![](https://archive.roar.media/wp-content/uploads/2017/12/fgsd.jpg)
বড়দিন প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আর সেইসাথে বড়দিনকে নিয়ে আমাদের ভ্রান্ত চিন্তাগুলোও জেগে উঠেছে নতুন করে। বড়দিন বা ক্রিসমাস সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি আর সেগুলোর অধিকাংশই সত্যি। তবে তা-ই বলে সবগুলো নয়। বছরের পর বছর ধরে বড়দিন বা ক্রিসমাস নিয়ে আমাদের মধ্যে থাকা ভুল ধারণাগুলোকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন!
‘এক্স’ অর্থ যিশু খ্রিষ্ট
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/12/x-701x438.jpg)
আমরা অনেক সময় শুভ বড়দিনের ইংরেজি লিখতে গিয়ে লিখে ফেলি ‘হ্যাপি ক্রিসমাস’ বা ‘Happy Xmas’। ক্রিসমাসের বানানে এমন ‘এক্স’ কেন ব্যবহার করা হয়? ছোটবেলায় আপনার মনেও কি এমন প্রশ্ন আসেনি? অনেকেই এটাকে যিশু খ্রিস্টের চিহ্ন বলে মনে করেন। কিন্তু বাস্তব একেবারে ভিন্ন। ক্রিসমাস শব্দটিকে গ্রীসে ডাকা হয় Christos (χριστος) নামে, যার বানানটা শুরু হয় এক্সের মতন দেখতে একটি অক্ষর দিয়ে। আর সেখান থেকেই ছোট করে একসময় ক্রিসমাসের বানান হয়ে গিয়েছে Xmas।
বড়দিন আর খ্রিস্টান ধর্ম একসাথে ছড়িয়েছে পৃথিবীতে
হ্যাঁ, বড়দিন আর খ্রিস্টান ধর্ম একে অন্যের সাথে জড়িত। তবে তার মানে এই নয় যে, যখন থেকে পৃথিবীতে খ্রিস্টান ধর্ম ছড়াতে আরম্ভ করেছে, ঠিক তখন থেকেই বড়দিন পালন করার রেওয়াজ হয়েছে। অনেকেই ভেবে থাকেন যে, প্যাগান ধর্ম, উৎসব আর ছুটির দিনগুলোকে সরিয়ে দিয়ে খ্রিস্ট ধর্মের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা জায়গা করে নিয়েছে। কথাটি সত্যি, তবে পুরোপুরি নয়। যিশু খ্রিস্টের জন্ম উদযাপনের অনেক আগে থেকেই খ্রিস্ট ধর্ম পৃথিবীতে এসেছিল। এ ব্যাপারে রোমান অনেক লেখকের অভিমত পাওয়া যায়।
কারো জন্মকে পালন করার চাইতে মৃত্যু নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন সে সময় সবাই। তাই বড়দিনের আগেও উদযাপিত হয় ইস্টার সানডে এবং গুড ফ্রাইডে’র মতন দিনগুলো। ২০০ খ্রিস্টাব্দে যিশু খ্রিষ্টের জন্ম উদযাপনের ব্যাপারটি আসে। মিশরীয় এক লেখনীতে তারিখটি ছিল ২০ মে। চতুর্থ শতকের মাঝা বরাবর এসে ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে পালিত হতে শুরু করে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন বা বড়দিন। আর ১৭ শতক আসতে আসতে ব্যাপারটি বর্তমান জনপ্রিয়তায় এসে পৌঁছায়।
বড়দিন প্যাগান উৎসবের কথা মাথায় রেখে পালিত হয়
অনেকেই ভেবে থাকেন, প্যাগান ধর্মের উৎসবগুলোর সময়ে প্যাগান ধর্মাবলম্বীরাও যেন উৎসবে অংশ নিতে পারে সে কথা ভেবেই বড়দিন পালিত হয় ২৫শে ডিসেম্বর, দক্ষিণায়নের দিনে। ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। খ্রিস্টান ধর্ম প্যাগান কোনো উৎসবকে নিজেদের উৎসবের সময় বানাতে চায়নি। বরং যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে প্যাগান ধর্ম থেকে দূরে থাকার। তবে একটা সময় ধীরে ধীরে প্যাগান সংস্কৃতির কিছু ব্যাপার খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে চলে আসে। তবে সেটা ১২ শতকের আগে নয়। তো, এখন প্রশ্ন হলো, ২৫শে ডিসেম্বর কেন বড়দিন পালিত হয় তাহলে?
যদি প্যাগান ধর্মকেই অনুসরণ না করা হয়, তাহলে ২৫শে ডিসেম্বর পালনের কারণটা কী? রোমান দিনপঞ্জিকা অনুসারে, ২৫শে মার্চ যিশু গর্ভে আসেন এবং ২৫শে মার্চেই তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। আর ঠিক তার নয় মাস পরেই আসে ২৫শে ডিসেম্বর। হিসেবটা সহজ!
তিনজন জ্ঞানী মানুষ
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/12/wm2-701x684.jpeg)
বড়দিনের খুব বিখ্যাত একটি ব্যাপার হলো থ্রি ওয়াইজ ম্যান বা তিনজন জ্ঞানী মানুষ, যারা কিনা আকাশের তারাকে অনুসরণ করে বেথেলহামে যান যীশু খ্রিষ্টের খোঁজে। বাইবেলে ঠিক এভাবে বলা না হলেও ম্যাথিউ (২:১-১২) তে এ ব্যাপারে কিছু কথা বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে জ্ঞানী মানুষ সম্পর্কে, “যে কিংবা যারা খোঁজ নিয়ে যিশুর সাথে দেখা করতে যান।” পরবর্তীতে মায়ের সাথে শিশু যিশুকে দেখে তাকে স্বর্ণ, ধূপ এবং গন্ধরস দেন। এখানে কিন্তু তিনি তিনজন জ্ঞানী মানুষের কথা কিংবা তাদের রাজাকে কিছু জিজ্ঞেস করে উটের পিঠে চড়ে আসার কথা বলেননি। তবে এ সবকিছুই কিন্তু আমরা প্রতি বছর বড়দিন এলেই বলতে থাকি!
বড়দিনে প্রচুর গাছ কাটা হয়
আমাদের সবাই এমন একটা ব্যাপার ভেবেই নিই যে, বড়দিন মানেই গাছ কেটে সেটাকে সাজানো। আর তাই বড়দিন হলেই অনেকগুলো গাছ কাটা হবে আর সেগুলোকে সাজানো হবে। পরিবেশের ক্ষতি করা হবে। আসলেও কি ব্যাপারটি তা-ই? একদম না! বড়দিনে মোট দু’রকমের গাছ মানুষ ব্যবহার করে। একটি হলো আসল গাছ, অন্যটি নকল। যারা আসল গাছ ব্যবহার করেন, তারা বড়দিনকে ভালোভাবে উদযাপন করতে চান। আর যারা নকল গাছ ব্যবহার করেন, তারা পরিবেশকে ভালো রাখতে চান। কিন্তু আসলেও কি এতে কোনো লাভ হয় কিংবা ক্ষতি হয়? একেবারেই না।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/12/ct1-701x394.jpg)
একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যে, বড়দিনে যে আসল গাছগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো কিন্তু মোটেও বন থেকে কেটে আনা নয়। বড়দিন উপলক্ষেই কয়েক মাস আগে সেগুলো লাগিয়ে বড় করা হয়, যাতে করে বড়দিনে ব্যবহার করা যায়। সেগুলো পরিবেশের গড় ভালো থাকা কিংবা খারাপ থাকায় তেমন একটা প্রভাব রাখে না। আর যারা নকল গাছ কেনেন বড়দিন উপলক্ষে, তারাও যে খুব একটা ভালো কাজ করছেন সেটা কিন্তু নয়। প্রতি বছর একটি করে গাছ কেনার কোনো মানেই হয় না। নকল গাছ তো নষ্ট হয়ে যায় না। তাই যদি ব্যাপারটা এমন হয় যে, বড়দিন উপলক্ষে একটি গাছ কিনে সেটাকেই নষ্ট না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে, তবেই সেটার আসল সদ্ব্যবহার করা সম্ভব।
যিশুর জন্ম দৃশ্য
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/12/nati-701x447.jpeg)
যিশু খ্রিস্টের জন্ম দৃশ্য নিয়ে অনেক রকমের কথা বলা হয়। সবসময় আমাদের চিন্তা, আমাদের আঁকা ছবি, বর্ণনা- সবকিছুতেই দেবদূত, জ্ঞানী মানুষ, রাখাল এবং আরো অনেকের মাঝখানে আলো করে থাকেন যিশু খ্রিস্ট। তবে বাস্তবে এমন কিছুর কোনো প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায় না। লুক এবং ম্যাথিউ- এই দুজনের কথা এক্ষেত্রে আমরা যদি সত্যিও মেনে নিই, তবু তাদের দুজনের বর্ণনা কিন্তু কখনো একরকম ছিল না। ম্যাথিউ বলেছেন জ্ঞানী মানুষের কথা। আর অন্যদিকে লুক বলেছেন রাখালের কথা। সেইসাথে ভেড়া আর দেবদূতেরা তো ছিলেনই। তবে মজার ব্যাপার হলো এই দুটো দল কখনো একসাথে দেখা করেনি। লুক এবং ম্যাথিউ- দুজনের বর্ণনায় আলাদা আলাদাভাবে দেখতে পাওয়া গিয়েছে এদেরকে। জন্ম দৃশ্য নিয়ে যারা কাজ করেছেন, সবখানে পাওয়া গিয়েছে ষাঁড় এবং গাধাকে, যাদের কথা বাইবেলে কখনো বলাও হয়নি।
সান্তার বলগা হরিণ
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/12/re-701x394.jpg)
বলা হয় সান্তা ক্লজ চরিত্রটি এসেছে মূলত সেইন্ট নিকোলাসের কাছ থেকে। সেইন্ট নিকোলাস আর বলগা হরিণের কি কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে? আদতে বলগা হরিণের পুরো ব্যাপারটাই এসেছে সাইবেরিয়ার জাদুর মাশরুম বা আমানিতা মুসকারিয়া থেকে। এই মাশরুমটি খেলে বেশ একটা তন্দ্রাভাব কাজ করতো মানুষের মধ্যে, দৃষ্টিভ্রম হতো। ফলে সে সময় আশেপাশে দেখা বলগা হরিণকেই আকাশে উড়তে দেখতো তারা। কল্পনা করতো বড়দিনের সময় সান্তা এমন হরিণে করে এসেই সব উপহার দিয়ে গিয়েছেন।