Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আফগানিস্তান কি সত্যিই ‘পরাশক্তিদের কবরস্থান’?

২০০১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে সিআইএ’র ‘স্টেশন চিফ’ ছিলেন মিল্টন বার্ডেন। তিনি সেই সময়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষণের বনেদি পত্রিকা ‘ফরেইন অ্যাফেয়ার্স’-এ একটি কলাম লেখেন, যে আর্টিকেলটির শিরোনাম ছিল ‘আফগানিস্তান, বিভিন্ন সাম্রাজ্যের কবরস্থান’। এই কলামে তিনি আফগানিস্তানে পরিচালিত মার্কিন সামরিক অভিযানের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন। তিনি তার সেই কলামে শুধু সোভিয়েতরাই নয়, প্রাচীনকালের আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনীর কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, আফগানিস্তানের বিভিন্ন জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীগুলোকে ঠিকমতো শাসন করা সম্ভব নয়। তার লেখা বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল, কারণ সেই কলামে তিনি আফগানিস্তানের মানুষ সম্পর্কে বেশ কিছু জাতিগত ঘৃণা থেকে উৎসারিত মন্তব্য করেছিলেন।

২০০১ সালে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা চালায় আল-কায়েদা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে ‘ওয়ার অন টেরর’ শুরু করে। আফগানিস্তানেও সামরিক অভিযান চালানো হয়। প্রায় বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসবাদ দমন’ করা হলেও আমেরিকা শেষপর্যন্ত তালিবান সরকারকে পরাজিত করতে পারেনি। ২০২০ সালে আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার আফগানিস্তান থেকে নিজেদের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার উত্তরসূরি জো বাইডেনও মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে জো বাইডেন বলেছিলেন, “যে ঘটনাগুলো আমরা ঘটতে দেখছি, তা আসলেই প্রমাণ করে যে কোনো পর্যায়ের সামরিক শক্তিই আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। এখানে বরাবরই পরাশক্তিদের কবর রচিত হয়েছে।”

Image source: CNBC

সম্প্রতি দুটো পরাশক্তি আফগানিস্তানে সামরিক আক্রমণ চালালেও পরবর্তীতে সুবিধা না করতে পেরে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। একটি হচ্ছে আমেরিকা, আরেকটি সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায়, তখন আফগানরা আমেরিকা এবং সৌদি আরবের কাছ থেকে প্রচুর অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে। আবার সোভিয়েত দমনের জন্য যে অস্ত্র দেয়া হয়েছিল আফগানদের হাতে, সেই অস্ত্রই পরবর্তীতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তালেবান যোদ্ধারা।

ইতিহাস বলছে- আফগানিস্তান আসলে পরাশক্তিদের কবরস্থান নয়। অথবা আফগানিস্তান এমন কোনো দেশ নয়, যেটি পরাশক্তিদের বিরুদ্ধে সবসময়ই সামরিক সংঘাতে জয়লাভ করেছে। ইতিহাসে সবসময়ই আজকের আফগানিস্তান হিসেবে পরিচিত অঞ্চলটি নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে– এরকমটার পক্ষেও ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। তবে একটা বিষয়ের সত্যতা রয়েছে। সেটি হচ্ছে- যখনই বাইরের কোনো পক্ষ আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে, তখনই আজকের আফগানিস্তানে অবস্থিত অঞ্চলটির অধিবাসীরা তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সেই প্রাচীনকালে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট হামলা চালিয়ে আফগানিস্তান জয় করেছিলেন বটে, কিন্তু তিরের আঘাতে তার পায়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল, সেটি তাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছিল। কিন্তু তার সেনাবাহিনী  তৎকালীন সেলুসিদ সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে ঠিকই আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছিল।

ইতিহাসে অত্যন্ত সুপরিচিত মোঙ্গল বিজেতা চেঙ্গিস খানও আক্রমণ চালিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। তিনিও জয়লাভ করেছিলেন। আরেক বিজেতা তৈমুর লং আক্রমণ চালিয়েও বিজয়ীর মুকুট পরিধান করেছিলেন। তার উত্তরসূরি বাবরও আফগানিস্তান শাসন করেছিলেন। আরব, পারস্য এবং তুর্ক কিংবা উজবেক– আরও অনেকেই আফগানিস্তানে আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের দখলে রাখে অঞ্চলটিকে। আফগানিস্তান আসলে এমন এক ভৌগলিক স্থানে অবস্থিত, যার ফলে বরাবরই পরাশক্তিরা এশিয়ার বড় অংশ ও কৌশলগত স্থলপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আফগানিস্তানে আক্রমণ চালিয়েছিল। আবার যখন নিজেদের স্বার্থোদ্ধার হয়ে গিয়েছে কিংবা প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে, তখন তারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছে। এটি যতটা না আফগানদের কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি দখলদার বাহিনীগুলোর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী।

Image source: Caspian News

প্রথম আফগান যুদ্ধে ব্রিটিশরা তীব্র আফগান আক্রমণের সম্মুখীন হয়। প্রায় ষোল হাজার সৈন্য নিয়ে গঠিত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনী আফগানদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে পিছু হটতে শুরু করে। কিন্তু পথিমধ্যে তীব্র শীত ও আফগান নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর হামলায় অল্প সংখ্যক সেনা শেষপর্যন্ত নিরাপদে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধেও ব্রিটিশরা পরাজিত হয়। তবে তৃতীয়বারের চেষ্টায় ব্রিটিশরা সফল হয় এবং আফগানদের বৈদেশিক নীতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। প্রথম আফগান যুদ্ধের পর ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের গণমাধ্যমগুলোতে তুমুল আলোড়ন তৈরি হয়।

আফগান ও তাদের সামরিক কলাকৌশল নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বেশ আলোচনা শুরু হওয়ায় অনেকেই আফগানদের প্রতি আগ্রহী হন। পাঠকদের নজর কাড়ার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো আফগানিস্তান নিয়ে বিভিন্ন বিকৃত এবং অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করতে থাকে, যেটি আফগানিস্তান সম্পর্কে একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে। আফগানিস্তান হচ্ছে এমন একটি দেশ, যেটি যুগে যুগে পরাশক্তিদের কবর রচনা করেছে– ইতিহাসের আলোকে এই কথাটি ভ্রান্ত৷ কারণ, অনেকবারই বিদেশি শক্তির হাতে আফগানি শাসকেরা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যর্থতা মানুষের মনে এই অতিরঞ্জিত তথ্য প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। তবে পরাশক্তিদের কবরস্থান রচনা করতে ব্যর্থ হলেও আফগান জনগণ শত শত বছর ধরে বিদেশি সাম্রাজ্যের সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সেটা অবজ্ঞা করা মোটেও ঠিক হবে না। দীর্ঘসময় সামরিক অভিযান পরিচালনার পরও আমেরিকা কিংবা সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান জনগণকে নিজেদের করতলে আনতে পারেনি– এর কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে আফগান জনগণের।

Language: Bangla
Topic: Is Afghanistan really the graveyard of empires?
References:
1. Why Is Afghanistan the ‘Graveyard of Empires’? - The Diplomat
2. The Old Cliché About Afghanistan That Won’t Die - Politico
3. Why we need to stop calling Afghanistan “The Graveyard of Empires” - Ajam Media Collective
Feature Image: Encyclopedia Britannica

Related Articles