Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চীন কেন ট্রাম্পকেই আরেক মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়?

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে শেষ হওয়া স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে পৃথিবী যে এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় প্রবেশ করে সেখানে আমেরিকাই একমাত্র সুপার পাওয়ার, বিশ্বরাজনীতির নীতিনির্ধারক। বৈশ্বিক গণতন্ত্র, পুঁজিবাদ ও পশ্চিমা উদারনীতিবাদের অভিভাবক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই চার বছরের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কে হতে যাচ্ছেন– সেটি জানার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে সবাই। করোনায় বিপর্যস্ত এই বছরে আরেকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমেরিকায়, যেটির রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যেই।

জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প– নভেম্বরের নির্বাচনে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এবারের নির্বাচনটি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যে সময়ে বিশেষজ্ঞদের মতে আসতে পারে করোনা ভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’। প্রথম ওয়েভের চেয়েও ভয়ংকর এই পর্যায়ে আবারও হাজারে হাজারে মানুষ মরতে পারে, স্থবির হয়ে যেতে পারে জনজীবন। নভেম্বরের নির্বাচনের সময়কে অনেক ঐতিহাসিকই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আমেরিকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে থমথমে অস্বস্তিকর আবহাওয়া ছিল, তার সাথে আগাম তুলনা করছেন। শুধু যে করোনা মহামারিতেই আমেরিকার নাজুক অবস্থা তা কিন্তু নয়, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতেও বিশৃঙ্খলার মহামারি চলছে আমেরিকার!

জশজসজজসজসজ
ট্রাম্প অথবা বাইডেন– নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প আরেক মেয়াদে আসবেন নাকি জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের নতুন কর্তা হবেন তা সময়ই বলে দেবে; image source: medium.com

আমেরিকার ইতিহাসে অল্প কিছু সংখ্যক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে যেগুলো বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপট পুনর্লিখনে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। ১৮৬০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা বলা যায় এক্ষেত্রে। সেই নির্বাচনে আব্রাহাম লিংকনের বিজয় ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই বিজয় আমেরিকাকে একটি গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয় এবং নিশ্চিত করে, সামর্থ্যবান প্রেসিডেন্ট লিংকন যুদ্ধে নিশ্চিতভাবেই জিতবেন। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সময়ের গৃহযুদ্ধের যবনিকাপাতের পর একটি ঐক্যবদ্ধ, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নির্ঝঞ্ঝাট ও গণতান্ত্রিক আমেরিকা বিশ্বশক্তি হিসেবেই বিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করে।

১৯৪০ সালের নির্বাচনও একইভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। তৃতীয় মেয়াদে ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্টের বিজয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় আগে হোক বা পরে, আমেরিকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ানো সুনিশ্চিত। বাস্তবেও তা-ই হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভের পর বিশ্বশক্তি হিসেবে আমেরিকার ভিত্তি আরও পাকাপোক্ত হয়। ১৯৮০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি রোনাল্ড রিগ্যান না জিততেন, তাহলে স্নায়ুযুদ্ধও হয়তো অত দ্রুত শেষ হতো না– এরকম মনোভাব পোষণ করেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এবারের নির্বাচন কেন এত গুরুত্বের দাবি রাখছে?

সহসহসহস
করোনা ভাইরাসের ফলে অন্যান্য দেশগুলোর মতো আমেরিকার অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে;
image source: forbes.com

করোনার ফলে বেশিরভাগ দেশের মতো বিপর্যস্ত হয়েছে আমেরিকাও। অনেক দেশের চেয়ে আমেরিকায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি ও সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। একটি সুপার পাওয়ার দেশের সাথে এই পরিসংখ্যান নিশ্চিতভাবেই বেমানান। সেই সাথে পুলিশি নির্মমতার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আমেরিকায়, সেটিও আমেরিকার আপাত নাজুক অবস্থা উন্মুক্ত করে দিয়েছে সবার সামনে। করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বেকারত্ব বেড়ে গিয়েছে পূর্বের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ইরাক যুদ্ধের পর স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নগামী অবস্থায় রয়েছে। চীনের সাথে যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে, তাতে ভুগছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। আমেরিকার কৃষক সম্প্রদায় বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। মার্কিন কৃষিপণ্যের একটি বড় ক্রেতা চীন মার্কিন কৃষিপণ্য কিনবে না– সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

করোনার ফলে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ট্রাম্প প্রশাসন কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বৈশ্বিকভাবে এতদিন ধরে আমেরিকার ‘নের্তৃত্বদানকারী’ হিসেবে যে সুপ্রিমেসি ছিল, করোনাসৃষ্ট বিপর্যয়ে তা ধরে রাখার কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে আরেকবার ‘আস্থার জায়গা’ হওয়ার সুযোগ ছিল আমেরিকার সামনে। কিন্তু বাকি বিশ্বের কথা বাদ দিলেও নিজ দেশেই ট্রাম্পের সমালোচনায় মুখর মার্কিন জনগণ। শুধু বিশাল অংকের সামরিক ব্যয় এবং নব্য-উদারনীতিবাদের মতো বাণিজ্যিক নীতি যে জনগণকে মহামারির হাত থেকে বাঁচাতে পারে না– এ কথা মার্কিনীরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন করোনার আগ্রাসনের পর থেকে।

চীন এখনও সামরিকভাবে আমেরিকার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। তবে তারা অর্থনীতিতে যেভাবে পাল্লা দিয়ে চলেছে আমেরিকার সাথে, তাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন একাধিপত্যের শেষ দেখছেন কেউ কেউ। “বিশ শতাব্দী যদি হয় আমেরিকার, তবে একবিংশ শতাব্দী হতে যাচ্ছে চীনের”– এটি এখন আর অতিশয়োক্তি নয়, নিখাদ বাস্তবতা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে শক্ত হাতে দেশকে পরিচালনা করছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে তাদের কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে।

আজবজআজ
চীনের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শঙ্কায় আছে আমেরিকা ও তার দীর্ঘদিনের মিত্র ইউরোপের দেশগুলো;
image source: chinausfocus.com

চীনের সাথে আমেরিকার বৈরিতার কথা নতুন কোনো খবর নয়। চীনের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু চীনের অর্থনীতির উপরই আঘাত হানেননি, বৈশ্বিক অর্থনীতির পক্ষেও নেতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছেন। আমেরিকার ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক থেকে চীনা টেক-জায়ান্ট হুয়াওয়েকে বহিষ্কার করে দিয়ে নতুন বাণিজ্যিক সংঘাতে জড়িয়েছেন। উইঘুর মুসলিমদের ইস্যুতে চীনা সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অবরোধ জারি করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে ট্রাম্প এককভাবে চীনকে দায়ী করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিয়মিত চীনা-বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন।

এতকিছুর পরও চীন কিন্তু ট্রাম্পকে ঠিকই পরবর্তী চার বছরের জন্য আবার হোয়াইট হাউজে দেখতে চায়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে।

বেইজিং মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, অর্থনীতির দিক থেকে চীনের সাথে পাল্লা দিতে যে নিয়ম-নীতি, ধৈর্য্য আমেরিকার দরকার, তা ট্রাম্প প্রশাসন কোনোভাবেই নিশ্চিত করতে পারবে না। এর প্রমাণ ট্রাম্প তার চার বছরের শাসনামলে অনেকবার দিয়ে ফেলেছেন।

আর আরেকটি প্রধান কারণ হলো চীনকে ঠেকাতে আমেরিকা-ইউরোপ ও এশিয়ার উদীয়মান শক্তিগুলোর যে মিত্রতা দরকার, তা ট্রাম্পের সময়ে আমেরিকা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হবে। ট্রাম্পের আমেরিকা নিজেকে ধীরে ধীরে বিশ্বরাজনীতির কিংবা অর্থনীতির মঞ্চ থেকে গুটিয়ে নিচ্ছে, যেটি একইসাথে তার স্বভাববিরুদ্ধ ও স্বার্থবিরুদ্ধ। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা কিংবা ন্যাটো থেকে আমেরিকার মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ফলে উদ্ভূত ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা চীনকে তার অনৈতিক বাণিজনীতি চর্চার পরিবেশ আরও সুগঠিত করছে।

মাানামামান
চীন-আমেরিকার বাণিজ্যিক যুদ্ধের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে ক্ষতির শিকার হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি;
image source: 123rf.com

জো বাইডেন যদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন, তাহলে চীন-বিরোধী মিত্রতা প্রতিষ্ঠা নতুন মাত্রা পাবে। গত কয়েক মাসে চীনের বিরুদ্ধে জোরেশোরে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন তিনি। উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনের অনৈতিক সরকারি নজরদারি ও বিচার ছাড়াই অসংখ্য মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী করে রাখার ব্যবস্থাকে ‘বিবেকবর্জিত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। হংকংয়ের আন্দোলনকারী জনগণের উপর চীনা পুলিশের নির্মমতাকে ‘অত্যধিক দুঃসাহসিকতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি হোয়াইট হাউজে গেলে যে নতুন করে চীনবিরোধী ঐক্যের সমন্বয় করতে পিছপা হবেন না, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া নীতি অনুযায়ী চীন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অবশ্যই। রিপাবলিকানরা চীনের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী বলে এতদিন ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ট্রাম্প হার্ডলাইনে যাওয়া একজন ব্যতিক্রমী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট, যিনি চীনের সাথে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে বেশ উৎসাহী। ট্রাম্প দীর্ঘ দিনের মিত্রদের সাথে যেভাবে সম্পর্ক গুটিয়ে নিচ্ছেন, বৈশ্বিক সংগঠনগুলো থেকে যেভাবে আমেরিকাকে গুটিয়ে নিয়ে একঘরে করে ফেলছেন, সেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে চীনের লক্ষ্য অর্জনের পক্ষে খুবই সহায়ক হবে।

চীন কোনোভাবেই প্রত্যাশা করে না তার বিরুদ্ধে একটি সক্রিয় পশ্চিম বিশ্ব–আমেরিকা জোট তৈরি হোক। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই যে সমস্যাগুলো তৈরি করেছেন, সেগুলো ট্রাম্প আরেকবার পুনর্নির্বাচিত হলে কোনোভাবেই সমাধা হবে না, আরও গভীরে পতিত হবে। তাই চীন যেকোনোভাবেই ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউজে আরও চার বছরের জন্য দেখতে চায়।

Related Articles