ব্যাখাটা অনেক সহজ। আসলে পুরো ব্যাপারটাই অর্থনৈতিক। ধনী ও গরীবের মাঝে পার্থক্য যত বাড়বে, অপরাধের পরিমাণও তত বাড়বে। সত্য বলতে কি, ধনীদের জন্য সমাজে অনেক অর্থ চলে এসেছে। কিন্তু তা গরীব পর্যন্ত পৌঁছায় না। তাই গরীবরা এই অর্থ জোর করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ কারণে সমাজে নানা বিবাদের সৃষ্টি হয়। এটা আসলে খুবই স্বাভাবিক। সব জায়গায় এটা চলছে। তার উপর আমাদের এখানে তো অশিক্ষিত তরুণদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। এদের তো যৌন বিষয়ক শিক্ষা নেই-ই, কিন্তু ইন্টারনেটে ঠিকই ফ্রি পর্ণোগ্রাফি দেখতে পায়। এগুলো এদের যৌবনসুলভ মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। এরা আসলে বুঝতেই পারে না কী করবে। নারীদের এরা কেবল ভোগের বস্তু হিসেবে ভাবতে থাকে। এরা চায় ধনীদের মতো এদের জীবনেও আমোদ ফুর্তি আসুক। কিন্তু এসব পায় না বলে জোর করে ভোগ করার চেষ্টা করে, ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা না ভেবে। তাছাড়া হারানোর জন্যও এদের তেমন কিছু নেই।
উক্তিটি সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত নেটফ্লিক্সের ভারতীয় টিভি সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম’ থেকে সরাসরি তুলে দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের আসামীকে ধরতে যাওয়ার সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এই বক্তব্য দেন। নিজের জুনিয়র একজন কর্মচারী তাকে ধর্ষকদের মন মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এই ব্যাখাটি দেন।
নেটফ্লিক্স ভারতে আসার পর থেকে দর্শকদের একের পর এক মানসম্মত টিভি সিরিজ উপহার দিয়ে আসছে। এই তালিকায় যুক্ত নতুন একটি টিভি সিরিজ হলো ‘দিল্লি ক্রাইম’। ২২ মার্চ এটি ‘নেটফ্লিক্স অরিজিনাল’ হিসেবে তাদের স্ট্রিমিং সার্ভিসে যুক্ত হয়।
বাস্তব ঘটনার উপর নির্মিত এই টিভি সিরিজ
২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। ঘটনাস্থল ভারতের দিল্লি শহর। দক্ষিণ দিল্লির এক সিনেমাহল থেকে বেরিয়ে ঘরে ফিরছে দুই তরুণ তরুণী। সাদা রঙের একটি সিটি বাসে উঠলো দুজন। তারা দুজন ছাড়াও বাসে ড্রাইভারসহ আরো ৬ জন ছিল। বাসে চড়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাস্তার পাশে এক গর্তে এই দুই তরুণ তরুণীকে উলঙ্গ অবস্থায় আবিষ্কার করা হয়। দুজনেরই জ্ঞান আছে। কিন্তু তাদের শরীর নিথর। ছেলেটা নড়াচড়া করতে পারলেও মেয়েটিকে চুড়ান্ত মাত্রায় ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ দ্রুত তাদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকে।
২০১২ সালে দিল্লিতে বাসে গণ ধর্ষণের একটি ঘটনা পুরো ভারতবাসীকে স্তম্ভিত করে ফেলেছিল। উপরে সেই কাহিনীর কথাই বলা হয়েছে। এক মেয়ের ছয় জন দ্বারা ধর্ষিত ও ধর্ষণের পর শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার এই ঘটনাটি পুরো ভারতবাসীর বিবেককে নাড়া দেয়। দিল্লি পুলিশের কেস ফাইলে এর আগে কখনো এমন বীভৎস ও অমানবিক ঘটনার নমুনা পাওয়া যায়নি। চরমভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করা সেই মেয়েটিকে সমগ্র ভারতবাসী ‘নির্ভয়া’ নাম দেয়। নির্ভয়ার ধর্ষকদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সারা দেশ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
প্রায় সাত বছর আগে ঘটে যাওয়া এই বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় ‘দিল্লি ক্রাইম’ টিভি সিরিজ। সাতটি এপিসোডের এই টিভি সিরিজের জনরা হলো ক্রাইম ড্রামা। আরো স্পষ্ট করে বললে পুলিশ প্রসিডিউরাল ক্রাইম ড্রামা। অর্থাৎ যে কাহিনীতে একটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নির্দিষ্ট কোনো কেস হাতে নেয় এবং ধাপে ধাপে সেই কেসের সমাধান বের করে। অবশেষে অপরাধীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে।
কাহিনী সংক্ষেপ
বর্তিকা চতুর্বেদী দক্ষিণ দিল্লির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিসিপি)। এই চরিত্রকে কেন্দ্র করেই পুরো সিরিজের কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে। সিরিজের সূচনা হয় এই চরিত্রের মৌখিক বর্ণনার মাধ্যমে।
দিল্লি। ভারতের রাজধানী। যার জনসংখ্যা একটি ছোটখাটো দেশের সমান। প্রতি বছর এখানে প্রায় এগারো হাজার জঘন্য অপরাধের রিপোর্ট করা হয়। এসব অপরাধের প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব। যেখানে পুলিশ বাহিনীর অর্ধেকই ট্রাফিক ডিউটি ও ভিআইপিদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আটকা পড়ে যায়।
মাঝরাতে পুলিশ স্টেশন থেকে ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদীর কাছে একটি ফোনকল আসে। ফোনের অপর পাশ থেকে তিনি জানতে পারেন যে, একটি ছেলে ও একটি মেয়েকে দিল্লির মহিলাপুরের রাস্তার পাশ হতে উলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মেয়েটি মারাত্মকভাবে আহত। ফোনে এসব ঘটনা শোনার পরপরই তিনি বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। যে হাসপাতালে ছেলে ও মেয়েটিকে ভর্তি করানো হয়েছে সেখানে পৌঁছান।
হাসপাতালে পৌঁছে মেয়েটিকে দেখার পর তিনি একদম স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। মেয়েটি বাসে ছয় জনের দ্বারা গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ধর্ষকরা কেবল মেয়েটির সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। মেয়েটিকে লোহার রড দিয়ে চরমভাবে আহত করে এবং বারবার তার গোপন অঙ্গে রড ঢুকিয়ে ও বের করে দেহের ভিতরের অংশ জখম করে ফেলে। ডাক্তারের কাছে ভয়ংকর এই বর্ণনা শোনার পর ডিসিপি নিজেকে সামলাতে পারেন না। একজন নারী হিসেবে তিনি অন্তরে এক তীব্র জ্বালা অনুভব করেন। তার চোখেমুখে তা ফুটে ওঠে।
নিজের চাকরির ইতিহাসে আগে কখনো ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদী এমন জঘন্য কেসের সম্মুখীন হননি। তিনি কোনো বিলম্ব না করে সেই রাতেই তার ডিপার্টমেন্টের সকল দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের একত্র করতে থাকেন। যেভাবেই হোক, এই ছয়জন আসামিকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। আর তা করতে হবে সকল প্রোটোকল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের মাধ্যমে।
চরিত্র পরিচিতি ও অভিনয়
কাহিনীর মূল চরিত্রের নাম ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদী। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী শেফালী শাহ। দক্ষিণ দিল্লির সহকারী পুলিশ কমিশনারের চরিত্রকে তিনি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। দায়িত্ববোধ, আবেগ, কঠোরতা বিভিন্ন দৃশ্যে যখন যেটার প্রয়োজন হয়েছে, তা তিনি সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। পুরো সিরিজ জুড়ে লাইম লাইট তার উপরই ছিল। চরিত্রের গভীরতা ও গুরুত্বকে মাথায় রেখে তিনি সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ভুপেন্দ্র সিং ও নিতি সিং চরিত্র দুটি। ভুপেন্দ্র সিং একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার। তিনি যেমন কর্তব্যপরায়ণ ও আদর্শবাদী, তেমনি প্রয়োজনের সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে কীভাবে কাজ আদায় করে নিতে হয় তাও ভালো জানেন। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা রাজেশ তাইলাং। এই অভিনেতাকে আমাজন প্রাইম স্ট্রিমিং সার্ভিসের অপর এক জনপ্রিয় ভারতীয় সিরিজ ‘মির্জাপুর’ এও একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছে।
নিতি সিং একজন ট্রেইনি বা শিক্ষানবিশ পুলিশ অফিসার। চাকরিতে নতুন হলেও অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের থেকেও তিনি অনেক বিচক্ষণ ও কর্তব্যপরায়ণ। তার এই গুণ বর্তিকা চতুর্বেদীর চোখে পরে এবং শিক্ষানবিশ হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিতির উপর কেসের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়ভার তুলে দেন। নিতি সিং চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী রাসিকা দুগাল। এনাকেও ‘মির্জাপুর’ সিরিজটিতে গুরুত্বপূর্ণ এক পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।
অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগুলো দর্শকদের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজে তাদের ছোটখাটো কিছু চরিত্রে দেখা যায়। তবে এই সিরিজটিতে প্রত্যেক চরিত্র তাদের নিজস্ব দৃশ্যে ভালো অভিনয় করেছেন। কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও পরিচালক তাদের প্রতি সুবিচার করেছেন। পুলিশদের জীবনের ভালো-খারাপ সব দিক এই চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ধর্ষকদের মাঝে যে বাস ড্রাইভার ছিল, তার কথা আলাদা করে বলতেই হবে। বিকৃত মস্তিষ্কের এই মানুষটা আসলেই মানুষ না জানোয়ার তা দর্শককে ভাবিয়ে তুলবে। এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা মৃদুলকে অবশ্যই বাহবা দিতে হবে।
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা
ইন্দো-কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা রিচি মেহতা প্রায় ৫ বছর ধরে এই টিভি সিরিজ নিয়ে কাজ করছেন। নিজের টিমকে নিয়ে তিনি এই কেসের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করেছেন। যারা যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই ঘটনাটির সাথে যুক্ত ছিল তাদের সাথে কথা বলেছেন। যেহেতু পুলিশদের তদন্তের উপর ভিত্তি করে সিরিজের কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট সকল পুলিশ কর্মকর্তার সাথে ওঠাবসা করেছেন। তার মতে, একটি অপরাধের বিচারকার্য সাধারণ জনগণ কীভাবে দেখে এবং এর সাথে জড়িত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে দেখে, দুটি দৃষ্টিভঙ্গী সম্পর্কেই জানা জরুরি ছিল।
আমি যেই তাদের (সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের) সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম, তখন ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভেবে দেখতে শুরু করি। একজন মানুষের দ্বারা যতটুকু সম্ভব তার পুরোটাই তারা দিয়েছেন এই কেসের পেছনে। এটা শুধু এমন নয় যে, তারা তাদের কাজটাই ঠিকমতো করেছেন। এই সিরিজটি দেখলে আপনারা এটাও দেখবেন, এই কেসের সমাধান করার জন্য তাদের কত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
বাস্তবে এই কেস নিয়ে পুলিশের উপর সাধারণ জনগণের অনেক ক্ষোভ ছিল। তবে নানা ঝামেলার সম্মুখীন হয়েও ৫ দিনের মাথায় ছয় জন আসামীকেই পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়। দিল্লি পুলিশের পরিপ্রেক্ষিতে কাজটা আসলে কতটা কঠিন ছিল, তা পরিচালক সফলভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। চিত্রনাট্য এই সিরিজের অন্যতম শক্তিশালী দিক। ধীর গতি কিংবা খুব দ্রুত কাহিনী শেষ করে দেওয়ার কোনো প্রবণতা ছিল না। সাতটি এপিসোডই ছিল সমান গতিময়। দর্শক হাতে সময় নিয়ে দেখতে বসলে এক বসায় শেষ করতে পারবেন।
পুরো সিরিজের মেকিংয়ে যে জিনিসটির অনুপস্থিতি সবচেয়ে বেশি ছিল তা হলো সংবাদমাধ্যম। যেকোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটলে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তবে সংবাদমাধ্যকে এই সিরিজে একেবারেই অবহেলা করা হয়েছে। যেটুকু দেখানো হয়েছে, তা হলো কীভাবে জনগণকে সত্যিকারের খবর থেকে বঞ্চিত করা হয়। আর বেশি কভারেজের আশায় অর্ধসত্য ও মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়। এই নেতিবাচক হলুদ সংবাদিকতার দৃশ্যায়নও ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শুধুমাত্র পুলিশদের কঠোর পরিশ্রম আর তাদের জীবনযাপনকে তুলে ধরা অনেকের কাছে একতরফা লাগতে পারে। ধর্ষণের শিকার মেয়ের পরিবার ও তাদের সংগ্রামকেও আরো বড় করে তুলে ধরা উচিত ছিল।
আরেকটি বিষয় হলো ভাষা। নেটফ্লিক্সে ইংরেজি ও হিন্দি দুই ভাষাতেই সিরিজটি দেখা যাবে। তবে হিন্দি ডাবিংয়েও বেশ কিছু জায়গায় লম্বা সময় ধরে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তিকা চতুর্বেদীর নিজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যকার কথোপকথন। এই দৃশ্যগুলোতে বেশিরভাগ জায়গায়ই সবাই ইংরেজিতে কথা বলে। ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টিকটু ছিল।
যেখানে গল্প ও বাস্তবতা মিশে গিয়েছে
আমরা সাধারণত কোনো ঘটনাকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করে থাকি। একটি ঘটনার সকল দিক আমাদের চোখে পড়ে না। যেটুকু আমাদের চোখে পড়ে তা নিয়েই আমরা একটা মোটামুটি যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলি। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি মেয়ের সাথে চলন্ত বাসে যে অমানবিক ঘটনা ঘটেছিল, সেটিও অনেকটা এরকম। সাধারণ জনগণ ঘটনার বীভৎসতা মেনে নিতে পারেনি। কাউকে না কাউকে দোষারোপ করতেই হবে। মানুষ ভাবতে শুরু করে পুলিশ হয়তো চাইলে এই ঘটনাটা থামাতে পারতো। সংবাদমাধ্যমগুলোও জনগণের মনে এই ধারণা পোষণে সাহায্য করে।
আসামিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির জন্য সারা ভারতের রাস্তায় মানুষ আন্দোলনে নেমেছিল। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল। এসব শান্তিপূর্ণ মিছিলকে হরতালে রূপ দেওয়ার জন্য দরকার শুধু কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী। আবার রাজনৈতিক স্বার্থের ব্যাপারটা তো আছেই। একটি মেয়ের জীবনের সাথে এখানে কয়টি জীবন সংকটের মুখে পড়ে তা এই সিরিজ দেখলে দর্শক জানতে পারবেন। তাছাড়া এসব অপরাধের পেছনে যে আধুনিক তরুণসমাজেরও বড় ভূমিকা রয়েছে, সে দিকটিরও আলোকপাত এখানে করা হয়েছে।
আন্দোলনের প্রয়োজন আছে। এটি বিচারকার্য তরান্বিত করে। কিন্তু এই আন্দোলনই অনেক সময় সঠিক বিচারের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের নিরাপদে আদালতে নেওয়া, ফরেনসিক টিমের ঘটনাস্থল নির্বিঘ্নে পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদিতে আন্দোলন বড় রকমের বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরেকটি বিষয়ের জন্য এই টিভি সিরিজের প্রশংসা করতেই হবে। তা হলো ধর্ষণের কোনো দৃশ্য না দেখানো। বাসে আসলে কী ঘটেছিল তা জানানোর জন্য কোনো দৃশ্য দেখানোর প্রয়োজন পড়েনি। নির্মাতা ঘটনার ব্যাখার মধ্যেই এর মারাত্মক বীভৎসতাকে যথাযথভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। পরিবারকে সাথে নিয়ে দেখতে বসতে পারেন আইএমডিবিতে ৮.৯ রেটিং পাওয়া এই টিভি সিরিজটি।