ডিপওয়াটার হরাইজন তেলকূপের সেদিনের রুটিনে কোনো বড় রকমের পরিবর্তন ছিল না। কূপের কর্মীরা নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। নিজের শিফট শেষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে এক কর্মী তার স্ত্রীর সাথে ভিডিওকলের মাধ্যমে আলাপচারিতায় রত ছিলেন। বলতে গেলে এটি ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। সবকিছুই স্বাভাবিক। কোথাও কোনো ভুল নেই। কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন হিসাবের অমিল হলো। তার ব্যক্তিগত আলাপের ব্যাঘাত ঘটল এক জুনিয়র কর্মীর চিৎকারে। ঘটনা কী জানার জন্য তিনি ভিডিও কল রেখে উঠে অফিসের বাইরে চলে গেলেন।
সেখানে তিনি সেই জুনিয়র কর্মীকে ওয়াকিটকি হাতে চিৎকার করা অবস্থায় আবিষ্কার করলেন, তেলে ভেজা কাপড়চোপড় আর ভয়ার্ত সেই চেহারার দিকে এক মুহূর্ত তার কৌতূহলী চাহনি নিবিষ্ট হলো। ক্ষণিকের কৌতূহলের ব্যাঘাত ঘটল কর্মীর মুখ থেকে ভেসে আসা “মে ডে, মে ডে!” চিৎকারে।“আরে আরে! করছে কী এই বোকা জুনিয়র?” তেড়ে গেলেন তিনি। হাত থেকে ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নিলেন। তিরস্কার করলেন তাকে। গুরুতর কোনো বিপদ বা দুর্ঘটনার মুখে ‘মে ডে’ সিগন্যাল ঘোষণা করতে হয়। আর এই জুনিয়র কিছু না বুঝে, না জেনেই ‘মে ডে’ বলে চিৎকার করছে!
কিন্তু তার তিরস্কার বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। এর আগেই কাছাকাছি এক প্রকাণ্ড বিস্ফোরণে অফিসের দেয়াল ফেটে গেল। আশেপাশের বিশাল বিশাল কলকব্জা যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করল। কয়েক সেকেন্ড আগেও যেখানে সেই কর্মী দাঁড়িয়ে তিরস্কার করছিলেন, সেখানে এখন বিধ্বস্ত স্তূপ আর আগুনের লেলিহান শিখা ব্যতীত কিছু চোখে পড়ছে না। এই দৃশ্য তখন পুরো ডিপওয়াটার হরাইজনের চিত্র। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে কার্যকর থাকা এই গভীর সমুদ্র তেলকূপ ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল ঠিক এভাবেই কয়েক মিনিটের মাথায় ধ্বংস হয়ে গেল। সেদিনের এই দুর্ঘটনা আমাদের সাক্ষী করেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ কূপ বিপর্যয়ের।
ডিপওয়াটার হরাইজন তেলকূপ
পৃথিবীর পুরো আয়তনের প্রায় তিনভাগ হচ্ছে সাগরজল দ্বারা পরিবেষ্টিত। সাগরের বুকের বিশালতায় যেন লুকিয়ে আছে লাখো বছরের অজানা গল্প। এই গল্প শুধু তাদের কাছে উন্মোচিত হয়, যারা দুরন্ত অভিযাত্রিকের ন্যায় সাগরের বুকে বিচরণ করে, এর গভীরতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই সেই প্রাচীনযুগ থেকে মানুষ সাগরের ধনরত্ন আহরণের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত আছে। সাগরের গভীরে হাজারো জীববৈচিত্র্য ছাড়াও হরেক রকম সম্পদ লুকিয়ে আছে। যুগে যুগে প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ সে সম্পদ আহরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মানুষ রীতিমতো অসম্ভবকে সম্ভব করে হাজার হাজার ফুট গভীর থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে।
মেক্সিকো উপসাগরের বুকে অবস্থিত ডিপওয়াটার হরাইজন তেলকূপ ছিল এমন একটি নিদর্শন। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের (বিপি) ইজারায় ট্রান্স-ওশেন নামক এক তেল খননকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় উপসাগরের বুকে ২০০১ সালে কার্যক্রম শুরু করে এই তেলকূপ।
ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় ৪,৯৯৩ ফুট গভীরে অবস্থিত তেলকূপটি মূলত মিসিসিপি ক্যানিয়নের মাকোন্দো তেলক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এই তেলক্ষেত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। জরিপমতে, এই কূপের গভীরতা প্রায় ১৮ হাজার ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। সমুদ্রের এত গভীরতায় প্রচণ্ড চাপ বিদ্যমান থাকে, ফলে যেকোনো কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডিপওয়াটার হরাইজনসহ বিশ্বের বিভিন্ন গভীর সমুদ্রকূপ থেকে তেল উত্তোলন করা একটি চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। অত্যাধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তির সাহায্যে বেশ দক্ষতার সাথে ডিপওয়াটার হরাইজনে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছিল। ২০০১ সালে কার্যক্রম চালু হওয়ার পর বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম তেলকূপ দূর্ঘটনার পর ২০১০ সালের জুলাই মাসে এটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
ডিপওয়াটারে গণ্ডগোল
এপ্রিল ২০, ২০১০ সাল; ডিপওয়াটার তেলকূপের দুর্ঘটনার দিন। এর কিছুদিন আগে তেলক্ষেত্রের কিছু কূপ পরবর্তী সময়ে ব্যবহারের জন্য কংক্রিটের সাহায্যে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছিল। দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছিল ঠিক সেই কংক্রিটের সিল থেকে। তেলকূপের পারিপার্শ্বিক চাপে ভেঙে যায় সেই সিল। প্রাথমিকভাবে কূপের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণ রুখে দিতে ব্লো-আউট প্রিভেন্টর (বিওপি) কার্যকর করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিওপি অকার্যকর হয়ে যায়। আর মুহূর্তের মধ্যে বিশাল বিস্ফোরণে ফেটে পড়ে কূপটি। বিস্ফোরণ পুরো স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে। সেদিনের দুর্ঘটনায় ১১ জন কর্মী প্রাণ হারান; আহত হন আরও ১৭ জন।
দুর্ঘটনার পর ২২ এপ্রিল থেকে কূপের তেল সমুদ্রপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ হাজার ব্যারেল করে তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। টানা ৮৭ দিন ধরে ডিপওয়াটার থেকে প্রায় ২০০ মিলিয়ন গ্যালন খনিজ তেল মেক্সিকো উপসাগরের বুকে নিঃসৃত হয়। এর ফলে তেলকূপ থেকে প্রায় ১৬ হাজার মাইল অন্তর্ভুক্ত এলাকা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেক্সাস, মিসিসিপি, লুইজিয়ানা, অ্যালাবামা এবং ফ্লোরিডার উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই তেল ছড়িয়ে পড়ে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তেল দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
তেল নিষ্কাশনে পদক্ষেপ
সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়লে তা নিষ্কাশন করা বেশ কঠিন কাজ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, ডিপওয়াটার দুর্ঘটনায় যেভাবে তেল কয়েক হাজার মাইল বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করা ছিল বেশ দুঃসাধ্য। এধরনের দুর্ঘটনায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তেল দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা তেলকে বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ভেঙে দিতে পারবে। তেলকে ব্যাকটেরিয়ার বিপাকের জন্য সহজলভ্য করে তোলার লক্ষ্যে প্রথমে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন গ্যালন পরিমাণ ডিসপারসেন্টস ঢালা হয়। এটি একধরনের ইমালসিফাইয়ার, যা তেলকে ক্রিমের মতো করে তুলে ব্যাকটেরিয়ার বিপাকের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
কিছু কিছু অঞ্চলে তেল যান্ত্রিক উপায়ে সংগ্রহ করা হয় এবং পুড়িয়ে ফেলা হয়। লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে লোকালয়ের বিভিন্ন জলাশয়ে এই তেল ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে লোকবল নিয়োগ করে তেল নিষ্কাশন করতে হয়েছিল। কোস্টগার্ড, পরিবেশ রক্ষা সংস্থা, বিপি, ট্রান্স-ওশেনসহ বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় প্রায় কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে ২০১৪ পর্যন্ত এই নিষ্কাশন অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
ডিপওয়াটার বিপর্যয়ের কারণে উপকূলবর্তী বিভিন্ন কলকারখানা এবং শিল্প বিনষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা সামুদ্রিক মাছ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক উৎসের প্রতি সরাসরি নির্ভরশীল ছিল, তাদের জীবনযাত্রা বড় বিপর্যয় নেমে আসে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে ধ্বস নেমে আসে। এক ধাক্কায় প্রায় ১২ হাজার নাগরিক চাকরিচ্যুত হয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত সকলের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করে। কিন্তু নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির মুখে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ হওয়ার আগেই সেই তহবিল বন্ধ হয়ে যায়।
কাঠগড়ায় বিপি এবং ট্রান্স-ওশেন
দুর্ঘটনার কারণ জানার জন্য সরকারিভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, এ ঘটনার পূর্বে ২০০৮ সালে বিপির কাস্পিয়ান সাগরে নির্মিত আরেকটি তেল উত্তোলন কেন্দ্রে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা থেকে কিছুই শেখেনি তারা। যার ফলে পরবর্তী সময়ে ডিপওয়াটার হরাইজনের মতো বড় দুর্ঘটনার জন্ম হয়। ২০১১ সালে দুর্ঘটনার পেছনে চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়। বোরহোল নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ সিমেন্টের ব্যবহার, অব্যবস্থাপনা, চাপ পরীক্ষার ফলাফলের ভুল ব্যাখ্যা, গ্যাস অ্যালার্ম ও অতিরিক্ত ব্যাটারিতে গলদ থাকা- এগুলো ছিল দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
সরকারের পক্ষ থেকে বিপি’র বিরুদ্ধে প্রায় ১৪টি অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। বিপি মামলায় সকল অভিযোগ স্বীকার করে এবং প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থদণ্ড প্রদান করে। ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট অনুযায়ী ট্রান্স-ওশেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় এবং তারা প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার জরিমানার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করে। এটি পরিবেশ বিষয়ক আইনের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচ্য।
মামলা নিষ্পত্তি হলেও বিপি এবং ট্রান্স-ওশেনের স্টকের বারোটা বেজে যায়। রাতারাতি অর্ধেকে নেমে আসে এর মূল্য। ২০১০ সালের জুলাই মাসে বিপি রেকর্ড ১৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সেবছর বিপির তৎকালীন সিইও টনি হেওয়ার্ড পদত্যাগ করেন। তাছাড়া দুর্ঘটনার পর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খামখেয়ালিপনার কথা প্রচারিত হলে এদের গ্রহণযোগ্যতা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পায়। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিপির পণ্য বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানায় বিভিন্ন বিপণন কেন্দ্র। সে বছর বিপি ২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার লোকসানের মুখ দেখে। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এবং এর পরবর্তী ঘটনাগুলোকে চিত্রায়িত করে হলিউডে ‘ডিপওয়াটার হরাইজন’ নামে সিনেমা মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। সিনেমায় মার্ক ওয়ালবার্গ, কার্ট রাসেল, জন মেলকোভিচসহ বহু বিখ্যাত তারকা অভিনয় করেছেন।
পরিবশের উপর ডিপওয়াটারের প্রভাব
ডিপওয়াটার হরাইজনের বিপর্যয় আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। বিশেষ করে, জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ অঞ্চলে এধরনের দুর্ঘটনা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এ দুর্ঘটনায় মেক্সিকো উপসাগর এবং এর নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাসরত নানা প্রজাতির প্রাণীর উপর সে প্রভাব স্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সামুদ্রিক কচ্ছপসহ বহু বিপন্ন প্রাণীর বাসস্থান তেলের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপসাগরীয় ডলফিনদের মধ্যে সে বছর অস্বাভাবিক হারে ব্রুসেলা সংক্রমণ দেখা দেয়। গবেষকদের মতে, তেলের প্রভাবে ডলফিনরা এ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া ডলফিনসহ অন্যান্য প্রাণীর মাঝে ফুসফুসে জটিলতা দেখা দেয়, যার সাথে তেল দুর্ঘটনার সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১,৪০০ তিমি এবং ডলফিনের দেহে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ডলফিন, তিমি ছাড়াও সামুদ্রিক পাখিদের মধ্যে এর প্রভাব ছিল আশঙ্কাজনক। ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় ১২ শতাংশ বাদামি পেলিকান এবং ৩০ শতাংশ লাফিং গাল তেলের প্রভাবে মারা গেছে। শতকরাকে যদি সংখ্যায় রূপান্তরিত করা হয়, তাহলে সেটি আট লাখের ঘরে গিয়ে দাঁড়াবে। ২০১২ সালের শেষপর্যন্ত উপসাগরের মূল্যবান এবং বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপদের মধ্যে প্রায় ১,৭০০ কচ্ছপ এই দুর্ঘটনার কারণে মারা যায়। বৃহৎ প্রাণীর বাইরে ক্ষুদ্র কোরাল কিংবা অন্যান্য অণুজীবের উপর এই তেলের প্রভাবও আশঙ্কাজনক।
এভাবে একে একে প্রতিটি প্রাণীর হিসাব নিলে হয়তো এক লেখায় শেষ করা সম্ভব হবে না। মানব জীবন, পরিবেশ, অর্থনীতি- সবক্ষেত্রেই বেশ বড় ধরনের ছাপ ফেলেছে ডিপওয়াটার হরাইজন দুর্ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ দুর্ঘটনার পর গভীর সমুদ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে খনিজ সম্পদ আহরণ সম্পর্কিত নতুন আইন প্রণিত হচ্ছে। পরবর্তীকালে আর দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে জোরদার করা হচ্ছে।
পরবর্তী ডিপওয়াটার হরাইজনকে রুখে দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতিই ব্যর্থ হবে, যদি আমরা নিজেরা এগিয়ে না আসি। এধরনের একটি দুর্ঘটনা হাজার পরিবারের জন্য কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেজন্য নিরাপত্তা ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার লোভকে অগ্রাহ্য করে আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়াই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।