রোম ও কার্থেজের সংঘাত প্রাচীন পৃথিবীর অন্যতম ঘটনা। প্রায় এক শতাব্দীর অধিক সময় জুড়ে চলা এই দ্বন্দ্ব ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে তিনটি যুদ্ধের আদলে। এই যুদ্ধ পিউনিক (Punic) যুদ্ধ নামে পরিচিত। কার্থেজবাসীরা ছিল ফিনিশিয়ানদের (Phoenician) বংশধর, যা থেকে রোমান ভাষায় ফোয়েনিক্স (Phoenikes) শব্দের উৎপত্তি। এর সূত্র ধরে রোমানরা কার্থেজিনিয়ানদের বলত পুনি (Poeni)। বলা হয় এখান থেকেই পিউনিক কথা উৎপত্তি।
কার্থেজ
বর্তমান তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের অন্তর্গত অংশে আফ্রিকার উত্তর উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল কার্থেজ। এর পত্তন করেছিল ফিনিশিয়ানরা। তৎকালীন পৃথিবীতে ফিনিশিয়ানদের মতো দক্ষ নাবিক আর কেউ ছিল না। তারা তাদের জাহাজে করে সমুদ্রে দূরদূরান্তে পাড়ি দিত এবং বিভিন্ন স্থানে তাদের কলোনি স্থাপন করত। কার্থেজে কলোনি স্থাপন করা ফিনিশিয়রা এসেছিল টাইর (Tyre) থেকে। বর্তমান লেবাননের অংশ টাইর সে সময় ছিল ফিনিশিয়ার প্রধানতম নগর রাষ্ট্র।
গ্রীক ঐতিহাসিক টিমেউসের মতানুসারে কার্থেজের প্রতিষ্ঠাকাল ৮১৪ বা ৮১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। অপর একজন ঐতিহাসিক, জাস্টিন, একে ৮২৫ বলে দাবী করেন। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে ৭৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই এখানে লোকবসতির প্রমাণ পাওয়া যায়। নিকটবর্তী প্রাচীন ফিনিশিয় শহর উটিকা থেকে পৃথক করার জন্য ফিনিশিয়রা একে ডাকতো কার্ট-হাদাশত (Kart-hadasht), বা নতুন শহর নামে। সেখান থেকে গ্রীকরা এর নামকরণ করে কার্চেডন (Karchedon), পরে যা রোমান ভাষায় পরিবর্তিত হয়ে যায় কার্থাগো (Carthago) নামে। এই কার্থাগো থেকেই ক্রমে ক্রমে কার্থেজ নামের উদ্ভব হয়।
গ্রীক ও রোমান কিংবদন্তী মতে, কার্থেজের প্রতিষ্ঠাতা টাইরের রানী এলিসা (Elissa ), যিনি ডিডো (Dido) নামেও পরিচিত। পিতার মৃত্যুর পর তিনি ও তার ভাই পিগমালিয়ন (Pygmalion) সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু বোনের সাথে বিবাদের জের ধরে পিগমালিয়ন এলিসার স্বামীকে হত্যা করলে তিনি তার অনুসারিদের নিয়ে পালিয়ে যান। প্রায় চৌদ্দশ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনি বর্তমান কার্থেজের স্থানে এসে পৌঁছান। এই অঞ্চলের রাজা লারবাস শর্ত দেন, একটি ষাঁড়ের চামড়া দিয়ে যতটুকু জায়গা বেষ্টন করা সম্ভব, ততটুকু স্থানে এলিসা তার রাজ্য গড়ে তুলতে পারবেন। এলিসা ও তার অনুচরেরা ষাঁড়ের চামড়া সরু ফালি ফালি করে কাটলেন। সেই ফালি জোড়া দিয়ে বিশাল এলাকা বেষ্টন করা হলো। এখানেই গড়ে উঠল কার্থেজ। পরে লারবাসের সাথে বিরোধের জেরে রানি এলিসা আত্মাহুতি দিলেও কার্থেজের প্রসার ঘটতে থাকে দ্রুত।
গালফ অফ তিউনিসের ধারে ত্রিকোণাকার এই উপদ্বীপ নিচু পাহাড়ে ঘেরা এবং লেক তিউনিসের পাড়ে অবস্থিত। এর উর্বর মাটি কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত। এছাড়াও কার্থেজের অবস্থান তাকে সমুদ্রগামী বাণিজ্যের জন্য আদর্শ করে তুলেছিল। কার্থেজের উপর দিয়েই উত্তর-দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলে জাহাজ চলাচল করত, আর পূর্ব-পশ্চিমে ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যে যাতায়াত হত। সুতরাং কার্থেজ খুব দ্রুতই সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠতে থাকে। কার্থেজের বিশাল বন্দরে জাহাজের জন্য ২২০টি ঘাট ছিল। এছাড়াও তার ছিল তখনকার সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনী। পার্শ্ববর্তী নুমিডিয়া রাজ্যের সাথে মৈত্রীর খাতিরে কার্থেজের বাহিনীতে সুদক্ষ নুমিডিয়ান অশ্বারোহী যোদ্ধারাও যোগ দেয়।
প্রথম প্রথম কার্থেজের উপর টাইরের প্রভাব ছিল। আনুমানিক ৫৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যবিলনিয়ান রাজা নেবুশ্যাদনেজার টাইর দখল করে নিলে টাইরের প্রভাব কমে যেতে থাকে এবং প্রধান ফিনিশিয় নগর রাষ্ট্র হিসাবে কার্থেজের আবির্ভাব হয়। কার্থেজের এই ভূমিকা আরো পাকাপোক্ত হয় আনুমানিক ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট টাইর ধ্বংস করে দিলে। তখন থেকে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাতে কার্থেজ অবিসংবাদিত শক্তি হিসেবে পরিগণিত হতে থাকে। রোমের আবির্ভাব তার এই একচ্ছত্র কর্তৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
সংঘাতের প্রেক্ষাপট
পিউনিক যুদ্ধ ছিল রোমের পরাশক্তি হয়ে ওঠার প্রথম পদক্ষেপ। এই যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতিতে কার্থেজ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনাবহুল এই সংঘর্ষের বর্ণনা বেশ দীর্ঘ। এ স্থলে বলে রাখা আবশ্যক, ইতিহাসে কার্থেজিনিয়ান জেনারেলদের খুব কম নাম পাওয়া যায় এবং একই নাম বিভিন্ন সময় বারবার এসেছে, যেমন- হ্যানিবাল, হ্যামিলকার, হ্যানো ইত্যাদি। ইতিহাসবিদদের মতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক নাম হলেও ব্যক্তি ভিন্ন ছিল। পিউনিক যুদ্ধের বিবরণেও তাই বিভিন্ন জায়গাতে একই নামের উল্লেখ পাওয়া যাবে।
পিউনিক যুদ্ধের আভাস রাজা পাইরাস আগেই দিয়ে গিয়েছিলেন। সিসিলি থেকে চলে যেতে বাধ্য হলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- একদিন এই সিসিলি নিয়েই রোম ও কার্থেজের মধ্যে আগুন জ্বলে উঠবে। পাইরাসের বিরুদ্ধে রোম ও কার্থেজ একজোট হলেও তিনি বিতাড়িত হবার পর দুই পক্ষই সিসিলিকে নিজের ক্ষমতার আওতায় আনার পরিকল্পনা সাজাতে থাকে।
যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন সিসিলিতে প্রধান তিনটি পক্ষ ছিল- গ্রীক নগর রাষ্ট্র সিরাকিউজ, কার্থেজ আর ম্যামেরটাইন। ম্যামেরটাইনরা ছিল ক্যাম্পানিয়া থেকে আগত মার্সেনারি আর দস্যু। এরা একসময় অর্থের বিনিময়ে সিরাকিউজের রাজার পক্ষে কাজ করত। তবে ২৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এরা মেসানা (Messana) দখল করে নেয়। সিসিলির উত্তরপূর্বে গ্রীক নগর রাষ্ট্র মেসানা ইটালির মূল ভূখণ্ডের সাথে মাত্র তিন মাইল চওড়া প্রণালী দিয়ে যুক্ত ছিল। কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল অধিকার করতে ২৬৪-৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিরাকিউজের তৎকালীন শাসক দ্বিতীয় হিয়েরো মেসানা অবরোধ করেন। ম্যামেরটাইনরা তখন রোম ও কার্থেজ উভয়ের কাছেই সাহায্যের বার্তা পাঠায়। মেসানাকে কেন্দ্র করে সিসিলিতে আধিপত্য বিস্তারের অভিলাষে দুই পক্ষই সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।
প্রাচীন গ্রীক ঐতিহাসিক ফিলিনাসের মতে, মেসানাতে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে রোম কার্থেজের সাথে সম্পাদিত একটি চুক্তির বরখেলাপ করেছিল, যেখানে বলা হয়েছিল রোম সিসিলিতে এবং কার্থেজ ইতালিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে না। তবে আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই তথ্যের সত্যাসত্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেণ। কারণ ফিলিনাস কার্থেজের শুভানুধ্যায়ী এবং রোম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অপরদিকে পলিবিয়াস, যাকে মোটামুটি নিরপেক্ষ ধরে নেয়া হয়, প্রাচীন রোমের আর্কাইভ তন্ন তন্ন করে খুঁজে রোম ও কার্থেজের ছয়টি চুক্তির প্রমাণ পেলেও ফিলিনাসের বর্ণিত সেই চুক্তির নাম-নিশানা খুঁজে পাননি।
যা-ই হোক, কার্থেজ থেকে সেনাপতি হ্যানোকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। কার্থেজের উপস্থিতিতে হিয়েরো অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হন। কার্থেজের সেনারা শহরে গ্যারিসন স্থাপন করে। এদিকে ২৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নির্বাচিত রোমান কন্সাল অ্যাপিয়াস ক্লডিয়াস কডেক্স তার আত্মীয় গাইয়াস ক্লডিয়াসকে ম্যামেরটাইনদের কাছে পাঠান রোমান সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে। কার্থেজ আগে আসলেও ইতালির অংশ হিসেবে ম্যামেরটাইনরা রোমের কাছ থেকে সাহায্য নিতেই মনস্থির করে। আপসের ভিত্তিতে পিউনিক সেনাপতি শহর ত্যাগ করেন এবং কার্থেজের গ্যারিসন রোমান সেনা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। ঘটনা এখানে শেষ হতে পারত, কিন্তু হ্যানো কার্থেজে ফিরে গেলে তাকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। এবার কার্থেজ হিয়েরোর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মেসানা অবরোধ করে বসে। শুরু হয় প্রথম পিউনিক যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ।
মেসানার যুদ্ধ (২৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
দ্বিতীয় হিয়েরো আর কার্থেজিনিয়ান সেনাপতি হ্যানো (প্রথমোক্ত হ্যানো থেকে ভিন্ন) মেসানা ঘিরে রাখে।ইতালি ও মেসানার সংযুক্তকারী প্রণালীতে কার্থেজের নৌবাহিনী আর স্থলভাগে সিরাকিউজের বাহিনী অবস্থান নেয়। ম্যামেরটাইনরা রোমের সাহায্য প্রার্থনা করলে ক্লডিয়াস তার সাথে থাকা বাহিনী নিয়ে প্রণালী পার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কার্থেজের বাধায় সেই চেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যায়। এবার ক্লডিয়াস অন্য চাল চালেন। তিনি সিসিলি থেকে চলে যাচ্ছেন বলে গুজব ছড়িয়ে দেন এবং জাহাজের মুখ মেসানার দিক থেকে ঘুরিয়ে খোলা সাগরের দিকে যাত্রা করেন। এর ফলে কার্থেজের বাহিনীতে শিথিলভাব চলে আসে। এদিকে বাতাস মেসানার অনুকুলে বইতে শুরু করলে হঠাৎ করে ক্লডিয়াস সমস্ত জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে মেসানার দিকে যাত্রা করেন। এবার তিনি কার্থেজের সেনাদের ফাঁকি দিয়ে শহরে এসে পৌঁছলেন।
ধারণা করা হয়, ক্লডিয়াসের সাথে ছিল একটি কন্সুলার আর্মির সমান সংখ্যক সৈন্য, অর্থাৎ ২০,০০০। তার সাথে যোগ দেয় ম্যামারটাইনরা। ক্লডিয়াস প্রথমে সমঝোতার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। আর অপেক্ষা করা সমীচীন হবে না মনে করে এবার তিনি সিরাকিউজের সেনাদের সাথে লড়াই শুরু করেন।ঐতিহাসিকদের মতে, যুদ্ধ অমীমাংসিতভাবে শেষ হলেও হিয়েরো রোমের সাথে শত্রুতা আর বাড়াতে চাননি। সিরাকিউজের বাহিনী মেসানার অবরোধ তুলে নিয়ে ফিরে যায়। এবার ক্লডিয়াস আক্রমণ করেন হ্যানোর নেতৃত্বে থাকা কার্থেজিনিয়ান সেনাদলকে। এবারও যুদ্ধে শেষ হলো অমীমাংসিতভাবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিচার করে হ্যানো সিদ্ধান্ত নিলেন সিরাকিউজের সাহায্য ছাড়া মেসানা দখল করা সম্ভব নয়। সুতরাং তিনি ফিরে গেলেন এবং মেসানার উপর রোমের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হলো।
পরবর্তী বছর (২৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) দুই রোমান কন্সাল নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে (প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্য) সিরাকিউজ অবরোধ করলেন। দ্বিতীয় হিয়েরো বৃথাই কিছুদিন কার্থেজের সহায়তার প্রত্যাশায় থাকলেন। কার্থেজের নীরবতায় অবশেষে হতাশ হয়ে হিয়েরো রোমের সাথে আপস করে নিতে বাধ্য হন। পরবর্তী প্রায় পঞ্চাশ বছর সিরাকিউজ রোমের বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে রোমকে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়ে গেছে।
ব্যাটল অফ অ্যাগ্রিগেন্টাম (২৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
দক্ষিণ-মধ্য ইটালিতে অ্যাগ্রিগেন্টাম ছিল কার্থেজের অন্যতম ঘাঁটি। সিরাকিউজের সাথে চুক্তির পর থেকে সিসিলির পূর্ব উপকূলে রোমের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কার্থেজের অভিজাতশ্রেণীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পরিস্থিতিতে ২৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হ্যানিবাল নামে এক জেনারেলকে ৫০,০০০ সেনাসহ অ্যাগ্রিগেন্টামে পাঠান হয়। এই সেনারা বেশিরভাগই ছিল মার্সেনারি, তবে তাদের অফিসার ও জেনারেল ছিলেন কার্থেজিনিয়ান।
রোম থেকে দুই কন্সাল মেজিলাস ও ভেটুলাস তাদের বাহিনী নিয়ে অ্যাগ্রিগেন্টামের কাছে এসে পৌঁছেন।কাছাকাছি হার্বেসাস (Herbessus) শহর থেকে রসদ ও সরঞ্জামাদি যোগানের ব্যবস্থা করে তারা অ্যাগ্রিগেন্টাম অবরোধ করেন। হ্যানিবাল শহরের বাইরে এসে রোমানদের মোকাবেলা করলে তিনি পরাজিত হন। কাজেই তিনি অবশিষ্ট সেনাদের নিয়ে পিছু হটে শহরে চলে যান। মেজিলাস ও ভেটুলাস অবরোধ জারি রাখলে হ্যানিবাল ও তার সেনাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তার বারংবার অনুরোধে কার্থেজ থেকে হ্যানোর নেতৃত্বে একটি সহায়তাকারী বাহিনী প্রেরণ করা হয়। হ্যানোর সাথে ছিল ৩০,০০০ সেনা, সাথে হস্তিবাহিনী ও অশ্বারোহী দল।
হ্যানো অতর্কিতে হামলা চালিয়ে হার্বেসাস দখল করে নেন। ফলে রোমান সেনাদলে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান বন্ধ হয়ে যায়। তবে সিরাকিউজ থেকে হিয়েরো তাদের কিছু সাহায্য পাঠাতে সমর্থ হন। এদিকে অবরুদ্ধ অ্যাগ্রিগেন্টামেও রসদপত্রের অভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে নগরের অবরোধ ভাঙা হ্যানোর জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। তিনি রোমানদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কিন্তু এবারো কার্থেজের বাহিনী পরাজিত হয়ে পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এরপর রোমানরা আবার অ্যাগ্রিগেন্টাম আক্রমন করে। হ্যানিবাল এবার শহর রোমানদের হাতে তুলে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখলেন না। তিনি হ্যানোর সাথে যোগ দিতে চলে যান। জয়ী রোমান সেনাদল শহরে ব্যাপক লুটতরাজ চালায়।
প্রচুর অর্থ ও অধ্যবসায়ের বিনিময়ে রোমানরা দুই বছরের মধ্যে প্রায় দুইশ জাহাজের বহর গড়ে তোলে। যুদ্ধজাহাজের জন্য তারা কার্থেজের কাছ থেকে দখল করা একটি জাহাজ মডেল হিসেবে ব্যবহার করলেও এতে রোমানরা নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছিল। জাহাজের অগ্রভাগে লৌহ আচ্ছাদিত চঞ্চু দিয়ে আঘাত করে অন্য জাহাজ ভেঙে বা ডুবিয়ে দেয়া যেত। তবে সবথেকে কার্যকরী ও অভিনব সংযোজন ছিল কর্ভাস (corvus)।
অনেকটা আধুনিক জাহাজের গ্যাংওয়ের মতো দেখতে কর্ভাস ছিল মইসদৃশ একই পাটাতন, যা জাহাজের যেকোনো দিকে ঘোরান যেত। এর উপর দিয়ে দুজন মানুষ পাশাপাশি যেতে পারত। নাগালের মধ্যে আসামাত্র শত্রু জাহাজের উপর এই পাটাতন আছড়ে ফেলা হত, যা তার সম্মুখভাগের আঁকশি দিয়ে শক্তভাবে ঐ জাহাজে লেগে যেত। কর্ভাস দিয়ে রোমান মেরিন সেনারা শত্রুর জাহাজে লাফিয়ে পড়ত, ফলে জলযুদ্ধ পরিণত হত স্থলযুদ্ধে, যেখানে রোমানরা ছিল এগিয়ে।