Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

“বাংলাদেশ সবসময় চোক করলে জয়ের খুব কাছে যেতে পারতো না”

আলী খান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে প্রথম কাজ করেছিলেন ২০১৪ সালে। মূলত তিনি একজন মনোবিদ। কাজ করেন ক্রীড়াবিদদের মানসিক অবস্থা নিয়ে। তার অধীনে শুরু থেকেই দারুণ ফল পেয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপের ফাইনালে দ্বিতীয়বার হারের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একজন মনোবিদের অভাব আরও একবার টের পায়। সে কারণেই চলতি জিম্বাবুয়ে সিরিজের মধ্যেই উড়িয়ে আনা হয়েছে বাংলাদেশি-কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত আলীকে। পুরো এক সপ্তাহ তিনি কাজ করেন বাংলাদেশ দলকে নিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় এক সাক্ষাৎকারে আলী খান আলাপ করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক সামর্থ্য ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেরাই নিজেদের ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন তা নিয়ে।

আপনি চার বছর পর আবারও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ করতে এলেন। সেই দলটিকে এতদিন পর কেমন দেখছেন?

অনেক কিছুর উন্নতি হয়েছে। অতীতে দলের ক্রিকেটাররা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ভেঙে পড়তো। তারা বিশ্বাসই করতে চাইতো না, এই অবস্থাতেও একটা ‘ব্রেক থ্রু’ আনা সম্ভব। কিন্তু এখন আমি বলবো মানসিকভাবে এখনও তারা নিজেদের শতভাগ উন্নতি করতে না পারলেও লক্ষ্য, আত্মবিশ্বাসে তারা দারুণ এগিয়েছে।

ইমরুল কায়েসের সঙ্গে আলী খান; Image Source; Cricbuzz

চাপটা তখনই বেশি থাকে যখন ম্যাচের ফলাফল টানটান অবস্থার মধ্যে চলে আসে। যখন শেষপর্যন্ত জয়ের সম্ভাবনা থাকে দুই দলেরই। বাংলাদেশ দল এই জায়গাতে এখনও হোঁচট খাচ্ছে। আমার মনে হয় এই জায়গাতে মনের ফিটনেস নিয়ে কাজ করার অনেক জায়গা আছে। বিশেষ করে দলে যারা নতুন আসছেন। আমি সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে এ ব্যাপারে যেসব কাজ করেছি, ছোটদের নিয়েও যদি করি তাহলে এই ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকবে। অন্তত ম্যাচে আমরা মানসিকভাবে আগে থেকে পিছিয়ে পড়বো না।

গেল ছয় বছরে বাংলাদেশ পাঁচটা ফাইনালে হেরেছে। আপনার কাছে কি মনে হয় না এই দলটা আসলে চোক করছে?

অবশ্যই! আমি এটা বলবো না তারা সবসময়ই চোক করছে। তারা যাদের বিপক্ষে খেলছে তারাও অনেক শক্তিশালী দল। তো, এটার পুরোটা কিন্তু মানসিক ব্যাপার নয়। এখানে হয়তো কৌশলগত, প্রযুক্তিগত আরও কিছু ব্যাপার জড়িত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি এই পাঁচ ফাইনালের একটি দেখছিলাম। সৌম্য সরকার শেষ ওভারে বল করতে গেল, যখন কি না ভারতের জয়ের জন্য পাঁচ রান প্রয়োজন। এই অবস্থায় আমার চোখে মনে হয়েছে, সৌম্য চোক করবে। কিন্তু ম্যাচের পুরোটা সময় তারা এই কাজ করেনি। বাংলাদেশ যদি সবসময় চোক করতো, তাহলে কখনই ম্যাচে জয়ের খুব কাছে পর্যন্ত যেতে পারতো না। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, শেষ মুহূর্তে আমরা হয়তো আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না, আত্মবিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলছি।

তামিম ইকবাল; Image Source: AFP

তো এখন যদি আমরা নিয়মিত ছেলেদের মেন্টাল ফিটনেস নিয়ে কাজ করি তাহলে এটা তাদের অনুশীলনেরই একটা অংশ হয়ে যাবে। ফলাফল, তারা তারপরও হয়তো এমন ম্যাচে হারবে, কিন্তু এতবার নয়।

বাংলাদেশ দলকে নিয়ে একটা মিথ আছে। তারা নাকি শুরুটা ভালো করতে পারে না। তাদের জন্য মোমেন্টাম পুনরুদ্ধার করতেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়। আপনার কি মনে হয়, কোন কোন জায়গায় দলের উন্নতির প্রয়োজন আছে?

সাইকোলজিতে একটা শব্দ আছে, ‘প্যাটার্ন-রিকগনিশন’। যদি আপনি কয়েকবার ব্যর্থ হন, আপনার ব্রেইন বারবার ব্যর্থ করতে থাকবে। যেটা হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে। কয়েকজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলেন, নতুন যারা উইকেট নামলেন তাদের উপর চাপ বেড়ে গেল। তো এটা আসলে আপনাকে মোমেন্টাম থেকে বের করে দেবে। আপনার ব্রেইন ব্যাপারটি নিয়ে খেলবে, সে ব্যর্থ হবে, ব্যর্থ হবে এবং ব্যর্থ হবে। তারপর সে আবার ব্যর্থ হবে। এই জিনিসটি আমি অনেক দলের মধ্যে দেখেছি। এক্ষেত্রে কেবল কৌশল বা রণপরিকল্পনা নয়, নয় কেবল আত্মবিশ্বাস আর প্রেরণা। এ জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হলে আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে। আর আমি এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের নিয়ে সেটাই করছি।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে ইমরুল-মুশফিক; Image Source: AFP

আপনি যখন কাজগুলো অনুশীলন করতে থাকবেন, কিছু সফলতা আসতেই থাকবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এটা আজীবন কাজ করবে। এটা কোনো রোগ নিরাময় ট্যাবলেট নয় যে, আপনি খেলেন আর হয়ে গেল। আপনাকে নিজে নিজে কাজগুলো করতে হবে, শক্ত করতে হবে নিজেকে।

আমরা প্রায়ই দেখি একজন ব্যাটসম্যান একই পরিস্থিতিতে একই ধরনের ডেলিভারিতে একই বোলারের বিপক্ষে বারবার আউট হচ্ছে।

সাইকোলোজিক্যালি সে এই জায়গা থেকে কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে?

যখন কোনো স্রোত আসে, সেটা আপনাকে তার পথেই টেনে নিতে চাইবে। কিন্তু বাঁচতে হলে আপনাকে শক্ত হতে হবে, স্রোতের বিপরীতে সাঁতরাতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার শারীরিক সামর্থ্য থাকতে হবে, কিছু দক্ষতা থাকতে হবে এবং মানসিকভাবে আপনি যদি এটা একবারের জন্যও ভেবে নেন যে আপনি পারবেন না, তাহলে আপনি আর আসলেও পারবেন না। আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে, সেই দক্ষতা থাকতে হবে। এগুলোই আপনাকে ব্যর্থতা থেকে বের করে আনবে।

আমরা খেয়াল করেছি, অনেক ক্রিকেটার মনোবিদের সঙ্গে নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করার পরও উন্নতি করতে পারছেন না। আপনার কী মনে হয়, কেন এমনটা হচ্ছে?

পারফরম্যান্সে দুটো ব্যাপার থাকতে পারে। প্রথমত, আপনার মধ্যে সেই সম্ভাবনাটা থাকতে হবে। অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আপনি সেটি অর্জন করতে পারেন। তারপর সেটা নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। আমি যদি মনোরোগের ভাষায় বলি, এই জায়গাগুলোতে চাপ, স্ট্রেস ও ভয় থাকে। এই জিনিসগুলো ম্যাচে আপনার মধ্যে থাকা ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলোকে নামিয়ে দেয়।

এশিয়া কাপের ফাইনাল, আরও একটি স্বপ্নভঙ্গের অশ্রুগাথা; Image Source: AP

তো ম্যাচ ও অনুশীলন; দুটো জায়গায় আপনার পারফরম্যান্সে তারতম্য হবে। এটা মানসিক ব্যাপার। আপনি যদি সম্ভাবনাময় হন, তাহলে আমরা আপনাকে আপনার মনের সেই সমস্যা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করি। বড় ম্যাচ খেলতে গেলে নিজের মনের মধ্যে আসা অশুভ ব্যাপারগুলোকে থামিয়ে দিতেই হবে। এটা আপনার পারফরম্যান্সকে সামনের দিকে এগিয়ে দেবে। আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনি পারবেন, আপনি সত্যিই পারবেন। কিন্তু আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনি পারবেন না, তাহলে আপনি চেষ্টাও করতে চাইবেন না।

সমালোচনা গ্রহণ করতে পারা একজন ক্রিকেটারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আপনি জিনিসটাকে নেতিবাচক হিসেবে নিতেই পারেন। কিন্তু যখন আপনি একজন তারকা হয়ে যাবেন, তখন সমালোচনা আপনার জীবনের অংশ হয়ে যাবে। সমালোচনা আপনাকে আসলে সাহায্য করবে। প্রতিনিয়ত আপনার নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ধাবিত করবে, আপনাকে খুশি করবে। কেবল পারফরম্যান্সের সমালোচনা নয়, অনেক সামাজিক ব্যাপারও সামনে চলে আসে।

তো আমার মনে হয় সমালোচনা একজন ক্রিকেটারকে তার লক্ষ্যের দিকে ফোকাস রাখতে সাহায্য করে, খারাপ কিছু করা থেকে দূরে রাখে। সমালোচনা ইতিবাচকভাবেও করা যেতে পারে। কিন্তু সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষ যদি এটা নেতিবাচকভাবে করে তাহলে তাদেরকে শেখার সেই সুযোগটা দেওয়া হবে না। কারণ তারা সবাইকে একসঙ্গে প্রতিদিন খুশি করতেও পারবে না।

This article is in Bangla language. It is a interview on Ali Khan, a Bangladesh-born Canadian sports psychologist, was recently in Bangladesh to conduct a week-long session with national cricketers ahead of the Zimbabwe series.

Feature Image: AFP

Related Articles