Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তুরস্কের প্রাচীন শহর এফেসাসের বুকে

আমরা এখন যাকে তুরস্ক বলি, তার পশ্চিম উপকূল একসময় প্রাচীন গ্রিসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রস্থল ছিল। সে সময় এখানে প্রচুর স্থাপনা গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে, বিভিন্ন নগর ও বন্দরের সূচনা ঘটে। কিন্তু কালের গর্ভে সেসব নগর বা শহর হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার বছর আগে। বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক হেরাক্লিটাসের নাম আমরা শুনে থাকব। তার জন্মস্থান আধুনিক তুরস্কের এফেসাসে। সেই প্রাচীন শহর এফেসাসের কথাই বলা হবে এই লেখায়।

আধুনিক তুরস্কের একটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ হলো এফেসাস। খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে গ্রিক শহর হিসেবে এফেসাসের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংরক্ষিত এই প্রাচীন শহর বন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এটি একসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রিক শহর এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। ইতিহাস জানায়, অতীতে এফেসাসে বহু আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে, এবং বহুবার এর পরিবর্তন করেছে। এটি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের কেন্দ্রস্থল ছিল। এছাড়া এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং খ্রিষ্টধর্মের তীর্থস্থান

এফেসাসের ইতিহাস

৬০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ক্যালকোলিথিক সময়কাল পর্যন্ত এফেসাসের ইতিহাস পাওয়া যায়। আয়াসুলুক পাহাড়ে খনন করে একটি প্রাচীন বসতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তাই প্রাচীন এফেসাস প্রথমে আয়াসুলুক পাহাড়ে অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। এটি সর্বপ্রথম আনাতোলিয়ান গোত্রের বসতি ছিল, কারণ হিট্টাইট কিউনিফর্ম ফলকে ‘অ্যাপাসাস’ নামের উল্লেখ রয়েছে, যার অর্থ ‘মৌমাছি’।

প্রাচীন শহর এফেসাস; Image source: history.com

প্রাচীন ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবো এবং পসানিয়াসের মতে, এবং ঐতিহাসিক হেরোডোটাস দাবি, অ্যামাজনরাই এফেসাস খুঁজে পেয়েছিল, এবং ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই এলাকার স্থানীয় অধিবাসী ছিল ক্যারিয়ান এবং লেলেজিয়ান। অ্যামাজনরা শহরের নাম দিয়েছিল ‘এফেসোস’। তাদের মতে, হিট্টাইটরা খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ সালের দিকে এখানে এসেছিল, এবং শহরের নাম পরিবর্তন করে এফেসোস থেকে অ্যাপাসাস করে। এরপর ১১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে আয়োনিয়ান উপনিবেশবাদীরা এখানে আসে

কিংবদন্তি অনুসারে, আয়োনিয়ান রাজপুত্র অ্যান্ড্রোক্লস একটি নতুন গ্রিক বসতি সন্ধান করার জন্য দৈববাণীর আশা করছিলেন। একসময় দৈববাণী আসল যে, একটি শুয়োর এবং একটি মাছ তাকে নতুন পথ ও বসতির জন্য একটি জায়গা দেখাবে। একদিন অ্যান্ড্রোক্লোস খোলা জায়গায় আগুনে মাছ ভাঁজছিল। তখন একটি মাছ আগুন থেকে লাফিয়ে পাশের ঝোপে গিয়ে পড়ে। ফলে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ঝোপে আগুন লাগিয়ে দিল এবং একটি বন্য শূকর সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। দৈববাণীর কথা স্মরণ করে অ্যান্ড্রোক্লস সেই জায়গায় নতুন বসতি তৈরি করে, এবং এটি এফেসাস বলে পরিচিত হয়।

আরেকটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, ‘অ্যামাজন’ নামে মহিলা যোদ্ধাদের একটি গোত্র এফেসাস প্রতিষ্ঠা করেছিল, আর শহরের নামকরণ করা হয় তাদের রানী এফেসিয়ার নামে।

Image source: World History Encyclopedia

তবে এফেসাসের প্রাচীন ইতিহাসের বেশিরভাগই অলিখিত এবং অস্পষ্ট। জানা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীর শুরুতে সিমেরিয়ান আক্রমণের সময় এই অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর অবশ্য এটি লিডিয়ান রাজাদের শাসনে চলে যায়, আর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম সমৃদ্ধশালী ও ধনী শহর হয়ে ওঠে। সেখানে পুরুষ এবং নারীরা সমান সুযোগ পেত। লিডিয়ান রাজা ক্রোয়েসাস ৫৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ৫৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এই শহর শাসন করেন। কিন্তু ক্রোয়েসাস পারস্যের রাজা সাইরাসের কাছে পরাজিত হওয়ায় সমগ্র এজিয়ান উপকূলীয় অঞ্চলে পারস্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়

পার্সিয়ানরা ক্রোয়েসাসকে পরাজিত করার পর আয়োনিয়ানরা শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু পারস্যের রাজা সাইরাস বলেন তারা যেন আত্মসমর্পণ করে এবং পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে এক হয়ে যায়। পরে ৫৪৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পারস্যের সেনাপতি হারপাগোসের কাছে তারা পরাজিত হয়। ৫৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এফেসাস আনাতোলিয়ার বাকি অংশের সাথে পারস্য সাম্রাজ্যে যুক্ত হয়। অন্য আয়োনিয়ান শহরগুলো পারস্য শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেও এফেসাস উন্নতি লাভ করতে থাকে।

এরপর ৩৩৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পার্সিয়ানদের পরাজিত করে এফেসাস দখল করেন। কিন্তু ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তার মৃত্যুর পর লাইসিমাকাস শহরটি দখল করেন। লাইসিমাকাস ছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বারো জেনারেলের একজন। তিনি এই অঞ্চলের শাসক হওয়ার পর শহরের উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি এই শহরকে তার স্ত্রী আরসিনোয়ের নামানুসারে আর্সিনিয়া নাম দেন

লাইসিমাকাস এফেসাসকে দুই মাইল দূরে সরিয়ে সেখানে একটি নতুন বন্দর এবং প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল নির্মাণ করেন। তবে তিনি বুঝতে পারেন যে এফেসিয়ানরা তাদের পুরনো শহর ছেড়ে যেতে রাজি নয়। তাই তিনি এক রাতে প্রচণ্ড ঝড়ের সময় পুরো পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অকেজো করে দেন, বাড়িগুলোকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলেন, এবং বাসিন্দাদের স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেন। ২৮১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে কোরুপেডিয়ামের যুদ্ধে লাইসিমাকাস নিহত হন এবং শহরের পুনরায় নামকরণ করা হয় এফেসাস

২৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এফেসাস মিশরীয় শাসনে চলে আসে। কিন্তু ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সেলুসিড রাজা তৃতীয় অ্যান্টিওকাস শহরটি আবার নিজের শাসনে ফিরিয়ে আনেন। তবে ছয় বছর পর ম্যাগনেসিয়ার যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় এফেসাস পারগামন শাসনে চলে যায়

গ্রিক দেবী আর্টেমিসের মূর্তি; Image source: World History Encyclopedia

১২৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পারগামনের রাজা অ্যাটালোস স্বেচ্ছায় এফেসাসকে রোমান সাম্রাজ্যের হাতে ছেড়ে দেন। ফলে এই শহর আঞ্চলিক রোমান গভর্নরের অধিকারে চলে যায়। পরে সিজার অগাস্টাসের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় এফেসাসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময় আসে, যা তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আজকের এফেসাসের ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ অ্যাম্ফিথিয়েটার, সেলসাসের লাইব্রেরি এবং জলাশয়গুলো অগাস্টাসের রাজত্বকালে নির্মিত বা পুনর্নির্মিত হয়েছিল

টাইবেরিয়াসের রাজত্বকালে এফেসাস একটি বন্দর হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে জায়গাটি এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বন্দর এবং প্রাচীন রয়্যাল রোডে ভ্রমণকারী কাফেলা থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্যের পরিষেবা প্রদান করা হতো। কিছু সূত্রের মতে, সেই সময়ে সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে রোমের পরেই দ্বিতীয় ছিল এফেসাস

৫ম ও ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে কনস্টান্টিনোপলের পর এফেসাস এশিয়ার বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। ১০৯০ সালে সেলজুক তুর্কিরা এফেসাস জয় করলেও ১১০০ সালের দিকে বাইজেন্টাইনরা আবার এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়া শুরু করে, এবং শহরের নাম পরিবর্তন করে ‘হ্যাগিওস থিওলোগোস’ রাখে। তারা ১৩০৮ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল।

এফেসাস আধুনিক তুরস্কের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত, যেখানে এজিয়ান সাগর কায়স্ট্রোস নদীর মোহনার সাথে মিলিত হয়েছে। বিশাল এই নগরীর মাত্র ১৫% খনন করা হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থাতেও শহরের প্রধান রাস্তার দু’পাশের বিশাল ভবনগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। ধারণা করা হয়, এখানে প্রায় ২,৫০,০০০ মানুষ বসবাস করত। সমস্ত শহরটি ছিল পরিকল্পিতভাবে তৈরি। মাটির নিচে ছিল বিশাল এক নর্দমা, এবং রাস্তার দু’পাশে ছিল মাটির পাইপ, যা স্নান এবং পানের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করত। এছাড়া স্নানাগারের সাথে পাবলিক টয়লেটও ছিল। সেখানে সবাই একে অপরের পাশে বসত। এখানকার ঘরগুলো আমাদের কাছে ২,০০০ বছর আগের এফেসিয়ান জীবনকে ফুটিয়ে তোলে। এসব বাড়ির বাসিন্দারা খুব বিলাসবহুল জীবনযাপন করত

এফেসাস শহরের পাবলিক টয়লেট; Image source: Ephesus

শহরের অবস্থান একে বিশেষ ভৌগোলিক সুবিধা এনে দিয়েছিল। শহরটির একটি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ের কাছেই গড়ে উঠেছিল। কিন্তু রোমান যুগের জাহাজগুলোকে আর্টেমিসের মন্দির থেকে ১.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি খুব সংকীর্ণ এবং কঠিন সামুদ্রিক চ্যানেল দিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে হতো। এর কারণ ছিল কায়স্ট্রোস নদী, যেটি এই শহরের একটু পশ্চিমে এজিয়ান সাগরে গিয়ে পড়েছিল। হাজার হাজার বছর ধরে নদীতে বয়ে যাওয়া পলিমাটি দ্বারা গঠিত একটি ব-দ্বীপ এখানে তৈরি হয়েছিল। বাইজেন্টাইন যুগের শেষের দিকে খালে এতটাই পলি জমে গিয়েছিল যে তা আর ব্যবহারযোগ্য ছিল না। সমুদ্রতট ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকে, ফলে বন্দরের চারপাশে জলাভূমি হয়ে যায়, এবং ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়

এফেসাসে খ্রিষ্টধর্ম

এফেসাস খ্রিষ্টধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে সেন্ট পল এবং সেন্ট জনের মতো ব্যক্তিরা আর্টেমিসের ধর্ম অনুশীলন দেখে সেসবের প্রতি বিদ্রুপ ও তিরস্কার করেন। তাদের বিভিন্ন যুক্তি-তর্কের ফলে এখানকার অনেকেই খ্রিষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। এছাড়া, জীবনের শেষ বছরগুলো সেন্ট জন এফেসাসে কাটান বলে মনে করা হয়। সেখানে সেন্ট জনের বাড়ি এবং সমাধি আছে ধারণা করা হয়।

এফেসাসের পতন

২৬২ খ্রিষ্টাব্দে গোথ বা বর্বর জাতির লোকেরা আর্টেমিসের মন্দিরসহ এফেসাস শহর ধ্বংস করে দেয়। পরে শহরের কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা হলেও সেটি আর কখনোই তার জাঁকজমক ফিরে পায়নি।

সম্রাট থিওডোসিয়াস তার রাজত্বকালে আর্টেমিসের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেন। তিনি উপাসনার স্বাধীনতা নিষিদ্ধ করেন। স্কুল ও মন্দিরগুলোও বন্ধ করে দেন। আর্টেমিসের মন্দির ধ্বংস করা হয় এবং সেখানে গির্জা নির্মাণ হয়। বাইজেন্টাইন যুগে কনস্টান্টাইন দ্য গ্রেট খ্রিষ্টধর্মকে সমস্ত রোমের সরকারি ধর্ম ঘোষণা করেন এবং কনস্টান্টিনোপলকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী করেন।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ এবং সপ্তম শতাব্দীতে বড় ভূমিকম্প ও বন্দরের পতনের ফলে এফেসাস ধীরে ধীরে পতনের মুখে চলে যেতে থাকে। পরে আরব অভিযানে এফেসাসের বেশিরভাগ মানুষ পালিয়ে যায়। চতুর্দশ শতাব্দীতে সেলজুক তুর্কিদের শাসনে এখানে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য উন্নতি হলেও মূলত এর পতনের ধারা অব্যাহত ছিল।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে অটোমান সাম্রাজ্য এফেসাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিন্তু শহরের বন্দরটি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে আর শতাব্দীর শেষের দিকে পুরো শহর পরিত্যক্ত হয়

এফেসাসের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানসমূহ

বর্তমানে এই স্থানটি বহু প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ এবং হাজার হাজার দর্শনার্থীর কাছে বেশ আকর্ষণীয়। প্রতি বছর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষটি দেখতে অনেকেই এই অঞ্চলে ছুটে আসেন।

আর্টেমিসের মন্দির

লিডিয়ান রাজা ক্রোয়েসাস এফেসাসে আর্টেমিসের মন্দির পুনর্নির্মাণ করেন। আর্টেমিস ছিলেন শিকার, সতীত্ব, সন্তান জন্মদান, বন্য প্রাণী এবং প্রান্তরের দেবী। তিনি গ্রিক দেবীদের একজন ছিলেন। আধুনিক কালের খননকাজ থেকে জানা গেছে- ক্রোয়েসাস মন্দিরের আগে এখানে আর্টেমিসের তিনটি ছোট মন্দিরও ছিল।

আর্টেমিসের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ; Image source: Elephango

৩৫৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হেরোস্ট্র্যাটাস নামে এক পাগল আর্টেমিসের মন্দিরটি পুড়িয়ে দেয়। পরে এফেসীয়রা মন্দিরটি আরও বড় করে পুনর্নির্মাণ করেছিল। এটি পার্থেননের চেয়ে চারগুণ বড় ছিল, এবং বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং আর কখনও পুনর্নির্মিত হয়নি

রোমান বোর্স বা ভার্জিন মেরির ডাবল চার্চ

এই রোমান ভবন খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর। এটি একটি তিন করিডোরবিশিষ্ট গির্জা। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে গির্জায় রূপান্তর না হওয়া পর্যন্ত এখানে ধর্মনিরপেক্ষ কার্য সম্পাদন করা হতো। পোতাশ্রয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্যগুলো শহরে পরিবহনের প্রয়োজন ছাড়াই এখানে বাজারজাত করার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে বাইজেন্টাইন গির্জা পশ্চিম দিকে তৈরি করা হয়

মেরির গির্জা; Image source: Turkish Archaeological News

সেলসাসের লাইব্রেরি

এফেসাসের সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনাগুলোর মধ্যে সেলসাস লাইব্রেরি অন্যতম। মূলত, টাইবেরিয়াস জুলিয়াস সেলসাস পোলেমেয়ানুসের স্মৃতির উদ্দেশে ১২৫ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। জুলিয়াস সেলসাস ছিলেন একজন গ্রীক নাগরিক, যিনি ১০৫-১০৭ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্যে রোমান এশিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেলসাস এই লাইব্রেরি নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন। এর নীচেই তাকে সমাহিত করা হয়।

সেলসাস লাইব্রেরির ধ্বংসাবশেষ; Image source: Jet Set Together

অ্যাম্ফিথিয়েটার ও ওডিয়ন

২৫,০০০ দর্শকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চিত্তাকর্ষক এই অ্যাম্ফিথিয়েটার প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম বলে মনে করা হয়। এটি নাটকের অভিনয়ের জন্য ব্যবহার করা হলেও প্রমাণ রয়েছে যে এটি গ্ল্যাডিয়েটরদের (প্রাচীন রোমের মল্লযোদ্ধা) লড়াইয়ের জন্যও ব্যবহৃত হতো। এছাড়া, ওডিয়ন থিয়েটারটিও ছিল প্রাচীন এথেন্সের অন্যতম সেরা স্থাপত্যবিস্ময়। ১৫০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি নির্মিত এই থিয়েটারটি নাটকের জন্য ব্যবহৃত হতো, যাতে আনুমানিক ১,৫০০ জনের জন্য আসন ছিল। করিন্থিয়ান স্টাইলে তৈরি পিলারগুলো ছিল লাল গ্রানাইট পাথরের।

এফেসাসের অ্যাম্ফিথিয়েটার; Image source: Marmaris Excursions

হ্যাড্রিয়ান ও সেবাস্তয়ের মন্দির

হ্যাড্রিয়ানের মন্দির ২য় শতাব্দীর তৈরি বলে অনুমান করা হয়। তবে ৪র্থ শতাব্দীতে এটি মেরামত করা হয় এবং এর আসল অংশগুলো এফেসাস প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘরে রাখা আছে। সেবাস্তয়ের মন্দির ডোমিশিয়ানের মন্দির নামেও পরিচিত। মন্দিরটি প্রথমে সম্রাট ডোমিশিয়ানকে উত্সর্গ করা হয়। তবে পরে ডোমিশিয়ানের পিতা ভেসপাসিয়ানকে মন্দিরটি পুনরায় উত্সর্গ করা হয়। আজও এর সিঁড়িগুলো টিকে আছে।

সেন্ট জন ব্যাসিলিকা

খ্রিষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সম্রাট ১ম জাস্টিনিয়ান এই ব্যাসিলিকা নির্মাণ করেন। সেলচুক শহরের কাছে অবস্থিত এই প্রাচীন গির্জা সেন্ট জনের সমাধির উপর নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

সেন্ট জন ব্যাসিলিকা; Image source: Ephesus

ঘুমন্ত সাত গুহাবাসীর ঘটনা

ঘুমন্ত সাত গুহাবাসীর ঘটনাটি মুসলিম ও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ঘটনা। পবিত্র কুরআনের সুরা ক্বাহাফে এই ঘটনার কথা এসেছে। তবে সেখানে জায়গার নাম নির্দিষ্ট করে বলে দেয়া না থাকলেও অন্যান্য ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এই গুহাবাসীর কথাই বলা হয়েছে।

আসহাবে কাহাফের সেই গুহা; Image source: Turkish Archaeological News

Language: Bangla
Topic: History of old Turkish city Ephesus
References: Hyperlinked inside

Related Articles