চল্লিশ পেরোলেই নাকি নায়িকারা আবেদন হারান। হলিউডের চাকচিক্যের জগতে অনেকটাই ফিকে হয়ে আসে তাদের অবস্থান! হয়তো তথাকথিত ‘নায়িকা’দের জন্য কথাটা সত্য বটে। কিন্তু অভিনেত্রী? বয়সের সাথে তাদেরও কি সময় ফুরোয়?
জাত অভিনেত্রীরা ভিন্ন ধাতুর তৈরি। তাদের ক্ষেত্রে বয়স যেন একটি সংখ্যা মাত্র। আর যেন এই বাক্যটি প্রমাণ করতেই পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ক্যাথরিন এলিস ব্ল্যানচেটের সাফল্যের বিজয়রথ আরো দুরন্ত বেগে ছুটে চলেছে সম্মুখপানে। ক্যাথরিন ব্ল্যানচেট মূলত কেট ব্ল্যানচেট নামেই পরিচিত সবার কাছে। তিনি এমন একজন লাস্যময়ী ও গুণী অভিনেত্রী যার তুলনা আজকের দিনে শুধু তিনি নিজেই।
অসাধারণ রূপ-প্রতিভা-প্রজ্ঞা দিয়ে মোহিত করে রেখেছেন শত কোটি ভক্তকে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। দর্শকদের মতে, সব ধরনের চরিত্রে তিনি সাবলীলভাবে এবং বিশ্বাসযোগ্য করে মানিয়ে নেন নিজেকে। কথিত আছে, কোনো নির্মাতা যদি তার ছবি দর্শকপ্রিয় করতে চান, তবে ছবিতে শুধু কেট ব্ল্যানচেটকে অন্তর্ভুক্ত করলেই হবে, তা সফল হতে বাধ্য।
দর্শকদের এহেন দাবি যে অযৌক্তিক নয়, তা ব্ল্যানচেটের বৈচিত্র্যপূর্ণ, বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের ইতিহাসে মাত্র ১২ জন অভিনয়শিল্পীদের একজন, যারা দুই বা ততোধিক অস্কারের মালিক। অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন ছ’বার, বগলদাবা করেছেন গোল্ডেন গ্লোবসহ অসংখ্য পুরস্কার। তার প্রভাব এতটাই বিস্তর যে, স্বয়ং জর্জ ক্লুনির মতো তারকা একবাক্যে তাকে সময়ের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে আখ্যা দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না।
অভিনয় জগতে পদার্পণ
কেট ব্ল্যানচেটের অভিনয় জগতে উৎসাহী হওয়ার গল্পটা বেশ মজারই বটে। শিক্ষিকা মা এবং ইউএস মেরিন অফিসার বাবার ঘর আলো করে ১৯৬৯ এর মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে জন্ম নেন কেট। বাবা ইউএস নেভিতে থাকার সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। অবশ্য বেশ অল্প বয়সেই বাবাকে হারান এই অভিনেত্রী। মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই তাই বেশ স্বাধীনচেতা হয়ে বেড়ে উঠতে শিখেছিলেন।
২১ বছর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন, স্বপ্ন বিশ্বভ্রমণের। এই সফরই মূলত তাকে ঠেলে দেয় অভিনয়ের দিকে। গল্পটা কিছুটা এমন- কেট তখন মিশরে ছিলেন এবং কাবোরিয়া নামক মিশরীয় এক ছবিতে তাকে পার্শ্বঅভিনেত্রীর ভূমিকা দেয়া হয়। অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে, দুবারের অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী তার অভিনয় জীবন শুরু করেন কায়রোতে, পর্দায় পম পম নাচিয়ে হিসেবে।
কিন্তু এই অভিজ্ঞতাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসে তিনি থিয়েটারে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। শুরু করেন সিডনি থিয়েটার কোম্পানিতে তার অভিনয়। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ড্রামাটিক আর্টস থেকে পাশ করার পরের বছরই দ্য টেম্পেস্ট, হ্যামলেট, দ্য সিগাল ইত্যাদি মঞ্চ পরিবেশনার বদৌলতে অর্জন করেন সিডনি থিয়েটার ক্রিটিকস সার্কেলের পক্ষ থেকে ‘সেরা নবাগত’ খেতাব।
ছোটপর্দা দিয়ে পর্দায় অভিষেক ঘটলেও কেইট ব্ল্যানচেটের বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে প্যারাডাইস রোড এবং র্যালফ ফিয়েনসের বিপরীতে অস্কার এন্ড লুসিন্ডা সিনেমার মধ্য দিয়ে। তার পরপরই এলিজাবেথ সিনেমাটির মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন ব্ল্যানচেট। বাস্তববাদী এবং কঠোর ব্যক্তিত্বের অধিকারী রানী প্রথম এলিজাবেথের সাবলীল চরিত্রায়ণের মাধ্যমে হলিউডে নিজের অস্তিত্বের জানান দেন বেশ জোরেসোরেই।
এরপর আর কখনোই তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই এক চরিত্র দিয়েই তিনি সেবছর অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা সহ অসংখ্য মনোয়ন পান। দুঃখজনকভাবে সেবার অস্কারের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন গুয়েনেথ পেল্ট্রোর কাছে। তবে সবসময় দৃষ্টিনন্দন বুদ্ধিমত্তার অধিকারী কেট মনঃক্ষুণ্ণ না হয়ে বরং নিজেকে এই বলে সামাল দেন যে
মাঝে মাঝে আমি মনে করি কিছু জিনিস কেবল হারা বা জেতা দিয়ে মূল্যায়ন করা যায় না। আর কে-ই বা চায় মাত্র ২৮ বছর বয়সেই ক্যারিয়ারের চূড়ায় পৌঁছাতে?
-কেট ব্ল্যানচেট
অস্কার দৌড় এবং অন্যান্য
থ্রিলার থেকে শুরু করে ড্রামা, ফ্যান্টাসি থেকে সুপারহিরো সব ধরনের ছবিতেই তার আলোকচ্ছটায় ম্লান হয়ে যায় সব। কাজ করেছেন মার্টিন স্করসেসি, উডি এল্যান, টড হাইনস, টেরেন্স মালিক, স্টিভেন সোডেরবার্গ, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতু, ওয়েস এন্ডারসনসহ বহু খ্যাতিমান নির্মাতাদের সাথে। শত শত ভক্তের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন জে. আর. আর. টোকিয়েনের লর্ড অফ দ্য রিংস এবং দ্য হবিট ফ্র্যাঞ্চাইজের ছবিগুলোতে অন্যতম শক্তিধারী এলফ-গ্যালাড্রিয়েলের ভূমিকায় অভিনয় করে।
অন্যদিকে হাওয়ার্ড হিউজের বায়োপিক, মার্টিন স্করসেসি পরিচালিত দ্য এভিয়েটরে হলিউডের খ্যাতিমান এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী, ক্যাথেরিন হেপবার্নের চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছেন তার প্রথম অস্কার। ২০০৫ সালের দ্য এভিয়েটর ছবিতে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিওর বিপরীতে অভিনয় করে সেরা সহ-অভিনেত্রী বিভাগে নিজের প্রথম অস্কার গ্রহণ করেন তিনি। হয়তো প্রথম অস্কারের পরই হারিয়ে যেতে পারতেন আরো অনেক অভিনেত্রীর মতোই কালের গর্ভে।
কিন্তু না, পর্দায় তার অতুলনীয় অভিনয়, সময়ের সাথে বারবার নিজেকে ভাঙাগড়ার সিদ্ধান্ত এবং পর্দার বাইরের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থিতি তাকে সময়ের সাথে সাথে দর্শক ও সমালোচকদের অন্তরে পাকাপোক্ত আসনে বসিয়ে দিয়েছে, যেন চিরতরে! খ্যাতির চূড়ায় থাকতেও পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি তিনি। উদাহরণ-দ্য ট্যালেন্টেড মি. রিপ্লি। যেখানেই চ্যালেঞ্জ চোখে পড়েছে, লুফে নিয়েছেন।
টড হেইন্সের দুটি পিরিয়ড ড্রামাতেই তার অনবদ্য পারফরম্যান্স দর্শক, সমালোচক সবাইকেই হতবাক করে দিয়েছে। বিশেষ করে বব ডিলান চরিত্রেআই এম নট দেয়ার ছবিতে অভিনয় করে তিনি সবাইকেই হতবাক করে দেন। প্রমাণ করেন যে, তিনি যেকোনো চরিত্রেই অনবদ্য, তুখোড়। একই বছর আবারও রানী এলিজাবেথ চরিত্রে পর্দায় আসেন, এলিজাবেথ-দ্য গোল্ডেন এইজ ছবিটি নিয়ে।
পরের বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত ডেভিড ফিঞ্চারের ছবি দ্য কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটনেও তিনি নজর কাড়েন দর্শক-সমালোচকদের। মাঝে দ্য হবিট সিরিজের ছবিগুলোতে অভিনয় করলেও, কিছুদিনের জন্য যেন গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। সবাই যখন তার ক্যারিয়ারে ফাটল দেখতে পাচ্ছিল তখনই সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে কেট ব্ল্যানচেট স্ব-মহিমায় ফেরত আসেন।
২০১৩ সালে, উডি অ্যালানের ব্লু জেসমিন ছবিতে জীবন-খাদের প্রান্ত থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা এক মধ্যবয়স্ক, হতাশ, ‘সোশ্যালাইট’ নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে নিজেকে আবারও অদ্বিতীয় প্রমাণ করেন কেট। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব পাকাপোক্ত করতেই যেন এই নারী কেন্দ্রিক ছবিটি দিয়ে ২০১৪-তে জিতে নেন তার দ্বিতীয় অস্কারটি। এরপরও যে ক’টি ছবিতে তাকে দেখা গিয়েছে সবগুলোই বেশ অনন্য এবং ভিন্নধর্মী।
ট্রুথ ছবিতে রবার্ট রেডফোর্ডের সাথে পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন মানসিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত টিভি রিপোর্টার/ এডিটর মেরি মেইপসের চরিত্রে, ক্যারল ছবিতে আবারো টড হেইন্সের সাথে জুটি বেঁধেছেন ‘৫০ এর দশকের এক সমকামী গৃহবধূর চরিত্রে। এত ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করেও ক্ষান্ত হননি কেট। যেন তিনি শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় গিয়েও থামবেন না বলে নিজের কাছেই পণ করেছেন। নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে, তার সমসাময়িক কেউই তার আশপাশে ধারেকাছেও নেই। ২০১৫ সালে তিনি অভিনয় করেন মেনিফেস্টো নামক ছবিতে, ১৩টি বহুরূপী চরিত্রে।
কান উৎসব, ব্রডওয়ে, নারীদের সম অধিকার এবং কেট ব্ল্যানচেটের বিজয়রথ
কেইট ব্লানচেট শুধু পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রীই নন, সমান তালে মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ানোর যোগ্যতাও রাখেন। ২০১৭ সালে স্বামী এন্ড্রু আপটনের নির্দেশনায় এন্টন চেখভের অসমাপ্ত কাজ, দ্য প্রেজেন্ট দিয়ে তার ব্রডওয়ে যাত্রা শুরু করেন। প্রথম কাজ দিয়েই টনি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন বাগিয়ে নেন।
একইসাথে সেই বছর কাজ করেন মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের অন্যতম ভিলেন, হেলার চরিত্রে। দর্শক বরাবরের মতোই থর: র্যাগনারক এ তার অভিনয় মুগ্ধতার সাথে লুফে নেয়। ছবিটি অন্যান্য মার্ভেল মুভি থেকে কিছুটা ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও দর্শকদের মন ভোলাতে সক্ষম হয়, কাঁপায় বক্স অফিস।
২০১৮ সাল কেট ব্ল্যানচেটের ক্যারিয়ারে অন্যতম মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ বছর তিনি শুধু কান চলচ্চিত্র উৎসবে জুরির ভূমিকা নয়, একবারে মুখ্য জুরির কর্তব্য পালন করেছেন। কান উৎসবের পুরো দুই সপ্তাহ জুড়ে তিনি ছিলেন ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’।
২০১৮ সালে আরও মুক্তি পায় বহুল প্রশংসিত, ব্যবসাসফল ওশান’স সিরিজের চতুর্থ কিস্তি। সম্পূর্ণ নারী চরিত্র কেন্দ্রিক এই ছবি দিয়ে কেট এবং তার দল (সান্ড্রা বুলক, এন হ্যাথাওয়ে, হেলেনা বনহাম কার্টার, রিয়ানা, স্যারাহ পলসন, মিন্ডি কেলিং প্রমুখ)ওশান’স এইট ছবিটির মাধ্যমে আগের সব সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছেন। একই সাথে মিটু মুভমেন্ট এর পালে দিয়েছেন হাওয়া, নারী বিমুখ সমাজের মুখে ছাই। আর এর মাধ্যমেই পরপর দুটি ব্লকবাস্টারের মালিক হয়ে ২০১৮ সালের অন্যতম দামী এবং ফোর্বস ম্যাগাজিনের সেরা ১০ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন কেট।
তার প্রজ্ঞার কাছে ম্লান হয়ে যায় অনেক কিছুই। মঞ্চের অভিজ্ঞতা যেমন তার অভিনয়কে করেছে পরিপক্ব, তেমনি মঞ্চের প্রতি ভালবাসা এবং সিডনি থিয়েটার কম্পানিতে পরিচালক ভূমিকায় অতিবাহিত সময় তার জ্ঞানের পরিধিকে করেছে বিস্তর। তাই যখনই সুযোগ পেয়েছেন নিজের অবস্থানকে ব্যবহার করেছেন গোটা পৃথিবীর সামনে নারীদের চলমান সমধিকার আদায়ের স্বার্থে একটি শক্ত খুঁটি হয়ে।
নারীদের জন্য বেশ শক্তপোক্ত আওয়াজ হয়ে কেইট এগিয়ে চলেছেন সামনে। হোক সেটা নারীদের সমধিকার কিংবা সমান পারিশ্রমিকের দাবী, কেট নারীদের প্রতি সকল সামাজিক বিভেদে দূরীকরণে বেশ সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ইউএন এর শুভেচ্ছা দূত হয়ে গত মার্চে এসেছিলেন বাংলাদেশে, রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা স্বচক্ষে দেখে সেই বাণী পশ্চিমা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে। সাম্প্রতিক সময়ে ডাব্লিউ ম্যাগাজিনের এক স্পেশাল ইস্যুতে কাজ করেছেন মূল এডিটরের ভূমিকায়। আসলেই তো, কী পারেন না কেট!
তবে পরিচালকের আসনে কবে বসবেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায়ই দ্বিধায় পড়ে যান তিনি। তার মতে, তিনি বিশ্বের বড় বড় এবং প্রতিভাশালী পরিচালকদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা রাখেন। আর একটা ব্যাপারই তাকে পরিচালক হওয়া থেকে বিরত রেখেছে। কারণ তিনি জানেন কী পরিমাণ শ্রম এবং আত্মত্যাগ লাগে একজন পরিচালকের একটি ভালো ছবি বানাতে। যেদিন নিজেকে তৈরি করতে পারবেন সেই গুরুদায়িত্বের জন্য, সেদিনই হয়তো তাকে দেখা যাবে পরিচালকের আসনে। আর কেট ব্ল্যানচেট যা-ই করুন, কাঁচা কাজে যে বিশ্বাসী নন, তা তো সকলেরই জানা!
ব্যক্তিগত জীবন
কেট ব্ল্যানচেটের পর্দার বাইরের জীবনটাও যেন অনেকটা চলচ্চিত্রের গল্পগুলোর মতোই। স্বামী এন্ড্রু আপটন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম মঞ্চ ব্যক্তিত্ব ও পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম। সিডনি থিয়েটার কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন ২০০৬ থেকে প্রায় ৯ বছরের জন্য। প্রযোজনা করেছেন কেট ব্ল্যানচেট অভিনীত, টড হেইন্স পরিচালিত ছবি ক্যারল। লিখেছেন দ্য টার্নিং এবং স্টোরিজ অফ লস্ট সোলস এর মতো কিছু ছবি। তাদের প্রায় ২১ বছরের সংসার জীবনের শুরুটা হয় বেশ রোমাঞ্চকরভাবেই।
দুজন একই ভুবনে কাজ করার খাতিরে চেনাজানা ছিল, কিন্তু দুজন দুজনকে মোটেও দেখতে পারতেন না। যেন অনেকটা হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভিন্ন দিকে মোড় নেয় এবং মাত্র ২১ দিনের মাথায় এন্ড্রু বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন। আর কেটও ভালবাসার ডাকে সাড়া দিতে সময় নেননি। সেই ১৯৯৭ সাল থেকে এখনও হলিউডের কুবাতাস এড়িয়ে, অনেকটা স্বপ্নের মতোই একে অপরের হাত ধরে রেড কার্পেট দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্ল্যানচেট-আপটনের ঘর আলো করে আছে তিন ছেলে এবং এক মেয়ে। স্বামী ও সন্তান নিয়ে বর্তমানে ইস্ট সাসেক্সে বসবাস তার। অনেকের মতে, নিজের পারিবারিক জীবনকে সবসময় আলাদা এবং হলিউডের চাকচিক্য থেকে দূরে রাখতে পারাটাই তার সুখী এবং সফল সাংসারিক জীবনের রহস্য।
পর্দার মতোই বাস্তব জীবনেও জ্ঞানী এবং প্রত্যুৎপন্নমতি হিসেবে তার বেশ সুনাম আছে। তার সম্পর্কে আরও একটি বিষয় যা দর্শকদের আনন্দ দেয় তা হলো, তিনি বেশ হাস্যরসাত্মক। ‘অস্ট্রেলিয়ান হিউমার’ এবং বুদ্ধিদীপ্ত বাণী যেন ঠোঁটের আগায় লেগে থাকে তার। কেটের ফ্যাশন সম্পর্কে ধারণাও বেশ আধুনিক এবং একইসাথে যেন চিরসবুজ। যেখানেই যান না কেন, যা-ই পরুন না কেন, কেট ব্ল্যানচেট যা গায়ে চাপাবেন সেটাই যেন চলমান ফ্যাশন। তার এই অনন্য ‘ফ্যাশন সেন্স’ এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার কিছুটা ছোঁয়া মিলবে হার্পার বাজারের আগস্ট ইস্যুতে।
তার নতুন ছবি দ্য হাউজ উইথ আ ক্লক ইন ইটস ওয়াল ছবির প্রচারের সময়, প্রায় এক দশক পর ইংল্যান্ডে ফিরে আসা এবং থিতু হওয়া সম্পর্কে কেট বলেন-
আমার মনে হয়, এখানে ফিরে আসতে পারাটা আমি পছন্দ করি। এখানে এখনও অনেক বই আছে যা আমি আমি পড়িনি, অনেক ছবি আছে যা আমি দেখিনি, অনেক আলোচনা আছে যা এখনও করা হয়নি, অনেক গাছ আছে যা লাগানো হয়নি। খানিক বসে চিন্তা করা যে, ভবিষ্যতে কী হতে পারে, আমার মনে হয় এটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
-কেট ব্ল্যানচেট
ছবিটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর। আশা করা যায় কেট আবারও ভিন্ন কোনো রূপেই পর্দায় স্টিভেন স্পিলবার্গ প্রযোজিত এই শিশুতোষ ফ্যান্টাসি ছবিটিতে সবাইকে অবাক করবেন, সব সময়ের মতো! কেট ব্ল্যানচেট মানেই যে বেশ ভিন্ন কিছু!
ফিচার ইমেজ-Giorgio Armani Campaign