Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইতিহাসের বিখ্যাত ব্যক্তিদের তাদের প্রেয়সীদেরকে লেখা প্রেমপত্র

ইট-পাথুরে শহরে চার দেয়ালে বন্দী জীবন, সে বাসাতেই হোক বা অফিসেই। সেই কাক ডাকা ভোরে বিছানার আলিঙ্গন ছেড়ে উঠতেই অফিসের তাড়া! অতঃপর বাসে ঝুলে ঝুলে বা অফিসের বড় হর্তাকর্তা হলে প্রাইভেট কারে চেপে অফিস যাত্রা। দিন শেষে ক্লান্তির ছাপ নিয়ে সেই বাড়ি ফেরা। নানা কর্মব্যস্ততায় নিজেকে সময় দেয়ার কথা মনেই থাকে না যেন।

এমন গোলক ধাঁধাঁময় জীবনপাঁকে, কোনো এক কুহু কুহু কোকিল ডাকা সকালবেলার কথা বলছি। অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতে যাচ্ছেন, এমন মুহূর্তে যদি আপনার প্রিয় মানুষটি পকেটে একখানা কাগজ গুঁজে দিয়ে আড়চোখে আপনার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হেসে বলে যে, “একা একা পড়ো কিন্তু!” দু’এক সেকেন্ডের জন্যে হলেও আপনার বুকের গহীন কোণে আনন্দের এক সমীরণ ঢেউ খেলে কি যাবে না? গাড়ির জানালায় বাইরের দিকে কর্মব্যস্ত জীবনছবি দেখতে দেখতে অফিসে ছোটার মুহূর্তে হাতখানা কি নিশপিশ করবে না? কবে চিরকুটটি খুলে শব্দগুলোর মাঝে ঝড় তুলবেন? অথবা অফিসের কাজের মাঝে কোনো এক ছুতোয় চিরকুটখানা কি পড়তে একেবারেই মনে চাইবে না? উহু! বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং এর বিপরীতটা খুব কমই ঘটতে পারে বৈকি!

‘প্রেমপত্র’- শব্দটির সাথে আমরা সকলেই খুব পরিচিত। প্রেমে পড়েননি এমন মানুষের সংখ্যা গোপনে বা প্রকাশ্যে হাতেগোনা বা নেই বললেই চলে। প্রেম বিষয়টি ভাবগত। এ প্রেমের ধরণ, রকম-সকমেও রয়েছে গাঢ় রকমের ভিন্নতা। আজকাল ফেসবুক মেসেঞ্জার, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদি নানা আধুনিকতার ভিড়ে প্রেমপত্র হারিয়ে গেলেও প্রেমপত্রের আবেদন কিন্তু একেবারেই হারিয়ে যায়নি। দুরু দুরু বুকে কাঁপা কাঁপা হাতে লেখাগুলোই ধরে রাখত অনুভবের প্রথম অনুভূতিগুলোকে৷ স্কুলফেরত রাস্তায়।

বিকেলের সোনালি পড়ন্ত আলোকে সাক্ষী রেখে হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়া সেসব প্রেমপত্র আজকের প্রজন্মের কাছে হয়তবা অচেনা। সময়ের দৌঁড়ে হয়তো চিঠিপত্র লেখার সময় হয়ে ওঠে না, তবুও যদি প্রিয় মানুষের জন্য সময় বের করে মনের না বলা কথাগুলো লিখেই ফেলেন, তবে পত্রটি প্রিয় মানুষটির হাতে পড়তেই দেখবেন কেমন এক ম্যাজিক ঘটে যায়! সময়স্রোতে ধীর বহমান একঘেয়ে জীবন মুহূর্তেই হয়ে উঠতেই পারে মারাত্মক চাঙ্গা! প্রেমময় জীবন আবারো বয়ে যেতে পারে দ্বিগুণ, তিনগুণ, চতুর্গুণ বেগে, ঠিক যেমনটি ছিল শুরুর দিকে।

হাতে লেখা প্রেম পত্র যা আজ ই-মেইল আর মোবাইল মেসেজের কারণে হারিয়ে হচ্ছে

প্রযুক্তির উৎকর্ষে চিঠিপত্র এখন জাদুঘরের উপাদান হলেও একসময় পৃথিবী কাঁপানো মহানায়করাও প্রেমপত্র লিখেছেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট খেকে শুরু করে কবি কীটস, চার্চিল থেকে হেন্ড্রিক্সের সে প্রণয়প্রস্তাব চিরকালই রোমান্সের শ্রেষ্ঠ শিহরণ দিয়ে যাবে৷ ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে তারা যেমনই হোন না কেন, তাঁদের রোমান্টিক মন কিন্তু প্রেমিক কবিপুরুষের তুলনায় কোনো অংশে কম ছিল না।

চার্লি ইয়ামসের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ বিয়ের প্রস্তাব সম্বলিত চিরকুট

আমি এখন চৌত্রিশের কোঠায় দাঁড়ানো তোমার মায়াময় রূপের বাঁধনে বুক ভাঙা এক পাগল যুবক। আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। এতটাই উন্মত্ত আমার এ ভালোবাসা। এখন চূড়ান্ত পরিণতির প্রহর গুনছে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে। আমার এ দরিদ্র ভালোবাসা হয়তো তোমাকে রাজপ্রাসাদের সুখ গড়ে দিতে পারবে না, তবুও আমৃত্যু চেষ্টা করে যাবে তোমার মুখের হাসি অম্লান, অক্ষত রাখতে।

চার্লি ইয়ামসের, রে ইয়ামসকে দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব সম্বলিত চিরকুট

হে প্রেয়সী, দেবে কি আমাকে সে সুযোগ তোমার অনামিকায় আমার দেওয়া আংটি পরাতে? তোমার অনামিকা অঙ্গুলির আংটির মাপই আমার স্বপ্নের উত্তর।

উত্তরের প্রত্যাশী।
তোমারই অনেক অনেক ভালোবাসার
চার্লস

ফেনি ব্রাউনীকে দেওয়া জন কিটসের ভালবাসাময় অপেক্ষার প্রেমপত্র

ফেনি ব্রাউনীকে লেখা জন কিটসের প্রেমপত্র

আমার মিষ্টি ভালোবাসা,
আগামীকাল তোমার মোহনীয় মুখখানা দেখার পূর্ব মুহূর্তের প্রতিটি সেকেন্ড যেন এক একটি যুগের অপেক্ষার মতোই ধৈর্য্য পরীক্ষা।
তোমার সৌন্দর্যের আবছায়া যেন আমার অনুভবেই গড়া।
তোমার ভালবাসার আবেশ যেন আমার সমস্ত হৃদয়কেই চুরি করা।

আমার প্রিয় ফেনি
ভালোবাসা রইলো
তোমারই জে. কে.

১৮১৯ সালের আগস্ট মাসে তেরেসাকে দেওয়া কবি লর্ড বায়রনের প্রেমপত্র

প্রেমময়ী,

আমি তোমার মনের বাগানে ঘুরে ঘুরে তোমারই অনুভূতির ডানায় চড়ে বেড়িয়েছি। কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি, আমি বুঝে নিয়েছি তোমার বাগানকোণে আমার প্রতি জমানো তোমার ভালোবাসা। শুধু মুখের আগল খুলে একবার বল, আমায় ভালোবাসো! সে কথা শোনার অপেক্ষার প্রহর গুনছি।

তোমারই প্রিয়

তেরেসাকে দেওয়া কবি লর্ড বায়রনের প্রেমপত্র

লিও টলস্টয়ের ভেলেরিয়া আরসেনাভকে দেওয়া প্রেমময় চিঠি

প্রিয়ন্তি,

আমি তোমার সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত, বিমোহিত। আমার এ ভালোবাসা অপার্থিব। পৃথিবীর কোনো কিছুই টলাতে পারবে না আমার এ ভালোবাসাকে। পৃথিবীর কোনো কিছুই সহজলভ্য নয়। সেরূপ তোমার প্রতি আমার প্রেম বন্দনাও আমার সাধনা।

তোমারই লিও

ভেলেরিয়া আরসেনাভকে দেওয়া লিও টলস্টয়ের প্রেমময় চিঠি

প্রেমিকার উদ্দেশ্যে সুরসম্রাট বেটোফোনের হৃদয় উৎসারিত প্রেমপত্র

ভালোবাসা সবকিছুরই দাবীদার। সে দাবীর দোহাই রেখেই বলছি- আমি শুধুই তোমার, আর তুমিও কেবলই আমার।

তোমারই
বেটোফেন

সুরসম্রাট বেটোফোনের প্রেমপত্র

বেটোফেনের আরও একটি প্রেম পত্র ছিল এমন:

আমার দেবী,

গভীর দুঃখ আর না পাওয়ার বেদনার মাঝেই যদি থাকে প্রেমের সফলতা, তবে নিশ্চয় আমাদের প্রেম সফল। না দেখার কষ্ট, বিরহের যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই যে নেই তোমার-আমার মাঝে। প্রতিনিয়ত সুরের মাঝে তোমাকেই খুঁজে বেড়াই। কিন্তু হায়! অপ্রাপ্তি তো আর প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেয় না! প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে আনন্দ খুঁজি। কিন্তু তোমার ধ্যান, সব দর্শনই মিছে মনে হয় যখন মনে পড়ে দিন শেষে আমরা রয়ে যাব যে যার মতো নিবাসে।

দেবী, তুমি কেবল আমারই দেবী, এই জন্মে না হলেও পরজন্মে মিলন আমাদের হবেই। এই তো আর কটা দিন অপেক্ষা মাত্র। তুমি সাহসী না হলে, আমি সাহস করবো কোথা হতে?

ইতি তোমারই
বেটোফেন

ভালবাসার নায়িকা জোসেফিনকে লেখা নেপোলিয়নের  আবেগময় চিঠি

নেপোলিয়নের মতো তুখোড় যোদ্ধা কি করে একজন অসাধারণ প্রেমিক হতে পারেন সেটা তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে লেখা চিঠি না পড়লে বোঝা অসম্ভব! তিনি প্রায় ৭৫ হাজার চিঠি লিখেছেন যার বেশির ভাগ ছিল যুদ্ধের ময়দান থেকেই জোসেফিনকে (পরবর্তীতে তার স্ত্রী) দেওয়া। একজন যোদ্ধার মনেও যে কি পরিমাণ প্রেম থাকতে পারে তার প্রতীক বহন করে এই চিঠিগুলো।

জোসেফিন ও নেপোলিয়ন

জোসেফিন, আমার জোসেফিন,

গতকাল সারাটি বিকেল কাটিয়েছি তোমার পোট্রেটের দিকে চেয়ে থেকেই। কী করে পারো তুমি বলতো এই কঠোর মনের যোদ্ধার চোখেও জল আনতে? আমার হৃদয় যদি একটি পাত্র হয়, তবে সেই পাত্রে ধারণ করা পানীয়ের নাম দুঃখ। তুমি কি তা বোঝো জোসেফিন? আবার কবে তোমার আমার দেখা হবে? সে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হতেই চায় না! সে অপেক্ষায়…

তোমারই
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট

জোসেফিনকে লেখা নেপোলিয়নের আবেগময় চিঠি

স্ত্রী ক্লেমিকে লেখা উইনস্টন চার্চিলের এক প্রেমপত্র

স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিয়ের পর প্রেম নাকি উবে যায়। এ কথাটিকে অসত্য প্রমাণ করেছিলেন উইনস্টন চার্চিল জুটি। তাদের হৃদয় ছিল এক অবিচ্ছিন্ন প্রেমসত্তা। তারই প্রমাণ মেলে মূলত স্ত্রী ক্লেমিকে লেখা চার্চিলের এক প্রেমপত্রের ছত্রে ছত্রে।

উইনস্টন চার্চিল ও তার স্ত্রী ক্লেমি

আমার প্রিয় ক্লেমি,

আমার মন পড়ে রয়েছে মাদ্রাজের ছোট্ট এক টেবিলে, যেখানে বসে বসে তুমি গত পত্রখানায় লিখেছো যে, আমি নাকি তোমার জীবনকে আলোকিত করেছি। চিঠিখানা পড়ে নির্বাক আমি বসে রইলাম কিছুক্ষণ। একমাত্র আমিই জানি, তোমার কাছে আমি কতটা ঋণী। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, তার সবটাই তো তোমারই দান। কত ঝড় এলো জীবনে। কিন্তু তুমিই আমার শিখিয়েছো কী করে ঝড়ের রাতেও রত্ন কুঁড়াতে হয়। সব ঝড়ের রাতে কুড়ানো রত্ন জমিয়ে রেখেছি ক্লেমি তোমায় দেবো বলে। কবে আবার দেখা হবে আমাদের? তোমার স্মৃতি আর ভালবাসা নিয়েই আমার বেঁচে থাকার প্রতিটি নিঃশ্বাস পড়ে। কখনও বদলে যেওনা যেন।

একান্তই তোমার
চার্চিল

জিমি হ্যান্ড রিক্সের প্রেমপত্র

জিমি হ্যান্ডরিক্স

লিটল গার্ল…

পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা তোমার মাঝেই নিহিত। তুমি তোমার ভালোবাসার ধারায় সহস্র স্রোতে আরও বিস্তৃত হও। তুমি ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় শুভ্র।

আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
অনেক অনেক ভালোবাসা।

জিমি হ্যান্ডরিক্স

প্রেমিকাকে লেখা জিমি হ্যান্ডরিক্সের প্রেমপত্র

তথ্যসূত্র

১) indy100.com/article/the-10-greatest-love-letters-of-all-time–x1sKxgmB3g

২) healthista.com/10-best-love-letters-time-featuring-classics-johnny-cash-june-carter-napoleon-josephine-richard-burton-liz-taylor/

৩) fastcodesign.com/1669022/12-hand-written-love-letters-from-famous-people-from-henry-viii-to-michael-jordan

৪) azazie.com/blog/the-most-romantic-love-letters-of-all-time/

৫) thoughtcatalog.com/rachel-hodin/2014/01/the-16-most-beautifully-touching-love-letters-from-famous-writers-and-artists/

Related Articles