গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার রয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কিছু সাধারণ শর্ত থাকে, যেগুলো পূরণ করে যে কেউ অধিষ্ঠিত হতে পারে সরকারের চূড়ান্ত ক্ষমতায়। এজন্য গণতন্ত্রে জননায়কদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। এই জননায়ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। যেকোনো সময় জননায়ক হয়ে উঠতে পারে একনায়ক, ধ্বংস করে দিতে পারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, ঘটাতে পারে গণতন্ত্রের মৃত্যুও।
গণতন্ত্রে দ্বাররক্ষা কী?
দ্বাররক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Gatekeeping’। দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিং হচ্ছে গণতান্ত্রের স্বার্থে কিছু কার্যক্রমের সমষ্টি, যার দ্বারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুঁজি করে যেন কোনো জননায়ক রাষ্ট্রের শীর্ষ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারে, তা নিশ্চিত করা হয়, এবং গণতন্ত্রকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিফেন লিককের সরকারের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক সরকার দুই ধরনের- রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় গণতন্ত্র। রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকে রাষ্ট্রপতির হাতে, যিনি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। সুতরাং, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সমর্থন আছে এমন যে কেউ সহজেই ক্ষমতার চেয়ারে বসতে পারে, যার সুবাদে হঠাৎ করে কোনো কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কোনো জননায়ক হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসক, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব।
অপরদিকে, সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারপ্রধান মূলত প্রধানমন্ত্রী, যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত ও রাষ্ট্রপতি কতৃক মনোনীত। রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের সবচেয়ে আস্থাভাজন ব্যক্তি, অর্থাৎ দলের প্রধানকে মনোনীত করেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা সংসদের দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিংয়ের কাজ অনুপস্থিত। রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিংয়ের কাজ করে থাকে। গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সরকার প্রধান হিসেবে এমন কোনো জননায়ক যেন অধিষ্ঠিত না হয়, সেজন্য রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান (Gatekeepers) প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, যেগুলো গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে। এই কার্যক্রমই মূলত দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিং।
গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল এসব জননায়কদের রুখতে দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিংয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে। দ্বাররক্ষা দ্বারা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রকৃত রাজনৈতিক নেতাকে মনোনীত করে, গণতন্ত্রকে সচল রাখে।
দাররক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখা, অবাঞ্ছিতদের থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা। একটি গণতন্ত্র টিকে থাকে মূলত সেই গণতন্ত্রের পরিবেশ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতির উপর। একবিংশ শতকে এসে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ক্ষুণ্ণ করতে পারে, মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে গণতন্ত্র।
জননায়ক কে?
জননায়ক হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি বৃহৎ জনগোষ্ঠির আবেগ, ভয় এবং পক্ষপাতদুষ্টতা কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন, এবং সেই জনপ্রিয়তার জোরে গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চান। জননায়করা মূলত ভয়, আবেগতাড়িত বক্তৃতা, মিথ্যা, প্রতিপক্ষের দুর্বলতা, অসম্ভব প্রতিজ্ঞা, প্রতিপক্ষকে অপমান, উপহাস ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ইতিহাসবিদ রেইনহার্ড লুথিন তার ‘American Demagogues’ বইয়ে ডেমাগগ বা জননায়ককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে,
জননায়ক এমন একজন রাজনীতিবিদ, যিনি বক্তৃতা, চাটুকারিতা এবং উদ্দীপনায় দক্ষ; গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় ফাঁকি দেন; সকলের কাছে প্রতিশ্রুতি দেন; জনসাধারণের যুক্তির আচরণের চেয়ে আবেগ বেশি কামনা করেন; এবং জাতিগত, ধর্মীয়, ও শ্রেণীগত কুসংস্কার জাগিয়ে তোলেন। একজন মানুষ, যার নীতির আশ্রয় ছাড়াই ক্ষমতার লোভ, তার জনগণের শাসক হওয়ার ইচ্ছাকে প্ররোচিত করে।
জননায়ক শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল প্রাচীন গ্রিক গণতন্ত্রে। প্রাচীন গ্রিক গণতন্ত্রের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী ক্লিওন তখন পেলোপোনেশিয়ান যুদ্ধের সময় এথেন্সের জনগণের মনে স্পার্টানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে, এবং এথেনিয়ান জেনারেলের ব্যর্থতার কথা বলে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তখন থেকে জননায়ক শব্দের উৎপত্তি।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কট্টর বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জনতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় আলাবামার চারবারের গভর্নর জর্জ ওয়ালেসের কথা। কট্টর বর্ণবাদী এই নেতা আমেরিকার ফেডারেল সরকারকে রাষ্ট্রের অধিকার হরণকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। প্রেস মিডিয়াকে ওয়ালেস উপহাস করতেন। জনগণকে ছোট করে দেখে আনন্দিত হতেন তিনি। তবুও ওয়ালেস তার জনতাবাদী বৈশিষ্ট্য দ্বারা অনেকের সমর্থন পেয়েছেন। ওয়ালেস তিনবার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পার্টি গেটকিপিংয়ের জন্য সফল হতে পারেননি। জনসমর্থন থাকলেও জর্জ ওয়ালেস ছিলেন একজন জননায়ক। অনুরুপ বৈশিষ্ট্যের জন্য আমেরিকার ৪৫ তম রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও একজন জননায়ক বলে আখ্যায়িত করা হয়।
গণতন্ত্রে দ্বাররক্ষা কেন দরকার?
গভর্নর জর্জ ওয়ালেস কেন বার বার চেষ্টা করেও আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সহজেই দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিংয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় অনুধাবন করা যায়।
জননায়কদের উত্থানের পেছনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুপস্থিতি বা প্রার্থীর জনসমর্থনের অভাব দায়ী নয়, বরং রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট গেটকিপিংয়ের অভাবই দায়ী। একজন জননায়ক জনগণের আবেগ কাজে লাগিয়ে, তাদেরকে মিথ্যার স্রোতে ভাসিয়ে, ও অন্যান্য উপায়ে জনসমর্থন আদায় করে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এন্টি সেমিটিক ক্যাথলিক যাজক ফাদার কফলিনের ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। তিনি রেডিও, জনসম্মুখে, ও স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দিতেন, যার শ্রোতা হতো অসংখ্য মানুষ। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণরূপে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনবিরোধী। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা ছিল সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের পরই। তাছাড়া ‘দ্য কিংফিশ’ খ্যাত হুই লং, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের খলনায়ক অ্যাডলফ হিটলার ও মুসোলিনি, জর্জ ওয়ালেস- তাদেরও ছিল ব্যাপক জনসমর্থন।
গেটকিপিং দ্বারা নিশ্চিত করা হয় যে, মনোনীত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের কতটুকু সমর্থন রয়েছে। জননায়করা মূলত মূলধারার রাজনৈতিক ব্যক্তি হন না, এজন্য তাদের দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তেমন সমর্থন দেখা যায় না। যখনই প্রার্থী বাছাই শুরু হয়, তখনই পার্টির গেটকিপিং কার্যক্রম জননায়কদের রুখে দেয়। অর্থাৎ, জনসমর্থন নিয়েও কোনো জননায়ক সহজেই গণতন্ত্রের শীর্ষ ক্ষমতায় যেতে পারে না একমাত্র গেটকিপিংয়ের জন্য।
অন্যদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অনুপস্থিতিকেও জননায়কদের উত্থানের জন্য দায়ী করা যায় না। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তবেই ক্ষমতায় আরোহন করতে হয়। সুতরাং, এখানে জনসমর্থন দিয়ে যে কেউ নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলের গেটকিপিংই গণতন্ত্রকে জননায়কদের হাত থেকে বাঁচাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, রাজনৈতিক দলই প্রকৃত গণতান্ত্রিক নেতা ও জননায়কদের আলাদা করে রক্ষা করে গণতন্ত্র। ইতিহাস থেকে জানা যায়, জননায়করা সবসময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসেন। সুষ্ঠু গেটকিপিংয়ের অভাবের উদাহরণ হচ্ছে হিটলার ও মুসোলিনির মতো একনায়কদের উত্থান। কারণ, উভয়ই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতার মসনদে আসীন হন। আবার, যদি গেটকিপিং না থাকত, তাহলে হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাদার কফলিনের উত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনের ঐতিহ্য ধূলোয় মিশে যেত।
দ্বাররক্ষার উদাহরণ
স্টিভেন লেভিটস্কি ও ড্যানিয়েল জিব্লাট তাদের ‘How Democracies Die‘ বইয়ে কয়েকটি গেটকিপিং কার্যক্রমের উদাহরণ উল্লেখ করেছেন।
স্মোক ফিলড রুম (Smoke Filled Rooms)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মাত্র শেষ হলো। উড্রো উইলসনের প্রেসিডেন্সি প্রায় শেষের দিকে। দরজায় কড়া নাড়ছে ১৯২০ সালের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। রিপাবলিক পার্টির নেতারা প্রার্থী মনোনয়নের জন্য শিকাগো শহরের কলোসিয়ামে জড়ো হয়েছেন। তাপমাত্রা ছিল মাত্রাতিরিক্ত রকমের বেশি। চারদিন ধরে বৈঠক চলার পর সভা রয়ে যায় সিদ্ধান্তহীন। পরে রিপাবলিক পার্টির চেয়ারম্যান উইল হেইস এবং জর্জ হার্ভে কিছু সংখ্যক মার্কিন সিনেটর ও পার্টির নেতাদের নিয়ে একটি কামরায় গোপন বৈঠকে মিলিত হন। আলোচনা চলাকালেই তারা পানীয় গলাধঃকরণ করেছেন, ধূমপান করেছেন, শেষরাত অবধি আলোচনা করেছেন কীভাবে এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, এবং কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া যায়।
সভায় শুরুর দিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২৮৭ জন ডেলিগেট নিয়ে ব্যালটে এগিয়ে ছিলেন মেজর জেনারেল লিওনার্ড উড। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ওয়ারেন জি. হার্ডিং মাত্র সাড়ে ৬৫ ডেলিগেট নিয়ে দূরবর্তী চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। কেউ হার্ডিংয়ের মনোনয়নের কথা ভাবতেও পারেনি। সবাই ভাবছিল ব্লাকস্টোনের কথা। ৪০৪ নং রুমে বসে সকল প্রার্থীকে ভালভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সকাল ১১টার দিকে সাত সদস্যবিশিষ্ট ওল্ড গার্ডখ্যাত পার্টি প্রভাবশালীগণ কক্ষে বসে একটি স্ট্যান্ডিং ভোট আয়োজন করেন, এবং হার্ডিংকে মনোনীত করেন।
সেই কথা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পরদিন সন্ধ্যায় দশম ব্যালেটে ৬৯২ কনভেনশন ডেলিগেটের সমর্থনসহ হার্ডিং জিতে যান। এরকম পদ্ধতিতে জনগণের মত তো দূরে থাক, দলের কর্মীদের মতও নেয়া হয় না। কেউ কেউ একে অগণতান্ত্রিক বললেও এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। স্মোক ফিলড রুমের মাধ্যমে মূলধারার রাজনৈতিক নেতারা প্রার্থীদের ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারেন। এই ক্ষুদ্র দল দ্বারা প্রার্থী মনোনয়ন মূলত দ্বাররক্ষা বা গেটকিপিংয়ের কাজ করেছে। হঠাৎ করে উঠে আসা কোনো জননায়কের মনোনয়ন পাওয়া রুখে দেয় এই স্মোক ফিলড রুম।
কংগ্রেসনাল ককস (Congressional Caucuses)
উনিশ শতকের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের নমিনেশন দেয়া হতো কংগ্রেসের একটি গ্রুপের মাধ্যমে। এটাও অনেকটা স্মোক ফিলড রুমের মতো, যেখানে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কিছু সংখ্যক ডেলিগেট নিয়ে গঠিত একটি দলীয় সভায় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হতো। ডেলিটগরা মূলত জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতেন না। তাদের বেছে নেয়া হতো অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কমিটি দ্বারা, এবং তারা কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীদের সমর্থন করার ব্যাপারে বাধ্য থাকতেন না। তারা মূলত অনুসরণ করতেন অঙ্গরাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের, যারা তাদের সভায় পাঠিয়েছেন। এই ধরনের ব্যবস্থা মূলধারার রাজনৈতিক নেতা ও দলের নেতাদের সমর্থিত প্রার্থীর জন্য সহায়ক হয়, এবং যেসকল প্রার্থীর দলের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সমর্থন থাকে না, তারা মনোনয়ন পান না। সুতরাং দেখা যায়, এই ধরনের পদ্ধতিতে হঠাৎ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা কোনো জননায়ক মনোনয়ন পেতে পারবে না। এই পদ্ধতিতে মূলধারার রাজনৈতিক নেতাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে থাকেন, যা গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখে।
অনেকই স্মোক ফিলড রুম ও কংগ্রেসনাল ককাসের মতো পদ্ধতিকে অগণতান্ত্রিক বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, সাধারণ স্তরের দলীয় কর্মী, দরিদ্র জনগণ ও সংখ্যালঘুদের মত উঠে আসে না এই ধরনের ব্যবস্থায়। সমালোচনা বাইরে রেখে এ কথা সহজেই স্বীকার করে নিতে হয় যে, গেটকিপিং পদ্ধতি সহজেই জননায়ক প্রার্থীদের বাছাই করে মনোনয়নপ্রাপ্তি রুখে দেয়, এবং প্রার্থী হিসেবে উঠে আসেন একজন মূলধারার রাজনৈতিক নেতা, যিনি বিশ্বাস করেন গণতন্ত্রে, গণতান্ত্রিক অলিখিত রীতিনীতিতে। এভাবে জননায়করা গণতন্ত্রকে হত্যার সুযোগই পায় না, সুরক্ষিত থাকে গণতন্ত্র।