ষাটের দশককে বলা যায় মহাকাশযুদ্ধের দশক, চন্দ্রজয়ের প্রতিযোগিতার দশক। স্নায়ুযুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বের দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন মেতে উঠেছিল বিশ্বের পাশাপাশি মহাশূন্যেও নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। কিন্তু শুধু এই দুই পরাশক্তিই না, সে সময় মহাকাশজয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল আরো একটি দেশ, জাম্বিয়া। যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দিয়ে এদের আগেই প্রথমে চাঁদের বুকে নভোচারী পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল তারা। অন্তত জাম্বিয়ার ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স, স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড ফিলোসফি’র স্বঘোষিত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এডওয়ার্ড মুকুকা এঙ্কোলোসো সেরকমই দাবি করেছিলেন।
এঙ্কোলোসোর গল্পটির দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত এর মজার দিকটি, অন্যটি তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত অপেক্ষাকৃত এর সিরিয়াস দিকটি। আমরা মজার দিকটি দিয়েই শুরু করি।
এডওয়ার্ড মুকুকা এঙ্কোলোসো ছিলেন কলেজের বিজ্ঞান শিক্ষক। ১৯৬৪ সালের অক্টোবরের ৩০ তারিখ টাইম ম্যাগাজিনের কল্যাণে প্রথম তার নাম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে স্থান পায়। এর মাত্র এক সপ্তাহ আগে, অক্টোবরের ২৪ তারিখে জাম্বিয়া ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সে সময় পুরো দেশ ছিল উল্লাসে মাতোয়ারা। কিন্তু টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে সেই আনন্দ স্পর্শ করছিল না। কারণ তিনি ছিলেন তার চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত।
এঙ্কোলোসো ছিলেন জাম্বিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট কেনেথ ডেভিড কুযান্দার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স, স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড ফিলোসফির সাথে জাম্বিয়ার সরকারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। সেটা তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে তিনি ১২ জন জাম্বিয়ান অ্যাস্ট্রোনাটকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীও ছিল। তার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েতের আগেই চাঁদের বুকে অবতরণ করা, এবং এরপর সেখান থেকে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা।
এঙ্কোলোসোর কথাবার্তা শুনলে তাকে দেশের জন্য এবং বিজ্ঞানের নিবেদিতপ্রাণ মনে হতে পারে, কিন্তু তার কর্মকাণ্ড দেখলে তাকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া কঠিন। বার্তা সংস্থা এপির একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, তিনি তার ভবিষ্যত অ্যাস্ট্রোনটদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়ানোর জন্য তাদেরকে গাছের ডাল থেকে লম্বা দড়ির সাহায্যে ঝোলানো দোলনায় বসিয়ে দোল খাওয়ানোর অনুশীলন করাচ্ছিলেন। এরপর তারা সর্বোচ্চ বিন্দুতে পৌঁছার পর দড়ি কেটে দিচ্ছিলেন, যেন তারা মহাকাশের জিরো গ্র্যাভিটির মতো অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।
এছাড়াও তিনি তার অ্যাস্ট্রোনটদেরকে তেলের ড্রামের ভেতরে ঢুকিয়ে সেগুলোকে পাহাড় থেকে গড়িয়ে ফেলে দিতেন, যেন তারা ল্যান্ডিংয়ের সময়ের মতো অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। তার শিক্ষার্থীদেরকে পা উপরে তুলে হাত দিয়ে হাঁটার অনুশীলন করতেও দেখা যায়, কারণ তার ভাষায় এটাই ‘চাঁদের বুকে হাঁটার একমাত্র উপায়।’ তার চাঁদে যাওয়ার এই প্রস্তুতি আসলেই সত্য কি না, এপির এরকম প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,
“অনেকে ভাবছে আমি পাগল, কিন্তু যেদিন আমি চাঁদের মাটিতে জাম্বিয়ার পতাকা গেঁথে দিব, সেদিন আমিই শেষ হাসি হাসব।”
এঙ্কোলোসোর পরিকল্পনা ছিল, তিনি লুসাকা থেকে অ্যালুমিনিয়াম এবং কপারের তৈরি সিলিন্ডার আকৃতির একটি ‘রকেট’কে ‘ফায়ারিং সিস্টেম’ এর মাধ্যমে গুলতির মতো চাঁদের দিকে নিক্ষেপ করবেন। তার রকেটে যাত্রী থাকবে একজন মিশনারি পাদ্রী, মাথা মোয়াম্বা নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং তার দুটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিড়াল। বিড়াল পাঠানোর কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানত বিড়ালগুলো মাথাকে সঙ্গ দিবে, কিন্তু রকেটটি যখন চাঁদে গিয়ে পৌঁছবে তখন এর দরজা খুলে প্রথমে বিড়ালগুলোকে চাঁদের মাটিতে ফেলে দেওয়া হবে। যদি দেখা যায় তারা বেঁচে আছে, তাহলে বোঝা যাবে মানুষের জন্যও চাঁদের পরিবেশ নিরাপদ!
এঙ্কোলোসোর চন্দ্রাভিযান প্রকল্প বেশিদূর এগোতে পারেনি। কারণ সফলভাবে রকেট বানানোর জন্য তার কাছে যথেষ্ট অর্থ ছিল না। তার প্রজেক্টে ফান্ডিং করার জন্য তিনি আমেরিকা, ইসরায়েল, সোভিয়েত, ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক, ইউনেস্কোসহ সবার কাছেই চিঠি লিখেছিলেন। ইউনেস্কোর কাছে তিনি ৭০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য চেয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য, কেউ তাকে পাত্তা দেয়নি। কেবল ভারতের এক স্কুলছাত্র পত্রিকার মাধ্যমে তার সম্পর্কে জানতে পেরে তার ঠিকানায় ১০ রূপির একটা নোট পাঠিয়ে দিয়েছিল।
সোভিয়েত এবং আমেরিকা উভয়ের কাছে সাহায্য চাইলেও এঙ্কোলোসো তাদেরকে নিয়ে ভীতও ছিলেন। সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, “এরকম বিশাল মাপের প্রজেক্টের ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।” তার দাবি, তার প্রযুক্তি ছিল রাশিয়ান এবং আমেরিকানদের চেয়েও উন্নত, ফলে তাকে সবসময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হতো, যেন তারা তার সিক্রেট ফর্মূলা চুরি করে নিতে না পারে। ইউনেস্কো যে তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি, সেজন্যও তিনি ‘সাম্রাজ্যবাদী এবং নব্য উপনিবেশবাদী’দেরকে দায়ী করেন। তিনি দাবি করেন, “তারা জাম্বিয়ার স্পেস নলেজ নিয়ে আতঙ্কে ভুগছে।”
এঙ্কোলোসোর স্পেস প্রজেক্ট শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। প্রধানত আর্থিক সংকটের কারণেই। কিন্তু একইসাথে তার নভোচারীদের অপেশাদারিত্বের কারণেও। এক সাক্ষাৎকারে নিজের শিক্ষার্থীদের উপর হতাশা প্রকাশ করে এঙ্কোলোসো বলেন, “আমার নভোচারীদের ধারণা তারা সিনেমার তারকা হয়ে গেছে। তারা বেতন দাবি করে বসছিল।” তিনি জানান, তার দুজন শিক্ষার্থী একবার মদ খেয়ে মাতলামি শুরু করে দিয়েছিল। এরপর থেকে তারা আর ফিরে আসেনি। আরেকজন শিক্ষার্থী স্থানীয় গোত্রীয় নাচের দলে যোগ দিয়ে তাদের সাথে চলে গিয়েছিল।
বাকিদেরকে নিয়েও এঙ্কোলোসো বেশ হতাশ ছিলেন। তার ভাষায়, “তারা মহাকাশযাত্রায় মনোযোগ দিতে চায় না। যখন তাদের চাঁদ নিয়ে গবেষণা করার কথা, তখন তারা প্রেম করায় ব্যস্ত থাকে।” এঙ্কোলোসোর আশঙ্কা সত্য হয়েছিল। তার প্রধান নভোচারী, ১৬ বছর বয়সী কিশোরী মাথা মোয়াম্বা যখন প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তখন তার পরিবার তাকে ফেরত নিয়ে যায়।
এঙ্কোলোসো নিজে কি তার মহাকাশ অভিযানের দাবিকে বিশ্বাস করতেন, নাকি পুরো ব্যাপারটা ছিল একটা কৌতুক, সেটা বলা মুশকিল। কৌতুক বা প্র্যাঙ্ক হয়ে থাকলে এটা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজনের প্র্যাঙ্কগুলোর মধ্যে একটা, যেটা শেষপর্যন্ত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এঙ্কোলোসো কখনও স্বীকার করেননি যে, এটা প্র্যাঙ্ক ছিল।
এঙ্কোলোসোকে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক বর্ণনা করেছেন বাতিকগ্রস্ত ব্যক্তি হিসেবে, যাকে তার এলাকার মানুষজনও খুব বেশি গুরুত্ব দিত না। কিন্তু তারপরেও যে পশ্চিমা গণমাধ্যম এঙ্কোলোসোর সংবাদ বারবার গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে, তার একটা কারণ হচ্ছে তাদের ওরিয়েন্টালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি। এ. কে. চেস্টার্টন নামে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ তার The New Unhappy Lords বইয়ে এঙ্কোলোসোর ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন এই যুক্তি দেওয়ার জন্য যে, আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলো নিজেরা নিজেদের দেশ চালাতে সক্ষম না।
তবে সবাই অবশ্য এঙ্কোলোসোর কর্মকাণ্ডকে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেননি। একাধিকবার এঙ্কোলোসোর সাক্ষাৎকার নেওয়া স্যান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের সাংবাদিক আর্থার হোপ তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, তার ধারণা ছিল তারা নিজেরা এঙ্কোলোসোকে নিয়ে মজা করছিলেন না, বরং এঙ্কোলোসোই তার এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন, রেসিজম এবং রাশিয়ানদেরকে হারানোর জন্য আমেরিকার বিলিয়ন ডলার খরচের স্পেস মিশন নিয়ে কটাক্ষ করছিল।
আর্থার হোপ বিশেষ করে এঙ্কোলোসোর লেখা একটি অপ-এডের কথা উল্লেখ করেন, যেটা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে স্যাটায়ার বলেই মনে হয়। এঙ্কোলোসো লিখেছিলেন, “আমরা আমাদের হেডকোয়ার্টারে বসে টেলিস্কোপ দিয়ে মঙ্গল নিয়ে গবেষণা করে আসছি। এবং এখন আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, মঙ্গল গ্রহে একধরনের আদিম জাতি বসবাস করে।” এঙ্কোলোসো আরো লিখেছিলেন, তিনি যে রকেটটি পাঠাবেন, সেখানে একটি মিশনারির দলও থাকবে। তবে তিনি মিশনারির দলটিকে সাবধান করে দিয়েছেন, মঙ্গলবাসীরা যদি রাজি না থাকে, তাহলে তাদের উপর যেন জোর করে খ্রিস্টধর্ম চাপিয়ে দেওয়া না হয়।
কিন্তু স্পেস মিশনের বাইরেও এঙ্কোলোসোর যে একটি জীবন আছে, যেটি তার ক্ষণস্থায়ী স্পেস মিশনের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গণমাধ্যমের আলোচনায় ঠাঁই পায় না, সেটি আমাদের সামনে তুলে ধরেন জাম্বিয়ান লেখক নামওয়ালি সেরপেল (Namwali Serpell), নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধে। তিনি জানান, জাম্বিয়াতে এডওয়ার্ড মুকুকা এঙ্কোলোসোর মূল পরিচয় ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানী হিসেবে না, বরং জাম্বিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন যোদ্ধা হিসেবে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরিরত থাকায় এঙ্কোলোসো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। সে সময় মিস্টার মন্টগমারি নামে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা তাকে বাঁধা দেয়। তিনি যখন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই স্কুল চালু করেন, তখন তার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং বিচার করে।
জেল থেকে বেরিয়ে এঙ্কোলোসো দেশজুড়ে মাধ্যমিক স্কুলগুলো ঘুরে বেড়িয়ে ছেলেমেয়েদেরকে ল্যাটিন, বিজ্ঞান এবং গণিত শেখাতে শুরু করেন। এরকম সময় একদিন তিনি অন্যান্য জাম্বিয়ান শিক্ষকরা যখন টিফিনের বিরতিতে লাঞ্চ করছিলেন, তখন এক ব্রিটিশ শিক্ষা অফিসার তাদেরকে বাঁধা দেয় এই অজুহাতে যে, আফ্রিকান শিক্ষকদের লাঞ্চ করার অনুমতি নেই। জবাবে এঙ্কোলোসো ডাইনিং টেবিল উল্টে ফেলে দেন। তিনি পুরো স্কুলের সবাইকে জড়ো করে শিক্ষা অফিসের দিকে মিছিল নিয়ে যান।
এঙ্কোলোসো ছিলেন আফ্রিকানদের অধিকার আদায়ের একজন সংগ্রামী কর্মী। তিনি স্থানীয়দের উপর ট্যাক্স বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছিলেন। তিনি কালোদের সমান পরিশ্রমের জন্য সাদাদের সমান মজুরি আদায়ের জন্যও সোচ্চার হয়েছিলেন। সেই পঞ্চাশের দশকেই তিনি এমন একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে সাদা এবং কালোরা পাশাপাশি পড়াশোনা করতে পারবে। তিনি বলেছিলেন, সমাজের উন্নতির জন্য মিলেমিশে বসবাস করতে শেখার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি পুরোপুরি বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৫৬ সালে এক ইউরোপীয় ফোরম্যান যখন আফ্রিকানদের লাশ কবর থেকে উঠিয়ে ফেলে, তখন প্রতিবাদে এঙ্কোলোসো ডিস্ট্রিক্ট কমিশনারের অফিস ঘেরাও করেন। এর ক’দিন পরেই ট্রেড ইউনিয়নের হয়ে আন্দোলনের জন্য তিনি আবারও গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পাওয়ার পরেও প্রশাসন তাকে রেস্ট্রিক্টেড পার্সন হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তার গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামক রাজনৈতিক দলের জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখানেও তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত ছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে গিয়ে একবার তাকে মহিলার ছদ্মবেশও ধারণ করতে হয়েছিল।
এরকম সময় ১৯৫৭ সালে এঙ্কোলোসো এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন। একইসাথে ঔপনিবেশিক প্রশাসন এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে শ্রমিকরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ছয় দিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযান চলার পর তিনি আত্মসমর্পণ করতে রাজি হন। দুই হাত উপরে তুলে সামনে এগিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু তার সমর্থকরা পুলিশের উপর আক্রমণ শুরু করলে তিনি আবার পালিয়ে যান। কয়দিন পর এক জলাভূমি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পরপরই শুরু হয় তার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন। একজন অফিসার তার মাথা জলাভূমির মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে চেপে রাখে। কারাগারে নেওয়ার পরেও তাকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় যে, তিনি প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় পৌঁছে যান। তার সঙ্গীদের উপরেও প্রচণ্ড নির্যাতন চালানো হয়। নারী আন্দোলনকর্মীদের যৌন নির্যাতন করা হয়। তার এক চাচী, যিনি তার সাথেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তিনি দুই সপ্তাহ পর জেলখানার মধ্যেই মারা যান।
জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরেও এঙ্কোলোসো তার রাজনৈতিক সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি জাম্বিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামে লিপ্ত ইউনাইটেড ন্যাশনাল ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টিতে সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জেলখানার নির্যাতন তার উপর স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। আর কখনোই তিনি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেননি।
এঙ্কোলোসো কি আসলেই নির্যাতনের ফলে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হয়ে তার স্পেস মিশনের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, নাকি সেটা ছিল আসলেই আমেরিকান এবং ব্রিটিশদেরকে ব্যাঙ্গ করার এক অদ্ভুত উদ্যোগ, সেটা হয়তো আমরা কখনোই জানতে পারব না। গণমাধ্যমে অনেক সময়ই অনেক ব্যক্তির উদ্ভট কাণ্ডকারখানার বিবরণ আসে, যেগুলো আমাদের কাছে কেবলই হাস্যরসের উপাদান হিসেবে ধরা দেয়। কিন্তু সেগুলোর পেছনে থাকতে পারে অনেক না বলা গল্প, অনেক করুণ কাহিনী।