বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তির সত্যতা যাচাই করতে গেলে আপনি দেখবেন, সভ্যতার শুরু থেকেই পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের অবদানও কম কিছু নয়। সভ্যতা বিকাশের ধারাবাহিকতায় নারীদের কখনো প্রকৃতি, কখনো সৌন্দর্য বা কখনো কোমলতার প্রতীক বলেই মানা হয়েছে। আবার একই নারীর জন্য যুদ্ধবিগ্রহ, সিংহাসনচ্যুত কিংবা প্রাণহানির ঘটনাও নেহাত কম নয়। আবার ঠিক বিপরীত দিকে অর্থাৎ বিশ্ব শান্তি স্থাপনেও কিন্তু নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। বিশ্বের ইতিহাসে রানী ক্লিওপ্রেটার ব্যাভিচারের ঘটনা যেমন আছে, তেমনি মাদার তেরেসা কিংবা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মানবতার ঘটনাও আছে।
পেছনের ইতিহাস ছেড়ে আমরা বর্তমানের দিকে তাকালেই দেখতে পাবো, বিশ্বের অনেক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র কিংবা বিশ্ব পরিচালনার গুরুত্বপুর্ণ পদে নারীদের অবদান। এই তো গেল সপ্তাহেই বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো কৃষ্ণগহবর বা ব্ল্যাক হোল এর ছবি প্রকাশ করেছেন; এবং এই যুগান্তাকারী আবিষ্কারের পেছনেও ছিলেন একজন নারী। তাই, কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিটির যর্থার্থ প্রমাণ পাওয়া যায় জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আজকের আলোচনায় কালচারট্রিপ.কম এর সৌজন্যে সাতজন প্রভাবশালী নারীর গল্প শুনবো, যাদের কাজ তাদের নিজেদের সম্প্রদায় এবং বিশ্বের নারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
পিপ জেইমিশন
প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা – দ্য ডটস
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
লন্ডনে সৃজনশীল পরিচালকদের মধ্যে কেবল ১২% নারী, যাদের মধ্যে আবার কালো, এশিয়ান এবং সংখ্যালঘু জাতিগত সম্প্রদায় (বিএএমই) এর নারীদের ক্ষেত্রে এই চিত্রটি আরো দুই শতাংশ কম। ফলে বর্ণগত বিদ্বেষের পাশাপাশি নারী বেকারত্বের হার দিনকে দিন উর্ধ্বগতির দিকে এগোচ্ছে। তাই, উদ্যোক্তা পিপ জেইমিশন দ্য ডটস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি এমন একটি পেশাদার ওয়েব মাধ্যম, যেখানে সিভি কিংবা ইন্টারভিউয়ের মতো ঝামেলা ছাড়াই একজন সৃজনশীল কর্মী এবং নামীদামী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি হয় সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে, যা ঐ স্থিতাবস্থাকে সক্রিয়ভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।
তাঁর ওয়েব মাধ্যমের সবচাইতে বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জেইমিশন কম প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিভাবান গোত্রের প্রতিভাই সবচাইতে বেশী প্রচার করেন। দ্য ডটস এর অ্যালগরিদম এমনভাবে করা হয়েছে যেন যে কোন অনুসন্ধানের ফলাফলের শীর্ষে বিভিন্ন সৃজনশীল প্রতিভার প্রচার হয় এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগদাতার জন্য নিয়োগকারীর নাম, ছবি, শিক্ষা এবং অন্যান্য সেসব ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ যা নিয়োগদাতার সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে সেগুলোকে গোপন রাখতে পারে।
ব্যাপারটা এই না যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু মানুষের প্রচার করা, বরং একটি নির্ভরশীল দল গঠন করা। লোকজন কী কাজ করে তার উপর তাদের মান বিচার করা উচিত, তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয় (অথবা তারা কোন লিঙ্গের, কোন জাতি বা গোত্রের) এসব দিয়ে নয়। সৃজনশীল এবং কারিগরি শিল্পগুলোও ইতিমধ্যেই নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা ঘোষণা দিয়েও ঐ একই প্রকৃতিতেই অবস্থান করছে, এবং আর ঠিক যে কারণে আমি এই প্রথাকে ভেঙে ফেলতে এত আগ্রহী সেটা হচ্ছে আমরা নিজেরাই অসচেতন হয়ে এই প্রথাকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলাম এবং এখনো তুলছি। আপনি যদি সবার জন্যে একটা কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেন, কেবল তাহলেই সেটা সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে।
– পিপ জেইমিশন
মিনু ভাদেরা
সামাজিক উদ্যোক্তা এবং উইমেন অন হুইল এর প্রতিষ্ঠাতা
নিউ দিল্লি, ভারত
মিনু ভাদেরা হচ্ছেন সেই নারী, যিনি ভারতে গত ৩০ বছর যাবত নারীর অধিকার বিষয়ে প্রচারাভিযান চালিয়ে আসছেন; এবং ২০০৮ সালে ভারতের দিল্লিতে প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র নারীদের জন্য ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস চালু করেছিলেন। দিল্লি, এবং সামগ্রিকভাবে ভারতে, নারী অধিকার সমর্থকেরা প্রতিনিয়ত কথা বলছেন নারীর নিরাপত্তা বিষয়ে। দিল্লি পুলিশ কর্তৃক প্রকাশিত অপরাধের বার্ষিক তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে ভারতের রাজধানীতেই গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচজন নারী ধর্ষণের শিকার হন, এবং জাতীয় পরিবার জরিপ থেকে আরো জানা যায় যে, এই পাঁচজনের মধ্যে দুজনের খবর প্রকাশিতই হয় না এবং কোনোভাবে জানাও যায় না।
ভারতে বসবাসরত নারীদের নিরাপদ যানবাহনের দেয়ার পাশাপাশি, ভাদেরা তার প্রচার মাধ্যম উইমেন অন হুইলের মাধ্যমে সেসব নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন, যারা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা অর্থ উপার্জন করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতের নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ৩৫.৮% থেকে ২০.২% এ হ্রাস পেয়েছে। তুলনা করলে দেখা যায়, সুইডেনের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ৮৮% এ গিয়ে থেমেছে। ভারতের বস্তি কিংবা ঝুপড়ি ঘরে থাকা নারীদের প্রায়শই এমনসব কাজে নিয়োগ দেয়া হয়, যেটা মূলত ‘নারীর কাজ’ এর মানের থেকেও অনেক নিম্নমুখী কিংবা অকল্পনীয়। আর তাই, ভাদেরা স্বপ্ন দেখেন যে, তার এই প্রকল্প হয়তো জনগণের দেখার দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেবে।
প্রথাবিরোধী কাজ করাটা এসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্যে খুবই জটিল একটা বিষয়; কিন্তু তারা যেসব কাজ করে, জীবনযাপনের জন্য সেগুলোই বা কতটা সহজ আর মানসম্মত, সেই তো ঘুরেফিরে রীতি অনুযায়ী রান্না করা, ঘরদোর পরিষ্কার করা, বাসার যাবতীয় কাজ করা এবং খুব বেশি হলে কারখানার কাজে সাহায্য করা কিংবা সেলাইকর্মের কাজ করা। যদিও বা আমার কাছে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা বেশি এসেছেন, কেননা, তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা বড়, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা স্বপ্নই থেকেই যায়, তার কারণটা হচ্ছে আর্থিক দুর্দশা।
– মিনু ভাদেরা
উইমেন অন হুইল হচ্ছে দুটি প্রতিষ্ঠানের সংমিশ্রণে তৈরি কেবল একটি কর্মপ্রচেষ্টা বা উদ্যোগ। আজাদ, একটি অলাভজনক প্রশিক্ষণ সংস্থা, নারীদের পেশাদার শিক্ষা দান করে এবং দক্ষ করে গড়ে তোলে যেন পরবর্তীতে মুনাফার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সামাজিক সংস্থা সখাতে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এ পর্যন্ত এই উদ্যোগের সাথে ৬০০ জনেরও অধিক নারী যুক্ত হয়েছেন। যদিও এটা কেবল সূচনা ছিল, কিন্তু শীঘ্রই এই উদ্যোগ জয়পুর, কলকাতা, আহমেদাবাদ, ব্যাঙ্গালোর এবং ইন্দোরে বিস্তার লাভ করেছে, এবং ভাদেরার লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৯ সালের মধ্যে আরো অনেক অংশীদার তৈরি করা এবং ভারতের অন্যান্য শহর তথা পুরো ভারতেই এই ধারণার ব্যাপক প্রবর্তন ও প্রচার করা।
আপনাকে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তবেই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে ধারণাটি অনেক বেশি দৃশ্যমান ও শক্তিশালী হয় এবং যেন জীবনের চাইতে ধারণাই অনেক বেশি বড় হয়ে প্রকাশ পায়।
– মিনু ভাদেরা
কোরিনা এন্ট্রোবাস
বেকডেল টেস্ট ফেস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা
স্থান: লন্ডন, যুক্তরাজ্য
#metoo এবং #timesup হ্যাশট্যাগগুলো ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আসার অনেক আগে এবং মূলত চলচ্চিত্র শিল্পের নারীদের অবস্থান নিয়ে দুর্বোধ্য কথাবার্তা বন্ধ করার জন্য কোরিনা এন্ট্রোবাস বরাবরই চলচ্চিত্র শিল্পে লিঙ্গ সমতা সচেতনতার জন্য কথা বলেছেন।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাপক ২০১৪ সালে নারীদের স্বায়ত্তশাসিত চিত্রনাট্যসমূহকে ফলাও করে বড় পর্দায় দেখানোর জন্য চলচ্চিত্রগুলো বেকডেল টেস্ট ফেস্ট স্থাপন করেছিলেন। এই উৎসবে অ্যালিসন বেকডেলের ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত কমিক স্ট্রিপের নিয়ম অনুসরণ করা হয়, যা সিনেমাতে নারীদের প্রতিনিধিত্বের অবস্থান পরিমাপ করে, এবং এটি সাধারণত বেকডেল টেস্ট নামেই পরিচিত।
এই বেকডেল টেস্টে উত্তীর্ণ হবার জন্য একটি সিনেমাকে তিনটা শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়। শুনতে হয়তো ভালো লাগছে না, তা-ই নয় কি? কিন্তু ২০০৭ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, হলিউডের ৪০% শতাংশের বেশি সিনেমা এই পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হয়েছে; যদিও গবেষণায় আরো জানানো হয়েছে, যে সিনেমা এই পরীক্ষায় পাস করতে সক্ষম হয় সেটাই বক্স অফিসে আরো অনেক বেশি অর্থ উপার্জনেও সফল হয়।
এন্ট্রোবাসের এই চলচ্চিত্র উৎসব সারা বছর জুড়েই চলতে থাকে, যাতে সিনেমা প্রদর্শন, তর্ক-বিতর্ক এবং উদীয়মান নির্মাতাদের ক্ষুদে সিনেমার প্রচারকার্য চালানো হয়। প্রায় সময়ই এই উৎসবে বার্ষিকী প্রদর্শনী করা হয়ে থাকে, যেখানে ক্লাসিক থেলমা এবং লুইস (১৯৯১) অথবা লন্ডনে প্রিমিয়ার হওয়া ইন্ডি রোমাঞ্চ সিনেমা বেয়ন্ড দ্য লাইট (২০১৪) প্রদর্শিত হয়; এবং নারীদের আতঙ্কগ্রস্ততার ইতিহাস এবং এর উপর আলোচনাও করা হয়।
এই উৎসব বড় বড় তারকাদেরকেও আকৃষ্ট করে থাকে, যাদের মধ্যে ভদ্র স্বভাবের জন্য জনপ্রিয় নির্মাতা দেশিরী আখেভান, গুগু এম্বাথার, এবং নারীর জন্য ভোটাধিকার প্রাপ্ত তারকা নাটালিয়া প্রেসও আছেন, যাদের প্রত্যেকেই প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। দ্য বেকডেল টেস্ট ফেস্ট নারীদের জন্য সেই জায়গাটা ছেড়ে দেয় যেটা তাদের প্রাপ্য- একদম কেন্দ্রীয় মঞ্চ।
অ্যালভি স্মিথ
৮ম সংশোধনী বাতিল সভার আহ্বায়ক
স্থান: ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড
এটা সত্যিই অসাধারণ। আমার প্রথম অনুভূতি ছিল অনেকটা মুক্তি পাওয়ার মতো।
– অ্যালভি স্মিথ
কথাগুলো অ্যালভি স্মিথের; কিন্তু ২৬ মে ২০১৮ সালে যখন আইরিশ সংবিধানের ৮ম সংশোধনী আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়, তখন দেশজুড়ে হাজার হাজার নারীর অনুভূতির প্রতিফলন ঘটেছিল। জনসাধারণের নির্বাচনের অধিকারের জন্য ক্যাথলিক চার্চ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত এক সমাজের বিরুদ্ধে দীর্ঘ এবং তিক্ত একটি যুদ্ধের সফলতা উদযাপন করতে উৎফুল্ল, অশ্রুসিক্ত হাজার হাজার জনতা ডাবলিন ক্যাসেলের বাইরে জড়ো হয়েছিল সেদিন।
৮ম সংশোধনী এক দীর্ঘ সময় ধরে নারীদের গর্ভধারণের বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিল, বিশেষ করে নিরাপদ এবং আইনী গর্ভনিরোধের ব্যবস্থাকে এটা প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল। এই আইনটি বাতিল করার আন্দোলন ২০১২ সালে জাতীয় পর্যায়ে চলে আসে যখন গ্যালওয়েতে সাভিতা হ্যালেপ্পানাভার তার জীবন বেঁচে যাবে এমন এক সিদ্ধান্তে আসার পরেও অপরিকল্পিত গর্ভস্রাবের কারণে মারা যান। স্মিথ এই বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন কয়েক দশক যাবত এবং যখন ৮ম সংশোধনী বাতিল সভার জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয় তখন তিনি সেই গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ছিলেন এবং তারা দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।
আয়ারল্যান্ডের নারীদের জন্য ইতিহাস গড়া এই বিজয়ের পরও স্মিথ কিন্তু এই জয় নিয়েই কেবল সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সমস্যাগুলো নিয়েই তিনি খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন- সঠিক ডাক্তার বেছে নেওয়া, গর্ভধারণের ১২তম সপ্তাহ পরে গর্ভপাতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা, উন্নত চিকিৎসা এবং সুযোগ-সুবিধার অভাব- যার মানে দাঁড়াচ্ছে গর্ভপাতের জন্য অনেক কষ্ট করে এখনো নারীদের ইংল্যান্ড ভ্রমণ করা লাগে। সে সুবাদেই ২০১৯ সালের তার প্রচারাভিযানের উপরের দিকে থাকবে আয়ারল্যান্ডের নারীদের জন্য গর্ভপাতের বিষয়টিকে আরো সহজ এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে গড়ে তোলা, উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রতিও থাকবে বিশেষ নজর, কেননা সেখানে গর্ভপাতের বিষয়ে আইনি কোনো পথই নেই।
আমার এতটা দূর হেঁটে এসে হুট করে রাস্তা থেকে আমাদের পাগুলো সরিয়ে নিতে পারি না।
– অ্যালভি স্মিথ
নাজিন বেলুচ
চলচ্চিত্র নির্মাতা
স্থান: লায়ারি টাউন, পাকিস্তান
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজিন বেলুচ তার নির্মিত শর্ট ফিল্ম লায়ারি: প্রিজন উইদাউট ওয়াল উপস্থাপন করেছেন। এই শর্ট ফিল্মটি মূলত একজন মোহমুক্ত পিতা এবং তার ফুটবল-মোহগ্রস্ত ছেলের গল্প। বেলুচের জন্মস্থান লায়ারি শহরের রাস্তাঘাটে এই শর্ট ফিল্মের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। এটা এমন একটা শহর যেটা এখনো অপরিকল্পিত জেলার অবস্থাতেই আছে এবং শর্ট ফিল্মটা বেশ কিছু পুরষ্কারও জিতে নেয়। তবে, সবচাইতে বেশি প্রশংসা কামিয়েছে নির্মাতা বেলুচ, কেননা তার অবিচল মতামত এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাধারাই মূলত দর্শক এবং সমালোচকদের অবাক করে দিয়েছে।
যদি আমি একজন নারী হয়ে থাকি তাহলে (আমার সাথে) পুরো দলটার সবাইকেই নারী হতে হবে এবং ব্যাপারটা এমন নয় যে ২০ জনের একটা পুরুষ দলের মধ্যে আমি একা নারী হিসেবে কাজ করবো।
– নাজিন বেলুচ
পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্পে নারীদের বর্তমান অবস্থানে পুরো অবদানটাই বেলুচের এবং তিনি এখন চলচ্চিত্র শিল্পের নারীদের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। এমন একজন নারী তিনি, যিনি কি না পুরুষতান্ত্রিক চলচ্চিত্র শিল্পের নারীদের অবাধ বিচরণের মাধ্যমে কাজের জায়গা তৈরি করে দিয়েছেন এবং অন্যান্য নারীদের কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করছেন।
২০১৯ সালের জন্য বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ একসাথে শুরু করেছেন ইতিমধ্যেই; যদিও তিনি পাকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী রোমান্টিক ধারা থেকে বেরিয়ে নিজস্ব ধারায় কাজ করেছেন এবং এটা করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু একইসাথে তিনি নিজেকে ললিউড এর অংশ বলেও মনে করেন।
ম্যান্ডকাই জারগলসেই্কান
ফ্যাশন ডিজাইনার
স্থান: লন্ডন এবং মঙ্গোলিয়া
আমাদের প্রায় ৮০% শতাংশ কর্মীই নারী।
– ম্যান্ডকাই জারগলসেইকান
ম্যান্ডকাই যদিও লন্ডনেই বসে ডিজাইন করেন, কিন্তু তার ম্যান্ডকাই কালেকশন মঙ্গোলিয়াতেই তৈরি হয়, যেখানে তাদের পারিবারিক একটি কারখানা আছে। ১৯৯৩ সালে কমিউনিস্ট ধারা যখন মঙ্গোলিয়াতে জনপ্রিয়তা লাভ করছে, তখনকার সময়ের অন্যতম প্রধান ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছিল এটি এবং স্থানীয় নারীদেরকেই তারা কাজে নিয়েছিল। নিজের সম্প্রদায়ের জন্য কিছু করে দেওয়াটা সবসময়ই জারগলসেইকানের কাছে অগ্রাধিকার পায়।
আমরা হাতে করা কারচুপি শিল্পের প্রশিক্ষণ দেই মহিলাদের। আমাদের সাথে এমন কয়েকজন কর্মী আছেন যারা কারখানার শুরু থেকেই ছিলেন। তাদের কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা আছে। তবে আমরা স্থানীয় ডিজাইনার এবং শিল্পীদের একটি তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করার জন্য পশ্চিমা ফ্যাশন শিল্পের জ্ঞানের উপর জোর দেই।
– ম্যান্ডকাই জারগলসেইকান
মঙ্গোলিয়ান ছাগলগুলোকে মূলত কাশ্মিরী ছাগল বলা হয়ে থাকে। এদের গা ভর্তি পশম থাকে এবং অসাধারণ এক পরিবেশ টিকে থাকার ক্ষমতাই মূলত এদের গায়ের পশম থেকে তৈরি সুতাকে বিশ্বের সবচাইতে নমনীয় সুতায় পরিণত করেছে। এই উলের সরবরাহটা ম্যান্ডকাই স্থানীয় এবং দীর্ঘস্থায়ী দুই উপায়েই পেয়ে থাকেন।
আরিয়া ওয়েলশ
যুক্তরাজ্যের মিস ট্রান্সজেন্ডার
স্থান: পার্থ, স্কটল্যান্ড
আরিয়া নিজেকে মেলে ধরতে বলতে গেলে সবকিছুই ত্যাগ করেছেন। ২০১৫ সালে তিনি পুরুষ থেকে মহিলা হওয়ার রূপান্তর প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা তার কাছ থেকে তার ঘর, বাগদত্ত, চাকরি, কুকুর এবং বন্ধুবান্ধবকেও কেড়ে নেয়। তার ভেতরের নিজস্ব সত্ত্বা কে বের করে আনার জন্যই এত কষ্ট সত্ত্বেও তিনি সবকিছু সয়ে গেছেন। বিধ্বংসী ক্ষয়ক্ষতি থেকেই বিচিত্র কিছুর সূচনা করা যায়। আরিয়া বিশ্বাস করতেন, যা চলে গেছে তা গেছেই, কিন্তু সামনে যা আসবে তা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।
তার এই অভিজ্ঞতার সবচাইতে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে সাহস এবং নিজের জীবনের কথা জনসম্মুখে বলার সিদ্ধান্ত নেয়া। তিনি এজন্য ফেসবুকে শুধুমাত্র একটি স্ট্যাটাস দেননি অথবা একটি ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবেও ছাড়েননি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ট্রান্সজেন্ডার বিউটি কনটেস্টে অংশগ্রহণ করবেন। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিযোগিতার সকল প্রতিযোগীকেই ট্রান্সজেন্ডার হতে হবে। উপরন্তু, গ্র্যান্ড ফাইনালের যোগ্য প্রার্থী হতে হলে সকল প্রতিযোগীকেই আবশ্যিকভাবে নিজের পছন্দের একটি দাতব্য সংস্থার জন্য সাহায্য তহবিল গঠন করতে হবে। আরিয়া স্যান্ডস নামক এক সংস্থার জন্য প্রচারাভিযান চালানো শুরু করেন, যা মূলত মৃত সন্তান প্রসব সংক্রান্ত একটি সংস্থা। নভেম্বর মাসে এই প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিজয়ীকে ১০,০০০ পাউন্ড দেয়া হয় অস্ত্রোপচারের সাহায্যার্থে। শেষমেষ আরিয়া বিজেতার মুকুট পরতে সক্ষম হন।
আমার মনে হয়েছে আমিই যেন যুক্তরাজ্যের শেষ মিস ট্রান্সজেন্ডার হতে যাচ্ছি এবং তাই আমার অভিপ্রায়গুলোও জানান দেয় যে, এই নাম এবং এর সাথে জড়িত সকল দায়দায়িত্বের ভার আমি নিজেই বহন করবো।
– আরিয়া ওয়েলশ