(পর্ব ২ এর পর)
আমেরিকান পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আপনার প্রতিটি আলোচনায়ই আমরা দেখতে পাই, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গালভরা শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের ভয়াবহ ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন। টোকিও বা ড্রেসডেন ও হ্যামবুর্গে বোমা হামলা, কিংবা ভিয়েতনামের গ্রামবাসীরা, অথবা ইরাকিরা- এসব ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষদেরই বেশি ক্ষতি হয়, যা আমরা এড়িয়ে যাই। আমেরিকান রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের আদর্শবাদী মনে করতে পারেন, হয়তো তারা নিজেদের সেই অবস্থান বিশ্বাসও করেন; তারা হয়তো মনে করেন, কেবলমাত্র তারাই কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিরোধ করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করেন। কিন্তু আমরা যদি তাদের নিজেদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করতে যাই, তাহলে পুরো বিশ্বে আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ধারাবাহিক নির্মমতার উদাহরণ দেখতে পাই।
চমস্কি: আমরা অন্যদের চেয়ে আলাদা কেউ না। আমাদের পূর্ববর্তী সাম্রাজ্যবাদী নেতা ব্রিটেনের কথাই ধরুন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কয়েক দশকের বর্বরতা কেবল সম্প্রতি আলোয় আসা শুরু করেছে। ক্যারোলিন অ্যালকিন্স ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বই লিখেছেন (লিগ্যাসি অব ভায়োলেন্স)। শশী থারুর সম্প্রতি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন (ইনগ্লোরিয়াস অ্যাম্পায়ার)। এটা কেবল শুরু।
ব্রিটিশরা কয়েক শতাব্দী ধরে এমন নির্মমতা চালিয়ে আসলেও তাদের বুদ্ধিজীবীরা নিজেদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে নীতিবান জাতি হিসেবে স্তুতি গেয়ে এসেছেন। এমনকি জন স্টুয়ার্ট মিলের মতো প্রথম সারির বুদ্ধিজীবীও এর বাইরে ছিলেন না। তিনি কী করেছিলেন? চলুন ১৮৫৭ সালে ফিরে যাই। ব্রিটিশরা তখন ভারতবর্ষের বিদ্রোহকে হত্যা আর বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবের সাথে দমন করছিল। মিল এ সম্পর্কে জানতেন। তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন এজেন্ট ছিলেন। তিনি একটা বিখ্যাত প্রবন্ধ লিখেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়; যদিও তিনি আসলে কী বলতে চেয়েছেন সেটা মনে হয় না বুঝেই পড়ানো হয়। প্রবন্ধটা ছিল অন্য জাতির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে।
তিনি বলেন, অন্যদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত না; তবে এখানে কিছু ব্যতিক্রম আছে। একটা ব্যতিক্রম হচ্ছে, ব্রিটেনের মতো দেশগুলো চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তিনি এর কারণ হিসাবে দেখান, ব্রিটেন হচ্ছে ফেরেশতাতুল্য দেশ। ব্রিটেন অন্য দেশগুলোর মতো নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা এতটাই মহৎ যে, অন্য দেশগুলো তা উপলব্ধি করতে পারে না। তারা কেবল আমাদের অবমাননা করে। কিন্তু আমরা সেগুলো মানবজাতির কল্যাণের জন্যই করি। আমরা ভারতীয়দের বধ করে যখন ভারতের আরো অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকি, তখন আমরা আফিম বাণিজ্যের আরো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারি; এতে আমরা চীনে প্রবেশ করতে পারি। কিন্তু তারা আমাদের বুঝতে চায় না। তাই আমাদের উচিত সমালোচনাকে এক পাশে সরিয়ে রেখে, আমাদের মানবিক কাজগুলো করে যাওয়া। তাদের প্রতিক্রিয়াকে আমাদের ব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা হিসাবে ধরে নেওয়াই ভালো।
এগুলো ছিল জন স্টুয়ার্ট মিলের কথা। আমি জানি না, বর্তমানের কোনো আমেরিকান বুদ্ধিজীবী তার পর্যায়ে আছেন কিনা। তাহলে আমেরিকানদের গালভরা কথা কি খুব বেশি অবাক করার মতো?
একইভাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ন্যায্যতা দেখানোর জন্যও অনেক মহান উদ্দেশ্যর কথা শোনা যেতে পারে। আপনি যেটা বললেন, প্রত্যেক পরাশক্তি দেশই নিজেদের নৃশংসতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের মহত্বের কল্পকথা প্রচার করে থাকে। কিন্তু বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় দ্বিচারিতা লক্ষ্য করা যায়। আমরা অন্যদের প্রতি যেরকম নিন্দা জ্ঞাপন করি, নিজেদের অনুরূপ কর্মকাণ্ড পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে চাই না।
চমস্কি: বাইডেন সম্প্রতি পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে তার যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি করেছেন। আমি পুরো বিশ্ব জুড়েই সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকি, বিশেষ করে দক্ষিণ বিশ্বে। আপনি পত্রিকায় দেখবেন, তারা প্রশ্ন করে, “বাইডেনের এই বিবৃতি সম্পর্কে আপনার মতামত কী?” এর উত্তর হচ্ছে, “একজন খারাপ লোকই অন্য খারাপ লোককে ভালো চিনতে পারে।”
একইসাথে পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলার জন্য তার অসাধারণ সাহসিকতা নিয়েও অনেক প্রশংসা দেখবেন। আপনি বিখ্যাত সংস্থা আটলান্টিক কাউন্সিলের আর্টিকেলগুলোতে দেখতে পাবেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার বীভৎস কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তাদের নৈতিকতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। যে লোকরা এই আর্টিকেলগুলো লিখছেন, আপনি কয়েক বছর পেছনে গেলে দেখবেন, এই লোকরাই ইরাকে আগ্রাসনের অর্জনগুলো নিয়ে প্রশংসা করেছেন, পশ্চাৎপদ ইরাকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন। তাদের আড়ম্বরপূর্ণ ভাষাগুলো দেখলে হয়তো বর্তমানে রাশিয়ার আগ্রাসনের পাড় সমর্থকরাও লজ্জা পাবেন।
দক্ষিণ বিশ্বের লোকজনকে এগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা সন্ত্রাস আর নির্যাতনের শিকার। এক ঘণ্টা আগে আমি বেলজিয়ামের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। সেখানে আমরা এই প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন চলে আসলো কঙ্গোর স্বাধীনতাকামী নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বাকে বেলজিয়ানদের হত্যা করার প্রসঙ্গ। আফ্রিকার সবচেয়ে বড় দেশ কঙ্গোতে বেলজিয়াম খুবই নৃশংসতা চালায়। এমনকি বেশিরভাগ ইউরোপীয় নৃশংসতার চেয়েও জঘন্য বর্বরতা চালায় বেলজিয়াম। তাদের পর্যায়ে যাওয়া খুব কঠিন। শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালে দেশটি উপনিবেশ শাসন মুক্ত হয়েছিল। খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ আফ্রিকান এই দেশটির সম্ভাবনা ছিল একটা ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার; তারা হয়তো আফ্রিকাকে আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আর বেলজিয়াম সেটা হতে দিতে চায়নি। প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার লুমুম্বাকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাকে খুন করার কথা ছিল সিআইএ-র; তারা সেটা করতে পারেনি। বেলজিয়ামের গোয়েন্দারা আগে সুযোগ পায়। তারপর থেকে তারা কঙ্গোকে একটা ভয়াবহ অগ্নেয়গিরি বানিয়ে রেখেছে।
এগুলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের কোনো ইতিহাস নয়। দক্ষিণ বিশ্বের মানুষজন এগুলো সম্পর্কে জানে। তারা ইরাক, মধ্য আমেরিকা, ভিয়েতনামের ঘটনাগুলো জানে। তারা জানে আমরা কী করে এসেছি। তাই তারা যখন আমাদের মুখে নৈতিকতার বুলি শুনে, তখন হয় এগুলোকে বিদ্রূপ করে; অথবা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বর্বর অসভ্য কার্যকলাপ দেখে বিশ্বাসই করতে পারে না কী হচ্ছে এসব।
আমি আবার পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসঙ্গে ফিরে যেতে যাই। আমরা হিরোশিমা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা ভালো করেই জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী দশকগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশদ পরিকল্পনা করেছে একে অন্যকে পৃথিবী থেকে ধ্বংস করে দেওয়া নিয়ে। তারা মূলত বিশ্বব্যাপী গণহত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সেটা কখনো হয়নি। আমরা স্নায়ুযুদ্ধ দিয়েই ওই সময়টা পার করে ফেলতে পেরেছি। কিন্তু আমরা যখন এ ধরনের অস্ত্র নিয়ে কথা বলি, তখন মূলত এমন গণহত্যার সম্ভাবনা নিয়েই বলি, যা কেউ আগে কখনো দেখেনি।
পলিটিকোতে দেখলাম খবরের শিরোনাম দিয়েছে, সামরিক বাহিনীর বাজেট নিয়ে ক্যাপিটল হিলে বিতর্ক চলছে। ডেমোক্রেটরা উভয় সংকটে পড়েছে; পেন্টাগনের জন্য ইতিহাসের সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত বাজেটটাই সমর্থন করবে, নাকি বাজেটের পরিমাণ আরো বাড়াবে, সেটা নিয়ে। ফরেন অ্যাফেয়ার্সে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, “আমেরিকাকে অবশ্যই প্রতিরক্ষায় আরো বিনিয়োগ করতে হবে”। সেখানে বলা হয়েছে, আমেরিকার পারমাণবিক অস্ত্রগুলোর হালনাগাদ, আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা জরুরি। ভার্জিনিয়ার এক ডেমোক্রেট প্রতিনিধি বলেছেন, আমাদের উচিত জিডিপির ৫ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা; তাহলেই আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের “আধুনিকায়ন” করতে পারব। একইসাথে তাইওয়ানে চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার জন্যও বিনিয়োগ করা জরুরি।
আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, আমরা এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে সরে আসতে পারব? আমি যখন ভবিষ্যতের দিকে তাকালে কেবল ক্রমবর্ধমান সামরিক বাজেট আর পারমাণবিক অস্ত্রের আধিক্য দেখতে পাই। এটা নিঃসন্দেহে আতঙ্কের ব্যাপার। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের বিকল্প উপায় কী?
চমস্কি: যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান কৌশলগত অবস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালে, ট্রাম্প প্রশাসনের সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের দ্বারা। এই কৌশল অনুযায়ী, আমাদেরকে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে লড়া বন্ধ করে চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে হবে। আমাদেরকে এই দুটি দেশকেই পারমাণবিক যুদ্ধে পরাজিত করার মতো শক্তিশালী হতে হবে। পাগলামির যদি এর চেয়ে ভালো কোনো সংজ্ঞা থেকে থাকে, আমি সেটা শুনতে আগ্রহী।
আসলে, আমরা এর চেয়েও বিকারগ্রস্ত কথাবার্তা শুনেছি। ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায় আসার পর, জো বাইডেন এই কৌশলগত অবস্থানকে আরো উচ্চ সংস্করণে নিয়ে গেলেন। নতুন নীতি অনুযায়ী, কয়েকটি প্রহরী রাষ্ট্র দিয়ে আমাদের একটা চক্র তৈরি করতে হবে চীনকে ঘিরে ফেলার জন্য। আর আমরা এসব দেশে অস্ত্র ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য কাজ করব, যেন তারা চীনের দিকে তাক করে রাখতে পারে। চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে আমাদের এই চক্রটা তৈরি করতে হবে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড আর ভারতকে দিয়ে (যদিও ভারত খুব একটা আগ্রহী নয়)।
অন্যভাবে বললে, এই বিশ্বটা যেন আমাদের একারই। আমরা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় আমাদের ইচ্ছামতো আগ্রাসন চালাতে পারি, কারণ আমরাই এখানকার প্রভু। কিন্তু চীন যদি এমন কিছু করে যা আমরা পছন্দ করি না, তাহলে আমরা এসব প্রহরী রাষ্ট্রগুলোর মাধ্যমে চীনকে চেপে ধরব। একে অনেক উদারনৈতিক মনোভাব হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
চীনও এমন সব কাজ করছে, যা তাদের করা উচিত নয়। তারা দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলার মতো অবস্থানে নেই; কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এই সামুদ্রিক আইন অনুমোদনই করেনি। কিন্তু আমাদের বৈশিষ্ট্যই এমন। আমরা এই বিশ্ব নিজেদের একার মনে করি এবং নিয়ন্ত্রণ করি। তাই আমাদের কোনো কিছু অনুমোদন বা স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই। আমরা এমন জিনিস প্রতিষ্ঠিত করেছি, পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞরা যার নাম দিয়েছেন, “নিয়ম ভিত্তিক উদারনৈতিক ব্যবস্থা”। আমরা এটা সমর্থন করি, কারণ আমরাই নিয়ম তৈরি করি। তাই আমরা সেকেলে জাতিসংঘভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সমর্থন করি না। কারণ সেখানে আমাদের নিয়ম তৈরি করার সুযোগ নেই। এটা মোটেও ভালো কিছু নয়।
আমরা নিজেদের ব্যবস্থা অনুযায়ী চীনকে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা করছি। এদিকে, আমরা অস্ট্রেলিয়ায় পারমাণবিক সাবমেরিনের একটা বহর পাঠিয়েছি, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। অন্যদিকে চীনের কাছে হয়তো আধা ডজন পুরোনো আমলের ডিজেল সাবমেরিন আছে, যা আপনি সহজেই শনাক্ত করে ফেলতে পারবেন। আমাদের কাছে যা আছে, তাদের কাছে এত উন্নত অস্ত্র নেই। আমাদের পারমাণবিক সাবমেরিনের একটা বহর পাঠিয়ে দিতে হয়েছে। এগুলোকে এমনভাবে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে যে, এগুলো নীরবে চীনা বন্দরে গিয়ে যেকোনো চীনা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে। আমাদের চীনের হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের একটা আধুনিক পারমাণবিক সাবমেরিনের বহর আছে, কিন্তু তাদেরগুলো এত অত্যাধুনিক না। বর্তমানে একটা ট্রাইডেন্ট সাবমেরিনের ক্ষমতা আছে, বিশ্বের যেকোনো স্থানের ২০০টি শহর ধ্বংস করে দেওয়ার। কিন্তু আমরা তাতেও সন্তুষ্ট না। আমাদের আরো হালনাগাদ করা লাগবে। আমরা এর চেয়েও উন্নত সংস্করণ নিয়ে এসেছি, ভার্জিনিয়া ক্লাস সাবমেরিন।
অস্ট্রেলিয়ায় আমরা পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠিয়েছি, চীনের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য। এটাই উদারনৈতিক আমেরিকা। ঠিক আছে, এবার রিপাবলিকানরা কী বলে দেখি। তাদের কাছে এতটুকও যথেষ্ট মনে হয় না। আমাদের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে, চীন ও রাশিয়াকে পরাজিত করার জন্য। জার্মানি তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করেছে, কারণ রাশিয়া তাদের আক্রমণ করতে পারে। রুশ সেনাবাহিনী তাদের সীমানা ৩০ কিলোমিটার দূরের শহরগুলো দখল করতে পারে না, যেখানে তারা খুব একটা অত্যাধুনিক সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি। এই রাশিয়া আক্রমণ করবে জার্মানিকে! আমাদের এখন এটাও বিশ্বাস করে নিতে হবে। তাই জার্মানিকে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
আপনি লক্ষ্য করলেই বুঝবেন, আমরা কেন এত ভীত। এটা আমেরিকান ইতিহাসের একেবারে স্বাধীনতার ঘোষণার সময় থেকেই দেখা যায়। আমরা প্রতি বছর ৪ জুলাই, রাজা তৃতীয় জর্জের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করি, আমাদেরকে “নির্দয় বর্বর ইন্ডিয়ান” জনপদের সামনে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য টোবাকোর পাইপ নিয়ে আসা নির্দোষ আমেরিকানদের ওপর অত্যাচার করে। আমাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে হবে। এটা খুবই ভয়ঙ্কর, আমরা যেভাবে সবসময়ই আক্রমণের শিকার হয়ে থাকি।
ফরেন অ্যাফেয়ার্সে আমরা এরকম কিছু লেখা দেখতে পাই- “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তার প্রতিরক্ষার জন্য ভয়াবহরকম নিম্ন তহবিলের পরিমাণ রাখার কারণ নিয়ে, অজুহাত দেওয়া বন্ধ করা। আমাদের জরুরিভাবে উচিত দুর্বল হতে থাকা সামরিক ব্যবস্থাকে পুনরজ্জীবিত করা”। আপনি যখন এমন কিছু দেখেন, তখন আপনার কি এগুলোকে নিছক পাগলামি মনে হয় না?
চমস্কি: আমি নিশ্চিত, লকহিড মার্টিনের কর্মীরা এগুলো খুব উপভোগ করে। আমাদের একটা মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হলে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে ফিরিয়ে আনতে হবে, যাকে রিপাবলিকানরা ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রথমে, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবিএম চুক্তি (অ্যান্টিব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি) থেকে বেরিয়ে যান। এটা ছিল রাশিয়ার জন্য একটা গুরুতর হুমকি। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে হাতের কাছে যা খুঁজে পেলেন, সবই ভাঙা শুরু করলেন। তার মাঝে রিগ্যান-গর্বাচেভের আইএনএফ চুক্তিও ছিল, যার কারণে ইউরোপে স্বল্প পাল্লার পারমাণবিক মিসাইলের ব্যবহার প্রতিরোধ করা হয়। এই চুক্তির কারণে যুদ্ধের ঝুঁকি অনেকখানিই কমে গিয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প সেখান থেকে বেরিয়ে আসলেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি যে বিষয়টাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন, তা বোঝানোর জন্য চুক্তি থেকে সরে আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জিম ম্যাটিসের সাথে অস্ত্রের পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, যা এই চুক্তির বিপরীত ছিল। ট্রাম্প যেন রুশদের বার্তা দিতে চেয়েছেন, আমরা তোমাদের আক্রমণ করতে আসছি মিসাইল নিয়ে। তোমরা কখনো টেরও পাবে না, এই মিসাইলগুলো কখন এসে তোমাদের আঘাত হানবে।
তিনি ওপেন স্কাই ট্রিটি নিয়েও ঝামেলা করেছেন। এই চুক্তির কৃতিত্ব ছিল আইজেনহাওয়ারের। মনে রাখবেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ছিলেন আইজেনহাওয়ার। আইজেনহাওয়ারের পর কোনো রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট আসেননি। যারা এসেছেন, তারা উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল ছাড়া কিছুই নয়, যারা রক্ষণশীলের মতো সম্মানজনক পরিভাষাকে বিষাক্ত করে তোলে। আইজেনহাওয়ার একজন ন্যায়সঙ্গত রক্ষণশীল নেতা ছিলেন। আপনি তাকে পছন্দ করেন বা না করেন, তিনি অনেক যাচ্ছেতাই কাজ করে থাকলেও, কল্যাণমূলক কার্যক্রমও কম করেননি। কিন্তু তিনি এই ওপেন স্কাই ট্রিটির উদ্যোক্তা ছিলেন। ট্রাম্প এর পেছনেও লেগেছিলেন। তিনি একে পুরোপুরি ধ্বংস করার সময় পাননি। তবে দ্বিতীয়বার যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন, তাহলে চুক্তির বাকি অংশটাও ধ্বংস করে ছাড়বেন।
একদিকে যুদ্ধের দামামা বাজলেও, অন্যদিকে অস্ত্র ব্যবসায় রমরমা অবস্থা। জনগণকে ভয়ের মধ্যে রেখে নির্বাচনী ফায়দাও লুটা যাচ্ছে ভালোভাবে। জনগণকে ভয় দেখানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। বিশেষ করে এমন দেশে, যেখানে আমার মতো লোকরা শৈশবে কাউবয় আর ইন্ডিয়ান খেলার চর্চা করে এসেছে। আমরা হচ্ছি কাউবয়। আপনি যখন এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা আর সংস্কৃতির অংশ হতে পারেন, তখন আপনি পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক দেখাতে পারেন। কারণ আমরা আক্রমণের শিকার হতে যাচ্ছি।
ফ্রিম্যান তার বিচক্ষণ বক্তব্যে ভিয়েনা চুক্তির প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছিলেন। আপনি যদি ইউরোপের ইতিহাসের দিকে তাকান, আপনার কাছে এই জায়গাকে কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসা বর্বরতার চর্চা ক্ষেত্র মনে হবে। কিন্তু ১৮১৫ সালে শেষ পর্যন্ত তারা ভিয়েনা চুক্তিতে সম্মত হয়। এই শান্তি চুক্তিতে যুদ্ধরত সকল শক্তিই একমত হয়; এমনকি এর মাঝে পরাজিত শক্তি নেপোলিয়নের ফ্রান্সও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন ফ্রান্স ছিল একটা আগ্রাসী শক্তি, যা কার্যত ইউরোপ দখল করে নিয়েছিল। ওই শান্তি চুক্তিতে ফ্রান্সকেও রাখা হয়েছিল। ফলে ইউরোপ প্রায় একশ বছর অনেকটা শান্তিতেই সময় কাটায়। এর মাঝে দুই একটা যুদ্ধ হয়েছিল, তবে ইউরোপের মাপকাঠিতে সেগুলো ছিল খুবই স্বল্পমাত্রার। সেটা ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেপর্যন্ত টিকেছিল। এক শতাব্দী।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা কী করলাম? আমরা পরাজিত জার্মানিকে চুক্তিতে জায়গা দিলাম না; বরং, তাদেরকে শাস্তি দিলাম। ফলে কী হলো? নাৎসি জার্মানি সৃষ্টি হলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার সাথেও একটা শান্তিময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যেত। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য একত্রীকরণ, সাংস্কৃতিক অভিবাসনসহ আরো অনেক পদক্ষেপের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ রাজনীতিবিদ শার্ল দ্য গল। তিনি একে বলেছিলেন, সামরিক জোটবিহীন “আটলান্টিক থেকে উরালের ইউরোপ”। জার্মান প্রধানমন্ত্রীও এমন পদক্ষেপ নিতে তাগাদা দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন পতনের মুখে, মিখাইল গর্বাচেভও লিসবন থেকে ভ্লাদিভস্তক সামরিক জোটবিহীন স্বাধীন ইউরোপের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল ইউরোপকে আটলান্টিকীয় কাঠামোতে নিয়ে আসা, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। ইউরোপকে থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে। এটা ছিল একটা উপায়। আরেকটা বিকল্প ব্যবস্থা ছিল, ইউরোপীয়দের সাধারণ নিবাস গড়ে তোলা, যেখানে কোনো সামরিক জোট থাকবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত এই প্রস্তাবনা নিয়ে বিতর্ক চলমান। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ, তার সীমিত সামর্থ্য থেকে পুতিনের সাথে এমন কিছুরই উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। কিন্তু পুতিন তার অপরাধমূলক মূর্খতার কারণে এই সুযোগ হেলায় নষ্ট করলেন। ক্রেমলিনে যদি একজন কূটনীতিজ্ঞ ব্যক্তি থাকতেন, এই সুযোগটা লুফে নিতেন। রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ইউরোপের জন্যই অনেক প্রয়োজন। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে তারা একে অন্যের পরিপূরক। মাখোঁর প্রস্তাবনাটা একটা প্রলোভন হতে পারত, কিংবা কাজেরও হতে পারত। আমরা সেটা জানি না। কিন্তু তারা চেষ্টা করে দেখেনি।
বরং, পুতিন তা-ই করলেন যা কোনো হিংস্র ব্যক্তি করে থাকে। তিনি সহিংসতার পথ বেছে নিলেন। ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসন চালালেন। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের তপ্ত বাসনা পূরণ করলেন। ইউরোপ এখন যেকোনো সময়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল। ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সেরা উপহারই দিয়েছে, যা উল্টা তাদেরই পেছনে ছুরি বসাচ্ছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, আদৌ কি একটা শান্তিপূর্ণ বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ আছে? সবচেয়ে হতাশাজনক ব্যাপারগুলোর একটা হচ্ছে- যুদ্ধ ও পারমাণবিক ধ্বংস কার্যক্রম খুব সহজেই দূর করা সম্ভব হতে পারত, যেখানে বিশ্বের বিপুল সংখ্যক মানুষ সুখে-শান্তিতে ও সমৃদ্ধিশালী জীবন কাটাতে চায়; তারা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সমর্থন করে না। কিন্তু আমি যখন নীতি নির্ধারণী বিষয়গুলোর দিকে তাকাই- অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তিসমূহ; কিংবা ন্যাটোর সম্প্রসারণের মতো ইতিহাসের বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলো যদি ভিন্নভাবে নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো একটা শান্তিপূর্ণ বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাওয়া যেত।
কিন্তু আমি জানি না, যে দেশের মানুষরা একটা শহর ধ্বংসের খবর শুনে সাথে সাথেই বেসবল খেলতে চলে যায়, সেখানে কীভাবে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম প্রসঙ্গে আমি যতই পড়ছি, ততই ভীত অনুভব করছি। আপনার এই ব্যাপারটা আমি খুব সমীহ করি, আপনি আলোচনার পাশাপাশি মানবীয় ক্ষয়ক্ষতির দিকটা নিয়েও কথা বলতে ভুলেন না। এর শেষ কোথায়, জানা খুব কঠিন। মানুষ এটা নিয়ে কিছুদিন উদ্বেগ দেখিয়ে, তারপর আবার নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
চমস্কি: এটা সহজ কাজ নয়। ইউক্রেন প্রসঙ্গটা আমরা যদি একপাশে সরিয়েও রাখি, এটাই বিশ্বের একমাত্র সংকট নয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রকৃত অর্থেই লাখ লাখ আফগান জনগণ খাদ্যের সংকটে ভুগছে। বাজারে খাদ্য আছে। কিন্তু যে আফগানদের কাছে খুব বেশি অর্থ নেই (আফগান মুদ্রার নাম আফগানি), তারা নিজেদের সন্তানদের ক্ষুধায় ভুগতে দেখছে। কেন? কারণ হচ্ছে, বাইডেন প্রশাসন তাদের অর্থ চুরি করে নিয়ে গেছে। তাদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে রাখা। ব্যাংকের দায়িত্ব ছিল বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করা। ব্যাংক আপনার অর্থ নিয়ে রাখতে পারে, কারণ আপনি ব্যাংককে ভরসা করেন; আপনার যখন অর্থের প্রয়োজন হবে, তখন আপনি ব্যাংক থেকে অর্থ তুলতে পারবেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অন্য দেশগুলোর অর্থ চুরি করতে চায়। তাই আমরা এখন ঠিক করেছি, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোতে রাখা আফগানিস্তানের অর্থগুলো চুরি করা।
এর জন্য আমরা একটা অজুহাতও তৈরি করে রেখেছি, যা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে। অজুহাতটি হচ্ছে, আমেরিকানরা ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। কিন্তু ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় আফগানদের কোনো দায় নেই। আপনার হয়তো মনে আছে- তালিবানরা আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছিল, ওসামাকেও হস্তান্তরের প্রস্তাবনা দিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল- আমরা আত্মসমর্পণ নিয়ে কোনো আলোচনা করি না। আমরা তোমাদের সম্পূর্ণ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেব। আল কায়েদা নিয়ে আমরা কোনো পরোয়া করি না।
এরপর ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ চলল। এখন আমরা তাদের অর্থ চুরি করে নিয়েছি, যেন তারা না খেয়ে মরে। আমরা কি এটা নিয়ে কিছু করতে পারব? আমরা কি এটা নিয়ে কোনো আলোচনা করি? খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন। এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না।
জ্বি। অধ্যাপক চমস্কি, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।
চমস্কি: আপনাকেও ধন্যবাদ।