মোটিভেশনাল স্পিচ শোনার সময় কিংবা ভীষণ অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো সিনেমা দেখার ঠিক পর মুহূর্তে আপনার কী মনে হয়? নিশ্চয়ই আপনি ভেতরে ভেতরে একধরনের আনন্দ অনুভব করেন এই ভেবে যে, আপনি সাফল্যের সূত্র পেয়ে গেছেন! পুরো পৃথিবীটাকেই যেন আপনি এক ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছেন, যেরকমটা আগে মনে হয়নি। আবার কারো কারো মনে হতে পারে, সামনের দুই-একদিন বা দুই-এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি তার অভ্যাস ও দৈনন্দিন রুটিন বদলে হয়ে উঠতে পারবেন সম্পূর্ণ নতুন এক মানুষ।
কিন্তু এর ঠিক পর দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনার কী মনে হয়? নিজেকে আগের চেয়েও বেশি হতাশ মনে হয় কি? আগেরদিন আপনার মনে অণুপ্রেরণার যে পাহাড় গড়ে উঠেছিল, সেটা হুট করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার হতাশা, আপনার মনে আগে থেকেই জমে থাকা হতাশাগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আপনাকে আরও বিষন্নতার দিকে ঠেলে দেয়? যদি এমনটাই হয়ে থাকে, তাহলে জেনে রাখুন, এই সমস্যা আপনার একার নয়; বেশিরভাগ মানুষ, যারা মোটিভেশন বা অণুপ্রেরণা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তারাও এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
মোটিভেশন ও ইন্সপিরেশন কী
মোটিভেশন (Motivation) ও ইন্সপিরেশন (Inspiration) শব্দ দুটোর অর্থ আপাতদৃষ্টিতে খুব কাছাকাছি মনে হলেও ব্যাপক অর্থে এদের মধ্যে খানিকটা পার্থক্য রয়েছে। ইন্সপিরেশন বা অনুপ্রেরণাকে একটি প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে, যার উৎপত্তি ও আবাসস্থল মানুষের মন এবং যা কোনো ব্যক্তির অনুভূতিগুলোকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে থাকে। অপরদিকে, মোটিভেশন বা প্রণোদনা সম্পর্কে বলা যায়, এটি অনুপ্রেরণা বা অন্য কোনো বাহ্যিক প্রভাবক দ্বারা প্রভাবিত একধরনের মানসিক অবস্থা, যা কোনো ব্যক্তিকে কোনো বাস্তবিক লক্ষ্য পূরণ করার জন্য তাড়না দেয়।
খুব সহজে ব্যাপারটা বোঝার জন্য বলা যেতে পারে, যখন আপনি কোনো অনুপ্রেরণাদায়ক সিনেমা দেখেন বা বই পড়েন, কিংবা আপনার প্রিয় কোনো বক্তার ভাষণ শোনেন, তখন আপনার মধ্যে একধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করে, আপনি মনে করেন যে, আপনার সামনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তখন আপনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলা চলে (Inspired)। কিন্তু এই অনুপ্রেরণা বা অন্য কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনি যখন কোনো একটা লক্ষ্য স্থির করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেন বা সেই উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন, তাহলে বলা যায়, আপনি প্রণোদিত হয়েছেন (Motivated)।
ইন্সপিরেশনাল স্পিকার বা বক্তারা সাধারণত তাদের বক্তব্যে সফল ব্যক্তিদের গল্প বা অনুপ্রেরণাদায়ক কোনো প্রাকৃতিক উপমাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। আর, মোটিভেশনাল স্পিকাররা বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সমস্যাকে নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করেন এবং সেটাকে আপনার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী আপনার উপর প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন, যেন আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রাত্যহিক কাজে গতি আনতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে শুধু পেশাদার মোটিভেশনাল স্পিকারদের কথা ভাবলে হবে না, যারা অর্থের বিনিময়ে মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে থাকেন। ব্যক্তিগতভাবে আপনিও হতে পারেন আপনার কাছের কোনো মানুষের মোটিভেশনের উৎস। হয়তো আপনারই কোনো বন্ধু বিভিন্ন প্রকার সমস্যা বা বিপদে পড়ে আপনার পরামর্শ নিতে আসে। কিংবা কখনো কখনো তাকে হয়তো বিষন্নতা বা হতাশা গ্রাস করতে চায় এবং ঠিক তখন আপনিই তাকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন।
খেয়াল করুন, তখন কিন্তু আপনি নিজেই মোটিভেশনাল স্পিকারে পরিণত হন। কিংবা উল্টোটাও হতে পারে, আপনার প্রয়োজনে আপনারই কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী মোটিভেশনাল স্পিকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন। মোটিভেশনের ব্যাপারটা তাই গুরুত্বহীন নয়।
কেন মোটিভেশনাল স্পিচ সবসময় কাজে দেয় না
আমরা সবসময় মোটিভেশন ধরে রাখতে পারি না। কিন্তু কেন? যখন আমরা মোটিভেশন ধারণ করি, তখন তো সব ঠিকই থাকে। কিন্তু পরে কি কোনোকিছু গোলমেলে হয়ে যায়? নাকি আমরাই নেতিয়ে পড়ি? নাকি ‘মোটিভেশন’ নামক ব্যাপারটাতেই সমস্যা আছে? দেখা যাক, কী কী কারণে মোটিভেশনাল স্পিচ থেকে অর্জিত প্রণোদনা বা মোটিভেশন আমরা সহসাই হারিয়ে ফেলি।
দক্ষতা, জ্ঞান ও সুযোগের অভাব
প্রথমেই ধরে নিই, আপনি একজন ব্যতিক্রমধর্মী মানুষ এবং কোনোভাবে আপনি মোটিভেশন অর্জন করলেন। আরও ধরে নিই, আপনার এ মোটিভেশন সহসাই মিলিয়ে যাবে না। তার মানে এ মোটিভেশন আপনাকে ‘বড় কিছু’র দিকে ধাবিত করবে। কিন্তু আপনি কি সেই ‘কিছু’টা অর্জন করতে পারবেন? সেটা নির্ভর করছে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতার উপর। আবার আপনার আশেপাশের পরিবেশ থেকে আপনি কতটা সহায়তা পাচ্ছেন, সেটাও একটি বড় ব্যাপার।
ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুর পড়নে খুব সুন্দর একটা টি-শার্ট দেখে ভাবলেন, এর চেয়ে সুন্দর টি-শার্ট আমার চাই। আপনি কাজে নেমে পড়লেন (আপনি মোটিভেটেড)। আপনি হয়তো খুব সুন্দর একটা টি-শার্টের নকশা কল্পনা করতে পারেন, কিন্তু আপনি জানেন না কীভাবে একটি টি-শার্টের নকশা করতে হয় (জ্ঞানের অভাব)। আর যদি জেনেও থাকেন, তবুও হয়তো আপনি কাজটি করতে পারেন না (দক্ষতার অভাব)। আবার আপনি যদি নকশা করেও ফেলেন, কিন্তু সে নকশাকে টি-শার্টে পরিণত করার মতো কোনো দোকান আপনার এলাকায় না থাকে (পারিপার্শ্বিক সহায়তা বা সুযোগের অভাব)। তাহলে আপনার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলো না।
একইভাবে আপনার কম্পিউটার প্রযুক্তি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষতা না থাকলে আপনার যত প্রবল ইচ্ছা বা মোটিভেশনই থাকুক না কেন, আপনি একজন ভালো প্রোগ্রামার হতে পারবেন না। আবার যথেষ্ট জ্ঞান ও দক্ষতা থাকার পরও আপনার যদি একটি কম্পিউটারই না থাকে, তাহলে আপনি প্রোগ্রামিংই করতে পারবেন না। অর্থাৎ, সবকিছু থাকা সত্ত্বেও আপনার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।
যদিও ছোট একটি বিষয়ের মাধ্যমে উদাহরণটি দেওয়া হলো, বড় পরিসরে কোনো লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি খাটে। অর্থাৎ শুধু মোটিভেশন পাওয়াটাই সবকিছু নয়, এটাকে কাজে লাগানোর জন্যও কিছু গুণাবলী বা সুযোগের প্রয়োজন।
উদ্দেশ্যহীনতা
আপনি হয়তো কোনো মোটিভেশনাল স্পিকারের বক্তব্য থেকে কিংবা তার লেখা কোনো বই পড়ে মোটিভেশন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভাবুন তো, এ মোটিভেশন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আপনি ঠিক কী করতে চাচ্ছেন? আপনার সামনে একদম সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট কোনো লক্ষ্য আছে কি? এর উত্তর যদি “না” হয়, তাহলে আপনি হয়তো মোটিভেশন প্রাপ্ত হয়ে এলোমেলোভাবে কঠিন পরিশ্রমই করে যাবেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা আপনার তেমন একটা কাজে আসবে না। কেননা, আপনি নিশ্চিতভাবে জানেনই না যে আপনি কী চান।
ধারাবাহিকতার অভাব
আপনাকে সফলভাবে মোটিভেট করার পর আপনি সাধারণত কোনো লক্ষ্য স্থির করে রাখেন, কিংবা কিছু কাজ নিয়মিত করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সে কাজগুলো করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় আপনি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেন না। ফলে সেই অভ্যাসটিও আপনার মাঝে গড়ে ওঠে না এবং সেই কাজটির কথা একসময় আপনি ভুলেও যান।
বক্তার ব্যর্থতা
অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে শ্রোতাদের মোটিভেট করতে না পারার দায়টা মোটিভেশনাল স্পিকারের উপরেই বর্তায়। তিনি হয়তো শ্রোতাদের সমস্যাটা ধরতে পারেন না ঠিকমতো। ফলে ভুলভাবে তাদেরকে মোটিভেট করার চেষ্টা করেন। কিংবা হয়তো তিনি নিজে যে প্রক্রিয়ায় সফলতা অর্জন করেছেন, শ্রোতাদেরকেও ঠিক একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেন। কিন্তু একইরকম পরিস্থিতি সবখানে খাটে না, আবার সবার কর্মপদ্ধতিও এক নয়।
বেশিরভাগ মোটিভেশনাল স্পিকার বা ইন্সপিরেশনাল স্পিকারই বড় যে ভুলটি করে থাকেন তা হলো, তারা আপনাকে বলেন, “নিজেকে বদলান, তারপর কাজটি করে ফেলুন’। অথচ বলা উচিত, ‘কাজটি করতে গিয়ে আপনি এমনিতেই বদলে যাবেন’। মানুষ পরিবর্তনকে সহজে নিতে পারে না কিংবা অর্জন করতে পারে না। তাই তার পরিবর্তনের পেছনে বেশি গুরুত্ব আরোপ করলে সেটা খুব একটা কাজে দেয় না। বরং, সে যেভাবে আছে, সেভাবে থেকেই কোনো কাজ কীভাবে করতে পারে, সেই উপায় বাতলে দিলে তাকে তুলনামূলক সহজে মোটিভেট করা যেতে পারে।
ভুল ও অতিরঞ্জিত উপলব্ধি
যখন কোনো শ্রোতা মুগ্ধ হয়ে মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে থাকেন, তখন তিনি সাধারণত কল্পনার জগতে বিচরণ করেন এবং শুধু সম্ভাবনাগুলোই দেখতে পান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি যখন বাস্তব চিন্তাজগতে ফিরে আসেন তখন অনুভব করেন যে, বাস্তবে সব কিছু এত সহজ না। এ চিন্তাটা তাকে আরও হতাশার দিকে ধাবিত করতে পারে।
আবার কখনোও বা বক্তা অত্যন্ত সাবলীল ও সুচারুভাবে তার বক্তব্য ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে নিজের অজান্তেই নিজেকে অনেক স্মার্টভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। এতে বক্তার সাথে শ্রোতার মনস্তাত্ত্বিক একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়, যা শ্রোতার মোটিভেশন অর্জন করাকে বাধাগ্রস্থ করে। কেননা, তখন শ্রোতার কাছে বক্তব্যের চেয়ে বক্তাই মুখ্য হয়ে ওঠে।
মোটিভেশনের সফলতা যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে
এখন কিছু বিষয়ের দিকে আলোকপাত করা যাক, যেগুলো নির্ধারণ করে মোটিভেশনের প্রক্রিয়াটা কতটা সাফল্যমন্ডিত হবে।
বক্তার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি
যার কাছ থেকে আপনি মোটিভেশন আশা করছেন, তার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন, তাহলে ওয়ারেন বাফেটের লেখা পড়ে বা তার কথা শুনে আপনি যতটা মোটিভেটেড হবেন, আপনার অপরিচিত কোনো ভালো বক্তাও সম্ভবত আপনাকে ততটা প্রভাবিত করতে পারবেন না। এমনকি যদি তারা উভয়েই একই কথা একইভাবে বলে থাকেন, তবুও।
আবার বক্তব্যের শুরুতেই যদি বক্তার প্রতি আপনার নেতিবাচক ধারণা এসে যায়, তাহলে তিনি যত কার্যকর বক্তব্যই দিয়ে থাকেন না কেন, সেটা আপনার উপর ততটা প্রভাব হয়তো ফেলবে না।
প্রেক্ষাপট ও বিষয়ভিত্তিক মোটিভেশন
একজন মোটিভেশনাল স্পিকার কোন বিষয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন বা কোন প্রেক্ষাপট থেকে আপনাকে মোটিভেট করার চেষ্টা করছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রেক্ষাপট থেকে আপনাকে মোটিভেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তা যদি আপনার বর্তমান অবস্থার সাথে (সামগ্রিক অবস্থার কথা বলা হচ্ছে) সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে আপনার জন্য তা বেশি কার্যকর হবে।
যেমন, আপনি গভীরভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে থাকলে অথবা বিষন্নতায় ভুগে থাকলে আপনাকে কোনো বিষয়ে মোটিভেট করাটা হয়তো ততটা সহজ হবে না। কিন্তু আপনার অবস্থা যদি এমন হয় যে, আপনি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কোনো একটা ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন এবং সেই বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছেন, কিন্তু কাজটি শুরু করার জন্য পর্যাপ্ত সাহস পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় একজন সফল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাওয়া সামান্য মোটিভেশন আপনাকে সাহস যুগিয়ে আপনার পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
আবার যে বিষয়ে মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে, সেটার ব্যাপারে মোটিভেশনদাতার জ্ঞান কতটা গভীর, তা-ও ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আপনি নানাবিধ কারণে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হলে সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানী আপনাকে যতটা মোটিভেট করতে পারবেন, আপনার বাবা-মা’ও খুব সম্ভবত ততটা পারবেন না।
বক্তার উপস্থাপনা
বক্তব্য দেওয়ার সময় বক্তা শ্রোতার ভেতর কতটুকু প্রবেশ করতে পেরেছেন, সেটা মোটিভেশনের ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাবক। শ্রোতা যখন দেখতে পায় বক্তা তারই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তার কোনো সমস্যা ব্যাখ্যা করছে, তখন শ্রোতার কাছে বক্তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায় এবং তার বক্তব্যের সারমর্মটুকু শ্রোতা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন।
বক্তা যদি শ্রোতাকে কোনো বিষয়ে মোটিভেট করার সময় সে বিষয়টার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্য সমস্যা বা বিপদসমূহ নিয়েও আলোচনা করেন, তাহলে তার পরামর্শ আরও বাস্তবসম্মত মনে হয়।
আপনার মনোবল ও শারীরিক সুস্থতা
সামগ্রিকভাবে আপনার মনোবল কতটা দৃঢ় এবং একইসাথে আপনি শারীরিকভাবে সচরাচর কতটা সুস্থ থাকেন, সেটার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে যে, আপনাকে কতটা মোটিভেট করা যাবে। স্বাস্থ্য শুধু সুখেরই মূল নয়, বরং তা আপনার অভ্যন্তরীণ অনুপ্রেরণারও উৎস। ধরুন, আপনাকে এমনভাবে মোটিভেট করা হলো যেন ওজন কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করেন। কিন্তু আপনার মনোবল ও প্রত্যয় যদি অত্যন্ত দৃঢ় না হয়, তাহলে পরবর্তী দিন সকালের আরামের ঘুমকেই আপনি প্রাধান্য দেবেন। আবার আপনার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকলে আপনার মনোবল এমনিতেই দৃঢ় থাকবে না।
সময়কাল
ঠিক কতটা সময় যাবত মোটিভেশন ধরে রাখতে পারলে তা আপনার জন্য কাজে দেবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। যেমন- ফুটবল খেলার প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর কোচ খেলোয়াড়দেরকে যেভাবে মোটিভেট করে থাকেন, সেটা খেলায় বেশ কাজে দিতে পারে। কেননা, খেলার সময়কাল খুব বেশি নয়; এটুকু সময়ের মধ্যে খেলোয়াড়রা মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেন না এবং তারা সেটাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে সফল হতে পারেন।
তবে আপনাকে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য মোটিভেট করার চেষ্টা করা হলে সেটা কতটা কাজে দেবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কেননা, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া এবং আপনি এত দীর্ঘ সময় যাবত মোটিভেশন ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত। তবে আপনি যদি নিয়মিত মোটিভেশনের উৎসের সংস্পর্শে থাকেন, নিয়মিত কোনো মোটিভেশনাল স্পিকারের ভাষণ শুনে থাকেন বা বই পড়ে থাকেন, তাহলে সেটা আপনাকে সার্বক্ষণিক অনুপ্রাণিত করে রাখার সম্ভাবনা বেশি। বিষয়টা অনেকটা গোসল করার মতো; শনিবার গোসল করলে আপনি যে রবিবারও সতেজ ও পরিচ্ছন্ন থাকবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই রবিবারও আপনাকে গোসল করতে হয়। মোটিভেশনের বিষয়টাও সেরকমই।
আবার একটা মোটিভেশনাল ভিডিও অথবা বই একবার দেখলে বা পড়লে এর সারমর্মটুকু আপনার যতটা মনে থাকবে, সেটা একাধিকবার দেখলে বা পড়লে, তা মনে গেঁথে যাওয়ার সম্ভবনা নিশ্চিতভাবেই আগের চেয়ে বেড়ে যাবে।
লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা
কেউ আপনাকে মোটিভেট করার চেষ্টা করলে, আপনিও মনে মনে নির্ণয় করার চেষ্টা করেন যে, এই মোটিভেশন কাজে লাগিয়ে আপনি কী অর্জন করতে পারবেন অথবা কীভাবে লাভবান হতে পারবেন। তাই কোনো মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাকে যত ভালোভাবেই মোটিভেট করে থাকুক না কেন, আপনাকে যদি তিনি লাভবান হওয়ার স্পষ্ট উপায় বা সম্ভাবনা দেখিয়ে দিতে না পারেন, তাহলে খুব সম্ভবত সে মোটিভেশন আপনি ধরে রাখতে পারবেন না।
মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে আপনি কতটা উপকৃত হবেন, সেটা যাচাই করার জন্য উপরিউক্ত ব্যাপারগুলো বিশ্লেষণ করুন। কোনো বক্তার মোটিভেশনাল স্পিচ আদৌ অন্য কোনো মানুষের উপর কাজ করে কি না, করলেও কতটুকু করে- এ বিষয়ে অনেকের মতভেদ থাকলেও একটা বিষয়ে সকলেই একমত পোষণ করেন। আর তা হলো, মোটিভেশনটা কোথা থেকে এসেছে সেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ; মোটিভেশন আপনার অন্তরের অন্তস্থল থেকে আসলে সেটা আপনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে।
তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য কিংবা সাময়িকভাবে উদ্দীপিত হওয়ার জন্য মোটিভেশনাল স্পিচ শোনা যেতেই পারে। তবে সেটা ধরে রাখার জন্য ও দীর্ঘমেয়াদে সেটাকে কাজে লাগানোর জন্য শুধু তা শুনলেই হবে না, এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু করতে হবে আপনাকে।