আপনাকে একটি বিজনেস আইডিয়া না দিয়ে, যদি বিজনেস আইডিয়া বের করার উপায় শিখিয়ে দেয়া হয়; সেটা কি বেশি ভালো না? এই আর্টিকেলের যেকোনো একটি উপায় থেকেই আপনি খুব সহজেই ঘণ্টা দুয়েকের ভেতর অন্তত শ’খানেক বিজনেস আইডিয়া বের করে ফেলতে পারবেন। তাহলে দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক-
১. ভুল সময়ে অসাধারণ আইডিয়া!
ইউটিউবের অনেক আগেই, ‘৯০ এর দশকে pseudo.com অনলাইনে ভিডিও পাবলিশ করা শুরু করে। কিন্তু তাদের এই আইডিয়া ব্যর্থ হয় তখনকার ইন্টারনেটের গতির কারণে। এরকম শত শত উদাহরণ পাওয়া যাবে autopsy.io এবং CB Insights নামক ব্লগে। এই সাইটগুলোতে আলোচনা করা হয়, ঠিক কী কারণে ব্যবসাগুলো সফল হতে পারেনি। আপনার কাজ হলো এরকম উদাহরণগুলো দেখা আর বের করা যে, ১৫ বছর আগের ব্যর্থ হওয়া আইডিয়াটি আজকের প্রযুক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব কি না ।
২. বিনামূল্যে সেবা দিন
ক্লিফসনোটস এর কথাই ধরা যাক। তারা বিভিন্ন বইয়ের সারাংশ বা নোট তৈরি করে ছোট্ট বই আকারে বিক্রি করে এবং পুরো বই না পড়ে ভালো রেজাল্ট করার এক মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে অনেক জনপ্রিয়তাও পায়। হার্ভার্ডের কয়েকজন ছাত্র, এই নোটগুলোই টাইপ করে তাদের ওয়েবসাইটে ফ্রিতে দিয়ে দিলো। স্বভাবতই সবাই ২০ ডলার দিয়ে নোট না কিনে ফ্রি’র দিকে ঝুঁকে গেলো। তো আপনার কাজ হবে, একটা সেবা খুঁজে বের করা, যার জন্য আপনাকে খরচ করতে হয়। তারপর দেখা যে ওরকম সেবা সবাইকে ফ্রিতে দেয়া সম্ভব কি না। যদি সম্ভব হয়, তবে আপনি সেবার ভেতর বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করে একটি নতুন ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলতে পারবেন। এবং কোম্পানি বেশ বড় হয়ে গেলে প্রতিপক্ষ তাদের ব্যবসার লোকসান কমাতে কোম্পানি কিনে নেয়ার উদাহরণও নেহায়েত কম নয়।
৩. কাজে লাগান তৃতীয় বিশ্বকে!
বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানিই স্বল্প আয়ের দেশগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। বেশিরভাগ মানুষের আয় কম হওয়ায় এদিকে তারা বাজার সম্প্রসারণেও ততটা আগ্রহী হয় না। আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে পারেন আপনি। ব্যাকপ্যাকের কথাই ধরা যাক। বিশ্বখ্যাত Amazon.com এর বেশিরভাগ পণ্যই বাংলাদেশে ডেলিভারি হয় না। ব্যাকপ্যাকের মাধ্যমে যে কেউ তাদের পছন্দের পণ্য দেশে আনাতে পারেন। আপনার কাজ হবে, এমন একটি সেবা খুঁজে বের করা যা দেশে নেই এবং কোনোভাবে সেই সেবাটা দেশে আনা সম্ভব কি না। একবার আনতে পারলে সেই সেবা ভোগ করার মতো লোকের অভাব হবে না।
৪. নজর রাখুন বিদেশি ব্যবসায়
বিশ্বের কোনো দেশে নতুন সফল কোনো ব্যবসা চালু হলেই দ্রুত সেই সেবা নিজেই দেশে চালু করার চেষ্টা করুন। ‘পাঠাও’ এর কথাই ধরা যাক। উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যানবাহন ভাড়া করা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। ‘উবার’ অনেক আগে থেকেই এক্ষেত্রে বেশ প্রসিদ্ধ এক নাম। ‘পাঠাও’ প্রতিষ্ঠিত হয় উবারের অনেক পরে। উবারের সেবাটিই পাঠাও চালু করায় আজ তারা অনেক বড় এক প্রতিষ্ঠান। Bikroy.com-ও ঠিক এভাবেই Amazon.com এর সেবা চালু করায় আত্মপ্রকাশ করে একটি বড় কোম্পানি হিসেবে। খোঁজ রাখুন বিদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান এমন কোনো সেবা নিয়ে এসেছে কি না, যা অনেক জনপ্রিয় হয়েছে। আর সেরকম সেবাই চালু করুন নিজ দেশে।
৫. মোবাইল অ্যাপ তৈরি করুন
২০১৬ সালে প্রিজমা নামক একটি অ্যাপ বের হয়, যা শুধু অ্যাপলের গ্রাহকরাই ব্যবহার করতে পারতেন। পরে অবশ্য অ্যান্ড্রয়েডের জন্যও প্রিজমা বের হয়। কিন্তু মাঝের সময়টুকুতে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের প্রিজমার জন্য হাহাকার ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেই মাঝের সময়টুকুতে কেউ প্রিজমার মতো ছবি এডিট করতে পারবে, এমন কোনো অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েডের জন্য বের করতে পারলে নিঃসন্দেহে তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতো। উইন্ডোজ ফোনের ক্ষেত্রেও একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ২০১৪ সালের দিকে উইন্ডোজ স্টোরে ফ্রি কোনো ভিডিও প্লেয়ার ছিল না, যা কিনা সব ফরম্যাটের ভিডিও চালাতে পারে। যদি ঐ সময়ে কেউ ভিডিও প্লেয়ার বানিয়ে ফ্রিতে দিতো এবং তার নিজের আয়ের জন্য প্লেয়ারের ভেতর বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করতো, তবে রাতারাতি সেই অ্যাপ বিপুল জনপ্রিয় হয়ে যেত। তো, লক্ষ রাখুন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের দিকে। যদি শুধু এক প্ল্যাটফর্মের জন্য কিছু বের হয়, তবে চেষ্টা করুন একইরকম কিছু, অন্য প্ল্যাটফর্মেও নিয়ে আসার।
৬. খেয়াল রাখুন নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে
এমন অনেক সেবাই আছে যা পুরুষ এবং নারী উভয়েরই প্রয়োজন এবং নারীদের স্বাচ্ছন্দ্যবোধের দিকে একটু আলাদা নজর রাখলে নারী ক্রেতাদের সম্পূর্ণ বাজারটাই ধরে ফেলা সম্ভব। ‘ওবোন’ অ্যাপটি পাঠাও এর মতোই রাইড শেয়ারিং একটি অ্যাপ। পার্থক্য হলো, এখানে চালকরা সবাই নারী হওয়ায়, আগে যারা পাঠাও ব্যবহার করতেন, তাদের অনেকেই ওবোন ব্যবহার করছেন। এমনকি যারা কোনো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করতেন না, তারাও ‘ওবোন’ ব্যবহার করা শুরু করেছেন। তো আপনার কাজ হবে, এমন কোনো সেবা খুঁজে বের করা, যা সাধারণত পুরুষরা গ্রহণ করে থাকেন। সেবায় কিছুটা পরিবর্তন এনে সেটা নারীদের জন্যও নিয়ে আসবেন।
৭. কাজে লাগান ইংরেজিকে
ইংরেজিতে দক্ষ নন, এরকম মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিছু শিখতে চাইলে ইউটিউবে ইংরেজিতে লেকচার শুনে কিংবা ইংরেজিতে লেখা আর্টিকেল পড়ে কোনো কিছু শেখাটা অনেকের পক্ষেই বেশ কষ্টকর। যদি দেখতে পান, নতুন কোনো সেবা চালু হয়েছে বা কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বা কোনো সফটওয়্যার বের হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ ভাষাগত কারণে সেই সেবা সঠিকভাবে ভোগ করতে পারছে না কিংবা ভাষার কারণে সহজে শিখতে পারছে না, তবে মাতৃভাষায় সেই সেবা চালু করা কিংবা শেখানোও হয়ে উঠতে পারে একটি সফল ব্যবসা!
৮. পে অ্যাজ ইউ ওয়ান্ট
অর্থাৎ এরকম ব্যবসায় সেবার নির্দিষ্ট কোনো মূল্য থাকে না। ক্রেতা তার ইচ্ছামতো মূল্য দিয়ে থাকেন। যদি না চান, সেক্ষেত্রে কিছু না-ও দিতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে হাস্যকর মনে হলেও এটি অনেক কার্যকর! দেশে এখন পর্যন্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের উপর যত বই বেরিয়েছে, তার মধ্যে তামিম শাহরিয়ার সুবিনের লেখা ‘কম্পিউটার প্রোগ্রামিং: প্রথম খণ্ড’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। বইটির হার্ডকপি কিনতে আপনাকে খরচ করতে হবে। কিন্তু তামিম শাহরিয়ার সুবিনের ওয়েবসাইট থেকে ইচ্ছা করলে আপনি বইটি ডাউনলোডও করতে পারবেন। তিনি ওয়েবসাইটে একটি ‘বিকাশ’ নম্বর দিয়েছেন। অনেকেই হয়তো ফ্রি-তে বইটি ডাউনলোড করছে, কিন্তু এতে করে লেখকের অতিরিক্ত কোনো খরচ হচ্ছে না। অনেকেই মূল্য পরিশোধ করছে এবং বইটির বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে এভাবে ফ্রি-তে ডাউনলোড করতে পারার অবদানও রয়েছে। অবশ্য তিনি পিডিএফ বইটির একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আপনি সেটা নাও করে দিতে পারেন। তো আপনিও হয়তো ফটোগ্রাফি, বই কিংবা গান বা এরকম কোনো কিছু বের করে সবাইকে ডাউনলোডের সুবিধা দিয়ে ইচ্ছামতো মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ দিতে পারেন।
তো আর দেরি কেন? বের করে ফেলুন যেকোনো একটি বিজনেস আইডিয়া! হয়ত এই আইডিয়াই হতে পারে আপনার শিল্পপতি হবার গল্পের প্রথম ধাপ।