Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হালান্ডের ‘ভালো’তে কেন সিটির খারাপ?

আর্লিং হালান্ড একজন রোবট।

একদম সহজ-সরল একটা বিবৃতি, যার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার মতো লোক এই মুহূর্তে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে নিজের প্রথম ২০ ম্যাচে গোল করেছেন ২৫টি, মৌসুম শেষ হতে হতে সংখ্যাটা ৫০ ছোঁবে বলে সাদা কাগজে লিখে দিতেও রাজি অনেকে। ফ্যান্টাসি প্রিমিয়ার লিগ তার কারণে ‘একঘেয়ে’ হয়ে গেল কি না, এই আলাপও তো এখন জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে।

পেনাল্টি বক্সের যেকোনো কোণ থেকে, দু-তিনজন ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে গোল করতে পারেন – আগের মৌসুমেই স্ট্রাইকারের সন্ধানে বুভুক্ষুর মতো ঘুরে বেড়ানো ম্যানচেস্টার সিটি যে এমন একজনকে পেয়ে আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে, ঘোষণা দেওয়া যেত খুব সহসাই। কিন্তু, যখন দেখা যাচ্ছে, পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের চেয়ে সিটি এরই মধ্যে পিছিয়ে পড়েছে ৮ পয়েন্টে, বিদায় নিতে হয়েছে লিগ কাপ থেকেও। সময়ের সেরা স্ট্রাইকারকে দলে ভিড়িয়েও কাজ হচ্ছে না কেন, এখানেই যত প্রশ্ন। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন জন মুলার। কী পেলেন তিনি, রোর বাংলার পাঠকদের জন্য তারই সংক্ষিপ্তসার থাকল এখানে।

হালান্ড মুড়িমুড়কির মতো হ্যাটট্রিক করছেন লিগে, কিন্তু এতে কি সিটির গোল করার হার বেড়েছে? না তো। বরং, গেল মৌসুমে হালান্ড কিংবা কোনো স্ট্রাইকার ছাড়া খেলে তারা যে হারে গোল হজম করত, এ মৌসুমে গোল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ৪০ শতাংশ।

আগের মৌসুমে সিটি ম্যাচপ্রতি পয়েন্ট তুলছিল ২.৪৫ করে, এ মৌসুমে সেটা নেমে এসেছে ২.২৫-এ। দলগুলোর শক্তিমত্তা বিবেচনা ফাইভথার্টিএইটের এসপিআই মডেল ফুটবলের সর্বমহলেই বেশ গ্রহণযোগ্য। তো ওই মডেল বলছে, সিটিতে গার্দিওলার দ্বিতীয় মৌসুমের পর এবারই তাদের দলীয় শক্তিমত্তা সবচেয়ে নিচে পৌঁছেছে, গত মৌসুমের ৯৩.৫ থেকে সোজা ৯০.৮-এ। এবং, ২০১৯-২০ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জয়ের জন্য ফেভারিট ধরা হচ্ছে না সিটিকে।

Image: The Athletic

ফুটবল দলীয় খেলা, সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক হিসেবে একক ব্যক্তিকে দায়ী কিংবা পূজা করা, দুটোই অনুচিত। সিটির পড়তি ফর্মের পেছনে হালান্ডই একক এবং একমাত্র কারণ, বলাটা তাই অন্যায়ই হবে। সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এটাও মানতে হবে, হালান্ডের সেরাটা বের করতে সিটিকে কিছু কৌশলগত বদল আনতে হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সিটিকে কিছুটা পিছিয়েই দিয়েছে।

এই যেমন গেল মৌসুমে স্ট্রাইকার না থাকাটা যদি গার্দিওলার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে তো এর সুবিধাও ভোগ করেছিলেন তিনি। মিডফিল্ডারদের দিয়ে স্ট্রাইকারের কাজ চালানোর কারণে তারা হুটহাট বক্সে উঠে যেমন বাড়তি স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করতেন, তেমনি উইংয়ে সরে গিয়ে তৈরি করতেন ওভারলোড। 

কিন্তু গত মৌসুমের সঙ্গে এ মৌসুমে সিটির সেন্টার ফরোয়ার্ডদের পাস গ্রহণের জায়গার তুলনা করে দেখুন। গত মৌসুমে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের চতুর্দিকে পাস নিচ্ছিলেন তারা, আর এই মৌসুমে হালান্ড বল বুঝে নিতে চাইছেন কেবলই পেনাল্টি মার্কের আশেপাশে।

Image Credit: The Athletic

অর্থাৎ, এই মৌসুমে আক্রমণভাগে ‘ফ্লুইডিটি’ আর নেই। প্রতিপক্ষের সেন্টারব্যাকদের কাছ থেকে দূরে সরার বদলে ছয়-গজি বৃত্তেই ঘুরঘুর করতে পছন্দ করেন হালান্ড। তার তো আর খেলা গড়ার দরকার নেই, গোল পেলেই চলে।

বাঁ পায়েই যেহেতু জোর পান বেশি, পেনাল্টি মার্কের বাঁ পাশেই বল পেলে ভালো হয় হালান্ডের জন্য। ওপরের ছবিটাতেও দেখতে পাওয়ার কথা, পেনাল্টি মার্কের ঠিক বাঁ পাশের জায়গাটা গাঢ় লাল। আপনি জায়গাটার নামও দিতে পারেন, ‘হালান্ড জোন’।

ওই ‘হালান্ড জোন’-এ বল পাঠানোর জন্যই এই মৌসুমে সমস্ত চেষ্টা সিটির। কাগজে-কলমে দেখে মনে হতে পারে, আগের মতোই থ্রু-বল কিংবা কাটব্যাক করেই পেনাল্টি বক্সে বল নিচ্ছে তারা। তবে, এই যে হালান্ডের মতো একজন আদ্যন্ত স্ট্রাইকার নিয়ে খেলছে সিটি, এর অসুবিধাটা বুঝতে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে একটা গোলই হতে পারে আদর্শ নমুনা।

গত অক্টোবরের গোলটার মূলমন্ত্র ছিল, আক্রমণভাগের দু’জন খেলোয়াড় পার্শ্বরেখার দিকে সরে যাবেন এবং আরেকজন খেলোয়াড় এসে বিটুইন দ্য লাইনে দাঁড়িয়ে সাউদাম্পটনের দু’জন ডিফেন্ডারের বিপক্ষে ওভারলোড তৈরি করবেন। সিটি যদি কোনো একজন ফলস নাইন – এই ধরুন, ফিল ফোডেন – নিয়ে খেলত, তিনি খুব খুশিমনেই এই তিন ভূমিকার যেকোনো একটা গ্রহণ করতেন। কিন্তু, হালান্ড তো তার জমিদারির বাইরে বেরোতে চান না, তিনি তাই সেদিন রয়ে গিয়েছিলেন দু’জন সেন্টারব্যাকের মাঝে, বদলে কেভিন ডি ব্রুইনা ডান পাশের মিডফিল্ড থেকে ছুটে এসেছিলেন বাঁয়ে, উঠতে উঠতে জোয়াও ক্যান্সেলো উঠে গিয়েছিলেন একদম বাই লাইনে।

সেদিন কোনো সমস্যা হয়নি, দারুণ একটা কাটব্যাক থেকে দেখার মতো গোল করেছিলেন হালান্ড। কিন্তু, যদি একটা ফাঁক রয়ে যেত? হতেই তো পারত, পাসের টাইমিংয়ে গলদ কিংবা হালান্ডের শট ফিরছে সাউদাম্পটনের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে? আক্রমণ থেকে হুট করেই রক্ষণকার্য সামলানো, যাকে বলা হচ্ছে ‘ডিফেন্সিভ ট্রাঞ্জিশন’, কোথাও ভুল হলেই সিটি সেদিন পড়ে যেত মহা ফ্যাসাদে। ক্যান্সেলো তো তখন আক্ষরিক অর্থেই মাঠের বাইরে, তার ফেলে যাওয়া জায়গা কাভার করতে বাঁয়ে উঠে এসেছিলেন রদ্রি; পাল্টা আক্রমণ সামলাতে একমাত্র বার্নার্দো সিলভাই ‘নিধিরাম সর্দার’ বেশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিডফিল্ডে।

মনে হতে পারে, যা হয়নি, তা নিয়ে এমন মিছে হাহাকার কেন? কিন্তু, ম্যাচের প্রতিটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে ‘গার্দিওলা-নীতি’, সবাই স্ব স্ব পজিশনে না থাকলে তো সেটাই হচ্ছে না। আর সাউদাম্পটনের বিপক্ষে কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু এই মৌসুমে কাউন্টার অ্যাটাকের সামনে সিটি তো রীতিমতো ‘বেহুলার বাসর ঘর’। উলভস ম্যাচ পর্যন্ত, এই মৌসুমে ছয়বার ফাস্ট ব্রেকের (নিজেদের অর্ধের ৪০ শতাংশের মধ্যে বল পাওয়ার ১৫ সেকেন্ডের ভেতরে প্রতিপক্ষের বক্সে বল স্পর্শ করার নামই ফাস্ট ব্রেক) সামনে পড়েছে সিটি, পুরো ২০২১-২২ মৌসুমে যে ঘটনা ঘটেছিল মাত্র দু’বার।

Image: The Athletic

***

‘ওপর-নিচ, ওপর-নিচ করে আমরা খেলতে পারব না। ঠিক সময়ে হাজারের বেশি পাস খেলে খেলে আমাদের একটা সুর, একটা লয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

– পেপ গার্দিওলা

হালান্ডের সঙ্গে গার্দিওলার মতদ্বৈততা রয়েছে এখানেও। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে দ্রুতগতির ফুটবলারদের একজন তিনি, বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে পাল্টা আক্রমণে গণ্ডায় গণ্ডায় গোল করে তবেই সিটিতে এসেছেন। সিটির হয়েও ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে গতির ঝড় তুলে, ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে গোল করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্লাব বদলালেও ট্রেনিং জমা দেননি। গার্দিওলার ‘ধীরে চলো’ নীতির সঙ্গে যা একদমই বেমানান। তবে, আপাতত হালান্ডের কাছে নতিই স্বীকার করতে হচ্ছে তাকে, নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিপক্ষে হট্টগোল পাকানো ৩-৩ গোলে ড্র ম্যাচ খেলে তিনি বলেছিলেন,

‘মাঠের শেষাংশে আমাদের আরও বেশি সময় কাটাতে হবে, সেখানে আরও পাস খেলতে হবে। অবশ্য আর্লিং (হালান্ড) যেভাবে এগোচ্ছে, কাজটা মুশকিলই।’ 

– পেপ গার্দিওলা

হালান্ডের এই উড়ন্ত ফর্মটাই তাই গার্দিওলাকে বাধ্য করছে নিত্যনতুন রণকৌশলের সন্ধান করতে। ‘ফলস নাইন’ ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জ্যাক গ্রিলিশকে যেমন লাগিয়ে দিয়েছেন উইংয়ে প্রতিপক্ষের খেলার গতি কমিয়ে দিতে। বার্নার্দো সিলভার চেয়ে ইলকায় গুন্দোয়ান খেলার সুযোগ পাচ্ছেন বেশি, সুযোগ বুঝে লেফট হাফ স্পেসে ঢুকে যাওয়ার স্বভাব যার বহু পুরনো।

হালান্ডের ‘ডমিনো ইফেক্ট’-টা সবচেয়ে ভালো বোঝা যাচ্ছে অবশ্য রক্ষণভাগে। জোয়াও ক্যান্সেলোর বদলে নাথান আকেকে লেফটব্যাক হিসেবে বেছে নিতে হচ্ছিল গার্দিওলাকে, যেই ক্যান্সেলো আগের দুই মৌসুমেই ছিলেন প্রিমিয়ার লিগের বর্ষসেরা দলে।

গার্দিওলার সামনে উপায়ই বা কী ছিল! আকে তুলনামূলকভাবে বেশি রক্ষণাত্মক, ওপরে খুব একটা ওঠেন না। আর ক্যান্সেলোর শক্তির জায়গাটা ছিল, লেফট হাফ স্পেস থেকে বাড়ানো কোণাকুণি বলগুলো, যা গত তিন মৌসুমে তার এক্সপেক্টেড অ্যাসিস্ট বানিয়েছিল প্রতি ৯০ মিনিটে ০.১৯। কিন্তু, আগেই বলা হয়েছে, এই মৌসুমে সিটি লেফট হাফ স্পেস থেকে বলগুলো পেনাল্টি মার্কের বাঁ পাশেই রাখতে চাইছে হালান্ডের জন্য। ফলাফল, ক্যান্সেলোর এক্সপেক্টেড অ্যাসিস্ট কমে নেমেছিল ০.০৬-তে। তিনি আর সুযোগ পাচ্ছিলেন না একাদশে। বাধ্য হয়ে তাকে পাঠাতে হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখে, বাজিকর প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণা বলছে, এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পথে সিটির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী এই জার্মান দলটাই।

এ তো গেল বাঁ প্রান্তের কথা। পরিবর্তন এসেছে ডান প্রান্তেও। সিটির খেলোয়াড়দের যে প্রতিসম পজিশনিং কাঁপন ধরাত প্রতিপক্ষকে, এই মৌসুমে সেখান থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের। রাইট উইংব্যাক উঠে যাচ্ছেন রাইট উইঙ্গারের চেয়েও ওপরে, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নামতে নামতে নেমে যাচ্ছেন নিজেদের অর্ধে। অর্থাৎ, খেলায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বদলে দলটার এখন ক্ষতিপূরণ দিতে দিতেই সময় যাচ্ছে।

হালান্ডের গোলের মূল্যটা তাই সিটিকে চুকাতে হচ্ছে বিল্ডআপে একজন খেলোয়াড় কম ঢুকিয়ে আর আগের তুলনায় কম নমনীয় ট্যাকটিকসের আশ্রয় নিয়ে। যার পরিণতি দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষের অর্ধে বক্সের কেন্দ্র ছাড়া সবখানেই কম সংখ্যকবার বল ছুঁয়েছে সিটিজেনরা। প্রতিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরার বদলে নিজেদের অর্ধেই বল লেনদেন বেশি করতে হচ্ছে তাদের। অনেক কম মজবুত মনে হচ্ছে তাদের, অনেক কম নিয়ন্ত্রিত – সব মিলিয়ে অনেক কম গার্দিওলার মতো।

Image: The Athletic

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এমন হওয়াটা ভবিতব্যই ছিল। হালান্ডের জন্য সিটি আদর্শ দল হলেও সিটি কীভাবে হালান্ডকে তাদের সিস্টেমে খাপ খাওয়াবে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল মৌসুমের গোড়াতেই। যা শুনে ক্ষেপে-টেপে গার্দিওলা পাল্টা প্রশ্নই ছুড়ে বসেছিলেন, ‘সিটির সিস্টেম আবার কী জিনিস?’

এখন তো দেখা যাচ্ছে, ওই সংশয়বাদীরাই সত্যি।

This article is in Bangla language. This article is on Erling Haaland's impact on Manchester City's tactics. Necessary images are attached inside.

Reference: https://theathletic.com/4154516/2023/02/04/erling-haaland-is-phenomenal-so-why-hasnt-he-made-manchester-city-better?

Featured image © Getty Images

Related Articles