টি অ্যাসিস্ট নিয়ে সেই সিজনের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতা, সাথে ১০ গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা– বিশ্বকাপে গিয়েছেন আগের আসরের রানার্স আপ ইতালির মূল খেলোয়াড় হয়ে। সম্ভাবনাটা তার পক্ষেও তাই কম ছিল না।

‘৯৮-এর বিশ্বকাপে দেল পিয়েরো ছিলেন সুপার ফ্লপ; Image Source: Pinterest

ধারণা করা হচ্ছিল এই দুজনের মাঝে বিশ্বকাপে যিনি ভালো করবেন তিনিই জয় করবেন বর্ষসেরার পুরষ্কার। বিশ্বকাপে দেল পিয়েরো হলেন সুপার ফ্লপ, ইতালিও বাদ পড়লো কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত রোনালদো ছিলেন উজ্জ্বল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার পাওয়া রোনালদো ব্রাজিলকে ফাইনালে তোলার পথে করলেন ৪ গোল আর ৩ অ্যাসিস্ট। তবে ফাইনালে সুপার ফ্লপ হলেন, ব্রাজিলও চ্যাম্পিয়ন হতে পারল না। জিদানের অতিমানবীয় পারফর্মেন্সের কাছে হেরে ব্রাজিল হলো রানার্স আপ। ২ গোল করে ফাইনালে জিদানই হলেন ম্যান অব দি ম্যাচ।

তবে অবাক করা বিষয়টা ঘটলো সেই বছরের বর্ষসেরা পুরষ্কারের সময়। হিসেবের বাইরে থাকা জিদানের হাতে উঠে আসলো বর্ষসেরা পুরষ্কার। শুধু পুরষ্কারটাই মূল বিষয় নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী বাকি খেলোয়াড়দেরকে অনেক পেছনে ফেলে দিল তার ফাইনালের সেই পারফর্মেন্স।

জিদানের পারফর্মেন্সই জিতিয়েছিল ফ্রান্সকে; Image Source: 360Nobs.com

বর্ষসেরা পুরষ্কারের ভোটিং এ জিদান পেল ৫১৮ পয়েন্ট, দ্বিতীয় স্থানে থাকা রোনালদো পেল মাত্র ১৬৪ পয়েন্ট। সেই বিশ্বকাপেই অসাধারণ খেলে ৬ গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে ৩য় করায় অবদান রাখা ডেভর সুকার হলেন ৩য় সেরা খেলোয়াড়। ব্যালন ডি’অরেও ২৪৪ পয়েন্ট নিয়ে জিদান ১ম হলেন, দ্বিতীয় আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ডেভর সুকার আর রোনালদোর পয়েন্ট ছিল যথাক্রমে ৬৮ আর ৬৬।

অথচ সেই বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচ বাদে জিনেদিন জিদান একজন গড়পড়তা পারফর্মার ছিলেন। ফাইনালে অসাধারণ খেললেও জিদান কিন্তু সেই বিশ্বকাপের সেরা তিন খেলোয়াড়ের একজনও হতে পারেননি। এমনকি ফ্রান্সের পক্ষের সেরা খেলোয়াড়ও তিনি নন। অবশ্য এটার পেছনে আরো কিছু কারণ ছিল। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে পারফর্মেন্সের সাথে সাথে ফেয়ার প্লেকেও খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখানটায় জিদান পিছিয়ে ছিলেন। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই একটা হলুদ কার্ড খান জিদান, দ্বিতীয় ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে লাল কার্ড খেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর মিস করেন ডেনমার্কের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ এবং প্যারাগুয়ের বিপক্ষে নক আউটের প্রথম ম্যাচ। কোয়ার্টার ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ভালো খেললেও সেটা ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। গোলশূন্য সেই ম্যাচটা ফ্রান্স জেতে টাইব্রেকারে। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটাও ফ্রান্স জিতে থুরামের বীরত্বে। প্রথমে গোল করে ক্রোয়েশিয়া এগিয়ে গেলেও পরপর দুই গোল করে সেই ম্যাচের নায়ক লিলিয়ান থুরামই।

ফাইনাল ম্যাচটাতে ব্রাজিল নিঃসন্দেহে ফেভারিট ছিল। ফ্রান্সের পক্ষে শুধু একটা বিষয়ই ছিল সেটা হচ্ছে তারা ছিল স্বাগতিক। কিন্তু ম্যাচ শুরুর পর পুরো হিসেবটাই পাল্টে যায়। পুরো ম্যাচে একটা মূহুর্তের জন্যেও ব্রাজিল তাদের নিজস্ব খেলাটা খেলতে পারেনি। অবশ্য ব্রাজিলের বাজে খেলার পেছনে রহস্যময় ইনজুরির কারণে রোনালদোর ফ্লপ থাকাটাকেও একটা কারণ হিসেবে ধরা হয়।

সেই সিজনে জুভেন্টাসের হয়ে জিদান অবশ্য একেবারে ফেলনা ছিলেন না। লীগে গোল করেছিলেন ৫ টি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে করেছিলেন ৩ গোল আর ৭টি অ্যাসিস্ট। গ্রুপ পর্বে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে ২ বারের দেখায় ২টি গোল আর ১টি অ্যাসিস্ট, কোয়ার্টার ফাইনালে ডায়নামো কিয়েভের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক অ্যাসিস্ট, সেমিফাইনালে মোনাকোর বিপক্ষে গোল ও অ্যাসিস্ট। তবে জুভেন্টাসের মূল খেলোয়াড় দেল পিয়েরো হওয়ায় তিনি খুব বেশি লাইম লাইটে আসতে পারেননি।

ফাইনালের ম্যাচটাই জিদানকে একবারে লাইমলাইটে নিয়ে আসলো। সেই সময়ে ব্রাজিলকে হারিয়ে ফ্রান্সের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা আসলে কিছুটা অঘটনের মতোই ছিল। আর সেই অঘটনের নায়ক হিসেবে পুরষ্কারটা জিদান পেয়ে গেলেন বর্ষসেরা হয়ে।

এবারের বিশ্বকাপের শুরুটাও কিন্তু অনেকটা এমনই ছিল। ফিফা বর্ষসেরা কিংবা ব্যালন ডি’অরের জন্য এখনো পর্যন্ত ফেভারিট ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং লিওনেল মেসি। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে গত বছর পর্যন্ত ১০ বছরে এই দুই সুপার স্টার পুরষ্কারটিকে নিজেদের মাঝে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। দুজনেই পুরষ্কারটা জিতেছেন ৫ বার করে। প্রতি বিশ্বকাপেই সম্ভাবনা থাকে নতুন কারো উঠে আসার। কিন্তু গত দুই বিশ্বকাপে এমন কোনো খেলোয়াড় আসেননি যারা কিনা এই দুই তারকাকে সরিয়ে পুরষ্কারটা জিততে পারেন। এবার কি পারবেন?

২০১৭-১৮ সিজনে মেসি জিতেছেন ঘরোয়া লীগ এবং কাপ এর ডাবল। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো জিতেছেন ইউরোপের সেরা আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। ব্যক্তিগতভাবে মেসি হয়েছেন ৩৭ ম্যাচে ৩৪ গোল নিয়ে লা লীগার সর্বোচ্চ গোলদাতা। এরসাথে ১২টি অ্যাসিস্ট নিয়ে লা লিগার সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতাও মেসি। অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ২৭ ম্যাচে ২৬টি গোল নিয়ে লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে ১৫ গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে প্রতিযোগিতায় বেশ ভালোভাবেই টিকে রয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এই টুর্নামেন্টে এবারের আসরে মেসির গোল মাত্র ৬টি।

বিশ্বকাপে মেসি ছিলেন না স্বরূপে; Image Source: First Time News

বিশ্বকাপে মেসি রোনালদো দুইজনই দ্বিতীয় পর্ব থেকে ছিটকে গেলেও মেসির তুলনায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন। স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারে সেরা পারফর্মেন্সগুলোর মাঝে একটি। এছাড়া বিশ্বকাপের স্মরণীয় ম্যাচগুলোর ছোট তালিকাতেও ম্যাচটি জায়গা পাবে। এই দুইজনকে পেছনে ফেলার জন্য যে অতিমানবীয় খেলার প্রয়োজন সেটা এখন পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে কেউ খেলতে পারেননি। তবে প্রেক্ষাপটটা এখন পর্যন্ত তৈরী আছে একজনের জন্য- তিনি ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ।

স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচটা ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ ক্রিসের; Image Source: Boston Herald

রিয়াল মাদ্রিদের মূল খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো হলেও মধ্যমাঠের অন্যতম সেনানী এই লুকা মদ্রিচ। মাদ্রিদের সফলতার অন্যতম মূল কারিগরও এই মিডফিল্ডার। লুকা মদ্রিচের একক অবদানে ক্রোয়েশিয়া ফাইনাল পর্যন্ত আসেনি তবে ফাইনাল পর্যন্ত আসার পেছনে লুকার পারফর্মেন্স অসাধারণ। পরিসংখ্যানে বিশ্বকাপে করছেন ২ গোল আর ১ অ্যাসিস্ট। তবে এগুলো ছাড়াও মধ্যমাঠে তার উপস্থিতিই ক্রোয়েশিয়াকে করে তুলেছে আরো দুর্দান্ত। স্বপ্নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার জন্য ক্রোয়েশিয়ানরা যথেষ্টই পরিশ্রম করেছেন। স্বপ্নটাকে ছুঁয়ে ফেলার জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ১টি ম্যাচ জেতা। সেটা কি আজ আসবে মদ্রিচের হাত ধরেই?

শুধু বিশ্বকাপ জেতাটাই মেসি রোনালদোকে পেছনে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। ২০১০ বিশ্বকাপ জিতেছিল স্পেন কিন্তু বর্ষসেরা হয়েছিলেন লিওনেল মেসি। আবার ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি কিন্তু বর্ষসেরা হয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। স্পেনের পক্ষে জাভি-ইনিয়েস্তা কিংবা জার্মানির পক্ষে ম্যুলার-ক্রুস-ন্যয়ার বেশ ভালোই খেলেছিলেন। তবে ভালো দলের পক্ষ হয়ে ভালো খেলার চাইতে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা দলের হয়ে কোন কিছু অর্জন করাটা বিশেষজ্ঞদের কাছে বেশি মূল্য পায়। ২০১০ সালের স্পেন কিংবা ২০১৪ সালে জার্মানি দল হিসেবেও দুর্দান্ত ছিল এবং তারা তাদের চাইতে এগিয়ে থাকা কোন দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়নি।

বার্সেলোনার হয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের পর ফাইনালের ম্যান অব দি ম্যাচও নিশ্চিত করতে পারেনি বর্ষসেরার পুরষ্কার; Image Source: Goal.com

১৯৯৮ সালে জিদানের পুরষ্কার পাওয়ার কারণ ছিল দুর্দান্ত ব্রাজিলকে হারিয়ে দেওয়ার কারণে। সেই ফ্রান্স সেই ব্রাজিলের চেয়ে বেশ ভালোভাবেই পিছিয়ে ছিল। এবারের ফ্রান্সের চেয়েও কাগজে কলমে কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে ক্রোয়েশিয়া । ক্রোয়েশিয়ার জয়টা তাই কিছুটা হলেও চমক হবে। তবে একই সাথে লুকা মদ্রিচ যদি ‘৯৮ সালের জিদানের মতো একক কোন কীর্তি দেখাতে পারে ফাইনালে তাহলে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার না পেলেও (সেটাও পাওয়ার সম্ভাবনা আছে) বর্ষসেরার পুরষ্কার পাওয়াটা খুবই সম্ভব। যদি এমন কিছু হয় তাহলে ১০ বছর পর নতুন কারো হাতে উঠবে বর্ষসেরা পুরষ্কার। নয়তো আরো একবার মেসি কিংবা রোনালদোর হাতেই যাচ্ছে পুরষ্কারটা। নতুন কাউকে দেখার জন্য অন্তত আর একটা বছর অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে।

এমন একটা মূহুর্তই আজকে চান ক্রোয়েশিয়ানরা; Image Source: Eurosport

ফিচার ইমেজ: ScoopWhoop

 

Related Articles